
শাশ্বত বোস-এর কবিতাগুচ্ছ
চুম্বন ও জ্যোতিষ্ক
সমান্তরাল দুটো চোখে
নেমে এসেছে, কালান্তক রাত।
ঊষর জমিতে সেদিন
ছায়া ছিল না,
সঘন চুম্বনে
সেখানে এঁকে দিয়েছিলাম,
রাত জাগা মাতাল বসন্ত।
আজ ভাঙাচোরা নোনতা
দাগগুলো থেকে
বেরিয়ে আসা কুৎসিত ক্ষোভ,
নিদাগ হয়ে ঘোরে
জন্ম থেকে জন্মান্তরে।
এক নির্গুণ প্রেমের ইস্তেহার
একটা ভীষণ রকম বিভাজিকা প্রেম চাই।
একটা পুরোনো ভাঙা জলফড়িং সেফটিপিন,
একটা ভীষণ ভালো মানুষের ভেঙে আসা
মুখের গাংচিল জ্যামিতি।
একটা ভয়ধরা চোখের
উপবাসী সমীকরণ,
একটা বেড়াজাল ফসফরাসের
গায়ে লেগে থাকা নিকোটিনের
নীলচে মিথোজেনিক বিষক্রিয়া।
বাগানে একটা পাতা ঝরার বিষন্নতা,
একটা খড়কুটোহীন ভালোবাসা।
এগুলোই হয়তো অনন্ত কোন এক অন্ধকারে,
ডুবে যাওয়া নাবিকের মৃত্যু হয়ে, ঘুমন্ত শিশুর
কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে।
শুভ হোক মাটি আর জলের হাত ধরাধরি করে,
বৃত্তাকার গর্ভের পথে এগিয়ে চলা।
আমার পেটের অন্তস্থ খিদে ছড়িয়ে পড়ুক,
বাস্তুভিটে, পূর্বপুরুষ আর প্রেমহীন সীলমোহরের দাগে।
পুড়ে যাও প্রিয়তমা
একটা আধপোঁড়া কালো হাড়ি, ভেতরে
ফুটন্ত একটা মেয়ে। তার বুকের কাছটায়
কোমর, কোমরের নিচে স্তন।
একটা খারাপ লোক ওকে নষ্ট করে চলেছে রোজ।
যেমনটা স্মৃতির দাগে নষ্ট হয়, গভীর ডিমনেশিয়া।
ভেতর ভেতর সেদ্ধ হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে দেব,
বাড়া ভাত, সাথে একটু কচু সেদ্ধ আর
কটা ঝরে যাওয়া গোলাপ।
হাতের জায়গায় গজিয়ে ওঠা কানে কানে বলব,
“আই লাভ ইউ প্রিয়তমা।”
বোহেমিয়ান দিনযাপনে অভ্যস্ত,
রোদ্দুরে ভেজা বালির ভেতর থেকে,
সিরিয়াস গোছের শরীরটায় ডেকে উঠবে,
এক নাম না জানা রহস্যের ইতিহাস।
কালো চশমার এপার থেকে
ট্রাকের সামনের কালো সীমানাটা
পেরোতে পারলে ফুটপাথের জীবনটা লাটে ওঠে।
ওখানেই নাইটির ওপরের দুটো বোতাম খুলে,
স্তনভারে নুয়ে পড়ে রান্না করা তরকারি আর
মাছ-মাংসের গন্ধটা, কয়েকটা চিল শকুনের
গাঢ় নিঃশ্বাসের সাথে মিলে মিশে যায়।
টিনের দরজাটার ওপাশে তখন
আদিম নগ্নতা। একটা বাচ্চা ব্যাট দিয়ে লম্বা করে
কালো রাস্তায় দাগ টানছে। ঠিক ঐখানে একটু পর
ওর শৈশব মিশে যাবে দুর্বল কৈশোর আর কামনার
বয়ঃসন্ধিতে। ভেঙেচুরে থাকা ক্ষতটার গা বেয়ে চুঁয়ে
পড়া প্রিয় রং আর ঘামজ্বরের মুক্তাঞ্চল,
পিটুলিগোলা রাস্তাটার গায়ে বেনিয়মে
ছড়িয়ে গিয়ে বিচ্ছিন্ন খড়িমাটির আল্পনা দেয়।
মৃত্যুহীন রূপান্তর
অভিসারের পথে উদ্বায়ী সর্বভুক কবিতাদের,
আপাদমস্তক পড়তে চাওয়ার পাশাপাশি,
এক দল ব্যতিক্রমী কুকুর ঝাউ ঝাউ করে ওঠে।
ভোরের বেলা দিয়ে ততক্ষনে চলে গেছে,
কোন অপাপবিদ্ধ শিশু। জীবনের যোনি বেয়ে
চুঁইয়ে পড়া অমাবস্যার প্রতিধ্বনি, যে কোনো
কোলাহলের বসন্তে সতর্ক গাছের মত নীরবতা
পালন করে। দুঃখময় জীবনটার সারা গায়ে
এক্সপেক্টেশনের গন্ধমাখা মৃত্যুর অবয়ব,
যেন বিশ্বরূপের গন্ধে পাগল তোমার আয়না,
সাবান, লিপস্টিক।
তোমাকে পাইনি
হয়ত তোমাকে পাবার ভীড়ে,
মিশে যেতে চাইনি কোনোদিন।
বোধ ও বুদ্ধির কবিতা
প্রেমের কবিতা বোধ দিয়ে লিখতে চাই
বোধহয়, বুদ্ধি দিয়ে নয়। বুদ্ধি খরচ করলে
সেটা একটা লিমেরিক হয়ে যেতে পারে
কিংবা এলিজি। তখন দুচোখ বন্ধ করলে
শুধুই অন্ধকার। স্বপ্ন বলে আমার বাড়ির
সামনের রাস্তাটা এলোমেলো, অমসৃণ অথচ
চোখ খুললেই সামনে কিলবিল করে ওঠে,
যৌনাঙ্গবিহীন অযুত পোকা আর কৃমির দল।
আমি ছাউনির মত আকাশটাকে ‘তুমি’ ভাবি।
কল্পনা করে নিই তোমার দুই চোখ, নিখুঁত ঠোঁট।
ঠিক দুপা পিছলে তখন আমার ছায়া।
ছায়ার সাথেই ঝগড়া করতে করতে
সেই অদ্ভুৎ গানটার সরগম বেরিয়ে আসে।