
বিনোদ কুমার শুক্ল-এর সাম্প্রতিক কিছু কবিতার অনুবাদ। অনুবাদক- বেবী সাউ
হিন্দি ভাষার বিশিষ্ট কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক বিনোদ কুমার শুক্ল ১৯৩৭ সালে ১জানুয়ারি ছত্তিসগড় রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হিন্দি সাহিত্যের প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি অসাধারণ কথাকার। সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারে পুরস্কৃত বিনোদবাবুকে এবছর ভারতীয় সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার জ্ঞানপীঠ সম্মানে সম্মানিত করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই কবিতাগুলো তাঁর সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ 'কেবল জড়ে হ্যায়' কাব্যগ্রন্থ থেকে (প্রকাশক- হিন্দযুগ্ম) সরাসরি হিন্দি থেকে এই প্রথম বাংলায় অনুবাদ করা হল।
‘শুধু শেকড়ই আছে’ কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা
রাত দশ মিনিটের
রাত দশ মিনিটের হয়
তো পাঁচ মিনিটে অর্ধেক রাত হয়ে যায়
এমন ভাবেই রাত কাটে।
দিন দশমিনিটের
তো পাঁচ মিনিটে অর্ধেক দিন
এমনভাবে দিন চলে যায়।
আমি দু’দিনের জীবন বাঁচতে এসেছি
একদিন আমি তোমার কাছে থাকব
দ্বিতীয়দিন তুমি
আমার পাশে থেকো।

যাওয়ার সময়
যাওয়ার সময় খানিকটা যাওয়া
সে নিজের সঙ্গে নিয়ে গেছে।
বাকি নিজের যাওয়া
নিয়ে যেতে ভুলে গেছে সে।
আমার ভাষা
আমি নিজের ভাষায় শপথ নিচ্ছি
আমি কোনও ভাষার
অপমান করবো না
এবং আমার মাতৃভাষা
প্রত্যেক জন্মে বদলাতে থাকুক
আর এর জন্যই আমি বারবার
জন্ম নিতে থাকব—
এটা আমি সমস্ত জীব-জগতকে বলছি
পাখি, পশু, কীটি-পতঙ্গদেরও।

বাড়ি থেকে দূরে
বাড়ির বাইরে
সমুদ্রের ধারে
পায়চারি করতে থাকি আমি
(কেউ যদি ডুবার জন্য আসে তো বাঁচাতে পারি)
সবার প্রথমে এলো
আমার গ্রেজুয়েট ছোট ভাই
তারপর যুবতী কুমারী বোন
তারপর কমজোর মা আমার
বুড়া বাপ।
কিন্তু এই সমুদ্র তো অনেক বড়
আমি কী করব
তারপরেও আমি বেকার।

আমি এখন কিছুটা সময়
আমরা এখন কিছুটা সময় চুপ থাকি
এবং শুনি আমরা কী কী বলতে চাই
চোখও বন্ধ করে নাও
এবং দেখ, আমরা কী কী না দেখছি
আমরা কী সত্যি কিছু দেখতে এবং শুনতে পাব!
নদী তুমি এই তীরে এসো
নদী তুমি এই কিনারে থাক
কিংবা ওই কিনারে
এপারে হও কিংবা ওপারে
কিংবা তুমি শুধু মাঝবরাবরই থাক!
সত্যি নদী, ভালোবাসায়
তোমাকে বুঝতে পারি না আমি।

রোজকার সূর্যটি
ওইদিন সকালে সূর্য উঠত না
যেদিন তুমি কপালে
ভুলে যেতে টিপ পরতে
কিন্তু ওইদিনও সকাল ছিল
যখন তুমি কপালে টিপ পরবে
এবং সূর্য বেরিয়ে আসবে।
এটা বলেছিলে
বলেছিলে যে পরিস্থিতি
আমাদের আলাদা করে দেবে
তুমি স্বয়ং আলাদা হয়ে গেলে
তুমি পরিস্থিতিকে সুযোগই দিলে না
আলাদা করার।
বছর চলে গেল, ভাবি
পরিস্থিতি আমাদের মিলিয়ে দেবে রাস্তায়
আমি দাঁড়িয়ে থাকি।
ধনীদের চেহারা
ধনীদের চেহারার
খাড়া থাকে উঁচু নাক
আর মূল্যবান সেন্টের গন্ধ!
সুগন্ধকে আমি জানি না
দুঃখকে জানি।
যখন সবকিছু চলতে থাকে
যখন সবকিছু চলতে থাকে
ওই রকমই তুমি আমি সবাই
ঘষটাতে থাকি
জীবনের সড়কে
নিয়মের ঠিক বাঁ’য়ে
হাট বাজার
কখনো ঘরের দিকে।
অনেক কিছু দেখা বাকি আছে
অনেক কিছু দেখা বাকি আছে
তাই আমি নীচ থেকে উপর পর্যন্ত
চোখ হয়ে গেছি
এই মস্তিষ্কের চোখ
কাজের চোখ।
অনেক কিছু দেখা বাকি
তাই এদের কারো কাছে
এবং এখানে কোথাও
অশ্রু নই আমি।

