
সোহম চক্রবর্তীর কবিতা
স্থানীয় সংবাদ
উপায় রাখোনি, তাই
একে-ওকে, বন্ধুদের কাছে
জিজ্ঞাসা করছি তোমার খবর।
উপায় নেই, নইলে
তোমার বান্ধবীদের খুঁজে খুঁজে খুঁজে
ডেকে এনে আনকথা পাড়বার
কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না –
তবু ভাবি, কেমন রয়েছ;
এখনও কি রোজ-রোজ ভিড় ঠেলে সাউথের ট্রেনে
যাওয়া-আসা করো?
সময়ে-অসময়ে এবছর মেঘ করছে খুব, সেই যে একদিন
আমার মুখের উপর সশব্দে দরজা দিয়ে দিলে –
তারপর, কেমন রয়েছ;
সত্যিই কি খুব বেশি আর আলো পাচ্ছ ঘরে?
‘বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে’
রাঁধা ভাত রাখা আছে,
সযতনে রাখা আছে বাসি মাছ, তরকারি, ডাল –
অথচ ঘুমের থেকে না-ই যদি ওঠা হয় কাল
কাজের পাহাড় রাখা,
রেখে যাওয়া অবহেলা প্রিয় মেয়েটির –
কত কত কথা রাখা গোপনেতে বেদনা-অধীর
কতক মানুষ রাখা, কতকটা হাসি আর গান –
এসবের কত কাছে চুপ ক’রে সারাটি জীবন
দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে তুমি চেয়ে আছো,
শ্যামসমান!
ঋণ
খুব ছোটবেলায় মনে হ’ত, আছে।
একটু বড়ো হ’লে মনে হ’ত, নেই –
আরও অনেকটা বড়ো হ’য়ে, বুড়ো হ’য়ে আজ এই পঁচিশ বছরে
মনে হয় পুনর্বার পরজন্মে বিশ্বাস রাখি।
কেননা আমাকেও, কেননা তোমাকেও, কেননা আমাদের
ফিরে যেতে হবে ফের
সেই যে ভূগোলব্যাচ, রাত্রে অঙ্কস্যার,
সেই যে মাধ্যমিক, সেই যে এইচেস,
সেই যে জর্জদা’র পাগল-করা সুর,
সেই যে সুনীল আর সুমনে বহুদূর –
সেই যে কলেজের শূন্য করিডোর,
সেই যে ঝলোমল টাইমস্ স্কোয়ারে
দু’হাত পেতে ফের তোমাকে, হে জীবন,
জানাব ভালোবাসি –
আমাকে তুমি আর, আমাকে তুমি আর, আমাকে তুমি আর
এমনই বারেবার
ফিরায়ে দিও না!
‘দশমীর পরে’
কত মুখ কাছে আসে, কত মুখ দূরে চ’লে যায়। রেখে যায় খালি তার শীতল ছায়াটি। ঝিরিঝিরি হাওয়া ওঠে – স্নিগ্ধ-সজল। ফাটলের গায়ে-গায়ে শিস তোলে হাওয়া। বেদনার মৃদু গাছ সেই গানে তিরতির কাঁপে। ‘কাছে ছিলে দূরে গেলে – দূর হ’তে এসো কাছে’। দীর্ঘ, আরও দীর্ঘ হয় শীত আমাদের। সুদূরের পিকনিকে ‘আছি’ আর ‘নেই’ হাতে-হাতে লোফালুফি খেলে। দূরত্ব আসলে নদী। আগল খুলতেই শুধু বদলে নেয় পথ। সে পথের রেলগাড়ি ঝিকঝিক ছুটে যায় দূরের স্টেশনে। বন্ধুরা হইহই করে। জানলায় মাথা রেখে একা একা গান শোনে বিষাদবালক। ‘ছিল না প্রেমের আলো, চিনিতে পারিনি ভালো – এখন বিরহানলে প্রেমানল জ্বলিয়াছে’। অন্ধ বাউল ছেলে সারাপথ খমক বাজায়। দৃষ্টির বহুদূরে ফেলে আসে তোমার ঠিকানা। তোমারই ও-উঠানে, দাওয়ায় বাঁধে গান রাতটহলিয়া। জনপদ কেঁপে ওঠে বিচ্ছেদে বিভোল ভাষায়। বেদনার মৃদু গাছ সেই গানে ছটফট করে। ‘কে জানে তোমার বীণা সুরে ফিরে যাবে কি না’। ফিরে তো যাবেই সুর, ভাঙা সাইকেল হ’য়ে ফিরে যাবে তোমার পাড়ায়। টুপটাপ শিউলির ফুলে ভ’রে যাবে তোমার ভাসান। টিমটিমে সন্ধের দীপ – বিজয়ার স্বগতকথন। দূরত্ব আসলে নদী। স্মৃতিও তেমন। তোমাকে আমার থেকে বহুদূর ভাসিয়ে নিয়ে যায়…
– তুমিও তেমনি জেদি, পিছুডাক শুনেও শোনো না!
ওঃ সোহম! আঃ সোহম! আহা সোহম! আহাহা সোহম! এইসব বলাদের আর কোন তুতো ভাইবোন নেই, যারা পরবর্তী সংবাদ নিয়ে আসবে। ওরা সকলে আসে, এসে দাঁড়ায় পরাস্বপহরণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে…
তোর লেখায় যে পাখিটি চুপ করে চেয়ে থাকে, আর ওর চোখের সামনে দৃশ্যপট বদলে গিয়ে মহাদেশ পেরিয়ে যায়, আর সময় ক্ষয়ে আসে সময়ের নিজস্ব গহনে, আর পেছনে তাকিয়ে যে চলচ্চিত্রে নিজেরই প্রতিবিম্বের প্রতি আরেকটু মায়া ঢেলে দিই, আর…আর…নাঃ থাক্।