মহাভারতের মহারণ্যে- চতুর্থ পর্ব <br /> সপ্তর্ষি বিশ্বাস

মহাভারতের মহারণ্যে- চতুর্থ পর্ব
সপ্তর্ষি বিশ্বাস

"এখানে আরেকটি প্রশ্ন জাগে মনে। কুন্তী তার নিজের সঙ্গে সম্ভোগের নিমিত্ত, বক্সিং রিঙ এ বাজি ধরা দেবতা, বাছা দেবতা বায়ু আর ইন্দ্র কে আনালেন আর মাদ্রীর নিমিত্ত নির্বীর্য অশ্বিনীকুমার। হয়তো পুত্রার্থে, তথাপি যৌন আনন্দের প্রশ্নটিও, অন্ততঃ মহাভারতে এড়িয়ে যাওয়া যায়না কেননা মহাভারতকার নিজেই তা এড়িয়ে যাননি কদাপি। স্ত্রী-পুরুষের মিলন কে ১৮শতকের অনেক স্বঘোষিত সমাজ সংস্কারকের মতো তিনি নিতান্ত সন্তানার্থ একটি প্রক্রিয়া বলে ঘোষণা না করে বরং কাম ও তার কাছে মানুষের স্বাভাবিক পরাজয়ের কাহন শুনিয়েছেন বারবার। শান্তনু স্বয়ং এবং পরে পান্ডুর মৃত্যু এর অনেক অনেক মহাভারত-উদাহরণের দুইটি।"

দূর-অদূর পর্ব

। ৪।
অমৃত সমান যে উপদেশ, সঙ্কেতে, অর্থাৎ “ম্লেচ্ছ ভাষায়”, বিদুর দিয়েছিলেন যুধিষ্ঠিরকে, বারাণাবত যাত্রার প্রাক্কালে, তা এইঃ “যে ব্যক্তি নীতিশাস্ত্রানুসারিণী পরমতির অভিজ্ঞ হন, তাহার উচিত এই যে, যাহাতে আপদ হইতে নিস্তার পাওয়া যায়, সর্ব্বদা এরূপ চেষ্টা করা। তৃণরাশির মধ্যে বিবর খনন করিয়া অবস্থিতি করিলে তৃণদাহক ও শৈত্যনাশক হুতাশন কখনই দগ্ধ করিতে পারে না। যে ব্যক্তি ইহা জানে, সে আত্মরক্ষা করিতে পারে। শত্রুদিগের কুমন্ত্রণারূপ অস্ত্ৰ লৌহনির্মিত নহে, অথচ শরীর ছেদন করে; যিনি ইহা জানেন, শত্রুবৰ্গ তাহাকে কখনও নষ্ট করিতে পারে না। যে ব্যক্তি অন্ধ, সে পথ বা দিঙনিৰ্ণয় করিতে পারে না ও অধীর লোকের বুদ্ধিস্থৈৰ্য্য থাকে না, আমি এই কথা মাত্র বলিলাম, বুঝিয়া লও। সর্ব্বদা ভ্ৰমণ করিলে পথ জানিতে পারা যায়, নক্ষত্র দ্বারা দিঙনিৰ্ণয় হইতে পারে এবং যে ব্যক্তি আপনার পঞ্চেন্দ্ৰিয় বশীভুত রাখিতে পারে, সে অবসন্ন হয় না।”
ক্ষত্তা যদব্রবীদ্বাক্যং জনমধ্যেঽব্রুবন্নিব।
ৎবয়া চ স তথেত্যুক্তো জানীমো ন চ তদ্বয়ম্॥
যদীদং শক্যমস্মাভির্জ্ঞাতুং নৈব চ দোষবৎ।
শ্রোতুমিচ্ছামি তৎসর্বং সংবাদং তব তস্য চ॥
বিষাদগ্নেশ্চ বোদ্ধব্যমিতি মাং বিদুরোঽব্রবীৎ।
পন্থানো বেদিতব্যাশ্চ নক্ষত্রৈশ্চ তথা দিশঃ।
`কুড্যাশ্চবিদিতাঃকার্যাঃস্যাচ্ছুদ্ধিরিতিচাব্রবীৎ॥
জিতেন্দ্রিয়শ্চ বসুধাং প্রাপ্স্যতীতি চ মেঽব্রবীৎ।
বিজ্ঞাতমিতি তৎসর্বং প্রত্যুক্তো বিদুরো ময়া॥ [ ১ -১৫৭-২৯ থেকে ১ -১৫৭-৩২ ]
ইঙ্গিতে সিঁদ খুঁড়ে পলায়ন থেকে ভ্রমণের, যা আদতে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর, উপযোগিতা জানালেন বিদুর। সঙ্গে বল্লেনঃ “জিতেন্দ্রিয়শ্চ বসুধাং প্রাপ্স্যতীতি”। “যে ব্যক্তি আপনার পঞ্চেন্দ্ৰিয় বশীভুত রাখিতে পারে, সে অবসন্ন হয় না।” ‘ইন্দ্রিয়’ টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখবার এক রকমের প্রয়োজনীয়তার রমরমা দেখা যায় ১৮ শতকের বাংলা সাময়িক পত্রাদিতে, যথা ‘অনুবীক্ষণ’, ‘চিকিৎসা সম্মিলনী” ইত্যাদি। তবে সমকালীন “বিবিধার্থ সংগ্রহ” বা পরে রাজেন্দ্রলাল দ্বারাই সম্পাদিত ‘রহস্য সন্দর্ভ’ তে ‘ইন্দ্রিয়’ নিয়ে এই ‘গেল, গেল’ রব নেই। ‘ইন্দ্রিয়’ বলতে বঙ্গের তৎকালীন অনেক স্বঘোষিত সমাজ সংস্কারকই যা বোঝাতে চেয়েছেন তা আত্মরতি। কিন্তু মহৎ বিদুরের ‘জিতেন্দ্রিয়’ শব্দে আত্মরতির সংশ্রব, ‘অণুবীক্ষণ’ বা ‘চিকিৎসা সম্মিলনী” সম্পাদক দিগের ন্যায়, ‘সে অবসন্ন হয় না’, এই বাক্যাংশের দ্বারা যদিবা স্থাপন করা যায় তথাপি বিদুরের দ্বারা ব্যবহৃত ‘জিতেন্দ্রিয়’ শব্দ আদতে বলে নারী সংসর্গ থেকে দূরে থাকার কথা। আশ্চর্য এই, যে, ‘লেখক ব্যাস’ প্রথমেই যা দেখালেন তা হচ্ছে এই ‘জিতেন্দ্রিয়’ শব্দকে নস্যাৎ করলেন পলাতক এই ‘ট্র্যাজিক হিরো’র দল , ভীমের হিড়িম্বার ‘পাণি গ্রহণ’ এর দ্বারা। এই কার্যটি করবার আরেকটি, আর একটিই, সম্ভাব্য নাম, অর্জুন। যুধিষ্ঠির বরং ‘অণুবীক্ষণ’ বা ‘স্বাস্থ্য’ সাময়িকীর সম্পাদক দিগের হাহাকার তুচ্ছ করেও নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ‘ইন্দ্রিয়’ কে সামলে নেবে। কিন্তু এগিয়ে যাবেনা। নকুল, সহদেব চরিত্র দুইটিকে তো আদতে হাজির করাই হয়েছে কুন্তীর সপত্নী প্রীতিকে জাহির করবার জন্য। কিন্তু তথাপি এরা কুন্তীপুত্রদের তুলনায় নির্বীর্য। এবং অবশ্যই নির্বিরোধী। কিন্তু কেন? এরা মাদ্রীর গর্ভজাত বলে না’কি অশ্বিনীকুমার দ্বয়ের ঔরসে এদের জন্ম বলে?
প্রকৃত প্রস্তাবে দুইটি হেতুই এখানে ক্রিয়াশীল। দেবতাদের মধ্যে অশ্বিনীকুমার দ্বয়ের বীরত্ব থেকে তাদের চিকিৎসা-জ্ঞান এবং রূপেরই সংশাই বেশী আর বিমাতা হিসাবে কুন্তীর উপেক্ষাও এসে মিলেছে এখানে।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন জাগে মনে। কুন্তী তার নিজের সঙ্গে সম্ভোগের নিমিত্ত, বক্সিং রিঙ এ বাজি ধরা দেবতা, বাছা দেবতা বায়ু আর ইন্দ্র কে আনালেন আর মাদ্রীর নিমিত্ত নির্বীর্য অশ্বিনীকুমার। হয়তো পুত্রার্থে, তথাপি যৌন আনন্দের প্রশ্নটিও, অন্ততঃ মহাভারতে এড়িয়ে যাওয়া যায়না কেননা মহাভারতকার নিজেই তা এড়িয়ে যাননি কদাপি। স্ত্রী-পুরুষের মিলন কে ১৮শতকের অনেক স্বঘোষিত সমাজ সংস্কারকের মতো তিনি নিতান্ত সন্তানার্থ একটি প্রক্রিয়া বলে ঘোষণা না করে বরং কাম ও তার কাছে মানুষের স্বাভাবিক পরাজয়ের কাহন শুনিয়েছেন বারবার। শান্তনু স্বয়ং এবং পরে পান্ডুর মৃত্যু এর অনেক অনেক মহাভারত-উদাহরণের দুইটি।
অতএব প্রশ্ন ওঠে কেন এই অশ্বিনীকুমার দ্বয়! হ্যাঁ, এঁরা রূপবান, চিকিৎসক – এই সকলই সত্য হয়ও যদি, তথাপি ‘স্ট্যাটাস’ হিসাবে ‘বীর’ কদাপি নয় অশ্বিনীকুমার দ্বয় আর তাই মনে হতেই পারে, যে, কুন্তী এখানে প্রতিযোগিতা চায়নি। সে জানতো অশ্বিনীকুমার দ্বয়ের দ্বারা এই রকমের সন্তানই উৎপাদন সম্ভব। আর সেক্ষেত্রে মাদ্রীর পুত্রেরা কুন্তীর বীর্যবান পুত্রদের চিরন্তন আজ্ঞাবহ হয়েই থাকবে।
এই সম্ভাবনার সূত্র পাওয়া যায় এই পাঁচ সুপারহিরোর জন্মোপাখ্যানে। কুন্তী ইন্দ্র আর বায়ুকে এনে কিংবা নিজে এদের কাছে গিয়ে, তার নিজের কার্যোদ্ধার করবার সময় সে কিন্তু কদাপি ভাবেনি মাদ্রীর কথা কিংবা ভাবলেও বুচকি হেসেছে মনে মনে। অতএব মাদ্রীর নিজেরই খুলতে হয় মুখ। বলতে হয় পাণ্ডুকেঃ
ন মেঽস্তি ৎবয়ি সন্তাপো বিগুণেঽপি পরন্তপ।
নাবরৎবে বরার্হায়াঃ স্থিৎবা চানঘ নিত্যদা॥
গান্ধার্যাশ্চৈব নৃপতে জাতং পুত্রশতং তথা।
শ্রুৎবা ন মে তথা দুঃখমভবৎকুরুনন্দন॥
“আমি বরার্হা হইয়াও হীনাবস্থায় রহিয়াছি, তাহাতেও আমার পরিতাপ নাই কিংবা গান্ধারী শতপুত্রের মাতা হইয়াছেন বলিয়া আমার এক মুহূর্তের নিমিত্তও ঈর্ষা হয় না; কিন্তু হে মহারাজ! আমার অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, কুন্তী ও আমি এই দুইজনই আপনার ভাৰ্য্যা, উভয়েই সমান; কিন্তু কুন্তী পুত্রবতী হইলেন, আমি পুত্ৰমুখনিরীক্ষণে বঞ্চিত রহিলাম।”
অতঃপরঃ “হে রাজন! যদি কুন্তী আমার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাহা হইলেই আমার পুত্র হয়, আপনারও অধিক অপত্যলাভ দ্বারা মহৎ উপকার জন্মে; কিন্তু কুন্তী আমার সপত্নী, আমি কোনক্রমেই তাহার নিকট প্রার্থনা করিতে পারিব না।”
অর্থাৎ কুন্তী-মাদ্রী সম্পর্ক ছিলনা, স্বাভাবিকভাবেই, খুব সহজ সরল। লক্ষ্যনীয়, এ’ও, যে, মাদ্রী, কুন্তী-গান্ধারীর অন্তর্গত ঈর্ষা-টানাপোড়েনেও নেই। অতএব কুন্তীর পক্ষে এই সরলার সঙ্গে ছলনা করা নাতো কঠিন, নাতো অসম্ভব।
এই সমস্ত ক্লু, কুন্তী চরিত্রকে বিশ্লেষণ করবার, রেখে দিয়ে, অতঃপর ‘লেখক ব্যাস’ কুন্তীকে হাজির করছেন মঞ্চে। তাকে ‘লেজিটিমেসি’ দিচ্ছে ‘চরিত্র ব্যাস’। ‘লেখক ব্যাস’ এর নিজে জারজ হওয়ার সঙ্গে এই মহাগ্রন্থের সমস্ত জারজ চরিত্রগুলি এক দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে সংপৃক্ত। নিজে জারজ হওয়ার দায়ে কৃষ্ণদ্বীপে নির্জন বাস নিশ্চিত তাঁর অবচেতনে সঞ্চার করেছে ক্ষোভ যা তিনি তাঁর পান্ডিত্য, কবিত্ব দিয়ে চেয়েছেন কাটিয়ে উঠতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি সর্বদা, সর্বত্র। সুতরাং জারজ চরিত্রগুলি, যেমন এই পঞ্চ-হিরো, এদের প্রতি সহানুভুতি দেখিয়েছে তাঁর ‘চরিত্র ব্যাস’ আর পক্ষান্তরে, তাঁর অবচেতনে ‘লেখক ব্যাস’ নিজে রেখে গিয়েছেন সেই সব সূত্রগুলি, যেগুলিতে, আদতে এরাই হয়ে ওঠে ভিলেন।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS Wordpress (2)

  • comment-avatar

    আশ্চর্য আবিষ্কার!!!

    • comment-avatar

      এটা পার্থজিতের জন্য। ভুল করে এই পাতায় লিখে দিয়েছি 🙂

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes