
সুদেষ্ণা মৈত্র-র কবিতা
ভাসান
জলের অশান্তি ছেড়ে যে অন্নদা উঠে এলো ঘরে
তার গায়ে তখনও আঁশের রোদ লেগে
মৃত গুল্ম জমে জমে আলপনা হাতে
গৃহীর দরোজা জুড়ে মৃদুছাপ রেখে দেয় দেবী।
গাছের অদৃশ্য লোভ রাত এলে ভারী হয় খুব
ছুঁয়ে দেখে জীবন্ত ঘ্রাণ
ছুঁয়ে দেখে দেবীর আয়না
সেখানে জলের রঙে কোনো কি খাদ্য
নেই বাকি?
ঘরণী সকাল হলে বিছানা সাজাতে গিয়ে
দেখে
মুক্তোর কৌশলে দেবী গোটা সংসার
নিয়ে গেছে জলে।
সময়
মেরামত করে রাখি ব্যক্তিগত ফুলদানি রোজ
দু’চারটে ফুল ঠিক পচন ধরায়, ঝরে যায়
আমার নিজস্ব চারা, মাটি থেকে খাদ্যবস্ত্র তুলে
অনাবশ্যক হারে বাজারের শিল্প সেজে ওঠে
সুগন্ধ আলাপের মারফত দৃশ্য করি জড়ো
দেখি ক’জনের আগে আমার ফুলের শোক আসে
কবেকার মালা আজ বিকোবে নেহাৎ চরা দামে
আমার গলার কাছে হিমঘর ভারী হয়ে বসে।
এসব তুমুল রোদ, বিশ্বাসহীন বাধ্যতা
আমাকে সাজিয়ে রাখে কবরের প্রিয়জন হয়ে
দু’হাতে শিকড়হীন ভাড়াটে ঘরের পূর্বজ
অগ্রদানীর স্বরে খেতে থাকে রূপ, নির্মোহে।
যাত্রাগান
আমি কোন উনুনের কাছে যাবো
আমায় ডানার রোদে সাজিয়ে রেখেছো দরবেশ
উনুনের মাঝে যেন শান্ত চোখ
বহুক্ষণের থিতু মা
যেন কোনো চোরাগোপ্তা কাঠ
সবটুকু আগুনকে বুকে শুষে নিলো
এমন দরিদ্র ডানা নিয়ে
আমি কোন হাওয়ায় হারাবো?
এখনো আলোর মতো উঠোনের মাটি
দীপ্ত ভাত, কৃষ্ণ হাত, বিস্তীর্ণ কোল
মায়ের মতোই শুয়ে রৌদ্র পোহাবো।
আমি কোন সূর্যের কাছে যাবো?
নিতান্ত গোলক ঠেলে উঠে গেল সিঁড়ি
সিঁড়িতে পায়ের ছাপ, জলছাপ
এইমাত্র উপোসী শরীর
ঋদ্ধ হলো আজন্ম অপেক্ষা নিভিয়ে।
আমি তবু পাখি হই রোজ
এসব পরাণ ভাঙা মন্ত্রণা থেকে
নিজেকে উনুন করি রোজ
উড়ে যায়, পুড়ে যায় ব্যস্ত হৃদয়।


চমৎকার
ধন্যবাদ।
সারল্যের নিজস্ব শক্তিকে উত্থানের কারণ হিসেবে ব্যবহার করা এ এক সৎ শৈলী, মেধাবী প্রকরণ…”কোনো কি খাদ্য
নেই বাকি?” বা “দৃশ্য করি জড়ো”-এই অংশদুটিতে বাক্যের গঠন তৃপ্তি দিলনা। কবিতাগুলিতে এমন উদাহরণ রয়েছে, তবু উল্লিখিতগুলিতে ক্রিয়াপদ আগে নিয়ে আসাটায় একটা অস্বস্তি থেকে গেল।
আর কবিতার ফার্স্ট সেকেন্ড হয়না। তবু ‘যাত্রাগান’এক আশ্চর্য সৃজন। “নিজেকে উনুন করি রোজ”…বাংলা কবিতা পুনর্যৌবন ফিরে পাক এমন স্পর্ধিত উচ্চারণে। কেয়াবাৎ!
ধন্যবাদ 🙏🏽
খুব সুন্দর ইমেজারি!
ধন্যবাদ 🙏🏽