
মেঘ শান্তনু-র কবিতা
ছবি
তারপর, অনেকটা পথ হেঁটে এসে যুবতী খুঁজে পেয়েছে রোদ
দেখেছে
না লিখতে পারা কবিতার মতো আলোয় ভেসে যাচ্ছে
তার ঘর
রোদে ঝিলমিল করছে পুরনো অভাববোধ
নভেম্বর মাসের আলো বিলি করে নিঃস্ব হয়ে গেছে ফেরিওয়ালা সকাল
মেয়েটি নেই
তার মন-খারাপ মেলে দেওয়া আছে ছাদের দড়িতে…
_____
কুণ্ঠা
হাতের পাতায় ছিল কুণ্ঠা
সংশয় থেকে একটু দূরে মফস্বল স্টেশন
শীত গাঢ় হয়ে ফুটেছে কুয়াশার পথে
‘চলে যাবে?’ বলার আগেই ছেড়ে দিলো ট্রেন
চলে গিয়েছে শীত
চলে গিয়েছে ট্রেন অনেক দিন হলো
মুঠো খুলে দেখি গভীর রাত, একা প্লাটফর্ম
হাতের প্রান্তে লেগে আছে বহু পুরনো, জরাজীর্ণ
কুণ্ঠাবোধ…
______
সরল
দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি পাখিদের উড়ে যাওয়া
দেখি রাতের বুক থেকে খসে পড়ছে তারা
বন্যায় ভেসে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি,
ক্ষেতের ফসল
নদী বয়ে চলেছে বহুদূরে, আপন ছন্দে…
চলে যাওয়া দেখতে আমার ভালো লাগে। ভাবি আরো আড়ম্বরহীন নীরব হয়ে উঠুক প্রস্থান, হেমন্তের আকাশের মতো, শিল্পের মতো। যেন ঢেউ না ওঠে। যেন শব্দ না হয়।
ভাবতে ভাবতে ম্লান হয়ে আসে আলো। নিঃশেষ হয়ে যায় আকাশ
একটা গোটা জীবন ধরে আমি বিদায় মুহূর্ত সঞ্চয় করতে থাকি…
___________
অন্ধকার
যা কিছু অন্ধকার তাই আমার ভালো লাগে
অন্ধকারেরও একরকমের আলো আছে, মায়া আছে। সেই আলোর নিচে দাঁড়িয়ে আমি সূর্যাস্ত দেখি। মানুষের বাড়ি ফেরা দেখি।
দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায় সময়।
নিঝুম হয়ে আসে পথ…
আমার ফেরার পথে, উঠোনে, সারা ঘরময় অন্ধকার জ্বেলে রাখেন ঈশ্বর!
____
তখন
অংশত নির্জন হয়ে থাকি
মাঠের ওপর সন্ধ্যাতারার আকাশ
দিগন্তের ওপার জুড়ে দিগন্ত
মিনার থেকে লাফিয়ে নামে চাঁদ
সুগন্ধ এলিয়ে দিলো ক্লান্তির জুঁই
ইতস্ততঃ ছড়িয়ে রয়েছে এইসব বিপন্নতাবোধ
তুমি বলতে এটুকুই…
দূরে তোমারও অধিক দুঃখময় কিছু অন্ধকার
ফুল হয়ে ফুটে আছে
_____
খেয়া
দীর্ঘ বিরতির শেষে এইটুকু দিগন্ত
তোমাকে ছুঁয়ে দেবো ভাবি
নীরব কান্নার মতো শাদা ফুল তুমি,
ঝরে পড়ছো
আমার অরণ্যরেখার শেষ কুয়াশায়
তোমাকে ভালোবাসি দ্বিধাগ্ৰস্ত আলোর মতন
বাংলা গানের পথে…
তোমাকে পেরিয়ে যেতে ভালো লাগে
বহুদূরে
তোমার ওপারে…
______


অনেকদিন পর ঝর্ণার মত কিছু কবিতা পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। লেখার মধ্যে একটা মাদকতা আছে। শুভেচ্ছা অনিঃশেষ।