
দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা
মহাকাব্যিক ভোরে
রবীন্দ্রনাথ চিনিয়েছিল রেবাবৌদি, সোনাগাছি বেড়াতে গেছি
নসুকাকুর হাত ধরে
আমার দিব্যদৃষ্টি উন্মোচিত হয়েছিল এক শ্রাবণসন্ধ্যায়
সে সব কহতব্য নয়, কবেকার মহাকাব্যিক ভোরে
একটি পিচ্ছিল সুড়ঙ্গপথে ধাবিত হয়ে
ছিটকে এসে পড়েছি এই জ্যোৎস্নায়
ঠিক সেই মুহূর্তে নিধুবাবুর টপ্পা ধরেছিলেন নিকুঞ্জবিহারী
ফিটনে চেপে ছপ্পন ছুরি’র মজলিসে যাচ্ছিলেন প্রপিতামহ
আমার প্রাগৈতিহাসিক গায়ের চামড়া পুড়ে গিয়েছিল
অথচ আমি ভালোবাসতাম মেঘমল্লার
বৃষ্টির উঠোনে দাপাদাপি করত যে-মেয়েটা
তার স্নান দেখতে গিয়ে বখে গিয়েছিলাম
তার পর অনেকগুলো বছর কাটল
কত শিশু জন্ম নিল, কত নারী-পুরুষের অগস্ত্য যাত্রা হল
আমি কখনও রেবাবৌদির বুক দেখতে চাইনি… বহুত শরম লাগত
রাত্রি
৯ জুন, ‘২৫
উদ্যাপন
রাসবিহারী মোড়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছেন আমাদের সক্রেটিস
তিনি সুদর্শন, ফরসা গালে লাল লাল ছোপ, তবে তাঁর কোনও গার্লফ্রেন্ড নেই
কয়েক দশক আগে সক্রেটিস প্রেমে পড়েছিলেন, কাকপক্ষীটিও জানতে পারেনি
নন্দনের ফেস্টিভ্যালে গোদারের ছবি দেখতে গিয়েছিলেন
সেখানেই মেয়েটাকে দেখে টানা দু’রাত্তির ঘুম আসেনি
সক্রেটিস ভালোবেসে ফেলেছিলেন জাম্প কাট… এবং, ধরা যাক, বন্দনাকে
রাসবিহারী মোড়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছেন আমাদের সক্রেটিস
আজ তাঁকে বড় বিষণ্ণ দেখাচ্ছে, চোখদু’টি রক্তবর্ণ
রাত জেগে এরিক ফ্রম পড়েছেন, তার পর লিখেছেন গোটা একটা সনেট
ভালোবাসার জন্মদিনে তাঁর নিভৃত আকাশে গোলাপি চাঁদ উঠেছে
সকাল
১১ জুন, ‘২৫
মাতিসের ক্যানভাস
কার্জন পার্কের সামনেটায় পৌঁছে চিঠি লেখা কাগজটা ছিঁড়ে ফেললাম
ঠিক তখনই অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ঘোষিকা নিতম্ব দুলিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছিল
দূরে গোধূলির সূর্য, ইডেন গার্ডেন্স-এর ফাঁকা গ্যালারি…
ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে একটা ফিচেল বেশ্যা খদ্দের খুঁজছিল,
ওর ভারি বুকের আফসোসটুকু নিয়ে হাঁটা লাগালাম
পটুয়াপাড়া লেনের গলি তস্যগলি পেরিয়ে
একটা গোলকধাঁধার শহরে
বারোয়ারি শ্মশানের গনগনে চুল্লির মধ্যে গিয়ে পড়লাম
তার পর আর ভাবিনি
তোমাকে উলঙ্গ করে অ্যানাটমি বুঝেছি,
হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে ঢ্যামনা পুরুষ চিনিয়েছি
তোমার বায়োস্কোপের জীবনে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছি বরাবর
লোকচক্ষুর আড়ালে আমাকে নিয়ে ঘুরতে গেছ তাহিতি
সেখানে আমাদের জীবনের সব গল্পগাছা মাতিসের ক্যানভাস হয়ে গেছে
বিকেল
৯ জুন, ‘২৫