
সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা কলম
দেবব্রত শ্যামরায়
যা লুসিকে বলা হয়নি- শমীক ঘোষ প্রকাশক - অভিযান পাবলিশার্স প্রকাশকাল - ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ প্রচ্ছদ- হিরণ মিত্র বিক্রয়কেন্দ্র- অভিযান বুক স্টোর, ১০/২এ, রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট, কলকাতা - ৭০০০০৯ চয়নিয়া (সাঁইথিয়া) মুক্তধারা (দিল্লি) বাতিঘর (বাংলাদেশ) অনলাইন - www.dokandar.in
গল্পকার শমীক ঘোষের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘যা লুসিকে বলা হয়নি’ হাতে এল। তেরোটি ছোটগল্পে সজ্জিত বইটি প্রকাশের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর। প্রকাশক অভিযান পাবলিশার্স। বইটির অননুকরণীয় প্রচ্ছদটি এঁকেছেন হিরণ মিত্র।
প্রথম গল্পটাই নামগল্প, ‘যা লুসিকে বলা হয়নি’। প্রথম গল্পেই লেখক নিজের হাতযশ চিনিয়ে দেন। নাম-না জানা এক স্ক্রিপ্টলিখিয়ে যুবক, তার প্রেমিকা লুসি, পাগল হয়ে যাওয়া বাবার স্মৃতি, শ্যামবাজারের বাড়িতে হরিমোহনের খাঁচা এবং একটি অ্যাকোরিয়াম- এই সামান্য কটা উপকরণ নিয়ে এক অসামান্য গল্প লিখলেন শমীক। কিশোর মনের আলোআঁধারি ঘিরে রাখে এ গল্পকে। সে তার উন্মাদ বাবার আত্মহত্যা দেখে, গভীর রাতে তক্তপোষে ঘুম ভেঙে হাত বাড়িয়ে মাকে পায় না, সেজোজ্যাঠার ঘরের বন্ধ দরজার ওপার থেকে মায়ের গলা শোনা যায়। পাঠকের দমবন্ধ হয়ে আসে। বাস্তব ও পরাবাস্তব হাত ধরাধরি করে চলে এ গল্পে। শুধু এ গল্পে নয়, সবকটি গল্পেই পরাবাস্তবের ছায়া, যা সম্পূর্ণ করে বাস্তবকে, অথবা অসম্পূর্ণতাকে চিনিয়ে দেয়।
গল্পের একেবারে শেষ লাইনে এসে জানা যায় লুসিকে কী বলা হয়নি মানে যুবকটি কোন কথাটা লুসিকে জানায়নি। তবে তা গল্পে আলাদা করে কোনও মাত্রা যোগ করে কিনা বোঝা যায় না৷ ঠিক যেমন বোঝা যায় না, শ্যামবাজারে একটি ছিন্নমূল পরিবারের এত বড় একটি বাড়ি থাকার কার্যকারণ। যুবকটি বলছে, শ্যামবাজারে শুধুমাত্র তাদের পরিবারই বাঙাল ভাষায় কথা বলত। স্বাভাবিক, কারণ শ্যামবাজার এদেশিয় বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। ওপার বাংলার মানুষ এই অঞ্চলে যে কোনও কারণে একেবারেই থাকতে পারেন না এমন নয়, তবে গল্পে লেখক তার কোনও সূত্রনির্দেশ করেননি৷ যুবকের বাবার পাগল হয়ে যাওয়া ও বাঙাল ভাষায় প্রলাপ এবং দেশচ্যুত হয়ে আসার ইতিহাস- না, এই তিনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের কোনও ইঙ্গিত পাঠকের জন্য ছেড়ে রাখেননি শমীক।
এইসব ছোটখাটো অতৃপ্তি ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায় দ্বিতীয় গল্পের শেষে। গল্পটির নাম – চোর। নাগরিক মধ্যবিত্তের যাপন, তার ব্যর্থতা-ভণ্ডামি নিয়ে কম গল্প লেখা হয়নি বাংলাভাষায়। ‘চোর’ সেগুলোর মধ্যে একেবারে প্রথমদিকে থাকবে। অবশ্য গল্পটি পড়তে পড়তে পূর্বসূরিদের লেখা অন্য গল্পের আগে মৃণাল সেনের ‘খারিজ'(গল্প- রমাপদ চৌধুরী) মনে পড়ল, তার কারণ বোধহয় শমীকের গল্পের দৃশ্যময়তা। ভিজ্যুয়ালি ভাবেন শমীক, প্রায় সব গল্পেরই অনেকটা অংশ সিনেমার মতো পাঠকের চোখের সামনে দৃশ্যমান থাকে। শমীকের গল্পের দৃশ্যমানতার জন্য বোধহয় তাঁর চলচ্চিত্রকার পরিচয়টিই দায়ী, যতদূর জানি তাঁর পরিচালিত ডিজিটাল ফিল্ম রয়েছে একটি, যদিও তা আমার দেখা হয়নি।
‘চোর’ গল্পটির সম্বন্ধে আরেকটা কথা না বললেই নয়, তা হল গল্পের মধ্যে প্রোথিত সময়ের নির্ভুল ছাপ, টাইম স্ট্যাম্প। গল্পটি একেবারেই এই বদলানো সময়ের গল্প, যেখানে ব্যাঙ্ক-চাকুরে তিষ্যর বয়ানে ডকুমেন্ট হয়ে রইল পুঁজির গ্রাস, কীভাবে ধানিজমি বেচে জোগাড় করা নিম্নবিত্তের সামান্য সঞ্চয় প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করিয়ে নিজের ইস্তানবুল ভ্রমণের ইনসেন্টিভ বাগিয়ে নেয় সহকর্মী দীপেশদা। তিষ্য ‘পারফর্ম’ করতে পারে না, এই নিষ্ঠুর পেশাদারিত্ব নেই তার, বসের গঞ্জনা শোনে, স্ত্রী সঙ্গমকালে তার দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়াকে ব্যঙ্গ করে, নন-পারফর্মার তিষ্য ক্রমশ তলিয়ে যায়। ব্যক্তির অসুখের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের অসুখও নির্ভুল চিনিয়ে দিচ্ছেন লেখক। তিনি নিরুচ্চারে পক্ষ নেন কিন্তু তার জন্য গল্পটির শিল্পগুণ বিন্দুমাত্র টাল খায় না। ‘চোর’ গল্পটি আজীবন থেকে যাবে এই ক্ষুদ্র পাঠকের সঙ্গে।
বইয়ের সব গল্পই যে ‘চোর’-এর উচ্চতা ছুঁতে পেরেছে এমন নয়, এমন হওয়াটা সম্ভবও নয়, কিন্তু পাঠক হিসেবে যত বইটির ভেতরে ঢুকি, গল্পের বিষয় নির্বাচনে লেখকের বৈচিত্র লক্ষ্য না করে পারি না। বিশেষ করে সমকালীন নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা যা আমাদের চৈতন্যকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়, গল্পকারও তা নিয়ে আলোড়িত হয়েছেন, সমকালীনতাকে নিজের মতো করে ছুঁতে চেয়েছেন- তা তাঁর কিছু গল্প থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। যেমন ‘রেললাইন’ গল্পটি। দেশজোড়া লকডাউনের সময় ঘর-ফেরতা অভিবাসী শ্রমিকদের ক্লান্ত, ঘুমন্ত দেহের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রেন চলে যায়, দুর্ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে পড়ে তাদের পুঁটুলির মধ্যেকার শুকনো রুটি। পরদিন সকালে আমাদের সুরক্ষিত ঘরে বসে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমরা খবরের কাগজে সেইসব ছড়ানো রুটির ছবি দেখি। ‘রেললাইন’ গল্পটি পূর্ববঙ্গ থেকে শুরু করে দণ্ডকারণ্যের রিফিউজি ক্যাম্প, বনগাঁ-র উদ্বাস্তু কলোনি হয়ে মহারাষ্ট্রের সুরজপুর শহরের রেল কোয়ার্টার- ভাগ্যান্বেষনে ভ্রাম্যমান গল্পের চরিত্রদের দীর্ঘ সরণের সঙ্গে অভিবাসীদের শ্রমিকদের এই মহাযাত্রা অসামান্য মুন্সিয়ানায় বুনে দেয়। এই উপমহাদেশে খেটেখাওয়া নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষের আসলে কোনও ঘর নেই, কোনও দেশ নেই। গল্পটি তার অমিত সম্ভাবনার সবটুকুর সদ্ব্যবহার করতে পেরেছে কিনা খটকা থাকে, তবু ‘রেললাইন’ এই বইয়ের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য গল্প।
গল্পটা পড়তে পড়তে একটি বহুচর্চিত প্রশ্ন মনে আসে, যে জীবন বা অভিজ্ঞতা লেখকের নিজের নয়, অর্থাৎ যে জীবনকে লেখক আর পাঁচটা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সহনাগরিকের মতো কিছুটা দূর থেকে দেখছেন, সে জীবনকে শুধুমাত্র কল্পনা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা কি সম্ভব? লেখক যে শ্রেণির প্রতিনিধি নন, শুধুমাত্র সংবেদনশীলতা ও কল্পনাশক্তির জোরে সেই শ্রেণির আশা আকাঙ্ক্ষা দুঃখে আনন্দে মেশানো রক্তমাংসের অস্তিত্বকে নিয়ে সার্থক গল্প-উপন্যাস লেখা যায়? এই তর্ক চলবেই। তবে এই ধরনের লেখা যে অবশ্যই সম্ভব তার হাতের কাছের উদাহরণ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’, যা আমরা আরেক সমগোত্রীয় ক্লাসিক ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর সঙ্গে একাসনে রেখেই পড়তে পারি। শমীক কি পারলেন? তিনি একইসঙ্গে পেরেছেন এবং একটি-দুটি ক্ষেত্রে পারেননি।
তিনি যে পেরেছেন তার উদাহরণ, ‘রেললাইন’, ‘জঞ্জির’ বা ‘টিঙ্গু মাস্টারের ম্যাজিক’। তিনি পারেননি তার উদাহরণ হতে পারে ‘ইন্টারোগেশন’। ‘জঞ্জির’ গল্পটি রচনাকালে বন্ধু ও এই সময়ের আরেকজন শক্তিশালী গল্পকার সাদিক হোসেন ও তাঁর গল্প ‘মোকাম্মেলের অমিতাভ’-এর ঋণ স্বীকার করেছেন শমীক। ‘জঞ্জির’ গল্পটি একবারে পড়তে পারিনি। বারবার থামতে হয়েছে। যৌন নিগ্রহের কদর্য বীভৎস বাস্তবতাকে নির্মম হাতে ‘ভিজুয়ালি’ নগ্ন করেন গল্পকার। গল্প শেষ হলে বিষন্নতা আর দমবন্ধ করা অসহায়তা পাঠককে চেপে ধরে।
তেরোটি গল্পের মধ্যে সামান্য কয়েকটি বাদে বেশিরভাগই উল্লেখযোগ্য। সিরিয়াস গল্পের ভিড়ে সম্পূর্ণ হালকা চালে লেখা ‘চার নম্বর আমি’ গল্পটি সামান্য রিলিফ হিসেবে কাজ করে। ‘শঙখলাগা’ শমীক না লিখলেও কোনও ক্ষতি হত না, অনেকেই এই মানের গল্প লিখতে পারতেন৷ ব্যক্তিগতভাবে ‘বাওর’ গল্পটির রসাস্বাদনে ব্যর্থ হয়েছি। গল্পটি সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’-কে একটি ট্রিবিউট। ‘গঙ্গা’ পড়া না থাকায় রেফারেন্সগুলি বুঝতে পারিনি। বস্তুত, শমীকের বেশিরভাগ গল্পই ক্রস-রেফারেন্স ও ইন্টারটেক্সচুয়ালিটিতে সমৃদ্ধ, তাই একাধিক পাঠ দাবি করে।
তবু দুটি গল্পের কথা আলাদাভাবে বলা দরকার। এক, ডেড উড। ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী বা কন্ট্রাকটে থেকে যারা সেলস-এর কাজ করেন, তাদের প্রত্যেককে মাথাপিছু কিছু সংখ্যক অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া থাকে। কোয়ার্টার বা প্রতি তিনমাসের শেষে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেই কন্ট্রাক্ট শেষ, চাকরি খতম। এই অ্যাকাউন্ট খোলার টার্গেট পূরণ করতে না পারাটাই ব্যাঙ্কের পরিভাষায় ডেড উড। শমীকের গল্প ‘ডেড উড’ গুজরাটের এক ছোট্ট শহরে এমনই এক ব্যাংক কর্মচারীর তার কন্ট্রাকচুয়াল সেলস-কে সঙ্গে নিয়ে এক সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট খোলার আগে ‘ভেরিফাই’ করতে যাওয়ার গল্প। অ্যাকাউন্ট সন্দেহজনক, তার কারণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অনিল পটেলের মনে হয়েছে অ্যাকাউন্টটি সন্দেহজনক। যেহেতু কাস্টমারের অর্থাৎ অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদনকারীর নাম সাজ্জাদ হোসেন এবং তিনি তার বাড়ি হোসেনপুরা থেকে কিছুদূরে অ্যাকাউন্টটি খুলতে চান। চাকরি হারানোর অনিশ্চিয়তায় ভোগা সেলসের অস্থায়ী কর্মী মিতেশ, বস অনিল পটেলের কথায় অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে আসা ব্যাঙ্ককর্মী সিদ্ধার্থ, ও ‘সন্দেহজনক’ ভোক্তা সাজ্জাদ হোসেন, এই অতি সামান্য কটি চরিত্র ও উপকরণে এক টানটান গল্প শুনিয়েছেন শমীক। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-র সিদ্ধার্থ ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়েছিল। আর আজ শমীকের সিদ্ধার্থ নিজের ট্রান্সফারের পাকা খবর পেয়ে অস্থায়ী সহকর্মী মিতেশ ও ‘সন্দেহভাজন’ সাজ্জাদ হোসেনকে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে পালায়, অবলীলায় ক্ষমতার পক্ষ নেয়। সাপের চোখের ভেতর দিয়ে এক মুহূর্তে আমরা দেখতে পাই উচ্চাকাঙ্খী ও আরও উচ্চাকাঙ্খী নতুন ভারতের হাড়হিম করা এক বৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতার ছবি। যেকোনও প্রতিনিধিত্বমূলক সর্বভারতীয় গল্পসংকলনে স্থান পাওয়ার যোগ্য ‘ডেড উড’।
‘জুডাস ইসকারিয়টের একান্ত সুসমাচার’ বইয়ের বারো নম্বর গল্প, কেকের শেষতম চেরি এবং অন্য সব গল্পের চেয়ে আলাদা। দুই বৃদ্ধা বোন, ডরোথি স্মৃতি বিশ্বাস ও মার্গারেট কণা বিশ্বাস এবং বোগেনভিলিয়া- ক্রিসেনথিমামের জঙ্গলে জর্জরিত তাদের পুরোনো বাড়ি এই গল্পের পটভূমি। দু-হাজার সতেরো বছর আগে (গল্পটি যেহেতু ২০১৭ সালে লেখা) ঘটে যাওয়া যিশুখ্রিষ্টের ক্রুশিফিকেশনের সঙ্গে এই গল্পকে মিলিয়ে দিয়ে একটি আধুনিক প্যারাবেল রচনা করেছেন শমীক। প্রপার্টি এজেন্ট বা প্রোমোটারের দালাল লুৎফর রহমানকে গল্পকার দাঁড় করিয়েছেন শয়তান লুসিফার ওরফে জুডাসের ভূমিকায়। মার্গারেট ও ডরোথি জুডাসের হাতে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে শিশু যীশুকে দেখতে পান। শহর কলকাতার কেন্দ্রে এই পুরোনা বাড়ি ভেঙে হাইরাইজ উঠবে, দুই বৃদ্ধা বোনের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে ডিল সম্পন্ন হয়। বৃদ্ধাদের ভাইপো প্রবাসী টমাস বিশ্বাস বাড়ি বেচার টাকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে খেয়াল করে লুৎফরের ছায়া মাটিতে পড়ছে না। পরাবাস্তব গল্পের চামড়ার নিচে রাজনীতি তপতপ করে।
বইয়ের শেষ গল্পে সমকালীনকে আরও একবার ছুঁতে চান শমীক। ‘ইন্টারোগেশন’ গল্পে ভারত-পাক সীমান্ত এলাকায় পুলিশ জেরার নিজেকে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বলে দাবি করা ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ এক ব্যক্তিকে মহিউদ্দিন আনসারি ও টেররিস্ট বানিয়ে মেরে ফেলা হয়, আজকের ভারতবর্ষে লেখকের উদ্দিষ্ট বাস্তবতা টের পাই আমরা, কিন্তু গল্পটি সম্পূর্ণ তৃপ্ত করে না। ঠিক একইভাবে চমকে দেয় ‘স্বপ্ননীড়’ও, এক মুহূর্তের জন্য মতি নন্দীর জঁরকে মনে করায় বটে, তবে পুরোপুরি উতরোয় না, কারণ শমীক তাঁর লেখার গুণে পাঠকের প্রত্যাশা ইতিমধ্যে অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছেন।
দুটি গল্পগ্রন্থের (প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে প্রকাশিত শমীকের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘এলভিস ও অমলাসুন্দরী’ সাহিত্য আকাদেমি যুবা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিল) মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন শমীক ঘোষ। তাঁর সামনে আর কোনও ‘ডেড উড’ নেই। তাঁর ব্যাটে স্ট্রোকের বৈচিত্র্যও অনেক। একজন পাঠক হিসেবে লেখকের কাছ থেকে এবার একটি দীর্ঘ উপন্যাসের অপেক্ষায় রইলাম।