
মোহনা মজুমদার-এর কবিতাগুচ্ছ
সন্ধানপর্ব
অগ্নির ভেতর খুলে যায় বিভ্রমের প্রতিটি অঙ্গ
যে আকুলতা সঙ্গমের আগে ফুল হয়ে ফোটেনি
নিষিদ্ধ প্রাণের আলিঙ্গন কী তাকে স্পর্শ করবে ?
মোমের আলোয় মুষ্টিবদ্ধ ফাটল বেয়ে
আহুতির চোখ , গড়িয়ে নামে
গড়িয়ে নামে ডোরাকাটা সন্ধ্যের নির্বাক অরিগামি
বুকে জড়ানো অরণ্য কার সাথে কথা বলতে ছুটে যায় ?
অবসাদের কোনো শত্রু হয় না , নীলচে নৈরাশ্যটুকু গায়ে মেখে সে মৃত্যুর গান গায়
তারপর তুষারাবৃত ক্যানোপির আড়াল থেকে ক্রমে ভেঙে যেতে যেতে দেখে
অনন্তের কবিতারা নিঃশব্দে লিখে যায়
পালক জীবনের উৎসর্গের কোলাজ..
চিহ্ন
ব্যথার ওপর ভ্রম লেগে থাকে
দূরে চলে যেতে যেতে হরিনীটি শেষবার বাঘটির দিকে পেছন ফিরে চায়
প্রণয়-তাড়িত ভঙ্গিতে
তখন অর্ধেক ফলন্ত আকাশ আর
অর্ধেক ক্ষতপুষ্পের চাঁদ
মাঝের আলপথ দিয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়ে
মোচন করতে করতে সে নাভি খুঁড়ে দেখে
নিকটে দাঁড়িয়ে আছে
চিহ্ন, রক্তপারাবার
বিকিরণ
লুকিয়ে রাখো পাখিটির কালো আকাশ
খুঁটে খুঁটে খাক মরণ
‘এই তো এবার জব্দ করা গেছে’ বলে
কামড় দিলাম দেহে , জলে দেখি
লাল লাল লালা ঝড়ে অসুখের গায়ে
তুমি জানো কিভাবে পাখিটি
হাঁড় পাজরহীন শীতল সরীসৃপে পরিণত হয় ?
যে ডানা লুপ্ত হয়ে আছে নিঃশব্দে , খুঁজি তাকে , ভ্রান্তিতে
সমুদ্রখাদের দিকে পাথর বোঝাই ক্যানিয়ন ফুঁসছে ,
তাকে ছুরি দাও ,পাত্র দাও কেননা
পাথরের ফাঁকে থেঁতলানো মাতৃস্তন থেকে গড়িয়ে পরছে অগ্নি
তাকে ধারণ করার ক্ষমতা তোমার নেই
আদিমতম ক্ষুধার ভেতর দগ্ধ খনিজ বধির হয় আর
খণ্ডিত দৃশ্য থেকে কতশত অন্ধ চোখ
চূর্ণ চূর্ণ হয়ে উড়ে যায় পাখিটির কালো আকাশে ।
প্রাণ
দূরত্ব এবং টান
শব্দ দুটো সমানুপাতিক কিনা জানিনা
তবে কিছুটা শিকড় জীবিত রেখে সারাদিন জানলা বন্ধ রাখি , জল দিইনা
দেখি কোটরে কেঁপে উঠছে ছায়া , জলজ ।
রক্তমোচনের দিকে
এভাবে কোনকিছু শেষ করা যায়না
কে বলতে পারে ওই রক্তধূসর রাতে পদযুগল কেবল শুদ্ধ নিদ্রা চেয়েছিল ?
মায়া দংশাও , কাল দংশাও
জানি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে
তুমি কামনাতিমিরে ডুব দিয়েছো বহুকাল
তবু করুণা কোরোনা এই রক্তমোচনের স্মৃতিকে
ভেবে দ্যাখো
সে আছে , আছে সে
রক্তের দাগ সরে যেতে যেতে রাত্রি ভেঙে
একদিন ডুব দেবে গরলে
ফেটে যাবে দেহ , অভিশপ্ত
আর সেদিনই বন্ধ স্নায়ু ছিঁড়ে
বেরিয়ে আসবে নরম চন্দ্রাতপ , অনঘ , দ্যুতিময়
দ্রুত এসে দখল করবে সবটুকু তোমার !