রাহুল দাশগুপ্তর গল্প: একটি বিকল্প পাঠ
শতানীক রায়

অনন্ত জীবনের কথা মনে পড়ে। সমুদ্রের বিপুল আয়তনের কাছে নিজেকে বড়ো ছোটো মনে হয়। তেমনই মনে হল কথাসাহিত্যিক, কবি ও প্রাবন্ধিক রাহুল দাশগুপ্তর ‘গল্প সমগ্র’ পড়তে গিয়ে। প্রত্যেকটা গল্প এতই ভিন্ন আইডিয়াতে বোনা যে, পড়তে গিয়ে মনে হয় একজন লেখকের ভাণ্ডারে গল্পের কখনো শেষ হয় না। প্রতিটা গল্প আলাদা আলাদা নির্জনতা বহন করে চলে যেন। বারবার সারাজীবন আমি গল্প-উপন্যাসে নিজর্নতা খুঁজে বেরিয়েছি। একটা গল্প শুধু খাঁ খাঁ দুপুরে গল্পই বলে যাবে। এটাই দারুণ আশ্চর্যের। বর্তমানে বহু গল্পকার শুধু গল্পের ভেতর কাহিনিকে বুনতে চান নয়তো ভাষাকে। আমি মনে করি রাহুল দাশগুপ্তর গল্প শুধু গল্পই বলে। গল্পের জন্য যে-গল্প লিখিত হয় আরকী। গল্পকার গল্পগুলো এমন এক অবস্থান থেকে শুরু করেন যেখানে একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা গল্পটাকে জাগিয়ে তুলছে এমন। এটাকে আমি বারবার বলি আকস্মিক বাস্তব থেকে গল্পকে বের করে আনা। গল্প লিখব বলেই লিখছেন না তিনি। আর গল্পকে গল্পও করার চেষ্টা করেননি যার জন্য এখানে গল্প হয়ে উঠেছে আমাদের নিত্য দেখা মানুষদের এমন কিছু মুহূর্তের ঘটনা থেকে যা হামেশাই ঘটে তবে সেটাকে তুলে আনাও একজন ভালো শিল্পীর লক্ষণ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমি কেন কোনো লেখকের কৃত্রিম কল্পনা পড়ব। এর যুক্তি আমাকে কে দিয়েছে? তাই আমি বাস্তব জীবনে যতটা বেঁচে থাকি তার অনেকটাই মরেও থাকি। কেন এই অদ্ভুত কথা বললাম? এর কারণ আছে সেটা আমি মনে করি। গল্পের কাছে কল্পনা এবং বাস্তবতার মিলন খুঁজতে আসি। কল্পনায় আমি সজীব হই আর ওই মরে থাকার প্রসঙ্গটা হল বাস্তব আমাকে এমন এক তন্দ্রাঘোরে নিয়ে যায় যেখানে বাস্তবটা এতই ঘাতক যে, সেই সব বাস্তব আমার ঘুমের ভেতর আসে আমাকে জড়বৎ করে তোলে। আমি যে ছোটোবেলা থেকে এখন অবধি বেঁচে আছি তার অনেকটা জুড়ে কল্পনা আছে যে-কল্পনা আমাকে বাস্তবকে অতিক্রম করতে শেখায়। এখানে অনেকেই আমাকে পলায়নপর বলবেন। কারণ, বাস্তবকে সব থেকে বেশি মুখোমুখি অনুধাবন করতে গেলে অতিবাস্তবতা দিয়ে অনুভব করতে হয়। তাহলে বাস্তবের চাপানো সত্য বা কঠোর ঘটনার সম্মুখীন একজন মানুষকে যখন হতে হয় তখন সেখান থেকে সে অতিক্রম করতে পারে।
রাহুল দাশগুপ্তর গল্পে একটা বিপুল বৈচিত্র খুঁজে পাই আমি। মানুষকে ঘিরে তাদের সাধারণ বাসনা-কামনাকে অদ্ভুতভাবে গল্পের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে। রহস্যময় জগৎটাকে বারবার প্রাধান্য দিতে চান। আমি গল্পে শুধু কাহিনি খুঁজি না এর বাইরে মন ভালো করার উপাদান আর নতুন কোনো দেখার জগৎ খুঁজে বেড়াই। রাহুল দাশগুপ্তর গল্পগুলিতে কাহিনি নিয়ে বিশেষ ভাবনার বিস্তার এবং নতুনত্ব আছে। উনি ভাষাকে সাবলীলভাবে ব্যবহার করেন গল্পে। কোনো কোনো জায়গায় বিচ্ছেদবোধ আছে যেটা স্বাভাবিকভাবেই যে-কোনো সম্পর্কে থাকা মানুষের আছে বলে আমি মনে করি। অস্তিত্বের অন্বেষণ আছে। একটা কিছু নেই তাকে নিয়ে গল্পকার ক্রমাগত সাবলীলভাবে এগিয়ে চলেন গল্পে। লেখনভঙ্গি অত্যন্ত সাবলীল। কখনো আমি ওঁর গল্পে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টা ভীষণ জরুরি হয়ে উঠতে দেখি। অনেক ক্ষেত্রেই আমার মনে হয়েছে গল্পের বিষয়টাই ওই একাকিত্ব ও যৌনচাহিদা থেকে কোনো একটা আস্তিত্বিক ভাব-ঘোরে গড়ে উঠছে। এই ঘোরের জন্য যে-ভাষার স্বচ্ছতা প্রয়োজন তা দেখার বিচিত্র ভঙ্গিমায় প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। বারবার মনে করিয়ে দেন প্রায় অনেক গল্পেই একটা আধিপত্ব একটা অহংকার অবৈধর রাজনীতির প্রতি। অনেক ক্ষেত্রে তা বিষয়কে ঘিরে এগোতে এগোতে এমন একটা বাঁক নেয় সেখান থেকে গল্পটা একটা কোনো নতুন নীতিবোধ কিংবা অকপট কোনো বাস্তবের সামনাসামনি এনে দাঁড় করায়। সমুদ্রের বালির মতো তখন পায়ের নিচ থেকে সড়ে যায়। এই বিষয়টাকে আরও বেশি বৈচিত্র্যময় করে তুলতে সহায়তা করেন। পাশাপাশি একটা সমান্তরাল বিশ্ব যেন গল্পকার গড়ে তোলেন। প্রায় গল্পেই চরিত্রের একটা আবেগ থেকে জন্ম নেওয়া সমান্তরাল জগৎ যেটা গল্পকে আরও বেশি প্রাঞ্জল করে তোলে।
আমার জীবন দীর্ঘ। আর দীর্ঘ সমস্ত মুহূর্তগুলোকে জড়ো করতে করতে আমি স্মৃতির ভেতর বাঁচতে চাই। রাহুল দাশগুপ্তর বহু গল্প এমন সব জীবনের ফেলে আসা কথাগুলো বলে। বলে থাকে আরও সমস্ত আন্তর্সম্পর্ক। একটা গোলকধাঁধা। যে-মানুষ কখনোই পূর্ণ কোনো সত্যে পৌঁছাতে পারে না তারাই হয়ে ওঠে রাহুল দাশগুপ্তর গল্পের চরিত্র। বিস্ময় সৃষ্টিকারী সব চরিত্র। আবার কখনো গতানুগতিক দেখা চরিত্রের ভেতর থেকে ব্যক্তিমনের সংকট ও সংঘর্ষকে তুলে আনেন। পাঠকের সম্মুখে তুলে আনা হয়তো সরাসরি লক্ষ নয় তারা আসে তার কারণ হয়তো গল্পকার নিজেও সেই সব চরিত্রদের নিয়মিত দেখে এসেছেন যারা একটু একটু করে হলেও বিভিন্ন মানুষের ভেতর অণু পরমাণু রূপে বেঁচে আছে। হয়তো-বা কোনো খণ্ড মুহূর্তের সাক্ষী লেখক। এবং সেখান থেকেই ব্যক্তিবিশ্বের আনাগোনা তুলে ধরে এক অনন্ত মহাশূন্য। এবং এই শূন্যতা কখনো অস্তিত্বের হতে পারে কখনো-বা শারীরিক বা সামাজিক। অনেক সময় এই সবগুলো মিলে এবং কিছুটা আধ্যাত্মিকও হয়ে ওঠে। একটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধুর খেলা কিংবা ক্রুর খেলা চলে তাদের মননে বা জীবনে। আর এখানে গল্পকার খুব সাবলীলভাবে যে-কোনো মানুষের জীবন বা খণ্ড মুহূর্তকে তুলে ধরেন সাবলীল বাংলা ভাষার মাধ্যমে এখানে আমি কখনো কখনো কঠিন মানসিক জটিলতার অবকাশ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা অনুভব করলেও তা হয়তো চরিত্ররাই নিজেদের সহজ সমাধানের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান। কখনো পরিণতি অত্যন্ত মর্মান্তিক হতে দেখা যায়। ঘটনার পিঠে ঘটনা গড়ে ওঠে। অনেক বড়ো দেখার প্রেক্ষাপটও খুলে যায় যাকে সময় সময় পাঠক হিসেবে আমাকে শস্তি দিয়েছে। বারবার আমাদের আয়নার সামনে সরাসরি না দাঁড় করালেও গল্পের স্রোত গল্পের অদ্ভুত কাহিনি হয়ে ওঠে আয়না। মুহূর্ত হয়ে ওঠে বৃহৎ পরিসরে দেখার পরিপন্থী। ওঁর গল্পে একটা কোনো আলোড়নকে চিহ্নিত করার অভিপ্রায় যতটা আছে তার চেয়ে চেনা গণ্ডিকে গল্পের মধ্যে উপস্থাপন করে আলোড়নহীন করার প্রয়াস। এভাবে চরিত্রগুলো আপন আপন জটিলতায় কখনো হারিয়ে যান না। এটাকে বলব প্রচণ্ড বাস্তবমুখীনতা। তবুও কোথাও কোথাও তাদের মধ্যে এমন কিছু ক্ষণ উদ্ভাবিত হয় যেখান থেকে প্রতীকের আড়াল ভেঙে অপার সমুদ্রে ভেসে যায় তারা। আমাকে বারবার বিচ্ছিন্ন করে আমাকে সংযুক্ত করে। একটা চরম দহন প্রক্রিয়া চলে। তাকে স্বীকার-অস্বীকারের মধ্যে দিয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা একটা অন্য কোনো সত্যে। যা ভালো-খারাপের মাপকাঠিতে না বেঁধে আমার মনে হয় যা ঘটে চলেছে গল্পে তার দিকে দেখার চোখকে তৈরি করিয়ে নেয়।
আরেকটি বিষয় রাহুল দাশগুপ্তর গল্পে অনেক ইন্টারটেক্সটচুয়ালিটির প্রসঙ্গ আসে। কখনো দস্তয়েভস্কি কখনো-বা অন্যান্য লেখকের। তবে তা বিষয়ের সঙ্গে ঠিক মানানসই হয়ে যায়। আরেকটা কথা না বলে পারছি না। রাহুল দাশগুপ্তর গল্পে গল্প-কথকের অবস্থান বা গল্পকারের অবস্থান খুব স্বচ্ছ। এর অনেকগুলো অবস্থান আছে। আমি পরিষ্কার করে বলি। কথক এমন একটা অবস্থান থেকে গল্পটা বলছেন বা ঘটনাকে বর্ণিত করছেন সেখানে কোনোভাবেই মনে হয় না তাঁর যোগসূত্র গল্পের সঙ্গে অর্বাচীন। তিনি কোনোভাবেই এমন কিছু করতে চাইছেন না বা বলতে চাইছেন না যা গল্পের চরিত্রগুলোর ওপরে আরোপিত মন হয়। প্রত্যেকটি চরিত্রের রাজনৈতিক অবস্থান খুবই পরিষ্কার। আমি অধিকাংশ গল্পকারদের দেখেছি গল্পটি কেন লিখছেন সেটাই তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। কেউ ভাষা এবং ভাবনায় নতুন প্রয়োগ করতে গিয়ে গল্পের নিরিখে চিন্তার যে একটা রাজনৈতিক অবস্থান থাকতে পারে সেটাই ভুলে যান। রাহুল দাশগুপ্তর গল্পে লেখকের রাজনৈতিক অবস্থান খুব স্বচ্ছ। এবং আরেকটি কথা বলি। প্রত্যেকটি গল্পে চরিত্রদের অভিসন্ধি ও ব্যক্তিগত অবস্থানেরও যে একটা শ্রেণিগত সামাজিক অবস্থান তা খুবই পরিষ্কার যা একটি গল্পের বিষয়কে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তোলে। এবং কখনোই তা মনে হয় না যে, বিষয় নির্বাচনের সঙ্গে কোনোভাবে চরিত্র প্রণয়ন গল্পের ক্ষেত্রে বিষয়ের সঙ্গে মানানসই হচ্ছে না। এবং এই জন্যই আমি বলব যদিও ভাষার ক্ষেত্রে কোনো নতুনত্ব তৈরি করার ঝুঁকি রাহুলবাবু না নিলেও গল্পের বিষয় এবং গল্প বলার প্রণালী কিন্তু পাঠকের কাছে খুবই পরিষ্কার। এবং প্রত্যেকটা গল্পেই এক-একটা বাস্তবতাকে ছোঁয়ার জন্য একটা বা একাধিক অতিবাস্তবতার প্রয়োগ করেছেন লেখক।


‘ফাউ’ গল্পটি খুব ভালো একটি গল্প। যদিও আমার ব্যবহার করা ‘ভালো’ শব্দটি সবসময় প্রাসঙ্গিক নাও মনে হতে পারে। গল্পের বিষয় আর যে-নৈতিক অবস্থানকে তুলে ধরা হয়েছে তা আসলেই রাষ্ট্রশক্তির প্রতি একটা প্রতিবাদ। এই তীব্র প্রতিবাদ গড়ে উঠেছে প্রথা এবং বিশ্বাসের প্রতি। সৌন্দর্যের রূপক বয়ে চলেছে পাশাপাশি তা আদতে গল্পের মূল উচ্চারিত শূন্যতা এবং একটি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক আচরণকে বড়ো বেশি করে পরিষ্কার করে। গ্রন্থাগারে কেউ বই পড়ে না। রাষ্ট্র এই বই পড়াকে বিরোধ করে। আর এই গল্পে একটা অদ্ভুত প্রয়োগ সৌন্দর্যের প্রতি কথকের ভ্রম হচ্ছে অলীক জ্ঞানের অন্বেষণের প্রতীক হিসেবে মনে করতে পারি। যে-সৌন্দর্যের পিছু ধাওয়া করে শেষ পর্যন্ত যে কথককে মৃত্যু বরণ করতে হল সেটা সবচেয়ে বড়ো স্যাটায়ার বলে মনে করি আমি। আর এটাই হল বাস্তব। যে-কোনো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রশক্তির এটাই লক্ষ্য থাকে কী করে দেশের মানুষের সাধারণ স্বরকে শিক্ষিত হতে না দেওয়া, প্রতিরোধ করা দমন করা। এটারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই গল্প। গল্পের বিষয়ের সঙ্গে এই গল্প নির্মাণের বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে আমার।
‘চেয়ার’ নামক গল্পটি একটি বিচিত্র গল্প। চেয়ার এখানে পরম্পরা আর আভিজাত্যের প্রতীক। আবার একদিক দিয়ে চেয়ারটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর প্যাশনের প্রতীকও বলা যেতে পারে। যা অনেক সময়ই সমাজের কাছে একটা বিরক্তি বা দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ হিসেবে দেখা দেয়। এই গল্পে চেয়ারের প্রতি কেন যে গল্পের কথক আর সেই ছেলেটা আকর্ষণ বোধ করেছিল এর কোনো যুক্তি কোনোদিন হয় না। তাই কিছু জিনিস সংক্রমণের মতো মানুষ থেকে মানুষে পরম্পরার মতো ছড়াতে থাকে। গল্পটিতে কথকের অবস্থান আমাকে আকৃষ্ট করেছে।
‘সুন্দর মেয়েরা আজও আছে’ গল্পটি অভিনব। বিষয়ের দিক থেকে এবং উপস্থাপনার দিক থেকেও এগিয়ে। সুন্দরী মেয়েরা যে একে-অপরকে ঈর্ষা করে সেটাকে এত সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন সেটা ভীষণ আকর্ষণ করেছে। আরেকটা দিক হল সৌন্দর্য যা রাহুলবাবুর অনেক গল্পেরই বিষয়কেন্দ্র। সৌন্দর্যকে কেন বিষয় হিসেবে বেছে নিচ্ছেন জানি না তবে অনেক গল্পেই যৌনতা ও সৌন্দর্য যা মানুষের আদিরসাত্মক বৃত্তি থেকে আসে সেটাকে নানাভাবে দেখেছেন লেখক। ‘স্পর্শ’ নামক গল্পেও যৌনতা, সৌন্দর্য ও ঈর্ষাকে হাতিয়ার করেছেন লেখক। একটা বিচিত্র সুর আছে। এলোমেলো অনেকগুলো শাখা আছে গল্পের তারপর তা এক সময় মানুষের রিপুপ্রবৃত্তি আর জাদুবাস্তবতার মাধ্যমে এমনভাবে আমাদের সামনে আসে তা সত্যিই আকর্ষণীয়। আমার গল্পটাতে একটা সুর বারবার মনে হয়েছে একটা রহস্য সেটাই হয়তো রাহুল দাশগুপ্তকে গল্পে অতিনাটকীয়তাকে অতিক্রম করতে শেখায়। লেখক কখনোই নাটকীয় হয়ে ওঠেননি। আমার এখানে একটা প্রশ্ন বারবার মনে হয়: পাঠক কি গল্পে অতিনাটকীয়তা খোঁজেন? জানি না। আমি তো বরং বাস্তবকে খুঁজি সেটা সবাই তবে আমার একটা বসবার জায়গা জিরোবার জায়গাও প্রয়োজন হয় গল্পে। রাহুল দাশগুপ্তর গল্পে একটা রহস্য আছে যা আমাকে গল্পে টান টান রাখে পাঠের সময়।
যৌনতা একটি গল্পে খুব অন্যভাবে এসেছে। ‘বার্ধক্য’ নামে একটি গল্প আছে ‘গল্প সমগ্র’-এ। কথকের পিসি জীবনের অনেকটা সময় পেরোনোর পর যৌনতাকে আবিষ্কার করছেন স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের মধ্যে। সেখানে সে ভ্রান্তির ভেতর বিলাস করছেন। যৌনতার ছলে পড়ে গিয়ে তার আর যৌনতাকে নতুন করে আবিষ্কার করা হয়ে ওঠে না। সে তখন বার্ধক্যের গ্রাস হয়। আমার এখানে কথক যে তার পিসির হঠাৎ বুড়িয়ে যাওয়া নিয়ে ভাবছেন এটাই আমার কাছে আশ্চর্যের। কারণ, এখানে যৌনতাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে ‘বার্ধক্য’ দিয়ে। তাই এখানে বার্ধক্য আমার কাছে শুধু তার পিসির চেহারার অবয়ব নয় তার সঙ্গে তার যৌন চাহিদা বা যৌন চাহিদা থেকে মনের অভিব্যক্তির যে দৃশ্যমানতা তার পিসির দেহে ফুটে ওঠে তার অবলুপ্তির প্রতীক। যৌনতার একটা আস্ত দেহ যেন বুড়িয়ে গেছে এরকম ভাবতে বেশ মনে হয় আমার। এখানে প্রতীককে আমরা চিহ্নে বাঁধার প্রসঙ্গটাকে খুব জরুরি মনে হয়। যেখানে বারবার মনে হয় ফ্রয়েডের তত্ত্বকে যেখানে তিনি সবকিছুকেই যৌনতার মাফকাঠিতে ধরার চেষ্টা করছেন।
‘ফটোগ্রাফ’ গল্পটা আমার ভীষণ ইঙ্গিতবহুল মনে হয়েছে। একজন পুরুষ যৌনসঙ্গমের সময় মায়ের ছবি দেখে লজ্জাবোধ ও সম্ভ্রমবোধ করে এটা তার পুরুষ হওয়ার পথে একটা প্রথম ধাপের দ্বিধা বলব। আবার অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক আর কিছুটা পরিবারে যেটা হয়ে থাকে সন্তানের বিয়ের পর তার মা যে ছেলের প্রতি নানাভাবে কারণে অকারণে দ্বিধান্বিত হয় বা ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর মাঝে হস্তক্ষেপ করেন সেটাও কিন্তু এই গল্পটা বোঝাতে চায়। আরেকটু সুন্দরভাবে বললে এও একটা মায়ের মানসিক উত্তরণের জায়গা সেটা এখানে ছেলের মনে ফুটে উঠেছে যেটা অনেকটা অদ্ভুতভাবে। গল্পকারের এই নতুনভাবে দেখা আমাকে খুব ভাবিয়েছে। এখানে ছেলের পৌরুষত্ব প্রাপ্তির পথে ছেলের যে মাতৃভক্তিকেও অনেকটা বোঝানো হয়েছে। যেখানে সমীহ একটা সুন্দর হবে বোঝানোর জন্য। আমার গল্পে যেটা খুব ভালো লেগেছে সেটা হল দৃশ্যটা যখন সঙ্গমরত অবস্থায় ছেলেটা থেমে গিয়ে তার মায়ের ‘ফটোগ্রাফ’ দেখে।

অনেক গল্প আছে বইটিতে। আমার তো অনেক গল্পের শুরুটাই খুব ভালো লেগেছে। যেখানে একটি ‘গতি’ নামক একটি গল্প শুরুই হচ্ছে মার্বেল পাথরের একটি মন্দিরের সিঁড়িতে বসে। কথক আর তার বন্ধুর কথোপকথনের ভেতর দিয়ে। আসলে গল্পটা এখানে আরেকটি গল্প ধরে রাখে। আমরা জীবনে চলতে গিয়ে দেখি অনেক জীবনকে সঙ্গে নিয়ে চলেছি অনেক কিছু। কিন্তু তা কখনো বুঝি আবার কখনো হারিয়ে ফেলি। আশা রাখি পাঠক বইটি পড়লে সেটা অনুভব করবেন। এখন এটুকুই।

গল্প সমগ্র
রাহুল দাশগুপ্ত
প্রকাশনা: মিত্র ও ঘোষ

CATEGORIES
TAGS
Share This
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes