সুদেষ্ণা মৈত্র-র কবিতা

সুদেষ্ণা মৈত্র-র কবিতা

অপারগ

সান্ত্বনা পাশ ছাড়ছে না
এখন যেখানেই যাচ্ছি, ফুল খুলে পড়ছে
অথচ এ বৃক্ষের লোভ…
শিকড়ের সভায়
দু’একটি চারানির্ভর জানালা।
মৃদু বৃষ্টি শুকনো হতে দিচ্ছে না।
একসময়, প্রয়োজন ফুরোবে
রোদ গায়ে সারা আকাশ টানা
শোঁ শোঁ ঘুরে বেড়ানোর শব্দ
আমারও হতে পারে,
সান্ত্বনা শিকড় ছিঁড়তে দিচ্ছে না।


উৎসব

জমে থাকা ক্ষোভের চেয়েও গাঢ়
এ উৎসব
এই মোহে দাঁত নখ জিভের গ্রহণ
উবু চাঁদ খুঁজে নেয় আড়ালের মিহি গলিপথ।
আমি, যে শববাহক, কাঁধে রাখি ছাইয়ের উপমা
প্রথমে শোকের রঙ, এরপর ধীরে ধীরে
অঘোর মনোচ্ছ্বাসে
ক্রমাগত খাচ্ছি নিজেকে।


পাকদণ্ডী

শিখরে বসার আগে ভাঙা পথে নিচু হয়ে দেখি
কয়েকটা পায়ের ছাপ আমার থেকেও বেশি দৃঢ়
নেশায় মাতাল যেন বেপরোয়া ছুটন্ত সিঁড়ি
যেভাবে উঠতে গিয়ে কতোবার নিচে পড়ে গেছি
সে বা তারা ঠিক ঘুরে পাকদণ্ডী পেরিয়ে গিয়েছে
তারপর নীরবতা, পাশে নদী, দু-চারটে তৃণ
ঘুমিয়ে পড়েছে, যেন পরাজয় ভ্রম শুধু
জিতে যাওয়াটাও যেন ভ্রম
এই যে ভ্রমণ সেরে ছুঁয়ে থাকা অধস্তনের তলপেট
মরে গেলে বেশ হয় ভেবে তারা মিশে গেছে পথে
আমি যে শিখরে বসে পদচ্ছাপের ভিড়ে একা
বুলির পতাকা বেয়ে সূর্যের চিবুক ধরেছি
সেখানে তৃণের গান, মৃদু স্নান কিম্বা আখর
কোথাও কিচ্ছু নেই, জয় আছে
পরাজয় আছে।

প্রেম

বাজানো যাবে না এমন তুমুল সে হাওয়া
বন্দী করবো ভেবে মেলে দিই পাখা
ওমনি ফুরুৎ ফুরুৎ
আমার ঘর-সংসার
আমার গৃহস্থের অকল্যাণ
কেউ কি বলেছিল জানালা খুলতে
কেউ তো বলে নি দিতে ঢিল
তবু এ বাড়ি নয়
ও বাড়ি নয়
যেন আমারই পুকুর জুড়ে গতকাল
ইহকাল পরজন্ম লোভে
উঠে আসে খেলা
আমরণ উড়ানের ছৌ।

সুযোগ

জল থেকে কাঁপন সরিয়ে
স্থির হয়ে বসি
শুরু হয় মুখোমুখি কথা
যে ডুব নাছোড় ভেবে এই আমি দূরে চলে গেছি
সে কখন হারিয়েছে গতি
এখন অবাক জল
এখন অবাক চোখ
ঘুরেফিরে দেখে আসি কোথাও সামান্য ইঙ্গিতে
নিজের মুখের নদী পেরিয়ে ডুবতে পারি যদি.
..

অপেক্ষা
ভাঙার গ্রীষ্মে যেন বৈশাখ লাগতে নেই,ভয়
নরমে আঙুল রেখে বাতাসের পূর্বাভাস, খুঁজি
বাদামের খোসাদের ছেড়ে আসি, বার্তাবাহক
পাশাপাশি দু’জনের বসে থাকা
আনন্দ লেখা
দু’জনের বিরক্তে যতটুকু গ্রীষ্ম, দাপুটে
বলছি, বলছি
দেখো, ভাঙছে
ভাঙবে
অপেক্ষা করি।

যোগাযোগ

যতদিন রহস্য ডাকে
ততদিন সারল্য ঘোরে
তারপর ধীরে দেখি
এই তাপ এই মোহ আক্ষরিক সাজ।
মৃত নদী জিরোয় শরীরে
নৌকোর অসমাপ্ত পথ
পাল ছিঁড়ে নিজ হাতে বোনে
আবার ছিঁড়ছে দেখে থামাতে এসেছি
এটুকুই যোগাযোগ
সারল্য এবং হৃদয়।

চলন

ভাঙছে, সান্ত্বনায় জড়ো হলো নিঝুম প্রদীপ
উলুধ্বনি শেষ করে বিবর্ণ হচ্ছে পাঁচালি
এসে বসে ইতিহাস, নেশাময় আরাধনা ঘিরে
নিকনো উঠোনে, ওড়ে খই, ওড়ে রোদ
বাবা আর মায়ের কথন-
আমাদের শিশুকাল এভাবেই কতবার
ভক্তিযোগ সেরে
আসন্ন বিচ্ছেদে মাথানত প্রণাম শিখেছে ।

কারুবাসনা

যেভাবে পাক ঘুরতে ঘুরতে আলো কেমন ভোমরা হয়ে ওঠে
যেভাবে বিষণ্ণ হতে হতে কেমন হাসি লেগে যায় চোখে
যেভাবে দূরে তাকাতে তাকাতে দূর নিকট মনে হয়
সেভাবেই ধীরে ধীরে জড়তা রাখছি হৃদয়ে
সুরের আগে নীরবতা রাখছি সমানে
কন্ঠের নিচে পাথর সাজাতে সাজাতে কখন
আমাদের ভালোবাসা আস্ত এক মূর্তি হয়ে যাবে
এমন আশায়।

ঢেউ

এ সমস্ত ধারাভাষ্যের শেষে তুমি চিৎকার করে
একখানা নদী ডাকলে।
আমার বলার মধ্যে কোনো কি ঢেউ ছিল?
আমার না বলাটুকু কেন এত নৌকোকামী?
তোমার নদীর ডাক সমর্থন করে সে?
আসলে কিছুই বলি না আমি।
যেটুকু বলেছি সবই অন্যলোকের অন্যঘরের কথা।
তোমার আমার কথা ভেঙে যায়,
জাগার আগেই…

খেলা

তোমার বুকের চূড়ায় নিভৃত যে শ্মশান
সেখানে রোজের কোনো প্রকোষ্ঠ পেলে
আমিও ছড়িয়ে যেতে…, মুণ্ডচ্যুতি যেন।
অথচ তখন তুমি সাড়া নয়-
যেন কোনো চর্মসাজ,
যেন কোনো লেলিহান জিভের আসন
বেশ তবে বিবসন, মোড়কের সময় ফুরলো।
শ্মশানের শর্ত চিনে নিতে
এখন বুকের মাঝে শ্বাপদের রক্ত লুকোই।

দাস্তান

যেকোনো বৃক্ষ ভাবে সে কখন পিতা হয়ে যাবে
যেকোনো সন্ধ্যা ভাবে রাত যেন মায়েরই শরীর
আমি তবু চারা হয়ে থাকি
আমি তবু সাড়া হয়ে থাকি
যেকোনো ডাকের লোভে দু-কানে রেখেছি নিরিবিলি
মাটি, জল জেনে যায়
রাত এলে পিতা ঠিক বৃক্ষের গল্প শোনাবে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (6)
  • comment-avatar
    subhro 2 years

    না কিছু নেই, শুধু জয় আছে, পরাজয় আছে। আসলে ‘দু একটা চারা নির্ভর জানালা’ই বুঝি প্রাপ্য ছিল। তবু দাপুটে গ্রীষ্ম ভাঙবে, হয়তো মূর্তিও হয়ে যাবে ভালোবাসা।,….. একটা জার্নি, অন্যলোকের অন্য ঘরের কথা বলতেও নিজস্ব, খুব ব্যাক্তিগত ভাষা। খুব ভালো লাগলো। ‘যে কোনও সন্ধ্যা ভাবে রাত যেন মায়েরই শরীর’, অপূর্ব।

  • comment-avatar
    subhro 2 years

    না কিছু নেই, শুধু জয় আছে, পরাজয় আছে। আসলে ‘দু একটা চারা নির্ভর জানালা’ই বুঝি প্রাপ্য ছিল। তবু দাপুটে গ্রীষ্ম ভাঙবে, হয়তো মূর্তিও হয়ে যাবে ভালোবাসা। একটা জার্নি, অন্যলোকের অন্য ঘরের কথা বলতেও নিজস্ব, খুব ব্যাক্তিগত ভাষা। খুব ভালো লাগলো। ‘যে কোনও সন্ধ্যা ভাবে রাত যেন মায়েরই শরীর’, অপূর্ব।

  • comment-avatar
    মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য 2 years

    কোনও কোনও কবিতা থাকে বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে। কোনও কোনও কবিতা তা নয়। এই কবিতাগুচ্ছ যেমন। যতবার পড়া যায় পেঁয়াজের খোসার মতো পরতে পরতে উঠে আসে নতুন স্তর। নতুন করে ভাবতে শেখায়। মনের ভেতর জাগিয়ে তোলে ভিন্নতর বোধ। পড়ার পরও পঙক্তিগুলো ঘুরে ফিরে বেড়ায় চেতনে। অবচেতনে।

    অভিনন্দন, সুদেষ্ণা।

  • comment-avatar
    সঞ্জীব নিয়োগী 2 years

    এই গুচ্ছ কবিতার কবি সুদেষ্ণা মৈত্র অন্তর্জগতের ছবি আঁকেন। বাইরের দেখা যেটুকু হয়তো বা, তাও প্রতিবিম্বিত হয়ে ফিরে আসে ভেতরে ও সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে চিত্রকল্প গড়ে তুলতে।
    কবির দেখার কেন্দ্রে তিনি নিজেই বসে থাকেন। নিজেকে বিভিন্ন অবস্থান ও অনুষঙ্গে স্থাপন করে কবিতার “পরিস্থিতি” বুনে তোলেন।
    বিশেষ কোনও স্কুলিং অথবা কবিতার “ট্রেন্ডিং” ভাষাশৈলী থেকে মুক্ত এই কবির কবিতা। এক মৃদুভাষ, কোমল, মায়াচ্ছন্ন জগতে শব্দগুলো গাঁথা থাকে। মানব সম্পর্কের জটিল গতি, প্রকৃতির সাথে মনের সম্পৃক্ততা আর আবহমান বিচ্ছেদের সুর বাজে কবিতার ছত্রে ছত্রে।
    নদী, নৌকো, বৃক্ষ, জল, মাটি আর শেকড় কবিতাগুলোর ভাবের যোগসূত্র রক্ষাকারী উপাদান।
    এরকম অনায়াস, ভারমুক্ত কবিতা আমার মতো সাধারণ পাঠক কে মুগ্ধ করে।

  • comment-avatar
    Krishna Chakraborty 2 years

    কত ভাব কত ভাবনা!কত বাস্তবতা কথা পরিণতি! কবিতার ভাষায় উঠে এস এক পবিত্রতার ছোঁয়া পায়! পিতা ঠিক বৃক্ষের গল্প শোনাবে। সেই আশায় রইলাম।

  • comment-avatar
    অভিষেক ঝা 2 years

    সহজ একটা আবরণ নিয়ে যে বহুস্তর ধরে রাখে এই কবিতাগুলি তা কবির মিতবাক পটুত্ব সম্পর্কে আন্দাজ দেয়। কন্ট্রাডিকশনগুলোকে পাশাপাশি যমজসম করে তুলেই পরমুহূর্তেই তাদের দূর বিপ্রতীপে নিয়ে যাওয়ার যে মুন্সিয়ানা ও প্রজ্ঞা তা ভালো লাগে। মনে হয় এই যে জীবন বয়ে চলেছে কবিতাগুলির ধমনীজুড়ে তার ধুকপুক শুনে চলি অনেকক্ষণ জুড়ে। কবিতাগুলো তাই ফুরোয় না..

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    Checking your browser before accessing...