
স্রোত পর্ব ৮
যশোধরা রায়চৌধুরী
২০১৩-১৪। কলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছেলেমেয়ে তৈরি করে একটা নতুন প্রবণতা। কয়েকটি মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনকে পোস্টার হিসেবে ব্যবহার করে তোলপাড় তুলে দেয়৷ এরা সব কেমন মেয়ে? কী চাইছে এরা? এই সব নিয়ে ও বাঙালি মধ্যবিত্তের ভুবনায়িত মূল্যবোধ নিয়েই "স্রোত"৷ গ্রন্থাকারে 'স্রোত' নাম দিয়ে একটি অতি সীমিত প্রকাশনা প্রচেষ্টাও হয়েছিল। তবে প্রকাশক সব কপিশুদ্ধু গায়েব হয়ে যাওয়াতে, স্রোতকে পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত আকারে এবার আবহমানের পাঠকদের কাছে ধারাবাহিকভাবে হাজির করার প্রচেষ্টা । "সম্পূর্ণ ভাবে নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা এমন উপন্যাস আমি আগে পড়িনি। নারীবাদী লেখকের লেখা উপন্যাস পড়েছি। কিন্তু তাতে পুরুষের লোলুপতা কে কাঠগড়ায় দাঁড়করানো আর নারীকে শিকার প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় প্রায়শই অবজেকট্ভিটি থাকেনি। এই উপন্যাসের শিকড় গেছে নারী জীবন যাপনের নানা স্তরে । এর মধ্যে আছে যে ভাষায় পুরুষতন্ত্র জীবনের ন্যারেটিভ এমনকি সাহিত্য ও রচনা করে , তার ইন্টারপ্রিটেশন। এতে স্পষ্ট কথা আছে, অভিমান আছে, হাস্যরস এবং অসহায়তাও আছে । এবং সর্বোপরি পুরুষকে নিজের জীবনে জড়িয়ে নেওয়ার আকাঙ্খা।..এখনকার ছেলে মেয়ে দের হাতে ই তুলে দেওয়া কাহিনীর ব্যাটন, এদের স্পস্ট করে দেখা, বলতে পারা ও অতীতের বোঝা নামিয়ে রেখে পথ চলার সাহস কে কুর্ণিশ জানিয়েছেন যশোধরা। মুক্তি এরাই আনবে। যৌনতার রহস্যময়তার আবরণ উন্মোচন করে তথ্যের নিরপেক্ষতার মধ্যে উত্তরণ।যশোধরার Clarity of perspective অতি তীক্ষ্ণ। সবমিলিয়ে উপন্যাস টি মনোভংগি ভাষা ও কাহিনী সর্ব অর্থে আধুনিক। একে বারে রিয়েল টাইমে দাঁড়িয়ে লেখা। দেশ কাল সময় ও ব্যক্তি সত্ত্বার বিশাল ব্যাপ্তিকে বিন্দুতে এনে কিভাবে প্রতিবাদের ভাষা নির্মান করেছেন যশোধরা। নির্য্যাস হয়ে মনে রয়ে যায়, পুরুষকে বিযুক্ত করার অভিপ্রায় নয়, তার সংগে আবার প্রথম থেকে পড়া জীবনের পাঠ।" ( অনিতা অগ্নিহোত্রী)

৮
মন্থনের নতুন ভেনাস
সোমদত্তর মাঝে মাঝে মনে হয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সব দরজা। অদ্ভুত একটা চাপবাঁধা ফিলিং হয় বুকের ভেতর। পৃথিবীটা পাল্টাচ্ছে জানে সোমদত্ত। কিন্তু এই বদলগুলোর সঙ্গে নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে নেওয়া সম্যকভাবে রপ্ত হল না আজো।
১৯৯১ এর সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যায়। মাথার মধ্যে দপ দপ করে ছবিটা। দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান। সেটাই বোধ হয় শেষের শুরু। চেনা পৃথিবীটা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ার শুরু।
ধুলোয় লুটোচ্ছে লেনিনের ভাঙা মূর্তি।
আর তার আগেপিছে মনমোহনমিক্সের টান। রাজীব গান্ধির হাত ধরে টেলিকম বিপ্লব এসে গেছে তার আগেই। এই সময়টাই এসটিডি বুথগুলো ফনফনিয়ে বাড়ল। ৮৯ সাল নাগাদ সোমদত্ত একটা ট্রেনিং এ গেছিল। চাকরির ট্রেনিং। দেরাদুনে গেছিল মাস কয়েকের জন্য। অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ। ঝিমঝিমে সন্ধে নেমে আসছে , সাদা কুয়াশা পুরু তুলোর মত জড়িয়ে ধরছে সবুজের চাদরকে, অপরূপ সব সরলবর্গীয় বৃক্ষের ভেতরে পাখি ডাকছে টিহি টিহি। কিন্তু সোমদত্তের টেনশন একটাই। ভরসন্ধেতে চার সেলের টর্চ নিয়ে মাইলখানেক হেঁটে যেতে হবে মিলিটারি ময়দানের কাছে… তার হোস্টেলের সবচেয়ে কাছের যে চক, মোড়ের মাথা। একটি পানের দোকান, একটি প্রচন্ড তেলতেলে “অমেরতি” আর ঠান্ডা এক ঝুড়ি সামোসার দোকান… টিমটিমে আলোতে একটি মুদিখানা। যাকে ওরা বলে কিরানা স্টোর্স। সেই কিরানা স্টোর্সে দুটো বিশাল আলু আর অড়হড় ডালের বস্তা রাখা থাকে, ধেড়ে ইঁদুর নাচানাচি করে… সেই বস্তাদের পাশেই কাচ দিয়ে ঘিরে টেলিফোন বুথ। লাইন দিয়ে বাড়িতে এসটিডি করবে সব ট্রেইনি। তাই কি রেষারেষি। কেউ পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বললেই কাচে টোকা। কাচের ওপর লেখা থাকে এস টি ডি আই এস ডি। একটা ছোট যন্ত্রে বিল ওঠে, সরু ফালি ফালি কাগজের রোল ভরা আছে তাইতে কিটির কিটির করে ছেপে বেরয় একটা “কলের” দাম। গাঁট গচ্চা দিতে হয় অনেককেই প্রচুর। যদি ওপাশে রাগি বউ, অভিমানিনী প্রেমিকা থাকে। সোমদত্ত প্রতিদিন মা বাবার সঙ্গে কথা বলবে বলে আসত। আতুপুতু ছোট ছেলে বাড়ির। এই প্রথম দূরে গেছে। রোজ খবর দিতে হবে। দুপুরে কত খারাপ ভেজ খাবার খেয়েছে আর বাড়ির মুশুর ডাল আর মাছের ঝোলের জন্য কত মন খারাপ হচ্ছে সেসব বলবে মাকে।
তার অনেক পরে আসবে মানুষের পকেটে পকেটে, হাতে হাতে মোবাইল ফোনের যুগ… পদধ্বনি শুনি!
নয়ের দশকের মাঝামাঝি সেটা। কলকাতায় প্রথম মোবাইল ফোনে কথা বললেন জ্যোতি বসু, রাইটার্স বিল্ডিং থেকে দিল্লির সঞ্চার ভবনে, ৩১ জুলাই ১৯৯৫। সেই গোবদা ফোনগুলো। ডানাওয়ালা চামচিকের মত ভাঁজ করা।
তার আগে আগেই নরসিংহা রাওয়ের সংস্কার । চকচকে মোড়কের অর্থনীতির দুয়ার খোলা। একটু একটু করে দোকান বাজারে চমৎকার খোলা হাওয়া খেলছে। কাচের দোর ঠেলে ক্রেতা ঢুকছে আর চাকচিক্যে চোখ ঠিকরে যাচ্ছে। স্বল্পবসনারা বিজ্ঞাপনেও বেশ উঁকি দিচ্ছে প্রায়শই। রাখরাখ ঢাক ঢাক কমে গেছে। আজই সোমদত্ত দেখল ট্যাক্সিতে। ট্যাক্সি ড্রাইভার হেঁচকি তুলে সামলে নিল বাইপাসের একটা বিজ্ঞাপন দেখে। ব্রা-এর বিজ্ঞাপন। গাড়িটা দুবার লাফিয়ে এঁকেবেঁকে আবার সোজা এগিয়ে গেল। মুনিদের ধ্যানভঙ্গ করা উর্বশীরা এখন ড্রাইভারদের কব্জির পরীক্ষা নিচ্ছে।
চুরানব্বইয়ে দাদার ছেলে অর্চির জন্ম। টিন্টোর দু হাজারে। কার্টুন নেটওয়ার্কই অর্চির দেখা একমাত্র শৈশব চ্যানেল। আর টিন্টো বেছে নিতে পেরেছে ছ আটটা কার্টুন চ্যানেল থেকে। ওখানেই একটা গোটা প্রজন্মের তফাত। অথচ ওদের বয়সের তফাত মাত্র ছ বছরের।
টিন্টোদের মোবাইল ফোনের মেনু পড়তে শিখতে এবিসিডির চেয়েও কম সময় লেগেছে। অর্চি এখন ওর বাবা মায়ের ক্রেডিট ডেবিট কার্ড ম্যানেজ করে। সারাদিন আমাজনে কিনছে মিনট্রায় কিনছে ফ্লিপকার্টে কিনছে।
সোমদত্ত শুধু টের পেয়েছে বেডরুমের নিরবচ্ছিন্ন প্রাইভেট স্পেশ ধীরে ধীরে চলে গেছে টিভির দখলে। রাতের ঘুমকে পিছিয়ে দিয়ে টিভিতে এসেছে বাহাত্তর চ্যানেল। আছড়ে পড়েছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত, বে-ওয়াচ নামের মার্কিন সিরিয়াল। স্বল্পবসনা মেয়েদের প্যারেড। বিকিনিসুন্দরীদের ছিপছিপে উরুগুলো দেখে কে যেন বলেছিল, যেন সার সার রোস্টেড চিকেনের লেগ গো!
এ বড় অনন্য ঠ্যাং বড় বেশি মোহময় ঠ্যাং।
আর তারপরি তো আমাদের সুস্মিতা সেন ঐশ্বর্যা রাই ভারতের মুখ উজ্জ্বল করল। মডেলিং সম্ভ্রান্ত প্রফেশন হল, বিশ্বসুন্দরী থেকে পাড়ার বিউটি প্যাজেন্ট, সবটাই চক্রাকারে সম্ভব হল।
আজ বৌদি ফোন করে বলেছে, অর্চি একটা কাজের ইন্টারভিউ দিতে খড়্গপুর যাবে। সোমদত্তর কিচ্ছু করতে হবে না। গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। সঙ্গে যেতে হবে শুধু।
অর্চি খুব চেঁচাচ্ছিল। আমার সঙ্গে কারুর যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু শেষ অব্দি স্বস্তিকাই বলেছে, যাও। কেননা শুধু অর্চি না, সঙ্গে যাচ্ছে সুনন্দনাও। কেন যে এসব কাজের ট্রিপেও ওদের ফুর্তির অকেশন হয়, পিকনিক পার্টি করতে হয় কে জানে। কিন্তু এখানে আবার স্বস্তিকার বান্ধবীর মেয়ে বলেই সোমদত্তকে আরো বেশি করে যেতে হয়।
অ্যালাউ করা যায়না ওদের অচেনা রাস্তায় একা ছাড়তে।
আর দিন পেল না, আজই মেয়েটা ওরকম একটা পোশাক পরে এসেছে। বাড়ি থেকে নেমেই রাস্তার ওপর গাড়িতে উঠতে গিয়ে সোমদত্তর মেজাজ গেল খিঁচড়ে। “কন্যাসমা” শব্দটা মাথার মধ্যে ঝিলিক দিয়ে গেল যদিও। নিজের অজান্তেই চোখ সরিয়ে নিল। বিরক্তিতে, লজ্জায়, অনেকটা অজানা অপরাধবোধে।
আসলে এই প্রসঙ্গ একবার তুললেই আঘাত সবচেয়ে বেশি করে আসবে ঘরের লোকের দিক থেকে। আগে একদিন সুনন্দনা ওইরকম একটা পোশাকে এসেছিল বলে কী যেন টিপ্পনী কেটেছিল ও। সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বস্তিকা। আজকাল কী যেন নাম হয়েছে ওগুলোর। হটপ্যান্টস। দেখলে ইশকুলের গেম স্যারের শর্টস মনে পড়ে শুধু।
“তোমরা পুরুষরা, তোমাদের ও রোগ আর সারল না , না? মেয়ের বয়সী মেয়েটাকেও ঝাড়ি মেরে দিলে? ছিঃ! এত নোংরা কেন চোখদুটো?”
স্বস্তিকার ওই কথা শুনলেই ওর পেটের ভেতর খলবল করে ওঠে অতীত।
আর একদিন এমনি হয়েছিল টিন্টোর খাতায় একটা হিজিবিজি কাটার ভেতর ছোটবেলায় শেখা একটা অশ্লীল কথা পড়ে। ছেলের বয়স বাড়ছে! উফফ। এ যে কী যন্ত্রণা। ঠাটিয়ে একটা চড় মারবে ভেবেছিল টিন্টোকে। তারপর চেপে গিয়েছিল। চূড়ান্ত লজ্জায় ও অসাড় হয়ে গেছিল।
ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে যৌবনের সব পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়।
যৌবনের পাপ। কৈশোরের পাপ। শৈশবের পাপ।
সেই যে বাবার আলমারির একেবারে তলার তাকে পুরনো গল্পের বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে প্লাস্টিক মোড়া এক গোছা বই পেয়েছিল, পাতলা হলুদ মলাট, জ্যালজেলে পাতা… ছেঁড়া প্রায়।
অক্ষরগুলো প্রায় ওর চোখের উপর ঠিকরে পড়েছিল কিন্তু সেই পুরনো বইয়ের। বৌদি দিদিমা, কাকিমা , ভাইয়ের বউ, বেশ্যা সব এক হয়ে গেছিল সে বইয়ের পাতায় পাতায়। সব মেয়ে এক একটা যৌনপুতুল … আর তীব্র নিম্ফোম্যানিয়াক। বিধবা মহিলাদের কী বর্ণনা! বাপরে। তারা সব মুখিয়ে আছে অবোধ বালকদের মুন্ডু চিবিয়ে খাওয়ার জন্য।
তারপর কত ব্লু ফিল্ম। পেরেক হাতুড়ির দৃঢ় ও সজোর ঠোকাঠুকির মত অনেক ঠোকাঠুকির দৃশ্য । কত না ভিডিও ছবি, ভিসি আরে। সে যৌবন এখন প্রতিশোধ নেয়।
গোল্ডেন গোল্ডেন ! খুব চলত কথাটা। গুঁড়ো সোনা। মুখে চোখে শরীরের সমস্ত বিভঙ্গে হাইলাইট করছে। নব্বই দশকের মাঝ রাত্তিরের সেই সদ্য পাওয়া টিভি চ্যানেল থেকে বেরিয়ে আসা, ঠিকরে চোখে এসে লাগা বে ওয়াচ… সেই সব দীর্ঘাঙ্গী চপলচরণা চকিতপ্রেক্ষণা, শরীরে সোনালি বালির গুঁড়ো লাগানো সব বিকিনি ক্ল্যাডদের সারি। প্রতিশোধ নেয়।
কেন শর্টস পরল মেয়েটা। মুখ খোলা চলবে না। অর্চি তো লেকচারই দিয়ে দেবে ওকে। যে কারুর নিজের পছন্দসই পোশাক পরার অধিকার আছে। তাছাড়া গাড়িতেই তো যাচ্ছে। ট্রেনে নয়।
আর একটা প্রচন্ড আপত্তির ব্যাপার। বেরোন হচ্ছে বিকেল করে। একটু পরেই অন্ধকার নামবে।
সোমদত্ত চেয়েছিল টানা চলে যেতে । একেবারে খড়্গপুর গিয়ে থামবে। অর্চিরা বলতে লাগল আজাদ হিন্দ ধাবায় না খেলে নাকি মস্তিটাই হবে না। ফলে কোলাঘাট স্টপ করতে হবে। চা আর স্ন্যাক্স খাওয়া হল।
তারপর আবার রওনা। ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা সাড়ে পাঁচের ওপারে। বিষণ্ণ শরতের সন্ধে। ক্রমশ নীলাভ হয়ে আসছে চারিপাশ।
ঠিক যা ভয় পেয়েছিল সোমদত্ত, তাইই হল। হঠাৎ ঘটর পটর শব্দ। গাড়ি কয়েকবার কেশে থেমে গেল। ড্রাইভারটা আনকা। থতমত খেয়ে গেল। উত্তর নেই, কেন, কী খারাপ হয়ে গেল।
সাড়ে সাতটা আটটায় খড়্গপুর পৌছনোর কথা ছিল। গাড়ি দাঁড়াল হাইওয়ের পাশে। সূর্য অস্ত গেছে কখন। ক্রমশ সাদা হয়ে আসে পাশের মাঠ ঘাট। কুয়াশার একটা পাতলা আস্তরন… লেপকম্বল যেন, গুঁড়ি মেরে মাঠের ওপর নামছে, মুড়ে ফেলছে চারদিক।
আকাশের রং ব্লু ব্ল্যাক কালির মত , মলিন এবং খুব খারাপ ধরণের মেজাজ খিঁচড়ে দেওয়া।
ক্যাবলা ড্রাইভারটি কিছু বুঝতে পারছে না কী করবে। অনেক ক্ষণ ধরেই সে মোটামুটি বক্তব্যহীন। নেমে কী সব খুটুর খুটুর করছে।
কালেভদ্রে একটা দুটো গাড়ি পাস করছে। কাছেপিঠের কোন গ্রামট্রাম থেকে একটাও লোক ছিটকে আসতে পারে তো সাইকেলে চেপে। একটু সাহায্য নেওয়া যায় তো তাহলে। খবর পাঠানো যায় কাছাকাছি কোন মেকানিকের দোকানে।
কোলাঘাট থেকে এতটাই এগিয়ে আসা হয়েছে যে ওদিকে আর তেমন সুবিধে হবে না। ফোন করবে কারুকে? কাকে?
হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে রাস্তায় অর্চি , আর ছোট প্যান্ট পরা সুনন্দনা।
ঈশ্বরের দয়ায় গায়ের রং ফর্সা। বেশ ফর্সা। ফর্সা আর কালো এই দুই ডেসক্রিপটিভ শব্দ, এও এখন পলিটিকালি ইনকারেক্ট হয়ে গেছে সোমদত্ত জানে। তবু তার মনে না হয়ে পারে না… ও কেন এত ফর্সা হল রে বাবা! মান্না দে-র গানটা কৈশোরে কী হিট ছিল ওদের জগতে। ও কেন এত সুন্দরী হল…
আধো ছায়া অন্ধকারে দেখা যায়, কদলীকান্ডের মত দুই ঝকঝকে উরু তার। লম্বায় বেশ ভাল হাইটের মেয়ে। সোমদত্ত দেখে হুবহু এক মদের কোম্পানির মডেলের মত সাবলীল অনায়াস ঢিলেঢালা ভাবে বেরিয়ে হাইওয়ের নয়ানজুলির দিকে নেমে যাচ্ছে সুনন্দনা। হাত পা স্ট্রেচ করে করে নিজের এতক্ষণের বসে থাকার জড়তা ছাড়িয়ে নিচ্ছে।
অর্চিকে প্রায় দেখাই যাচ্ছে না ডার্ক রঙের শার্ট পরে থাকার জন্য।
চীৎকার করে ওঠে সোমদত্ত , অর্চি, অর্চি! এক্ষুণি গাড়িতে ওঠো। এক্ষুণি। একদম বাইরে থাকবে না।
ছেলেটা অবাক হয়ে তাকায়। ঘাড় বেঁকে যায়। সুনন্দনাও হাত ছড়িয়ে তাকায়?
অর্চির গলায় চাপা ঔদ্ধত্যঃ ওয়াট দ্য? কাকু, তুমি এভাবে রিঅ্যাক্ট করছ কেন?
আর ঠিক এই সময়েই কলকাতার দিক থেকেই আসা একটা এস ইউ ভি এসে ঘ্যাঁশ করে দাঁড়ায় ওদের গাড়ির খুব কাছে। সুনন্দনার হাতখানেকের মধ্যে। সোমদত্ত তখনও ওদের থেকে বেশ কয়েক গজ দূরে।
সারা আকাশ তার মাথার ওপর ভেঙে পড়ে। সে দ্রুত ছুটে আসতে থাকে ওদের দিকে।
এই অন্ধকার হাইওয়েতে সে এক অসহায় পুরুষ। অর্চির তো কোন সেন্সই নেই কী হতে চলেছে। লোকগুলো পরের বাড়ির মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গেলেও কিসসু করতে পারবে না ও।
সত্যিই সঠিক সময়ে প্রোটেক্টার হওয়া খুব কঠিন। বুকের ভেতরটা ধক ধক করে ওঠে নিরাপত্তাহীনতায়।
আর সারা জীবনের সব অসভ্য কথালেখা বাথরুমের দেওয়াল ফিরে আসছে ওর কাছে। কলেজে পড়ার সময়ের সেই সব চুটকি, চটুল গল্প, গানের প্যারডি… রবি ঠাকুরের । সুন্দর বটে তব অঙ্গদুখানি…
কাল অব্দি ওয়াটস্যাপে পাঠানো ইতিউতি জোকস।
তীরের মত, চোখা, ফিরে আসছে…সোমদত্ত কী করে বাঁচাবে।

