
পর্ণশবরীর কথকতা ১৫ প্রাপ্তি চক্রবর্তী
যা বুঝলাম দুঃখের ভার অতি বিষম। তা বইবার জন্য অতিরিক্ত তিনজনকে পাওয়া দুষ্কর। প্রান্তিক মানুষের শবদেহ যেন। অথচ দেখবেন মিঠে, সরল, কচি বাঁশের মতো নরম সবুজ জীবনের গায়ে আলতো চুম্বন এঁকে যাওয়া আরামদায়ক। মন ফুরফুরে বাতাসের মতো হালকা হয়ে যায়। জীবনে মিঠে দখিনা বাতাস আর ঝোড়ো হাওয়া দুই-ই সত্য। অথচ আমরা কেবল বসন্তের প্রত্যাশি। একথাটা আমি বললে খেলো, অথচ রবীন্দ্রনাথের লেখা তুলে ধরলে তার ভার হয় পর্বত-প্রমাণ। মানতে ইচ্ছে হয়, বিশ্বাস আসে।
তবু হালহকিকত আর অধিকাংশের মর্জি বুঝে ঠিক করেছি আর কিছু লিখব না। আর কিছু লিখব না, যাতে মনের নেতিবাচকতা প্রতিফলিত হয়৷ অথচ একইসঙ্গে এ-ও বুঝি জীবনে যখন কালবোশেখীর আঁধারকালো মেঘ নেমে আসে তখন বসন্তের মতো মনকে ফুরফুরে রাখা অপ্রাকৃত৷ একখানা নকল পার্সোনা জবরদখল করে খুশি-খুশি মেজাজে ফুল-পাতা-জলের কেয়ারি করা ছবি দেওয়া মিথ্যে৷ এবং অথচ একইসঙ্গে জানি এই মিথ্যেটাই চায় আপামর। নইলে আর সস্তা সিরিয়াল চলে কেন? লক্ষ লক্ষ মানুষ সেসব দেখেন। প্রান্তিক মানুষ শুধু নন। রীতিমতো বিদগ্ধ পণ্ডিত, ভার্সিটির অধ্যাপকেরাও গোগ্রাসে গেলেন সেসব। কেন? সর্বক্ষেত্রে বহুগামিতা সমাজ অথবা ব্যক্তি কারো পক্ষেই সুখকর দৃশ্যের জন্ম দেয় না অথচ প্রবৃত্তি ওদিকেই। এবং লোভ৷ আমার আরো চাই এবং আরো আরো আরো। নিজের জীবনে না হলে অন্যের জীবন থেকে কেড়ে নেব। দ্রব্য না হোক, অন্তত কিছুক্ষণের বিনোদনই সই! দুঃখ চাই না গো! মিশমিশে কদাকার একখান! কে-ই বা চায় তাকে! অথচ বসন্তের মতো আষাঢ়ের ভরা বর্ষাও সত্য। একথা জেনেশুনেও মন মুখ ঘুরিয়ে থাকে। ঋতু পর্যায়ক্রমে আসে। হাওয়ার গন্ধ বদলায়। এই-ই চিরকালীনতা। অথচ আমাদের চাহিদা কেবল নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল। বসন্তকালীন রঙিন যাপন।
ক্লান্ত ক্ষণজীবী জীবন আপাতত এরকমই। ঋতুকালীন দুঃখ ঘিরে রেখেছে তাকে। আমি অপারগ। যাঁরা বিদায় নেবার তাঁদের আটকাতে পারব না, পারার ইচ্ছেও বিশেষ নেই আর।
শুধু মন ফের ফুরফুরে হলে হালকা নীল জলরাশির ধারে নিয়ে যাব, কথা দিলাম।
আপাতত এখানেই থমকে দাঁড়াই। অপেক্ষা থাক ঋতু বদলের।