
মহম্মদ সামিমের পাঁচটি কবিতা
প্রবাহ
মায়ামুগ্ধ জীবনে তুমিই শুধু প্রবাহ
নিরন্তর বহে, শুনি কলতান, শব্দের অসীম প্রণেতা
সমস্ত আলোর ভিতর গোপন বুদবুদ,
জলের ঠিকানায় আমাকে লেখো, অবেলায়।
বারান্দায় ছড়িয়ে আছে শীতের স্তবক,
কিছু পাখির ঠোঁট তুলে রাখছে নিভৃত খড়কুটো
উদাসীন দিগন্তে ভেসে যায় পুরনো চিঠির খাম
তোমার চিবুক, নৈঃশব্দ্যে ফুটে আছে, কত বিস্ময় !
নিজেকে বিছিয়ে রাখি, এইসব সকালের নিঝুমে
আমাকে ভাঙে চেতনার স্রোত, ডুবে যায় পাতালের ঘুমে।
নিজেকে ফুরিয়ে যেতে দেখি
অপরাজেয় নেই কেউ
পোড়ামাটির শরীর ছুঁয়ে জেগে থাকি
মাটিকে সর্বজীবে, প্রাণের অনন্তে লীন হতে দেখি
মুখোমুখি লাঙল ও আমি
পায়ের নীচে সমস্ত সম্ভাবনা, নিমেষে চুরমার
ভাঙনের কাছে কে বেশি যাতনাময় ?
পূর্ণতাকে দেহের ছায়ায় ধরি
প্রস্ফুটিত হই আউসের ধানে, শিশিরতনুর আয়ুতে
একা সে ভোগ্যা, নির্মাণ করে শস্যের সাজ
ক্রমশ বুকের পাঁজর মৃত্তিকালিপ্ত হয়ে ওঠে।
জেট ল্যাগ
যেকোনও দীর্ঘ উড়ানের পর
পাখির ডানায় লেগে থাকে আলোর প্রপাত
বুকের ভিতর পড়ন্ত রোদ এসে পড়ে
আছে নৃত্য প্রকরণ, কিছু ছটফট আর প্রতীতি
ঘ্রাণের ভিতর প্রতিষ্ঠা করে মোহিনীজন্ম।
প্রিয় আকাশ, মুঠিতে বেঁধে রাখে নিমগ্ন মেঘ
স্বস্তি বলতে পাখির চোখ, যেখানে পাপ নেই কোনও
নেশাহীন শরীর, প্লাবিত হয় নির্ঘুম বিছানায়
দীর্ঘ উড়ান আসলে এক মুক্তি-স্নান,
উত্তাল ভ্রমণ শেষে টুপটুপ খসে পড়ে পালকের অভিমান।
আত্মশৈলী
মন চায় সমস্ত মুহূর্তে আমাদের দেখা হোক
নিজের মতো ভাগ করে নিক একে অপরের গভীরতা
আত্মা-অবতরণে টের পাই দুঃখবিন্যাস,
নিবিষ্ট মাঘের মগ্নতায় এসো অনুরক্ত স্বর
কীসের সংযম, কেন এত দোলাচল ?
দ্রুত শেষ করো পরিক্রমণ
ভয় নেই, তোমার মন্ত্রে ফিরে আসে হারানো পথ
এই তো ক্ষুদ্র প্রাণ, কোলাহলে বেঁচে নাও আরও,
এদিকে, দাঁড় টেনে টেনে ভেসে যায় জীবন
শোনো অপরাজিতা, মহাশূন্যই একমাত্র সফল আশ্রয়
তোমার অভিমুখে আমি খড়কুটো,
উড়ে যায় অন্ধকার, তোমার আচ্ছন্ন নৈঃশব্দ্যে…
কল্পদূত
‘আরও জল দাও এই আগুনে’
এলোমেলো হয়ে আছি, ব্যক্তিগত অসুখের আড়ালে
পাড় ভেঙে যাওয়া চোখের দু’কুল উপচে পড়ুক
জীবনের যত না-হাঁটা পথে, অপ্রাপ্তির সারমর্মে
এ পৃথিবীর দু’ প্রান্তরে থাকি আমরা — বহুদূর
আমার এখানে সকাল হলে, তুমি সন্ধ্যামণি হয়ে ফুটে ওঠো
তোমার পরবাসী মধ্যরাত্রের ঝুরো বরফকুচি
নেমে আসে আমার অবসন্ন দুপুরে
রোজ ভাবি, তোমার বুকেই আমার কবর হবে একদিন
কিচিরমিচির চড়ুই, ডানা ঝাপটে উড়ে যাবে
তোমার কাঠের বাড়ির জানলায়, আমার মৃত্যুগন্ধ নিয়ে।


মুগ্ধ হলাম। কবির প্রতিটি কবিতাই চমকপ্রদ। সন্ধ্যামণির মতো সকাল করে তুলল এই মুহূর্তকে। কবিকে শ্রদ্ধা।