
মোহনা মজুমদার-এর কবিতা
ছলাকলা
চুল্লি থেকে বেরিয়ে আসার পর হরিণীটি পুনরায় এসেছে কাঠের সংস্রবে । সিঁড়িতে বসে দেখি আগুনে আগুন জ্বলে ধুয়ে যায় হত্যার মুখ , চুইয়ে পড়ে ফিরোজা শোক । যে ‘আমি’ রয়ে গেছে জলের গভীরে , তাকে অন্তর থেকে বাইরের পথ কীভাবে দেখাবে ডুবোজাহাজ ?
তোমার হাসির মতো সাবলীল যা কিছু , দৈবাৎ নির্বাসন দিয়েছিলে কেন , সে প্রশ্নের
উত্তর- চোখ জানে ।
শীত এলে বড়ো নিঃসঙ্গ হয়ে যায় আকাশ । খড়খড়ি তুলে দেখি নিমগ্ন হয়েছে শুশ্রূষা ।
খানিক গ্লিসারিন ঢেলে চোখে জল এনেছি , এবার কুয়াশাচ্ছন্ন পথ পেরিয়ে তোমার খবর নিতে যাবো ।
জীবাশ্ম ভেঙ্গে কামিনী হয়ে ওঠার মুহূর্তে ভুলে যেও ক্ষতের ওপর নুনের বিকল্প কিছু হয়না ।
স্নাত এক কালরেখা
বহুকাল আমরা একটা নদীর ভেতর মুখ ডুবিয়ে বসে আছি । আর নিজেদের বোঝাতে চেয়েছি জোয়ারের জল এপথে ঢুকবে না । অন্ধটা তাকিয়ে হাসতে থাকে , ওভারব্রিজ থেকে ক্ষুরহাতে । ‘ওসব হেঁয়ালি ছাড়ো’ বলতে গিয়ে আটকে আছে পূত এক তৃপ্তিসুখ ।হাজার বছরের তীক্ষ্ণ সেই উল্লাস ডুবোজাহাজে ভাসিয়ে ভাবি এইবার উড়তে পারবো , ডুবসাতার দিয়ে পৌঁছতে পারবো মোহনায় , তারপর একের পর এক ঝিনুক ছাড়িয়ে নিখোঁজ করবো কণ্ঠ ।অথচ দুঃখ থেকে পাপড়ি ছিঁড়ে রং চলে গেছে মহাযোনির গর্ভে ।
ওগো মৃত্যু , মুখোমুখি হতে এতো ভয় কিসের তোমার? পা ভেঙ্গে পড়ে আছি এতদূর , কিছুতেই এগোতে পারছিনা ।
প্রতিপালক
যে সমীকরণে শেষবার কোর কোয়ান্টাম থেকে তুমি আলো নিক্ষেপ করতে চেয়েছিলে , সেই সমীকরণে কোনোদিন আমাদের এক্স হয়ে ওঠা হয়নি । টুকরো টুকরো ঋণ আকুল হয় , ভেসে যায় মোহনার দিকে ।
টেমসের তীর ধরে আমরা তখন হেঁটে চলেছি ,হটাত মনে পরে পিপাসার্ত ঘড়ির সুরের কথা , তাদের গোল করা সংকল্পে আমার কোনো মদত ছিল না ।
কী ভীষণরকম আগুন গড়ালে , কচ্ছপের বুক থেকে বিদ্যুৎ ঝড়ে , টের পাও ? নাভীর নীচে জ্বলজ্বল করে নক্ষত্রের কান্না , আনসিঙ্কেবল ।
‘ঠাঁই নেই , ঠাঁই নেই’ ভাবতে ভাবতে শেকড়ের দুঃখ খুবলে খেয়েছিল যে আদিপুরুষ , তাকে আজ বধির করো , এই দুর্বহ ডিসটোপিয়ায় । ঊবে যাক মুহূর্তে লবণ হয়ে ওঠা ঈশ্বরের চোখ ।
সুররিয়ালজম একটি আশ্রয়ের নাম
রঙে জল ঢালি । জলে রং । ঢালি , ঢালি , ঢালি । সাপটি নদী হয় ক্রমশ ।
তার বুকের ভেতর এভাবে কিছুটা পথ আঁকার পর , দেখি বাঁশির কাছে সুর এসে পৌঁছনোর ধাপটি তুমি লুকিয়ে ফেলেছো সন্তর্পণে , ঘাসের নীচে । অথচ তছনছ ঘর প্রস্তরীভূত ছায়ায় আটকে আছে । উৎসর্গ পত্রে তোমার নাম লিখি তা তুমি চাওনি । তবু বদলে দিয়েছ দাগ লাগা পোশাক , রাস্তার বাঁক ।
করোটিতে তালাবন্ধ করার প্রস্তুতি চলছে । লেপ , কম্বল গুটিয়ে আমি তখন বাঁশিওয়ালার দোরগোড়ায়। কোথায় যাবো? না জেনেই ঝাপ দিই , আচমন করি নিবিড় যা কিছু । মনে হয় এই কি তবে সুপারনোভা ?
আলোর ফাঁক দিয়ে আয়নায় যা ভেসে ওঠে , এবার তাকে জড়িয়ে ধরো । কেননা না ছুঁতে ছুঁতে , ছুঁয়ে যাওয়াই যে নিভৃত এক সুররিয়ালিজম ।
দগ্ধবীজ
ক্ষিপ্র ছায়ার মতো , যুগ্মমুখ ভেসে ওঠে । ধীরে ধীরে ঘোর কেটে গেলে কেউ কি আর কামুক থাকতে পারে? বলো সৃজন ,এই কসমিক অক্টোপাসের ভীড়ে ,কতোটুকুই বা প্লবতা আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি? কুসুম-ভোর ছিঁড়ে সামনে এসে দাঁড়ায় – বালি? যোনিচ্ছেদ ?
অথচ যে পিঁপড়েটি চোরের মতো, ফেলে আসা নামটির ওপর চুপটি করে মাটি রেখে যায়, তাকে খুন করবো, এই অভিপ্রায়ে অস্ত্র ধারালো করি।
সীতাকুণ্ডে তখন জমেছে প্রত্নকালের শিকড়।কতকাল আর এই পরিহাস মাথায় নিয়ে বৈরাগী হবে, ফকির?
এসো হাঁ-গহ্বর, দুটো ভাত ফুটিয়ে খাই এবেলা। এসব ভালো না থাকার ওপর ওঁ শান্তি বলে গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিই।
পিঁপড়েটি হেঁটে যায় বাতাসা ভেঙে ঈশ্বর অবধি ।
চমৎকার চমৎকার সব লেখা পড়ছি আজকাল