গালিবের কবিতা <br />  শুভ চক্রবর্তী

গালিবের কবিতা
শুভ চক্রবর্তী

হুঁ গর্মী – এ – নিশাত – তসব্বুর সে নগমা সঞ্জ
ম্যায় অন্দলীব- এ গুলশন- এ না – আফরিদা হুঁ

– গালিব

অর্থাৎ গালিবের এই দ্বিপদী আমাদের এক রহস্যময় অন্ধকার গলির মধ্যে নিয়ে যায়। এখানে কেন প্রথমেই বলে নেওয়া হলো ‘ রহস্যময় ‘এবং ‘অন্ধকার ‘শব্দ দু’টি ? এখানে আমাদের উদ্যেশ্য কী? আসলে আমাদের উদ্যেশ্য এখানে আলোচনার একটা পথ খোঁজা। কেমন সেই পথ আর সেই পথে আমরা গালিবের কোন দিক নিয়ে আলোচনা করবার অভিপ্রায় রয়েছে। সেটা জানার আগে আমাদের স্পস্ট হয়ে যাওয়া প্রয়োজন যে আমরা গালিবের সেইসব চিন্তার কথা নিয়ে তাঁর কাব্য ধারার ঘরদোর কতটা স্বচ্ছ সেইসব নিয়ে যেমন আলোচনার একটা সুতো খুঁজব পাশাপশি আমরা গালিবের সূচনা পর্বের কাব্যবোধ কী কারণে ভিন্ন সে বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত জীবনচর্যার গলিপথ ঘুরে বেড়াবার চেষ্টা করব। এই যে প্রথমে তাঁর দ্বিপদী উল্লেখ করা হলো এর অর্থ কী? আসলে এখানে গালিব বলতে চাইছেন যে ‘ এটাই পরমানন্দ আর জেগে থাকার আনন্দ। যা সেই ‘সুর ‘আমার ভেতরে নিরন্তর প্রবহমান।’ এই পর্যন্ত আমরা একটা আলো অন্ধকারের মধ্যে গালিবের হাত ধরে যাচ্ছিলাম। আমরা এখানে সেই কাব্য চিন্তার আলপনা কল্পনা করতে পারছিলাম । আর এটাও বুঝতে পারছিলাম যে গালিব ঠিক আমাদের কোন পথে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তারপরেই গালিবের মন পরিবর্তন হলো। তিনি অত সহজে পথে, পথের পথ হয়ে আমার সঙ্গে থাকবেন না। আর এটাই তো তাঁর এক স্বভাব। তাঁর মনের এক ভিন্ন প্রবণতা যা আমাদের বিভ্রান্ত করে বৈকি। তিনি এর পরে বললেন যে ‘আমি সেই বাগানের বুলবুল যে এখনও এই মর্তে
জন্মগ্রহণই করেনি!’ তাহলে? এই যে আমরা এতক্ষণ তাঁর সঙ্গে ছিলাম ! মুহূর্তে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন । কেন ? তিনি কি চান না যে তাঁর এই কথার ভেতরে কেউ প্রবেশ করে তাঁর সঙ্গে ভিন্ন এক পথের পথিক হয়ে উঠুক ? নাকি তিনি আমাদের ভিন্ন কোনও ইশারা করলেন! হয়ত এই ইশারাই আমাদের কবিবোধের উপলব্ধির তরঙ্গ কিংবা অদৃশ্য কোনও অন্তত ! আবার এটাও হতে পারে যে তাঁর চিন্তার প্রবণতা যেভাবে বিস্তারিত হয় তাতে করে এটা একটা প্রবাহকে ধরতে চায় আর সেটাই তার একটা আঙ্গিক ! গালিবের সমালোচক যাঁরা তাঁর গালিবের কাব্য সূচনার সময়ের কবিতার অস্পস্টতা নিয়ে যতনা কথা বলেছেন তার থেকে কম কথা বলেছেন তাঁর পঁচিশ বছর বয়েসের লেখা নিয়ে। অর্থাৎ তাঁরা কবিতার অসংগতি ধরবার অভিপ্রায়ে ভিন্ন এক জগতের সৃষ্টি করেছেন। এটা ঠিক যে আজকে আমরা গালিবের লেখা নিয়ে যতটা আলোচনা করতে পারি তা সেইসব সমালোচকের জন্যই। কেননা তাঁরা যদি গালিবকে এইভাবে কাটাছেঁড়া না করতেন তাহলে আমদের গালিবকে বুঝতেই অনেক সময় চলে যেত। আবার এও বলা যায় যে গালিবকে আমরা যতটা বোঝার চেষ্টা করি না কেন তিনি আরও রহস্যময় হয়ে ওঠেন। তাহলে এখানে প্রশ্ন আসবে কীভাবে আমরা
গালিবের কাব্য চিন্তার আলপনায় খুঁজে পাব একজন ক্ষতবিক্ষত কবির অভিপ্রায়? এইখানে এও জেনে রাখা প্রয়োজন যে গালিব সমালোচিত হয়েছেন একজন পথভ্রষ্ট কবি হিসেবে। কেন ? কেন সমালোচকের মনে হয়েছিল যে মির্জা আসলে একজন অসচেতন ও পথভ্রষ্ট কবি। তাহলে কি গালিবের কবিতায় কবিতা নির্মাণের আঙ্গিক ভিন্ন বলে এইরকম আমদের মনে হয়েছে? এমনকি আমরা এইরকমও ভেবেছি যে তিনি উর্দু কবি নন? তাহলে কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে গালিব কোন ভাষার কবি? স্বাভাবিক এই প্রশ্ন, যিনিই সে প্রশ্ন তুলুন না কেন । কেন স্বাভাবিক ? সে প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় গালিবের কবিতায় শব্দগঠন একটা গুরুত্বপূর্ণ সামঞ্জস্য।
। কিন্ত আমরা যদি গালিবের কাব্যসূচনা পর্বের দিকে এগিয়ে যাই তাহলে আমরা দেখতে পাব আসলে আমরা যা ভাবছি তাঁর কবিতা নিয়ে তা অনেকটাই আলাদা। কেমন সে আলাদা? এর উত্তর জানতে গেলে আমদের তাঁর সঙ্গে অর্থাৎ গালিবের সঙ্গে এক দীর্ঘ পথের ধুলোয় নিজেকে ছড়িয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ এর পিছনে রয়েছে তাঁর উদ্ভাবনী ক্ষমতা। তাহলে এও তো ঠিক সবাই তো ওইরকম করে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার সময় বা সাহস পান না । কিন্তু তাঁদের এইসব জানার পূর্ণ অধিকার আছে। আর আছে বলেই গালিবের পাঠকের ভিন্ন ভিন্ন মুখ গড়ে উঠেছে। তাহলে কী উপায়ে জানা যাবে সেইসব পথের খুঁটিনাটি বিবর্তন। আর কীভাবেইবা আমরা তাঁর কাব্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ চিন্তার মৌলিক স্তরে গিয়ে তাঁর কবিতার শব্দগত ধ্বনিকে আত্মস্থ করতে পারব? কেননা গালিবের উদ্ভাবনী ক্ষমতা এত বিস্তৃত বহুমুখী যে আমরা হয়ত তাঁর শব্দ বিন্যাসের গঠনের ভিন্নতাকে বুঝতেই পারলাম না। জটিল সেই বিন্যাস যখন আমদের মনে ছাপ ফেলে অর্থাৎ যখন আমরা গালিবের কবিতায় প্রবেশ করি ঠিক তখনই শব্দ তরঙ্গের সূক্ষ্ম কনা আমদের চিন্তার মৌলিক স্তরে গিয়ে আঘাত করে। তখন সেই কম্পনের প্রবাহ বিপরীত মুখে ছুটে আসে । আর আমদের মন সেই ছুটে আসা তরঙ্গের মধ্যে খুঁজতে থাকে নুতন কিছু সূত্র। যখন আমদের মনের উপর দিয়ে সেই কম্পমান সূক্ষ্ম ধ্বনি প্রবাহিত হয় তখন মনই একমাত্র সজাগ থাকে তার প্রকৃতি বুঝে আত্মস্থ করতে । কিন্তু অনেকসময়ই তা হয়ে ওঠে না । এটা হয় আমদের জীবনচর্যার মধ্যে কখনও কখনও ব্যক্তিগত আমির বোধ সৌন্দর্য ও ভালোবাসা উপলব্ধি করতে অসহায় বোধ করে। আর এখানেই গালিব নিজেকে আড়াল করার একটা সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু এত উদ্ভাসিত হয়ে কেন নিজেকে কেউ আড়াল করতে চাইবেন? আসলে গালিব কখনও নিজেকে এমন কবি বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইতেন না যাতে কেউ তাঁকে তাঁর কাব্যবোধের আধারকে উর্দু তকমা দিক। আর সে কারণে কখনও কখনও তাঁকে বিব্রত হয়ে সমালোচকদের থেকে দূরে সরে আসতে হয়েছে। আর এই কারণে কি তিনি আমাদের এমন দু’টি জগতের মাঝখানে নিয়ে এসে একটা গোলকধাঁধায় ছেড়ে দিয়ে যান যাতে আমাদের মন বিভ্রান্ত হয় ! সম্ভবত গালিব নিজেও এটাই চান! যদিও গালিবের পাঠকের কাছে এটাই একটা গুরুত্বপুর্ন মুহূর্ত। তার আগে এটা মনে রাখা প্রয়োজন আমদের যে চিন্তার জগতের পরিধি তা সে যতই বিস্তৃত হোক না কেন সে পথের পথ সৃষ্টিই হয়েছে আমদের ভাবনার তরঙ্গ ঠিক কতখানি ছড়িয়ে যেতে পারে তার উপর নির্ভর করে। আর এখানে ভুলে গেলে চলবে না যে গালিবের ভাষার যে ‘ মুহূর্ত ‘ সামঞ্জস্য তা কখনোই একবার পাঠে আমাদের চিন্তার মৌলিক স্তরে গভীর কোনও ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে না । এটাই স্বাভাবিক যে একজন কবির শব্দগত ধ্বনিকে খুব সহজেই যে আত্মস্থ করতে পারব এমনটা নাও হতে পারে। আর এটা তো ঠিক যে গালিবের উদ্ভাবনী ক্ষমতাই যেমন গালিবকে পাঠকের সামনে এনেছে পাশাপশি ওই একই ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তিনি সমালোচকের ঘ্রাণশক্তির পরীক্ষা নিয়েছেন! এর অর্থ হচ্ছে তিনি তাঁর উর্দু কবিতায় যে আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন সে ধারণা সমসাময়িক পাঠকের কাছে অকল্পনীয় ও মর্জিনের বাইরে থাকা একটা বিষয়। আমরা আগেই সূক্ষ্ম একটা অভ্যাস উল্লেখ করেছি যে গালিবের সমালোচক গালিবের কাব্য চর্চার সূচনা পর্বের প্রবাহকে পথভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু বাস্তবে, সেই পথভ্রষ্টতার বা অস্থিরতার সঙ্গে তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার কোনও সম্পর্ক ছিল না। যদিও এই বিষয়টির সঙ্গে পরিভাষার অসমতার সম্পূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কেননা হয় তিনি বেদিলের শৈলীতে গভীরভাবে ডুবে ছিলেন বলে, অথবা ফার্সি ভাষার প্রতি তাঁর দুর্বলতা ও ভাষার প্রান্তিক ধ্বনি বিন্যাসের গঠন অন্বেষণের কারণে। কিংবা তাঁর কবিতায় এক কুয়াশাঘন রহস্যময় তরঙ্গ সৃষ্টির করার প্রতি আকাঙ্ক্ষার কারণে। আমরা জানি বেদিল একই তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য পাঠকের কাছে একজন ভিন্ন মার্গের কবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন ব্যক্তিগত আমির প্রসঙ্গ। অর্থাৎ গালিব নিজেকে তাঁর সমসাময়িক কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি মনে করতেন । এইভাবে যদি আমরা একটা ধারণার আবর্তে একটা অস্পস্ট ও মিথ্যা আখ্যান গড়ে তুলি তাহলে গালিবের কবিতায় প্রবেশ করতে গিয়ে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নেব। আর ফলে কবিতার পরম্পরা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়তে পারে। একজন কবি শ্রেষ্ঠত্বের চিহ্ন নির্ভর করে অত্যন্ত রহস্যময় এবং কঠিন ভাষা ব্যবহারের উপর এই ধারণার কোনও যৌক্তিকতা নেই। আমার মনে হয় গালিব এইরকম স্থূল ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হলে গালিবের ভিন্নতা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে পারতাম না। কিন্ত কেউ কেউ এমনও মনে করতে পারেন যা সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরে ছিল, গালিব তাঁর কাব্যিক ধারণা প্রকাশের জন্য একটি অস্বাভাবিক শৈলী গ্রহণের সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু যদি আমরা এইভাবেই ভাবি তাহলে আত্মদোষের আঘাত গালিবের কবিতায় স্পস্ট হতো। কিন্ত তাঁর সমগ্র দীওয়ান যদি আমরা নিভৃতে পাঠ করেই অবসর পাই তাহলে সেখানে আত্মদোষের চিহ্ন দেখতে পাই কী? আবার বিপরীত প্রশ্ন আসবে এর পাশাপাশি তাহলে কি তাঁর কবিতায় রয়েছে ভিন্ন এক ধ্বংস চিহ্ন? এভাবেও যে কেউ কেউ ভাবতে পারেন সেও গালিবের উদ্ভাবনী ক্ষমতা।

দুই

কিন্তু এই যে আমরা বলছি গালিবের কবিতায় শব্দ গঠন কিছুটা হলেও ফারসি ভাষার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক ভিন্ন আঙ্গিকে পরিবর্তন হয়েছে । সত্যিই কি তাই? এটা তো ঠিকই যে গালিবের কবিতার ভাষা উর্দু বা ফারসি কোনোটাই নয় ! তাহলে? যদিও তিনি উর্দু ভাষায় লিখলেন তাঁর কবিতা কিন্তু তা না উর্দু না ফারসি। অর্থাৎ গালিব উর্দু ভাষায় লিখলেন কিন্তু তাঁর চিন্তার মৌলিক স্তর রয়েছে ফারসি ভাষার গভীরে। কেউ কেউ একটু ভিন্ন ভেবে বলতে চাইবেন যে গালিব ফারসি ভাষায় উর্দু লিখেছেন । কথাটা যে মিথ্যা নয় তার একটা প্রসঙ্গ আমরা পাই হালির আলোচনায়। হালি উল্লেখ করেছেন : “ভাষা উর্দু বা ফার্সি ছিল না। আপাতদৃষ্টিতে, তিনি উর্দুতে লিখছিলেন, কিন্তু তাঁর চিন্তাভাবনা ফার্সিতেই আটকে ছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায়, সেগুলো ফার্সি ভাষায় উর্দু লেখা। হালি নিজেই এ কথা উল্লেখ করেছেন: প্রথম থেকেই ফারসি ভাষা মির্জার প্রতিদিনের বক্তব্য ও তাঁর কল্পনাকে রঙিন করে তুলেছিল। ভাষা যতটা অপরিচিত ছিল ঠিক তেমনই অপরিচিত ছিল তাঁর ধারণা যা প্রকাশিত হয়েছিল। মির্জা তাঁর উর্দুতে ফারসি বৈশিষ্ট্য যেমন ক্রিয়াবিশেষণ এবং শব্দ সংযোগকারী শব্দগুলো উদারভাবে ব্যবহার করেছিলেন। কিছু কিছু পঙক্তি ছিল যেখানে কেবল একটি শব্দ পরিবর্তন করলে পুরো পঙক্তিটিই একটি ফার্সি পঙক্তিতে পরিণত হত। এই অভিব্যক্তিগুলি ছিল মির্জার বিশেষ আবিষ্কার যা আগে উর্দু বা ফারসিতে দেখা যায়নি।” (১৮৯৭: ১০২–৩)

আমরা মনে করি ধারণা এবং উপলব্ধি প্রকাশের জন্য শব্দ একটা পথ। কিন্তু সে পথের ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক। সসুর যেমন বলেছেন ‘এমন কোনও চিহ্ন নেই যার কোনও অর্থ নেই।’ ঠিকই তো। একটা চিহ্ন কখনও কখনও সমগ্রতাকে প্রকাশ করে। নয় কী? যেমন ‘একটা শব্দ, একটা কৌশল, একটা চিত্র, একটা উপমা, একটা রূপক, একটা চিহ্ন, একটা সূচক, একটা বিষয় বা একটি চিহ্নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’ এটাও সত্য যে, শুরু থেকেই গালিবের কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীল শক্তি এতটাই বিস্তৃত এবং আকর্ষণীয় ছিল যে, তুলনামূলকভাবে ভাষা যেখানে পথ হারিয়েছে। অর্থাৎ গালিবের কাছে ভাষা হলো এমন এক সামঞ্জস্য যা আমার চিন্তার জটিলতাকে সহজ করবে। কিন্তু গালিবের লেখা পাঠ করে আর একথা বলা যায়? যায় না যে তা নয় বরং আমরা দেখার দৃষ্টিকে যদি ভিন্নতা দিতে পারি তাহলে গালিবের বক্তব্যে কোনও জটিলতা নেই যেমনটা হালি মনে করতেন। গালিবের প্রাথমিক উর্দু কবিতার সমালোচনা শুরু করেছিলেন হালি এবং আজাদ। যদিও তাঁরা মির্জার ভক্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আজাদ তার “আব-এ হায়াত” বইতে লিখেছেন, ‘মির্জার নাম পৃথিবীতে যেভাবে সমাদৃত তেমনই তাঁর কবিতা ব্যাখ্যার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আবদ্ধ।’ কেন? আজাদ কেন এই কথা লিখলেন তাঁর ‘আব-এ হায়াত’ – এ? বিষয়টি এভাবে বললে বোধহয় আরও স্পস্ট হবে যে কিছু দ্বিপদী এত জটিল যে সেগুলি আমাদের বোধগম্যতার মানসিক সীমার বাইরে’ (১৯৫০ [১৮৮১]: ৫০২)। অন্যদিকে হালি বলেন যে মির্জা ছিলেন এমন একজন কবি যিনি সরল কবিতার চেয়ে জটিল দ্বিপদী কবিতা লিখতে বেশি পছন্দ করতেন। এটা ঠিক যে হালি’ র কাব্যবোধ এমন এক উচ্চতায় আটকে ছিল যা গালিবের জীবনচর্যার থেকে ভিন্ন। একথা আমরা জেনে নিতে পারি তাঁর আলোচনা পড়লেই। যেমনটা তিনি লিখেছেন মির্জার প্রথম দিকের কবিতাগুলো দেখলেই বোঝা যায় যে কিছুটা তো স্বভাবের জন্য এবং বেশিরভাগ মুল্লা আব্দুসসমসদের শিক্ষার জন্য ফারসিয়ানার রঙ শুরুতেই মির্জার কথাবার্তায় এবং তাঁর লেখায় পড়েছিল। মেধাবী ছেলেরা প্রায় শুরুতেই সহজ সরল কবিতার চেয়ে কঠিন এবং জটিল কবিতা লিখতে পছন্দ করে। যা চিন্তাভাবনা ছাড়া সহজে বোধগম্য হয় না। যা হয় তা সৌখিনতা থেকে। মির্জা বাল্যকালে বিদিলের কবিতা পড়তেন। অর্থাৎ হালির বক্তব্য এখানে স্পস্ট। যে রীতি বেদিল ফারসিতে গ্রহণ করেছিলেন,সেই একই রীতি গালিব উর্দুতে গ্রহণ করেন। সম্ভবত এটাই বেদিলের প্রতি মির্জার আকর্ষণ এবং অনুসরণের কারণ। হালি তার বক্তব্যের সমর্থনে উদাহরণ হিসেবে সাতটি দ্বিপদী পদ উদ্ধৃত করেছেন। এবং তিনি এও বলেছেন যে যেহেতু তিনি এগুলো পড়ে কোন আনন্দ পাননি, তাই তিনি এগুলোর অর্থ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি কেবল একটি দ্বিপদীর উপর মন্তব্য করেছেন যা উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় মির্জা তার নতুন বিষয়বস্তু প্রকাশের জন্য একটি উদ্ভাবনী শৈলী তৈরি করতে কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। হালি তার উর্দু দীওয়ানের মুদ্রিত সংস্করণ সাজানোর সময় গালিবের যে অংশটি বাদ পড়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে সেই সাতটি পংক্তি নির্বাচন করেছিলেন। তিনি লেখেন, ‘আজও আমরা দেখতে পাই যে উর্দু দীওয়ানের এক-তৃতীয়াংশ পঙ্ক্তি উর্দু ভাষায় লেখা বলে মনে হয় না’ (হালি ১৮৯৭: ১০০)। এই সাতটি দ্বিপদীর মধ্যে কিছু অমূল্য দ্বিপদী রয়েছে যেমন:

লে গ্যায়ে খাক মে হাম দাগ – এ – তমন্না – এ নিশাত
তু হো ঔর আপ বসদ রঙ্গ গুলিস্থান হোনা

অর্থাৎ গালিব বললেন: আমি আমার খুশির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গিয়েছি কবরের ভেতরে
আহ্ তোমার থাকা আর আনন্দ হওয়ার শত উপায়।

এক কদম বহশত সে দর্স-এ দফতর-এ ইমকান খুলা
জদা অজ্জা – এ দো আলম দস্ত কা শিরজা থা

গালিব বলতে চাইলেন: যখন আমি উন্মাদনায় পা রাখি , আমি সম্ভাবনার এক জগৎ আবিষ্কার করলাম। এই পৃথিবী এবং পরলোককে যে সুতোয় বেঁধে রাখে তা হলো মরুভূমি।

এখানে কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য গালিবের উর্দু কবিতার ব্যাখ্যা নয়। কারণ কবিতার ব্যাখ্যা অনেকেই করেছেন । গালিব বিশেষজ্ঞরা গালিবের কবিতার প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন অর্থে। তবে এও ঠিক যে সেইসব বেশিরভাগ ব্যাখ্যাই তাঁর জীবন থেকে নেওয়া। অর্থাৎ কবিতার আত্মার প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা তুলনামুলক কম । আর আমরা ভিন্ন এক আঙ্গিক এখানে ব্যবহার করতে চাইছি যেখানে গালিবের কবিতাকে স্পর্শ করতে পারা যায় তাঁর কবিতাকে আশ্রয় করেই। তাহলে যাঁরা এর আগে এত বই লিখেছেন গালিবের কবিতা ও জীবন সম্পর্কে, সেগুলো কি আমদের কাছে আর এখন কোনও মূল্য নেই? অবশ্যই মূল্য আছে। আর আছে বলেই আমরা গালিবের কবিতা প্রসঙ্গে বলবার একটা অবকাশ পাচ্ছি। তা না হলে হয়তো গালিবের উদ্ভাবনী বিষয়ে আমরা এত আবিষ্কারের কথা বলতে পারতাম না। তবে প্রথমে আমরা জেনে নিতে চাই হালি ঠিক কী অভিপ্রায়ে গালিবের কবিতাকে স্পর্শ করতে চেয়েছেন।
যেমন তারপর হালি বেশ কিছু দ্বিপদী উল্লেখ করলেন:

এখানে নমুনাস্বরূপ মির্জার সূচনা পর্বের কবিতা থেকে কিছু শের উদ্ধৃত করছি:

(১) কর গর ফিক্র তামীরে খরাব হায়ে দিল্ গদু
না নিকলে খিস্ত মিম্নে ইস্তাঁ বেরু জকবহা।

(২) অসদ হর অঙ্ক হ্যায় য়ক খল্ক-এ বর জঞ্জীর অফজুদন ব-বন্দে গিরিয়া হ্যায় নক্স বর-বাব উম্মীদ রস্তন হা।

(৩) ব-হসরতগাহ তা জকুন্ত-এ জাঁ বখশী এ-খুবাঁ খিজ্র কো চশ্মায়ে আবে-বকা সে তর জবী পায়া।

(৪) রখা গফলত নে দুর উফতাইয়ে জৌকে ফনা ওরনা ইশরত-ফহম কো হর নাখুনে বুরীদা অবরু থা।

(৫) পরীশানীসে মঞ্জে-সরহুয়া হ্যায় পম্বা-এ-মায়শ শোখিয়ে খুবাঁ কী রাহত আফরী পায়া।

(৬) মৌসমে গুল মে ময়ে গুলগু হিলালে ময়কশাঁ অকদে ওসলে দুখতর জ্ অঙ্গুর কা হর দানা থা।

(৭) সাথ জুম্বিশ কে বয়ক বখাস্তন তয় হো গ্যায়া গোয়আ সহরা গুবারে-দাবনে-দীওয়ানা থা।

উল্লখিত শেরগুলি বলার ধরন উর্দু ভাষার বিরুদ্ধ এবং চিন্তায় কোনও সৌন্দর্য দেখা যায় না । এজন্য এগুলোর অর্থ বলার কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে আমরা যদি একটু খেয়াল করি তাহলে বুঝতে পারব হালি সৌন্দর্য উপলব্ধির পরিবর্তে দেখার দৃষ্টিতে বিশ্বাস করেছেন। তিনি এও বিশ্বাস করেন এগুলো সহজ। এর কোনও ব্যাখ্যা প্রয়োজন নেই। কেন ? এই যে কিছুক্ষন আগেই তো তিনি বললেন এত জটিল তাঁর লেখা! তাহলে ? আমার মনে হয় গালিবের কবিতায় যে ভিন্নতা রয়েছে তা গ্রহণ করতে কোথাও হালির অসুবিধা হচ্ছিল যে কারনে তিনি গালিবের বাদ দেওয়া কবিতাগুলো নিয়েই বিচার করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কেননা গালিব নিজে যে কবিতাগুলো বাদ দিলেন তাঁর সংকলন থেকে সে বিষয়ে বলা কিছুটা সহজ বলে? কেননা হালি নিয়েই লিখলেন তারপর চতুর্থ শেরের ব্যাখ্যা কিছুটা সহজ, নমুনা হিসেবে এখানে দেওয়া হচ্ছে, যাতে বোঝা যায় গালিব কাব্য রচনার শুরুটা কী ধরনের চিন্তাধারার মধ্যে দিয়ে করেছিলেন এবং কী ধরণের চেষ্টায় তিনি নূতন বিষয়ের জন্ম দিতেন? গালিব এখানে বলেছেন বিনাশে যে মজা এবং আনন্দ ছিল, আমার উদাসীনতা তার থেকে আমাকে সবসময় দূরে দূরে রেখেছে । যদি এই উদাসীনতা না থাকত তাহলে সাঙ্কেতিকতা বোধসম্পন্নের কাছে এক একটি নখ যেগুলো কেটে ফেলে দেওয়া হয়, ভ্রূর কাজে লাগত। ভ্রূর কাজ হল ইশারা ক কেটে ফেলা নখ যার আকৃতি ভ্রূর মতো সেও নিজের বিনাশের প্রতি ইশারা করত। নখ কেটে ফেলায় (যা এক ধরনের বিনাশ) আনন্দ এবং মুক্তি পাওয়া যায়।

এখানে আমরা একটু তলিয়ে ভাবলে বুঝতে পারব হালি ঠিক সেইসব কবিতাকেই বেছে নিয়েছেন যা গালিব তাঁর সংকলনে সেইসব লেখা রাখলেন না । কেন ? গালিব কেন তখন কী মনে করে সেইসব লেখা তাঁর দীওয়ানে স্থান দিলেন না ? এই প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার পথে একবার হালির বক্তব্যকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে চাই। হালি এরপর লিখলেন
‘ওপরের ওই সাতটি শের আমি মির্জার সেইসব উপেক্ষিত রচনা থেকে সংগ্রহ করছি যেগুলো তিনি নিজের দীওয়ানে রেখতা আয়োজনের সময় ওখান থেকে বাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তাঁর সংকলনে এক তৃতীয়াংশ এমন আরও শের পাওয়া যায় যা উর্দু শের বলে স্বীকার করাটা অসম্ভব। কেন ? কারণ হালি মনে করেন এইসব লেখা অস্পস্ট হতে পারে বা নিরর্থক!

হালি উদাহরণ হিসেবে নিচে দেওয়া কবিতাটির দুটি দ্বিপদী উল্লেখ করে বলেছেন: এই শেরগুলি উর্দু কবিতা হিসেবে তিনি এর অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না ।

شمار سبحہ مرغوب بت مشکل پسند آیا
تماشاۓ بہ یک کف بردن صد دل پسند آیا

بہ فیض بے دلی نومیدی جاوید آساں ہے
کشایش کو ہمارا عقدۂ مشکل پسند آیا

ہوائے سیر گل آئینۂ بے مہری قاتل
کہ انداز بہ خوں غلتیدن بسمل پسند آیا

جراحت تحفہٗ الماس ارمغاں، داغِ جگر ہدیہ
مبارکباد اسد غمخوارِ جانِ درد مند آیا

শুমার -এ শুবাহ মর্গুব এ-বুতে এ-মুশকিল পসন্দ আয়া
তামাশা এ-বা-য়্যক্ কাফ-বুর্দনে-সদ দিল পসন্দ আয়া।

আর এই লেখাগুলো প্রসঙ্গে হালি ব্যাখ্যা করার সময় লিখলেন যে মির্জার এমন অনেক দ্বিপদী রয়েছে যা উপেক্ষা করার মতো সেগুলো গালিব নিজের কাব্য সংকলনে রেখে দিলেন। আর তারপরেই কথাটার একটা অনুমান নির্ভর বিষয় উল্লেখ করলেন যে হয়ত দীর্ঘদিন পর এইসব কবিতা তাঁর চোখে লেগেছে কিন্ত যখন সংকলন ছেপে প্রকাশিত হয় হয়ে গিয়েছে আর এটাই কারণ যে তিনি সেগুলো কাব্য সংকলনে রেখে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই ! এটা আমরা হালির কাছে আশা করি না । কেননা হালি এই শের সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কেন তাঁর সন্দেহ হলো এটাও তো আমদের জানা প্রয়োজন নাহলে কীভাবে বুঝব যে গালিব এই কবিতাটি রেখে ভুল করেছেন। এখন আমদের মনে এও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে যে কেন একটি কবিতা থেকে হালি দুটি শের উল্লেখ করলেন কারণ সম্পূর্ন কবিতাটি তো এই দুটি শের দিয়ে শেষ হয়ে যায়নি? এবং হালি যে শের দুটি উল্লেখ করেছেন সেই দুটি শের পর পর নয়। তাহলে হালি এখানে শের দুটিকে একএকটি সম্পূর্ন বলে এইভাবে উল্লেখ করলেন? এটাও ঠিক যে এক একটি শেরকে স্বতন্ত্র বলে মনে করা হয় কবিতাটির ধরণ দেখে। কিন্ত আমরা যদি সম্পূর্ন কবিতাটি না পড়ি কেবলমাত্র শের দিয়ে বিবেচনা করি আমদের সম্পূর্ন কবিতার সম্পর্কে জানার কোনো অবকাশ থাকবে না। নয় কী? বিচ্ছিন্ন কিছু শের তুলে বলা যায় না যে গালিব তাঁর কাব্য সংকলনে রেখে দিয়েছেন কোনও কিছু না ভেবেই। হালি যে কারণ দেখিয়ে আমাদের জানিয়েছেন যে এই শের গুলো নিরর্থক তা সম্ভবত ঠিক নয় । কারণ গালিব নিজের কবিতার বিষয়েই যে শুধুমাত্র সচেতন ছিলেন তাই নয় অন্যের লেখা নিয়েও তাঁর সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি বিন্দুমাত্র কম ছিল না। যে কারনে হরগোপাল তফটাকে লেখা চিঠিতে তিনি তাঁর কবিতা বিষয়ে খোলামেলা কথা যেমন বলেছেন পাশাপাশি হরগোপাল তফতার কবিতা প্রসঙ্গে বলেছেন। যখন
তফতা মির্জার কাছে থেকে তেমন কোনো প্রশংসা সুচক বাক্য পেলেন না তখন অভিমানে গালিবকে অনেক কথাই বলছিলেন। আসলে লেখার গুরুত্ব সম্পর্কে গালিব ছিলেন সচেতন এ বিষয়ে আমদের সন্দেহ নেই । তাহলে? আসলে হালি এমন এক প্রবাহকে স্পর্শ করবার চেষ্টা করেছেন যা সময়ের থেকে এগিয়েছিল। অর্থাৎ গালিবের কবিতা প্রসঙ্গে বলবার জন্য যে পরিশ্রম আমদের প্রয়োজন তা আমাদের তখন ছিল না।

তিন

আমরা যদি উপরের কথা প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখি তাহলে এর একটা স্পস্ট ধারণা আমদের থাকা প্রয়োজন। কেমন সে ধারণা? এই অর্থে সে ধারণার একটা স্পস্ট ইঙ্গিত পাই হালির ইয়াদগারে গালিব বইয়ে।
সেখানে কী বলা হয়েছে? বলা হয়েছে একবার মৌলভী আব্দুল কাদির, যাকে সাধারণত একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হত এবং দিল্লিতে তাঁর একটা শক্তিশালী যোগাযোগ ছিল। তিনি মির্জাকে বলেছিলেন যে তিনি তার একটি উর্দু দ্বিপদী বুঝতে পারছেন না এবং তারপর তিনি তার উপস্থিতিতে তা পড়ে শোনান।

পহলে তো রোগনে-গুল ভৈসকে অণ্ডে সে নিকাল ফির দাওয়া জিতনী হ্যায় কুল ভৈসকে অণ্ডে সে নিকাল।

মির্জা অবাক হয়ে বললেন যে, এই অর্থহীন পঙক্তি কখনোই তার হতে পারে না। মৌলভী আব্দুল কাদির হেসে বললেন যে, তিনি এই লেখা দীওয়ানে পড়েছেন এবং যদি এর কোনও কপি থাকে তবে তিনি মির্জাকে দেখাতে পারেন। এর থেকে মির্জা বুঝতে পারলেন যে, লোকেরা কীভাবে গল্প বানিয়ে তাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল।

নাটালিয়া প্রিগারিনা তাঁর লেখায় জানিয়েছিলেন
হালি এবং তার সমসাময়িকদের মির্জার সূচনা পর্বের রচনা অপর্যাপ্তভাবে উপলব্ধি করার জন্য দোষারোপ করেন। অবশ্য তারপরেই

যদিও কেউ কেউ মনে করেন
মির্জার কবিতার জটিলতা এবং আজুরদার সঙ্গে সম্পর্কিত পরিস্থিতিগত প্রমাণ এবং রসিকতা সম্পর্কে হালির মন্তব্য অমূলক নয়। আর গালিবের
কবিতা সম্পর্কে যাঁর একটা ধারণা ছিল সেই আজুরদা বলেন যে গালিবের দ্বিপদী কবিতাগুলো জটিলতা এবং জটিলতার কারণে সহজেই চেনা যেত। একবার কেউ একজন একটি দ্বিপদী পড়ে শোনান যা আপাতদৃষ্টিতে সহজ বলে মনে হয়। প্রতি আজুরদা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন যে এটা ‘আমার মতো দ্বিপদী’।

লাখো লগাও এক চুরানা নিগাহ কা
লাখো বনাও এক বিগড়না ইতাব মে

এই দ্বিপদী বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন : ‘সত্যি বলতে, আমি এই দ্বিপদীটিকে বেশ অস্পষ্ট এবং জটিল বলে মনে করি’ (১৯৯৭: ১৩৩)। হালি যখন আজুরদাকে সরলতার উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, তখন তিনিও তাকে বিভ্রান্ত করেছিলেন: মাওলানা (আজুরদা) সহজ-সরল কবিতা পছন্দ করতেন এবং প্রায়শই মির্জার কবিতা শুনে বিরক্তই হতেন কিন্তু সেদিন, তিনি এই দ্বিপদীটি শুনেছিলেন এবং আবেগপ্রবণ অবস্থায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে এই লেখাটি কে লিখেছেন। যখন তাকে বলা হলো যে এটা মির্জার কবিতা (যদিও তিনি কখনো মির্জার কবিতার প্রশংসা করেননি) তখন তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বললেন, ‘মির্জার প্রশংসা করার কী আছে?’ এটা আমার মতো একটা দ্বিপদী। (১৮৯৭: ১৩৩-৩৪)

গালিব এর একটা উত্তর দিয়েছেন তাঁর উর্দু গজলে।
গালিব লিখেছিলেন : গর খামোশি সে ফায়দা অখফায়ে হাল হ্যায়
খুশ হুঁ কি মেরী বাত সমঝনী মুহাল হ্যায়।

অর্থাৎ, যদি চুপ করে থাকার একটা লাভ হলো মনের ভাব প্রকাশ না পাওয়া, তাহলে আমি খুশি, আমার কথাতেও নীরবতারই লাভ হয়। কেননা আমার কবিতা কেউ বোঝেই না।

হালি মনে করেন এই কারণেই গালিব তাঁর পরবর্তী কাব্য সংকলন থেকে এক তৃতীয়াংশ কবিতা সরিয়ে নিয়েছিলেন। এই ধরণের চিন্তাভাবনা পরবর্তীতে অনেক ভুল বোঝাবুঝির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও এই বিষয়টি কোনও সহজ বিষয় ছিল না। গালিবের ক্ষেত্রে জটিলতা অথবা সহজতার ইঙ্গিতগুলো হালি এবং আজুরদার উদাহরণ দেখে যতটা সহজ বলে মনে হয় ঠিক ততটাও সহজ ছিল না। বেদিলের সঙ্গে গালিবের সম্পর্ক এত সহজ ছিল না যে তিনি তা নিমেষে তৈরি বা ভেঙে ফেলতে পারতেন। কেননা তা না ছিল কৃত্রিম না ইচ্ছাকৃত । ভিন্ন এক অচেতন আকাঙ্খার শিকড় ছিল যা ছিঁড়ে ফেলা সহজ ছিল না। আর আমরা এটাও জেনেছি যে, কলকাতা যাওয়ার পর গালিব উর্দু থেকে দূরে সরে যান এবং ফার্সির প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes