শুভদীপ রায়চৌধুরী-র গল্প

শুভদীপ রায়চৌধুরী-র গল্প

চোর

১.

সামনে একটা ছোট পোড়ো জমি। অনেকদিন আগে বাড়ি করবে বলে কেউ কিনে রেখেছিল। বাড়ি বানানো হয়নি। এরকম অজস্র আছে এই অঞ্চলে। চারপাশে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পাঁচিলের একপাশে, বাইরে দিয়ে, সরু রাস্তা। অন্যপাশে হয়তো একটা বাড়ি। কিন্তু পাঁচিলের ভেতরে অন্য একটা রাজ্য। লম্বা ঘাস গজিয়েছে। সর সর শব্দ করে বাতাস বয়। জোনাকি আসে একটা দুটো রাতের দিকে। ভাম। কখনো মাথা তুলে ফনার বিস্তার দেখায় রাগী কালাচ, গোখরো। দিনের বেলা প্রজাপতি ফুটে থাকে অকিঞ্চিত আগাছায়।

যাদব এক লাফে ছোট পাঁচিলে উঠল। চেয়ে দেখল সামনের জমির দিকে। অন্ধকারে চোখ চলেনা। ডান দিকে, জমির পাঁচিলের পাশের রাস্তায় একটা ল্যাম্পপোস্ট ছিল। আলো ছিল। কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। এদেশে, এই সময়ে, সবই চুরি হয়। এটা ভেবে যাদব ফিক করে হেসে ফেলল। ‘আমি শ্লা চুরি করে কী এমন মহাভারত উদ্ধার করে দিয়েছি?’ পাঁচিল থেকে লাফিয়ে নামল সে। শরীরটা বাঁকিয়ে, মাথা নিচু করে দ্রুত পায়ে জমিটা পেরিয়ে অন্যপাশের পাঁচিলে উঠে পড়ল। এভাবে যাওয়ার দরকার ছিলনা যদিও। গত এক বছর ধরে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে বলে শোনা যায়। গোলাগুলি চলছে নাকি সীমান্তে। এই কারণে সরকার রাত নটার পরে পার্মানেন্ট কারফিউ জারি করে রেখেছে। রাস্তাঘাটে কেউ নেই। লোকে বাড়িতে বিয়ার আর চিকেন ফ্রাই নিয়ে আরাম করে রিয়ালিটি শো দেখে। যদিও শোনা যায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় বড় মাথারা তাদের গোডাউন থেকে লরি বোঝাই কিসব জিনিস কোথায় যেন নিয়ে যায়। পাঁচিলে দাঁড়িয়ে, একবার চারপাশটা দেখে সে একটু জোরেই বলল ‘আর আমি শ্লা চুরি করে মহাভারত ইয়ে করে দিয়েছি।’ বলেই জিভ কাটল। একটু জোরেই বলে ফেলেছে। যদিও কাজের কাজ তাতেই হলো। তার সামনে যে বাড়িটা তার দোতলার একমাত্র ঘরে আলো জ্বলে উঠল।

২.

একতলার জানলার কার্নিশে দাঁড়িয়ে ঘাড় উঁচু করে রাখতে কষ্ট হয়। কিছুক্ষন পরেই ঘাড় ব্যাথা হয়ে যায়। তারপরেও সে করছে। সামনেই ফুট তিনেক উঁচু দেওয়াল। তার ওপরে জানলা। পর্দা ফেলা। ভেতরে আলো জ্বলছে। ওই ঘরে, ওই পর্দার পেছনে, ওই আলোর নিচে রয়েছে লীলা। যদিও লীলা তার সত্যি নাম কিনা যাদব জানেনা। দুদিন আগে পাঁচিল টপকে, কার্নিশ বেয়ে হাঁচোড় পাঁচোড় করে ছাদে উঠে, লাগোয়া চিলের ঘরে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠতে দেখে সে ঘাবড়ে যায়। এই সময়ে আলো জ্বলার কথা নয়। রাত নটার পরে আলো জ্বালাতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হয়। আগের মতো অফুরন্ত কিছুই নয় আর। থমকে গিয়ে যখন ভাবছে যেভাবে এসেছে সেভাবেই পালিয়ে যাবে কিনা তখনই ঘরের ভেতর থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এল। এবং, কী আশ্চর্য! নারীর।

‘আপনি কে?’, দৌড় দিতে গিয়েও প্রশ্ন শুনে দাঁড়িয়েছিল সে। আর তখনই একটু দুরে শোনা গেল অস্পষ্ট ‘গোঁ গোঁ ‘ শব্দ। কিছু বোঝার আগেই নারীকণ্ঠ বলে, ‘ছাদের ডানদিকে কালো প্লাস্টিকে ছাওয়া একটা জায়গা আছে, যার নিচে টমাটো গাছের কয়েকটা চারা পুঁতেছি। ওখানে চলে যান।’ দৌড়ে গিয়ে সে সেখানে লুকোয়। জানলার আলো নিভে যায়। অটোনমাস ড্রোনগুলো কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই চলে আসে মাথার ওপরে। লাল আলো বেরিয়ে আসছে সামনে থেকে। যান্ত্রিক, এবং মৃদু একটা শব্দ। অন্ধকারে তাদের বড়সড় বোলতার মত লাগছে। কোয়াডকপ্টারের চারটে ব্লেড সাঁ সাঁ করে ঘুরছে। এক দুই সেকেন্ড স্থির থেকে তারা যেমন এসেছিল তেমনই দ্রুত উড়ে গেল দুরে।

সব শান্ত হয়ে যাওয়ার পরে, বেরিয়ে এসে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যখন ভাবছে চলে যাবে কিনা, তখন ফের, কী আশ্চর্য, ভেসে এল নারী কণ্ঠ, ‘ওরা এখন আর ঘণ্টা দুয়েক আসবেনা।’ চলে যেতে গিয়েও সে দাঁড়িয়ে পড়ে জানতে চায়, ‘আপনার নাম?’ সামান্য নিস্তব্ধতার পরে উত্তর, ‘লীলা’

৩.

কথা সেদিন অল্পই হয়েছিল। স্বামী সাংবাদিক। যদিও প্রায় মাসছয়েক হয়ে গেল জেল বন্দী। নবসংবিধানের ৪২ নম্বর ধারা, মানে কিউ কে, মানে কোসচেনিং দ্য কিং লেগেছে নামের পেছনে। সহজে ছাড়বে না।

‘আপনাকে দেখতে চাই’, উত্তরে লীলা বলেছিল, ‘আমি চাইনা’। তারপরে যদিও মন বদলে, ‘পরশু আসবেন? আপনাকে একটা গল্প শোনাব। তারপরে।’ আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পালিয়েছিল সে।

সাধারণত না আসাটাই উচিত। সেটাই করত। কিন্তু পারলনা। তাই ঘাড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এখন। আলো জ্বলা পর্দার এপাশে। ভেতরে কি ফ্যান চলছে? মৃদু ঘস ঘস শব্দ একটা। মিনিট পাঁচেক এরকম থাকার পরে সে জানতে চাইল, ‘আমি কি চলে যাব?’ উত্তর পেতে সময় লাগল এবং অবশেষে শোনা গেল, কী আশ্চর্য, নারী কণ্ঠ, ‘না।’ একমিনিট নীরবতার পরে, ‘ছাদে উঠে আসুন, ঘাড়ে ব্যাথা হবে।’

‘আলো জ্বালানোর অনুমতিটা আজকে নিয়ে রেখেছি। জানতামনা আপনি আসবেন কিনা। তবু ভাবলাম একটা চান্স নিই। ওরা আসলে লুকোনোর জায়গা তো আগেরদিন দেখিয়ে দিয়েছি। পারবেন তো?’

‘আপনি হয়ত ভাবছেন এ আবার কেমন মেয়ে? আসলে এইসব গল্প শোনার আর কেউ নেই। তাই আপনি। শান্ত হয়ে বসুন। তেষ্টা পেলে দরজার পাশে দেখবেন একটা পাত্রে জল আর পাশে একটা গ্লাস রাখা আছে।’

বাবু হয়ে বসল সে। প্রত্যাশা থেকে দুরে। নিজের জীবনে আজ অব্দি নারীসঙ্গ হাতে গোনা। যদিও সেটা শুধু তার এমনটা নয়। ‘আদর্শ নারীর আচরণবিধি’ বইয়ের নির্দেশ সবাইকেই মেনে চলতে হয়। বিয়ের আগে নারী এবং পুরুষের মেলামেশা বেশ মুশকিলের। তার মত পুরুষের জন্য পতিতাপল্লী একমাত্র ভরসা। যদিও প্রয়োজনীয় অর্থ সঙ্গে থাকলে তবেই। আগের মতো অফুরন্ত কিছুই নয় আর। অতএব সে জানেনা এই মুহূর্তে ঠিক কী করা উচিত। তবে তেষ্টা পেয়েছিল। জল খেয়ে, ‘ধন্যাবাদ’ বলে, বাবু হয়ে গুছিয়ে বসল।

‘মেয়ে হিসাবে আমাকে ভালো দেখতে বলা যায়। যদিও আমি খুব লম্বা নই। পাঁচ-পাঁচ। তবে মেয়েদের নাকি বেশি লম্বা হলে ভালো লাগেনা। বিদেশি, তালঢেঙ্গা মডেলগুলো, ম্যাগাজিনের পাতাতেই ভালো। এটা শুনে আপনার হয়ত আমাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। তবে এখনই সেটা সম্ভব নয়। চুপ করে বসে শুনুন। … স্কুলে পড়ার শখ ছিল আমার। কোন লাভ নেই জেনেও বাবা আমাকে পড়াতে রাজি হয়ে গেল। বাবা লোকটা একটু অন্যরকম ছিল। তাই আমিও। দিনের বেশিরভাগ সময় আমার কেটে যেত মায়ের সঙ্গে রান্না অথবা পাড়ার বাকি মেয়েদের সঙ্গে সেলাই আর আরও নানা ধরনের কাজ শিখে। মাঝখানে ঘণ্টা তিনেক স্কুল। আমার পাড়ার বাকি বন্ধুরা ভাবতেই পারতনা আমি স্কুলে যাই। রেশমি তো একবার বলেই বসল, ‘তোর বিয়ে হবে? আমার তো মনে হয়না।’ আমার কিন্তু দিব্যি লাগত। … একী! এত নড়াচড়া করছেন কেন? বেশি নড়াচড়া করলে শরীর গরম হবে। অতিরিক্ত তাপ ওদের সাহায্য করে।’

নড়াচড়া তো সাধে নয়। খুব মশা। কামড়ে ছিঁড়ে ফেলছে একেবারে। সে আমতা আমতা করে বলল, ‘মশা কামড়াচ্ছে।’ একটা চাপা হাসি শোনা গেল, ‘আপনি না চোর? চোরেদের মশা কামড়ায়?’ একটু থেমে, তাকে চুপ দেখে, লীলা বলল, ‘খুব মশা কামড়ালে আপনি যেতে পারেন। তবে আমার মনে হয়না আপনি যাবেন। আমার মন হয় আজকের আগে কোন মেয়ের সঙ্গে আপনি এভাবে কথা বলেননি। তাই মশা কামড়ালেও আপনি নড়বেন না। কেমন, ঠিক বলেছি কিনা?’

কথাটা ঠিক। সে উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। লীলা শুরু করল, ‘আমার বাপের বাড়ি থেকে স্কুল দশ মিনিটের পথ। নিয়মকানুন তখনও এত কড়া হয়নি। কাজেই আমার একা স্কুলে যাওয়ার কোন বাধা ছিলনা। রাস্তাটা সরু ততক্ষণ, যতক্ষণ পাড়ার ভেতরে। পাড়ার শেষে একটা মাঠ। মাঠ আর আচমকা চওড়া হওয়া রাস্তার কোনে কঙ্কদের বাড়ি। মাঠটা পেরলে স্কুল। … কঙ্ককে সেভাবে কোনদিন খেয়াল করিনি। কিন্তু একদিন বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছি এমন সময় গায়ে এসে লাগল একটা কাগজের বল। খুলে দেখি, ওমা! চিঠি। কঙ্ক ইনিয়ে বিনিয়ে কোনদিন কিছু বলতে পারতনা। চিঠিটাও সোজাসুজি। ‘তোমাকে আমার ভাললাগে। জানিনা আমাকে তুমি চেন কিনা। আমার নাম কঙ্ক। স্কুলে যাওয়া মেয়েদের শুনি খুব গুমর। তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও? তাহলে সামনের সপ্তাহে মেলার মাঠে লাল রঙের ফ্রক পড়ে যেও। আমি ঠিক তোমাকে খুঁজে নেব। আমি মিথ্যা বলিনা। তাই জানবে যা বলছি তা করব।’’

যাদব হেসে ফেলল। লীলা, যেহেতু পর্দার আড়ালে, মানে তাকে দেখতে পাচ্ছেনা, প্রথমে বুঝতে পারেনি। সে বলে যাচ্ছিল। হাসিটি বুঝতে পেরে চুপ করে গেল। এরপরে যখন কথা বলল, কণ্ঠে অভিমানের পালক, ‘আপনি হাসছেন? কেন?’ জবাব দেবে কিনা সেই নিয়ে একটু ভেবে সে বলে, ‘না, মানে আপনি কিভাবে বিশ্বাস করলেন যে একজন সব সময় সত্যি বলে? আপনি কি শোনেননি শীর্ষ নেতার বক্তব্য?’ এর পরে থেমে, দম নিয়ে, কথার ভঙ্গীতে শীর্ষ নেতাকে অনুকরণ করে সে শেষ করে, ‘সত্য আছে কেবল আমাদের ঐতিহ্যে। তাকে জানার জন্য তোমাদের পরিশ্রম করতে হবে। ভুলে যেওনা বিদেশী শক্তিগুলি সর্বদা আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের মহান দেশ এবং আমাদের এই বিশাল পার্টির বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা করে চলেছে।’

‘আজ থেকে দশ-পনের বছর আগে সত্য আর মিথ্যা বলে দুটো জিনিস ছিল। এখন নেই।’ রাগত ভাবে লীলা উত্তর দেয়। যাদব প্রশ্ন করে, ‘তারপরে? গিয়েছিলে মেলায়?’ বলেই খেয়াল করে সে তুমি বলে ডাকছে লীলাকে।

‘হুম! গিয়েছিলাম। তখন মেলা হত। আজকাল তো আর সেসব হয়না। যাকগে। তো, মেলায় গিয়ে প্রথমে কঙ্ককে খুঁজে পেলাম না। বেশ অনেকক্ষণ খোঁজার পরে দেখি মেলা যেখানে প্রায় শেষ, সেইখানে, একটা ছোট নীলরঙা তাঁবুর নিচে বসে, কয়েকজন ছেলের সঙ্গে সে গুলতানি করছে। আমি গুটিগুটি গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রথমে আমাকে খেয়াল করেনি। তারপরে দেখল। ‘বাহ! সুন্দর লাগছে তো।’ এই বলে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। আমার হাতে হাত রেখে, চোখের দিকে চেয়ে বলল, ‘এসো, তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দি।’ ভেতরে গিয়ে ওর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ হল। ওর সবচেয়ে কাছের দুই বন্ধু নবীন সেন, আর পার্থ চক্রবর্তী। তাঁবুর ভেতরে আরও কয়েকজন ছিল। সবার নাম মনে নেই। একটি ছেলেকে মনে আছে, তার নাম ছিল সুবল।’

‘আশ্চর্য!’ বিড়বিড় করে সবে বলেছে যাদব, লীলা হঠাৎ উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল, ‘শিগগিরি লুকোও। এখুনি।’ যাদব কিছু বুঝতে না পারলেও রিফ্লেক্স অ্যাকশানে লাফ দিল অন্ধকারে।

কালো রঙের প্লাস্টিকে ছাওয়া ছোট ছাদের বাগানে, নবীন টমাটো চারাদের পাশে মাথা নিচু করে, জড়সড় বসে, ছটি কোয়াডকপ্টারের মসৃণ উড়ান দেখতে দেখতে তার মনে হল যেন শিশু গাছগুলি তাকে বলছে, ‘ভয় পেওনা। শান্ত থাকো।’ দিনকয়েক আগেই, ‘সত্যমেব’ নামের সোশাল মিডিয়াতে বহুল প্রচারিত এবং বহুপ্রশংসিত কয়েকটি ছবি দেখার সূত্রে যাদব জানে এই নতুন উড়ুক্কুযানগুলো অষ্টম জেনারেশনের ড্রোন। মানুষ না থাকলেও, কেবলমাত্র তার ফেলে যাওয়া উত্তাপে এরা উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারে। লীলা ভুল বলেনি। আমাদের দেশকে বহিঃশত্রুর থেকে বাঁচাতে শীর্ষনেতা কয়েকমাস আগেই সুদূর পশ্চিম থেকে এগুলি কিনে এনেছেন। ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশ সবার আগে। দেশের জন্য মানুষ। মানুষের জন্য দেশ নয়। ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ভুললে চলবেনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের এই মহান দেশের, আমাদের প্রাচীন আদর্শের সুরক্ষা।’ … গত এক বছর ধরে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে বলে শোনা যায়। গোলাগুলি চলছে নাকি সীমান্তে।

আগের দিনের চেয়ে যেন বেশি সময় ধরে উড়ল। একেবারে শেষে, যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর ভেসে এল,‘আপনার আলো জ্বালানোর সময় আর মাত্র একঘণ্টা বাকি আছে। দয়া করে তারপরে আলো বন্ধ করে দেবেন।’ এরপরে তারা উড়ে চলে গেল। চরাচর নিস্তব্ধ হয়ে এল, যেমনটা আগে।

যাদব বাইরে বেরিয়ে এল। আলো জ্বলছে। পর্দা ফেলা জানলা। সে যেখানে বসেছিল সেখানেই আবার বসল। লীলা বলল, ‘রুটি আর আলুর তরকারি আছে। খাবে? আমি বানাইনি যদিও। রান্নার মাসি বানিয়েছে। ঝাল বেশি লাগবে। ঝাল খাও তুমি? দরজার বাইরে রাখা আছে। চাইলে নিয়ে খাও।’ যাদব বুঝতে পারলনা কি বলবে। খিদে পেয়েছে সেটা ঠিক। সুতরাং খাওয়া শুরু করল। ঝাল সত্যিই একটু বেশি। কিন্তু খেতে চমৎকার।

‘কঙ্কর সঙ্গে প্রথম প্রথম দেখা হত ওই সব মেলা, জলসা এসবে। প্রথম চুমু… সেও একটা জলসায়। পেছনের দিকে বসেছিলাম। কঙ্ক অত সাহসী ছিলনা। আমই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু দিন দিন ওর জুয়োর নেশাটা বাড়তে লাগল। ওই যে সব সরকারি জুয়ো আছেনা, ফেল কড়ি মাখ তেল, গাল বাজাও পয়সা নাও, চোরের মায়ের বড় গলা… এই যাঃ! সরি তোমার মাকে অপমান করার জন্য বলিনি। তোমার মায়ের গলা নিশ্চয়ই বড় না। মা তো আর জিরাফ নন। রাগ করনা কেমন? খওয়া হয়ে গেলে হাত মুখ ধুয়ে নাও।’

‘এক একদিন তো আমার সঙ্গে দেখা করার কথাও ওর মনে থাকত না। এত নেশা। তেমনই একদিন, একটা জলসার সামনে অপেক্ষা করে করে যখন ও এলনা আমি খুঁজতে গেলাম। এদিক ওদিক খানিক ঘুরে বেড়ানোর পরে দেখি ওই যে অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চের পুরনো ভাঙ্গা বাড়িটা আছেনা, ওই যে গো প্রাচীন ঐতিহ্য ক্যাম্পাসের পাশের সরু গলিটা দিয়ে গেলে যেটা বাঁহাতে পড়ে, সেটার বারান্দায় সবাই মিলে বসে জুয়ো খেলছে।’

‘সেদিন ওর অবস্থা বেশ খারাপ। ওই যে তোমাকে বলেছিলাম না, ছেলেটা, সুবল, সে অনেক টাকা জিতে ফেলেছে। কঙ্ক হারতে হারতে একেবারে শেষে এসে ঠেকেছে। আমি যেতে আমাকে দেখে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করল, ‘টাকা আছে কিছু? কিছু ধার দিতে পার?’ বোঝো! কোথায় সরি-টরি বলবে তা না টাকা! তার ওপরে আমি মেয়ে, আমার কাছে টাকা থাকে? যাকগে বললাম সেকথা। বুঝতে পারছিলাম ওর অবস্থা খুব খারাপ। অনুরোধ করলাম খেলা বন্ধ করতে। ওর ওই বন্ধু দুজন, মানে নবীন আর পার্থও ছিল। যদিও ওরা তেমন কিছু বলছিল না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কঙ্ক খেলা চালিয়ে যেতে লাগল। অবশেষে একটা সময়ে এসে সত্যিই সব টাকা শেষ হয়ে গেল। হতাশ কঙ্ক পা ছড়িয়ে বসে পড়ল। আমি ভাবলাম যাক, এবারে ও নিশ্চয় বন্ধ করবে। জুয়ো খেলার অপকারিতা সম্পর্কে ওকে বোঝাব বলে ভাবছি এমন সময়ে সুবল নামে ছেলেটা বলল, ‘কঙ্ক ফুটে গেলি, নাকি? এত কম টাকা আর এত নাজুক কলিজা নিয়ে কেন আসিস এসব খেলতে?’ বুঝলাম ওর আঁতে ঘা লেগেছে, ও বলল, ‘ফুটে আমি যাইনি। আমি তোকে বলেছিলাম খেলা চালিয়ে যাব। তুই তো জানিস আমি মিথ্যা বলিনা। খেলা আমি চালাবই। টাকা শেষ। একটু অপেক্ষা কর। আমি টাকা জোগাড় করে আনছি।’’

যাদব গলায় একটা চাপা আওয়াজ করল। লীলা থেমে গেল। যাদব জিজ্ঞাসা করল, ‘রাত অনেক হল, গল্পটা আর কতক্ষণ চলবে?’

‘বেশিক্ষণ নয় আর। তবে তোমার ইচ্ছে হলে চলে যেতে পার। তোমাকে না পেলে হওয়া বাতাসকে শোনাব। আজ যখন বলতে শুরু করেছি তখন থামবনা। যদিও আমার মন বলছে তুমি যাবে না।’ তাকে চুপ দেখে লীলা পুনরায় শুরু করল, ‘ছোটি সি বাত বলে যে অ্যাপটা আছে জানো? ওই যে গো, যেটায় পনের কুড়ি সেকেন্ডের ভিডিও আপলোড করে সবাই। তখন সেটা সবে সবে এসেছে। আজকাল তো আর ওতে আপলোড করে বিশেষ আয় হয়না। তখন হত। তুমি ভাবছ কেন এটা বলছি? আসলে আমার তো গল্প বলার অভ্যাস নেই মাঝে মাঝে পরেরটা আগে বলে ফেলি। যাইহোক, টাকা পয়সা নিয়ে যখন কথাবার্তা চলছে এমন সময়ে হঠাৎ সুবল বলল, ‘আমি একটা বুদ্ধি দিতে পারি টাকা জোগাড়ের।’ ওর কথা বলার ভঙ্গীতে কিছু একটা ছিল যেটা আমার ভালো লাগল না। কিন্তু কঙ্ক তখন, যাকে বলে, ডেসপারেট। কিছুক্ষণ ওরা একটু দুরে গিয়ে গুজগুজ ফুসফুস করে কিসব কথা বলল। তারপরে কঙ্ক ফিরে এসে, ভাব একবার কী অদ্ভুত, আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। মানে ওইখানে, ওই মুহূর্তে বিয়ে করতে হবে। আমি তখন ছোট। বিয়ের ব্যাপারে কোন ধারনাই নেই। আমি তো কঙ্ককে ভালবাসতাম। রাজি হয়ে গেলাম। অল্প বয়সে যেমন হয় আরকি। কোথা থেকে ওরা দুটো মালা জোগাড় করে আনল। মৃতদেহের গা থেকে খুলে এনেছিল বোধহয়।’

‘মোবাইলে মন্ত্র চালিয়ে বিয়ে হল। ওদের আর এক বন্ধু, তাকে সেদিনই প্রথম দেখলাম, বাসুদেব আচার্য, সে তদারকি করল। ওই, মানে মন্ত্র বেছে দেওয়া-টেওয়া, এইসব।’

যাদব একটু নড়ে চড়ে বসল। লীলা প্রশ্ন করল, ‘কী হল? বসতে কষ্ট হচ্ছে?’ বলেই হেসে ফেলল, ‘তুমি না চোর? ছোট থেকেই চোর নাকি? মায়ের বানান আচার-টাচার চুরি করে খেতে? এতদিনের অভ্যাস তারপরেও শক্ত জায়গায় বসতে অসুবিধা হয়?’ যাদব প্রথমে ভেবেছিল চুপ করে থাকবে, তারপরে মন বদলে বলল, ‘না বসতে কষ্ট হচ্ছে না। তবে ভাবছি আর কতক্ষণ এই গল্পটা চলবে? আর তো ঘণ্টা আধেকের মধ্যে তোমাকে আলো নেভাতে হবে। তুমি যে বলছিলে আমি তোমাকে দেখতে পাব সেটার কী হবে?’ লীলা গুনগুন করে গেয়ে উঠল, ‘রাই ধৈর্য্যং, রহু ধৈর্য্যং…’

‘বিয়ে তো হল। তারপরেই যেটা হল সেটা আরও অদ্ভুত। বিয়ে শেষে, সব মেয়ের মত আমাকেও শপথ নিতে হল, ‘আজ থেকে আমি স্বামীর সম্পত্তি হলাম। আমার স্বামী আমার জীবনের এক এবং একমাত্র পুরুষ। তিনি যা বলবেন আমি তাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করব…’ এই সব। ওমা! শপথ পাঠের পরেই কঙ্ক আমাকে বলল, ‘শোন, তুমি আমার বউ। আমি অন্য লোকের মত নই। আমি তোমাকে সুখে, আনন্দে রাখব। কিন্তু আপাতত একটা সাহায্য করতে হবে।’ আমি জানতাম কিছু একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু বিয়ে করে ফেলেছি এখন তো আর স্বামীর কথার ওপরে কিছু বলার নেই। তাই বললাম, ‘বল, কী সাহায্য? আমি তোমার স্ত্রী। তোমার সব ব্যাপারেই আমি আছি।’ কঙ্ক যা বলল তা শুনে আমি তো হতবাক। সুবল ওকে একটা প্রস্তাব দিয়েছে। ওরা আর একটা বার জুয়ো খেলবে। যদি কঙ্ক জিতে যায় তাহলে সব টাকা ওর। যদি সুবল জিতে যায় তাহলে আমাকে ক্যামেরার সামনে পোশাক খুলতে খুলতে নাচতে হবে। ওরা সেটা লাইভ করবে ‘ছোটি সি বাত’-এ। কল্পনা করো!’

যাদব উঠে দাঁড়াল। লীলা কি কোন ক্যামেরা গোছের কিছু রেখেছে কোথাও? নাহলে সে বুঝল কিকরে? ‘কী হল? চলে যাবে নাকি সত্যি?’ কণ্ঠে যেন ক্লান্ত উদ্বেগ। ‘না। বসে বসে কোমরটা ধরে গেছে খুব। তাই একটু ছাড়িয়ে নিচ্ছি…’ বলতে বলতে সে থেমে গেল। একটা আওয়াজ হল না? খুব মৃদু, মাছির ভনভন করার মত একটা শব্দ। সতর্ক দৃষ্টি রাখল রাস্তার দিকে। কোথাও কিছু দেখতে পেলনা। যদিও রাস্তাটা কিছুটা এগিয়ে মোড় ঘুরেছে। তার ওপাশে কিছু দৃশ্যমান নয়। মেগামল-এর বিরাট, ধূসর, অন্ধকার বাড়িটা সমস্ত আকাশ ও দৃশ্যমানতা কে এক গ্রাসে খেয়ে ফেলে দাঁড়িয়ে আছে একা। ওই বাজার যদিও বহুদিন হল বন্ধ। আগের মতো অফুরন্ত কিছুই নয় আর। এখন সপ্তাহের রেশনের ওপরেই ভরসা করে সবাই। সেটাও সবসময় সময়ে পাওয়া যায়না। বড় বড় মাথারা তাদের গোডাউন থেকে লরি বোঝাই কিসব জিনিস কোথায় যেন নিয়ে যায় প্রতি রাতে। অন্ধকারে। গত এক বছর ধরে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে বলে শোনা যায়। গোলাগুলি চলছে নাকি সীমান্তে।

সতর্ক কণ্ঠে যাদব বলল, ‘গল্পটা তাড়াতাড়ি শেষ করো। আমাকে যেতে হবে। এতক্ষণ ধরে বাইরে থাকা ঠিক নয়। যেকোনো মুহূর্তে বিপদ হতে পারে।’

‘হ্যাঁ, আর বেশি বাকি নেই। তো, আমি তো খুব ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ে কাঁপছি আরকি। এমন সময়ে নবীন সেন আর পার্থ এসে আমাকে বলল, ‘শোন, তুমি জাননা। আসলে আমরা কঙ্কর ভাই। আমরাও তোমাকে ভালবাসি। আমরা চাই যে তুমি আমাদের সঙ্গেও বিয়ে করে নাও।’ এত ঘেঁটে গেলাম, এত ঘেঁটে গেলাম, উফ! কী বলব তোমায়। বলে কী এরা? যাইহোক, কথাবার্তায় যেটুকু বুঝলাম, আনুষ্ঠানিকভাবে তখনই বিয়ে করতে বলছে না। তবে মনে মনে স্বীকার করে নিতে হবে স্বামী বলে। এর মধ্যে কঙ্ক এসে তাড়া দিতে লাগল। ওদের সেই বন্ধুটা, মানে বাসুদেব, দেখলাম এক পাশে দাঁড়িয়ে কি যেন করছে। এত কনফিউশান। কী করে বোঝাব তোমায়।’

‘রাজি হলে?’, যাদব প্রশ্ন করল। অস্থির লাগছে তার। মোড়ের দিকে বারবার দেখছে। ঘন অন্ধকার। তার মধ্যে একটা দুটো আরও ঘন অন্ধকার নড়াচড়া করছে না? ইটের অমসৃণ পথে কি একবার বেজে উঠলো ভারি বুটের শব্দ? ওরা কি এগিয়ে আসছে? অন্ধকারে মিশে? আরও অন্ধকার হয়ে? আরও গভীর, গভীরতর অন্ধকার নিয়ে?

‘বললাম না ছটফট করনা। শান্ত হয়ে বসো। তুমি ছটফট করলে ওরা সহজেই তোমার অস্তিত্ব বুঝতে পারবে।… হ্যাঁ রাজি হলাম। রাজি না হয়ে কি করব? একে তো বিয়ে করে ফেলেছি। তার মধ্যে ওখানে সবাই ছেলে। আমি একা মেয়ে। একবার একটা ছবি তুলে যদি ‘ছোটি সি বাত’ বা ‘গল্পকথা’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় কি হবে ধারনা করতে পারছো?’

বুটের শব্দ? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই বুটের শব্দ। একটা নয়। কয়েক জোড়া। কোন ভুল নেই। এদিকেই আসছে। যাদব দ্রুত কিন্তু সতর্ক পায়ে ছাদের একটা কোনে গিয়ে উঁকি মারল। ঘন অন্ধকার। কিছু দেখতে পাওয়ার সম্ভবনা শূন্য। যারা আসছে তারা আঁধারচারী। তাদের যান্ত্রিক মুণ্ডুতে একটা ইনফ্রারেড সেন্সর লাগান। তাদের চোখে দেখতে হয়না। তাদের আলোর প্রয়োজন নেই। এক ঝলকে তার মনে পড়ে গেল কয়েকদিন আগে দেখা একটা দুঃস্বপ্নের কথা।

এক অদ্ভুত দেশে ঘুম ভেঙ্গে গেছে তার। রাতের আকাশেও যেন একটা দূরাগত আলোর আভাস। কালচে নীল আকাশে রাত্রির পাখিরা উড়ছে। দুরে কোথাও থেকে একটানা চার্চবেলের ঢং ঢং ভেসে আসছে। সে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রাস্তা ফাঁকা। নির্জন রাস্তার দুপাশে সারিসারি বন্ধ দোকান। রামধনুর প্রতিটি রঙে তাদের শরীর রাঙানো। প্রতিটি দোকানের শো উইন্ডোগুলো আলো ঝলমল। তীব্র নিয়ন আলোর নিচে রাঙে করে ঝোলান নানা বয়সের, নানা জাতির, নানা বর্ণের মানুষের মাংস। সে দুপাশ দেখতে দেখতে হাঁটছে। পুরুষের মাংস, নারীর মাংস, ফর্সার মাংস, কালোর মাংস, আমার মাংস, তোমার মাংস…

যাদব দৌড়চ্ছে। সাঁ সাঁ করে চারপাশে দোকানগুলো সরে যাচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে এসে উপস্থিত হল একটা বড় রাস্তায়। বিশাল চওড়া পিচের রাস্তা। নিশীথসূর্যের ম্লান আলোয় আলোকিত। অজস্র মানুষের একটা মিছিল হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। সবার হাতে একটা করে প্ল্যাকার্ড। কারো প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘৭৫ কেজি’, কারো ‘৫৫ কেজি’, কেউ আবার লিখেছে ‘২৩ কেজি’, কেউ ‘৮৯ কেজি’ … সে লাফ দিয়ে একজনের কাঁধ চেপে ধরে। ‘এই, এই তুমি কী করছ? কোথায় যাচ্ছ তোমরা?’ বলে চিৎকার করতে চায়। কথা বেরয়না। শব্দ আসেনা। বাক্য বিস্মৃত হয়। সেই মানুষটা ফিরে তাকায়। চোখের জায়গায় দুটো বড় বড় গর্ত। দুটো গভীর কোটর। আতঙ্কে ছিটকে সরে আসে যাদব। লোকটি তার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দেয় যন্ত্রের মত। তাতে একটা প্ল্যাকার্ড। ‘৫৯ কেজি’ …

দড়াম করে একটা শব্দ হয়। ওরা এসে পড়েছে। প্রথম লাথি পড়ল দরজায়। যাদব দৌড়ে চলে আসে চিলের ঘরের দরজার সামনে। আতঙ্কে কাঁপছে। মুখ শুকনো। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। তাও কোনক্রমে বলে, ‘লীলা দরজা খোল। আমাকে ভেতরে আসতে দাও। দয়া করো।’

‘এই এত লাফালাফি করছ কেন? বললাম না এত লাফালাফি করলে ওরা বুঝে ফেলবে?’ যাদব দরজায় লাথি মারতে মারতে বলে, ‘আরে বুঝে ফেলবে আবার কী? ওরা এসে গেছে। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দাও। দরজা খোল।’ লীলা অবিচলিত কণ্ঠে বলে, ‘আমি তো তোমাকে বললাম। গল্পটা শেষ করেই আমি দরজা খুলব। … আরে আমি তো এদিকে একটা একটা করে পোশাক খুলছি, বুঝলে, প্রথমেই নীল রঙের টপ টা খুলে ফেললাম। সুবল তার মোবাইলটা নিয়ে আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে। আমি শুনতে পাচ্ছি লাইভ দেখতে থাকা অজস্র মানুষের চিৎকার, ‘আরে ব্রা টা খোল!’… ‘টান মেরে ছিঁড়ে দে না’… কী ভয় করছে, কী যে লজ্জা, কষ্ট সে তোমাকে আর কী বলব। তাকিয়ে দেখি কঙ্ক মাথা নিচু করে বসে আছে। নবীন সেন আর পার্থ তার পাশে। একবার মনে হল জিজ্ঞাসা করি, ‘তোমারা তিনজন আমার স্বামী না? তোমাদের কোন বক্তব্য নেই? কিছুই বলার নেই? করার নেই? নাকি সম্পর্ক বলে, ভালবাসা বলে কোথাও কিছুই আর বাকি নেই?’

একটা চূড়ান্ত লাথিতে নিচের দরজাটা এবং সেইসঙ্গে যেন গোটা বাড়িটা কেঁপে উঠলো। যাদব চিৎকার করে বলল, ‘আমি জানি। তোমার এই গল্পটা আমি জানি। তুমি সেদিন দেখতে পাওনি কিন্তু আমি ওই লাইভে নিজে ছিলাম। আমি তোমার মুখের জায়গায় একটা গোলাপ ফুলের ছবি সুপারইম্পোজ করে দিয়েছিলাম। তোমার মনে আছে আমি তোমাকে এসে বলেছিলাম ‘ভয় পেওনা, আমি তোমাকে সাহায্য করব। মানুষ হয়ে মানুষকে বিপদে বাঁচান কর্তব্য।’ তুমি বুঝতে পারছনা। তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছনা বলে বুঝতে পারছনা। আমি-ই বাসুদেব।’

৪.

ওরা ফিরে যাবে এবার। চিলের ঘরের মেঝেতে যাদবের শরীরটা পড়ে আছে। নিঃসাড়। তিনটে তীব্র বুলেট তাকে ফুঁড়ে দিয়ে চলে গেছে একটু আগেই। দরজাটা ভাঙ্গা। দরজার বাইরে ওরা দাঁড়িয়ে। সমস্ত শরীর কালো রঙের বর্মে মোড়া। মাথা-মুখ ঢাকা কালো রঙের শিরস্ত্রাণে। চোখের জায়গায় দুটো কোটর। লালচে আলো জ্বলে আছে তার গভীরে। হাতে উদ্যত বন্দুক।

ঘরটা একদম ফাঁকা। একটাও আসবাব নেই। দেখেই বোঝা যায় এঘরে বহুদিন কোন মানুষ থাকেনি। মানুষ কোথাও বাস করলে জীবনের একটা গন্ধ রেখে যায়। এঘর একেবারে গন্ধহীন।

দরজার ঠিক পাশে একটা গোলাকার স্পীকার রাখা আছে। আর দরজার বিপরীতে যে দেওয়াল সেখানে একটা বড়সড় স্ক্রীন। যাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘আমার নাম সংলাপ। আমি আপনাদের নতুন এ আই সহায়ক।’

দরজার বাইরে তিনজন দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘দেশের আর একজন শত্রু খতম।’ কথাটা বলে সে চুপ করে রইল কয়েক মুহূর্ত। যেন কিছু শুনছে। তারপরে সে ডাকল, ‘সংলাপ।’ স্পীকার থেকে, কী আশ্চর্য, ভেসে এল নারীকন্ঠ, ‘বলুন’

‘তুমি আজকে গল্পটা ঠিক যেভাবে বলার কথা ছিল সেভাবে বলনি। কম্যান্ড সেন্টার জানতে চাইছে, কেন?’ সে প্রশ্ন করে। সামান্য সময় চুপ থেকে স্পীকার থেকে উত্তর ভেসে আসে, ‘মানুষ নামক প্রাণীটি, আমার মনে হয়েছে, অতি জটিল। ভাবলাম একটু বাজিয়ে দেখি।’

____

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes