
শুভম চক্রবর্তী -র কবিতা
প্রেমের কবিতা
১
প্রেম হয়ে গেছিল কিছুটা
তারপর অন্ধকারে সারারাত, কার তারস্বর
আমারই নিজের ভেবে আঁতকে উঠেছি
তুমি দেখেছিলে, বলো?
যেমন খোঁড়াটে ছায়া পাঁচিলের
শ্যাওলা রঙের নীরবতা
যেমন তোমার থেকে দূরতর গাঁথা কোনো তীর
হাজার মিনতি মেনে তোমায় বেঁধে না
তেমন প্রাকৃতে আছো
বিষুবের গায়ে গায়ে জল আর রেখা
আকুল রাতের পেটে কুয়াশার আড়াল, কাঁপন
কিছুই লাগে না ভালো তোমার বিহনে
তুমি হাতে এসো, চিকচিক করো, কুড়িয়ে পুড়িয়ে পাওয়া জীবন আমার
২
গ্রহন করোনি তুমি
উদাসীন, পথে হেঁটে গেছ
তোমার অবজ্ঞা আমি হাত পেতে কুড়িয়ে নিয়েছি
যেমন তুষারপাতে বরফ কুড়িয়ে নেয় শীতের শিশুরা
যেমন রক্তজবা লাল টকটকে ফোটে মনের ভেতরে
অথচ লালিমা তার প্রাপনীয় পদস্পর্শ কখনও পাবে না
এমনই বিষাদে আছি, অনিবারনীয় এক জটলার ভেতরে
কখন ফিরব বাড়ি, মিটিয়ে কাজের ছলগুলি
কখন ফিরব আমি, শুধু তুমি, তোমারই ভেতরে
৩
আকাশ আগেরই মতো, তবু
আমাদের কথা হয় না অনেক অনেকদিন হল
তুমি বলেছিলে– “বাঁধিনু তোমার তীরে তরণী আমার।”
অথচ এখন অন্য তীরে, অন্য হাওয়ায় কাঁপে তব তরীখানি
শুদ্ধ বেদনার কাছে সাধুভাষা পরিত্যাজ্য নয়
যেমন রঙিন নয় এখন এই মনের আকাশ
অথচ তারও আছে নিজস্ব প্রত্যয় কিছু বেঁচে
তার এই বেঁচে থাকা কতখানি সম্ভাবনাময়
জানি না, ফিরব নীড়ে, তবু যদি না পাই আলয়
৪
অসম্ভব কষ্ট পাচ্ছি
স্পষ্ট হও বেদনার ভাষা
আমার কিছুই নেই, কবিতা-লেখার-মন ছাড়া
আলুথালু পড়ে থাকা পুরাতন খবরকাগজ
হঠাৎ হাওয়ায় উড়ছে, ভেতরের করুণ হাওয়ায়
ঘেঁটে ঘেঁটে তুলে আনছে কিছু শ্লেষ, কিছু কিমাকার
অন্ধকারে ফুটে ওঠা দেউলের টিমটিমে আলো
খণ্ডিত আকাশ জুড়ে ছোপধরা মেঘেরা শয়ান
কিছুই লাগে না ভালো এখন তেমন করে আর
মন কেটে বসত গড়ো, তোমার আগামী ভালো হোক
কাশের জঙ্গল দিয়ে ছুটে যায় একটি বালক
৫
সারাক্ষণ অন্যমনে থাকি
অথচ কানের কাছে বাজে
তোমারই কণ্ঠস্বর
তোমারই অরূপ বলে দেওয়া–
“ডুবতি হ্যায় তুঝ মে
আজ মেরি কশতি
গুফতাগু মে উতরি বাত কি তারাহ”
তারপর চাঁদ ভেসে গেছে বেনোজলে
মিলন সম্ভব করে কোনো প্রজাপতি আর আকাশে ওড়ে না
শুধুই রাতের দিকে ডানাভাঙা মথ ওড়ে কবরে, টানেলে
ভয়ঙ্কর একা লাগছে, স্পষ্ট হও বেদনার ভাষা
যেমন চকিতে মেঘ ফরসা হয় সে-রকম করে
৬
অশ্রুত ধ্বনির মতো তোমার আশ্বাস এসেছিল
তারপর আসেনি কিছুই, একা-ফাঁকা চরাচর
গবাদির ক্ষুরে খোঁড়া মাঠ, আমারই হৃদয়
ভেবে মাঝরাতে মুচড়ে উঠেছি।
অশ্রুত ধ্বনির মতো তোমার আশ্বাস এসেছিল
তারপর আসেনি কিছুই, একা-ফাঁকা চরাচর
শেয়ালের দাঁতে-কাটা ঘাড়, আমারই নিজস্ব
ভেবে মাঝরাতে মুচড়ে উঠেছি।
অশ্রুত ধ্বনির মতো তোমার আশ্বাস এসেছিল
তারপর আসেনি কিছুই, একা-ফাঁকা চরাচর
অশ্রুপাত একান্ত আমার জেনে, অন্যদের ব্যথা
দেখি আমারই হয়েছে।
৭
একটানা লিখে রাখছি
আমি যেন আমারই এলিজি
আলজিভ জ্বলে যাচ্ছে
তোমায় না-খাওয়া চুমুতাপে
আমার হারানো-আমি
আমি যেন আমারই বিরহ
৮
“I said to my soul, be still, and wait without hope”
আমার আত্মকে বলি তুমি স্থির হও
বেদনার পাড় ঘেঁষে বয়ে যায় জল
আমার আত্মকে বলি তুমি স্থির হও
স্থিরতাও প্রতিপ্রশ্নে জর্জরিত হোক
প্রান্তরে বাতাস বয়, দিগন্তে আগুন
বেদনাও নিঃস্ব এক ভাষাকে জড়ায়
তারপর ভাষাহীনতার পরপারে
একটি মলিন পাখি মরে পড়ে আছে
যেকোনো মৃত্যুর মতো আহত-মধুর
CATEGORIES কবিতা
TAGS শুভম চক্রবর্তী
বাহ্ বাহ্ বাহ্ দারুণ লেখা।