মোহনা মজুমদার-এর গল্প

মোহনা মজুমদার-এর গল্প

ভাঙাগানের ভেলা

১)
তেরোই মে । ক্যালেন্ডারে তেরো সংখ্যাটি গোল করে দাগ দিয়ে সংখ্যাটির দিকে চেয়ে আছে সুপর্ণা, প্রযুক্তি যতই এগোক, কিছু কিছু বিষয়ে বাঙালি যেন এখনও নিজেকে প্রগতিশীল প্রমাণ করতে পারেনি। এই যেমন কোন বিশেষ দিন , বিশেষ কাজ এগুলো তো দিব্যি ফোনের রিমাইন্ডারের টু ডু লিস্টে সেট করে রাখা যায়, তবুও এই ক্যালেন্ডার এ গোল করে দাগ দেওয়া যেন আলাদাই নস্টালজিয়া। পিরিয়ডের ডেট থেকে শুরু করে পরীক্ষার ডেট বা বিয়ের ডেট সবই চলে ওই গোল দাগটার ভরসায় ।এই যেমন আগামী তেরোই মে সুপর্ণা ও অনিমেষের বিয়ের ডেট ঠিক হয়েছে , কিন্তু এত বড় সিদ্ধান্তের কথাটা রুমিকে কিভাবে বলবে সুপর্ণা? ওর মত ছাড়া তো সুপর্ণা এক পাও এগোবে না । এই নিয়ে ভেবে ভেবে যেন রাতের ঘুম উড়ে গেছে ওর।

– তুমি কেন এত চিন্তা করছো সুপর্ণা? আমি তো আছি।
– তুমি বুঝতে পারছ না এই সমত্ত্য বয়সের মেয়ে ,যদি মেনে নিতে না পারে ? যদি আমাদের ভুল বোঝে? কিছু উল্টোপাল্টা করে বসে?
– আমরা তো এখনই কোন অ্যারেঞ্জমেন্ট করছি না। আগে আমরা দুজনে বসে ওর সাথে কথা বলি তারপর ভেনিউ, ক্যাটারিং সব ফাইনাল করা যাবে। – ঠিক বলেছ।
– ও তো ওর অনিমেষ আংকেলকে ভালোবাসে, তুমি দেখো আমি বুঝিয়ে বললে ও ঠিক বুঝবে। তুমি আর এই নিয়ে চিন্তা করো না পর্ণা।
– তোমার মধ্যে এমন একটা পজেটিভ ভাইব আছে না, তুমি কাছে থাকলে আমি যেন অদ্ভুত একটা মনের জোর পাই।
‘ সে তো আমিও’ আদুরে গলায় বলে সুপর্ণাকে কাছে টেনে নেয় অনিমেষ।

২)
‘মা আমার বার্থডে পার্টিতে অনুভবদা কে ইনভাইট করেছি । তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?’
– না বেটা তোমার যত বন্ধু আছে, যাকে খুশি ইনভাইট করো আমার কোন আপত্তি নেই ।
– অনুভবদা তো বন্ধু না ,আমার সিনিয়র। আমি নাইনে পড়ি আর ও ইলেভেনে পড়ে। তুমি তো জানো মা ,ওর মা চায়না ও আমার সাথে মিশুক বাট আই লাইক টু স্পেন টাইম উইথ হিম ভেরি মাচ।
সুপর্ণা চুপ করে থাকে, ও জানে অনুভবের মা কেন রুমির সাথে মেলামেশা অপছন্দ করে। অনুভব আর রুমির প্রেম থু্রি বন্ধুত্বটা কিন্তু বেশ মিষ্টি। এই বয়সের মেলামেশা যেমনটা হয় ,ভীষণ পবিত্র । তবে এখনকার ছেলে মেয়েরা অনেক বেশি ম্যাচিউরড। তারা সব করবে কিন্তু সহজে সম্পর্কের গায়ে প্রেমের ট্যাগ লাগাবে না। এটা ভেবে মনে মনে হাসে সুপর্ণা ।

অনুভব অনিমেষের ছেলে। খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। অনিমেষ আর ওর ওয়াইফ মনীষার ডিভোর্সের পর ছেলের কাস্টডি মনীষাই পেয়েছে। প্রত্যেক মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে টাকা নিয়ম করে মনীষার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় অনিমেষ ।পরিবর্তে মাসে একবার ছেলের সাথে দেখা করার গ্রান্ট পেয়েছে কোর্ট থেকে । আসলে দুজন মানুষের দু’রকম মানসিকতা ,রুচি ,সংস্কৃতি ,চাওয়া-পাওয়া সবই যদি আলাদা হয় তখন বোধহয় একসাথে এক ছাদের তলায় থাকাটাও বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর তখনও শুভাকাঙ্ক্ষীরা আগুনে ঘি ঢালার মতো বলতে থাকে ‘কেন একটা মেয়ে বলেই কি বারবার সবকিছুতে মানিয়ে নিতে হবে? মেনে নিতে হবে? নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছাকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে ? সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট না হলে কি নিজের মত প্রকাশ করা যাবে না? ‘ । সমাজ বলবে ‘যে স্বামীর পয়সায় খাচ্ছো , পরছো সেই স্বামীর নামেই নিন্দা করছ এটুকু মানিয়ে নিতে পারছ না ? তা সমাজ যাই বলুক জীবনটা নিজেরই, নিজেকেই সাজাতে হয়। আর সেটাই করেছে মনীষা। সুপর্ণা আর অনিমেষের সম্পর্কের কথা জানার পর আর থাকতে চাইনি। বেরিয়ে এসেছে বৈবাহিকটা থেকে।

৩)
সুপর্ণা আর অনিমেষ পরস্পরের সহকর্মী। একই স্কুলে পড়ায়। একজন অংকের একজন বায়োলজি টিচার। প্রথম দিকে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের হলেও ধীরে ধীরে পরস্পর পরস্পরের প্রতি ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে ।

‘এই জানো তো ওই যে নতুন মেয়েটা জয়েন করেছে, বিয়ে হল কয়েক মাস আগে, ওরও শুনছি বিয়ে ভেঙে যাবে। যত দিন যাচ্ছে চারপাশে ডিভোর্সের সংখ্যা এত বেড়ে যাচ্ছে , ভয় হচ্ছে এই বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়ে আমরা কোনো ভুল করছি না তো? আচ্ছা তোমার কি মনে হয় অনিমেষ, আমাদের কি সত্যিই এই বিয়েটা করা উচিত? এই বয়সে এসে লোক হাসানোর কি খুব দরকার আছে? সুমন চলে যাওয়ার পর এত বছর আমি একা একা নিজের মতো করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি । তুমিও মনীষার সাথে থাকতে পারোনি, বেরিয়ে এসেছো। এবার তোমার যদি আমার সাথে থাকতেও অসুবিধা হয় ?
– উহু, ভুল বললে। আমি কিন্তু বেরিয়ে আসিনি মনীষা নিজেই বেরিয়ে গেছে আর সেটা তোমার কথা জানার পরে। বলতে পারো আমি ওকে আটকাইনি। তা তো তোমার সাথে থাকবো বলেই। তুমি কি সেসব ভুলে গেলে পর্ণা?
সুপর্ণা কিছু না বলে ওর সানগ্রিয়ায় স্পুনটা নাড়তে থাকে । আজ অনেকদিন পর ডিনার ডেটে বেরিয়েছে ওরা দুজন। একটা কোজি ক্যাফে । রুমি ইদানিং ওদের দুজনের সাথে বেরোতে চায় না। কিছু না কিছু বলে কাটিয়ে দেয়। আজও যেমন টিউশন আছে বলে আসেনি মার সাথে।

– জাপানি ভাষায় একটা বিখ্যাত উক্তি আছে জানো? ‘ইচি গো, ইচে-ই’। যার অর্থ ‘এক জীবনকাল ,এক সাক্ষাৎ’ অর্থাৎ আমাদের জীবনকাল একটাই আর প্রতিটি মুহূর্ত একবারই আসে তাই প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমাদের পুরোপুরি ভাবে উপভোগ করা উচিত। ভবিষ্যতে কি হবে, না হবে এসব ভেবে বর্তমানটা নষ্ট করোনা।

৪)
আজ রুমির জন্মদিন । পিঙ্ক গাউনে নিজেকে বার্থডে গার্ল সাজিয়ে বন্ধুদের সাথে হ্যাংআউট করছে সে। কিন্তু ওর মন পড়ে আছে অনুভবের কাছে । কখন আসবে অনুভব ,বারবার ফোন চেক করছে ওর মেসেজের রিপ্লাই দিল কিনা । ভাবতে ভাবতে দেখে অনুভব গেট দিয়ে ঢুকছে। আনন্দে প্রায় লাফিয়ে ওঠে ও। মনে মনে আজ ঠিক করেছে অনুভবকে ওর মনের কথা সব খুলে বলবে আর তখন অনুভব ও নিশ্চয়ই ওকে ওর মনের কথা জানাবে । এসব ভাবলেই যেন কেমন এক্সাইটেড লাগছে রুমির ।

‘এই রুমি হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার উইশ ইউ ভেরি ভেরি হ্যাপি বার্থডে। ‘
– এতে কি আছে গো?
– খুলে দেখ । আই হোপ তোর পছন্দ হবে।
– ওয়াও মাই ফেভারিট রাইটার মুরকামির ‘কাফকা অন দ্য শোর’ ! আই লাভ ইট অনুভবদা। থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। বাট আই ওয়ান্ট আনাদার গিফট ফ্রম ইউ !
– কি বল
‘পরে বলব’ বলে মুচকি হাসে রুমি। তারপর চিকেন ললিপপ এগিয়ে দেয় অনুভবের দিকে।
এখনকার ছেলেমেয়ে বাংলা তো দূর , হিন্দি গানও শোনে না। তার ওপর পার্টি বলে কথা। ইংলিশ গান মাস্ট। কেক, বেলুন ,আলোর ঝলকানি, হইহুল্লোড়, লোকজন, খাওয়া-দাওয়া সবকিছুর মাঝেও অনুভবের চোখ চলে যায় অনিমেষের দিকে। সে দেখে তার বাবা সুপর্ণা আন্টির সঙ্গে সঙ্গে সব গেস্টকে হোস্ট করছেন। ওর মুখটা যেন কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল । ওর মনে হলো ছেলেবেলায় যে বাবা ওকে স্কুলে নিয়ে যেত , ছুটির দিনে ক্রিকেট খেলত সেই বাবা আর আজকের বাবার মধ্যে অনেক তফাৎ । এক ঘরে দাঁড়িয়েও কত কত আলোকবর্ষ দূরত্ব এখন ওদের মধ্যে।
– কিরে বাবাই ! দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? আয় এদিকে আয় । এই দেখ তুই ভালবাসিস বলে সুপর্ণা আন্টি স্পেশালি তোর জন্য মাটন রেজালা মেনুতে রেখেছে ।
‘ মাও তো তোমার পছন্দের অনেক কিছু রান্না করত বাবা । কদিন কটা খাবার এভাবে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছ?’ ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয় অনুভব ।যেন এক নিথর স্তব্ধতা নেমে আসে গমগমে পার্টির এক কোণে।
‘ এই এবার কেক কাটা হবে। প্লিজ গায়েস কাম হেয়ার ।অনুভব দা আমার পাশে এসো।’
হৈহৈ করে বেশ ভালোই কাটছিল রুমির জন্মদিনের সন্ধা। সুপর্ণা আর অনিমেষের আতিথেয়তায় গেস্টরা যে যার মতো ডিনার সেরে ফেরার প্রস্তুতি নিতে থাকলো। সেই ফাঁকে রুমি অনুভবকে ডাক দিয়ে বললো ‘অনুভব দা আমার কিছু কথা আছে একবার টেরেসে আসতে পারবে?’

অমাবস্যার কালো আঁধারে কেউ কারোর মুখটাও যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না।
– বল কি বলবি।
– তুমি কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছ না ? আমি কি বলতে চাইছি ।
– না, কি হয়েছে বল । আবার কি তোদের ক্লাসের ওই ছেলেটা তোকে বিরক্ত করছে?
– না না ওইসব কিছু না ।
– তাহলে ?
– আই… আই লাভ ইউ অনুভব দা!
– মানে! কি বলছিস কি!
– ইয়েস আই হ্যাভ এন ইমেন্স ফিলিংস ফর ইউ অ্যান্ড আই ওয়ান্ট টু বি সিরিয়াস এবাউট ইট।
– ওয়েট ওয়েট ওয়েট । তুই একা চাইলেই তো হবে না, আমাকেও তো চাইতে হবে। শোন , আমার এখন সামনেই বোর্ড এক্সাম। তাছাড়া অল ইন্ডিয়া কম্পিটিটিভ এক্সাম গুলোর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। ফলে আমার এখন এই রিলেশনশিপ ইত্যাদিতে ঢুকে নিজের পড়াটা হ্যাম্পার হোক, আমি তা চাই না।
– ঠিক আছে আমরা দুজনেই পড়াশোনাটাকে প্রায়োরিটি দিয়ে যতটা যা করা যায়, সেভাবেই না হয় থাকব ।
– ব্যাপারটা এতটা ইজি নয় ।আমাকে খুব তাড়াতাড়ি নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। মার পাশে থাকতে হবে । তাছাড়া যে মানুষটার জন্য আমার বাবা মার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে আমি তারই মেয়ের সঙ্গে কোন সম্পর্কে জড়াতে পারবো না। আমি চাইনা এমন কিছু করতে যাতে আমার মা আবার কষ্ট পায়। আই থিঙ্ক আমি তোকে সবটা ক্লিয়ারলি বুঝিয়ে বলতে পেরেছি।
– হুম ।
– কথাগুলো হয়তো একটু রাফলি বললাম। বাট তোকে দুঃখ দেওয়ার কোন উদ্দেশ্য আমার নেই।
-ইটস ওকে।
– চল বায় !
পায়ের তলার মাটি যেন সরে যাচ্ছে রুমির । এটা কি শুনলো? তার মানে সবাই যা বলছে সেটাই সত্যি । এ কেমন সত্যের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো আজ সে ! কোনো সন্তানের কি নিজের মার সম্পর্কে এমন একটি মারাত্মক অভিযোগ শুনতে ভালো লাগে? নিজেকে সামলে গুটিগুটি পায়ে নেমে এসে দেখে ততক্ষণে ঘর মোটামুটি ফাঁকা। মা আর অনিমেষ আঙ্কল বেঁচে যাওয়া খাবার-দাবার, গিফট সব গোছাচ্ছে। রুমির যেন এই মুহূর্তে ওদের দুজনকে একসাথে দেখেই মাথাটা গরম হয়ে গেল। পরমুহূর্তে সামলে নিয়ে কিছু না বলেই নিজের ঘরে চলে যাবে ভাবল সে । হঠাৎ পিছন থেকে সুপর্ণার ডাক ‘ রুমি শোন ‘
– হ্যাঁ বলো।
– কি হলো রে হঠাৎ? সারা সন্ধ্যা তো ভালোই ছিলি হঠাৎ টেরেসে গেলি তুই আর অনুভব । তারপর দেখলাম ও একা নেমে চলে গেল আর তুই এখন নামছিস তাও মুখটা এমন শুকনো । কি হলো রে মা আমার?
রুমি যেন তখনও ফুঁসছে, প্রায় ঝাঁঝিয়ে মা কে উত্তর দিল ‘ তা যদি বুঝতে তাহলে তো এমনটা হতোই না মা ।’
– মানে কি বলছিস কি তুই? কি হয়েছে? আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেন ?
– কিছু না ছাড়ো। আমি ঘরে যাচ্ছি ।
সুপর্ণা কি তবে কিছু আন্দাজ করতে পারল নাকি অনিমেষকে নিয়ে এতটাই মত্ত যে মেয়ের মনের ভেতর কী ভীষণ তোলপাড় চলছে তা সে টেরই পেল না।

৫)
আজ রুমির স্কুলে এক্সাম শেষ। সুপর্ণা ঠিক করেছে রুমিকে স্কুল থেকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যাবে, সিনেমা দেখবে তারপর অনিমেষ এলে তিনজনে একসাথে ডিনার করবে বাইরে কোথাও।

– তুমি এসেছ কেন মা? প্লিজ বিশ্বাস করো তোমার এই অতিরিক্ত কেয়ার টা আমার জাস্ট ভালো লাগছে না ।
– আমি বুঝতে পারছি না সেদিন থেকে তুই আমার সাথে এরকম মিসবিহেভ করছিস কেনো? গাড়িতে ওঠ ।

গাড়িতে ওঠার সময় রুমি দূর থেকে দেখলো অনুভব দূরে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিনের পর থেকে অনুভব খানিক এড়িয়েই চলছে ওকে। রুমিও বড় আত্মসম্মানবোধ সম্পন্না কিশোরী। যেচে আর কথা বলতেও যাইনি অনুভাবের সাথে।

আজ অনিমেষ ও সুপর্ণা ঠিক করেছে নয় নয় করে তো অনেকদিন হলো , দিনও এগিয়ে আসছে তাই আজ রুমিকে বিয়ের কথাটা বলতেই হবে।
– রুমি তোর সাথে কিছু কথা আছে ।
– বলো ।
– আমি আর তোর অনিমেষ আঙ্কল ঠিক করেছি আমরা বিয়ে করবো।

কথাটা শুনেই রেস্টুরেন্টের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রুমি। রুক্ষ গলায় বলে ওঠে ‘আর ইউ ম্যাড মা, এই বয়সে এসে লোক হাসাতে ইচ্ছে করছে তোমার? ‘
– তুই এভাবে রিয়াক্ট করছিস কেন? তোর বাবা চলে যাওয়ার পর একা হাতে তোকে মানুষ করেছি, কত স্ট্রাগল করেছি ; আমার কি নিজের জীবনটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার কোনো অধিকার নেই? ভেবেছিলাম এই সিদ্ধান্ত তুই খুশি হবি। তোর কোনো আপত্তি থাকবে না।
– তুমি ভাবলে কি করে মা,আমি আমার বাপির জায়গায় আমি অন্য কাউকে বসাবো? তাছাড়া যে সম্পর্কের জন্য আমার নিজের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল সেই সম্পর্ক আমি কিভাবে খুশি মনে মেনে নেব, এটা হয়না মা।
– মানে কোন স্বপ্ন ভেঙে গেছে তোর ? বল আমায়।
– বাদ দাও মা তোমায় বলে কি হবে? আমার স্বপ্নটা তো সত্যি হবে না । আমি এলাম তোমরা এনজয় করো।
রেস্তোরাঁর ঘন হলুদ আঁধারি আলোয় সহসা যেন কেমন নিস্তব্ধতা নেমে এলো ।

– আমি ঠিক এই আশঙ্কাটাই করেছিলাম অনি ,এই মুহূর্তে আমায় আগে জানতে হবে ওর কোন স্বপ্ন ভেঙে গেছে। আমার সামান্য সুখের জন্য যদি আমার সন্তানকে তার জীবন দিয়ে মাশুল গুনতে হয়, আমি মা হয়ে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারব না তুমি আমায় ভুল বুঝো না অনি।
এভাবে বলোনা পর্ণা। তুমি আমাকে এই চিনলে? কেন ভুল বুঝবো? আমারও তো সন্তান আছে ওর মতামত তো আমাকে নিতে হবে ওরা এখন বড় হয়েছে ,তাই যা করার ভেবেচিন্তেই করতে হবে। আমরা এমন কিছু করবো না যা দিয়ে বাবা-মা হিসেবে আমাদের জায়গা ওদের চোখে অনেকটা নেমে যায়। আমি অপেক্ষা করব পর্ণা সেই দিনটার, যে দিনটা থেকে তুমি আর আমি এক ছাদের তলায় থাকবো।
– দেখা যাক কি হয়।
এক আকাশ অপেক্ষা স্বপ্ন বুকে নিয়ে উঠে যায় সুপর্ণা।

৬)
সত্যি কি এই বয়সে এসে ভালবাসা ,অপেক্ষা এই শব্দ গুলোর কোনো অস্তিত্ব থাকে মানুষের জীবনে নাকি একটা বয়সের পর সে শুধুই অবলম্বন খোঁজে। সুপর্ণা রুমির কাছে পরে জেনেছিল ওর মনের কথা,অনুভবের কথা ,তার দৃষ্টিভঙ্গির কথা, তার অভিযোগের কথা। সুপর্ণা কিন্তু কাউকে কিছু বলেনি। আঙুল তোলেনি। চুপচাপ শুনেছিল সবটা। তারপর ধীরে ধীরে নিজের মনকে শক্ত করে সরে এসেছিল অনিমেষের থেকে । বর্ম পরিয়েছিল নিজের চারিধারে। বয়স নিজের মত করে সংখ্যা বাড়িয়েছে নিজের ঘাড়ে। আর একটু একটু করে ম্লান হয়েছে অপেক্ষা নামক অবয়বটির এক একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। অনিমেষ আর মনীষা একসঙ্গে থাকে এখন। তার কারণ নাকি মূলত ছেলের স্বার্থে ।এখন আর কথার পিঠে কথা সাজাতে ইচ্ছে করে না। যুক্তিতর্কের অক্ষর গুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে ,ব্যঙ্গ করে।

রিটায়ারমেন্টের পর এখন দিব্যি কাটছে সুপর্ণার। একটা এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যারা নিপীড়িত মেয়েদের মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ করে।পৃথিবীতে কত ধরনের মানুষ ,কত ধরনের তাদের সমস্যা। তাদের সমস্যার কথা ,অভিজ্ঞতার কথা শুনতে শুনতে সুপর্ণা ভুলে যায় নিজের কথা। জীবন তাকে আজ ভুলিয়েছে একটা অতীত, জীবন তাকে আজ ভুলিয়েছে একটা মানুষ, হাজারো স্মৃতি প্রতিশ্রুতি অবয়ব। ‘ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী ,একা একা করি খেলা’ গান ভেসে যাচ্ছে সুদূরে…

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes