
মণিশংকর বিশ্বাসের কবিতা
ভ্রম
তোমাকে জীবাণুমুক্ত মনে হয়।
এই অনাধুনিক ভ্রমের কাছে আমি বারবার নতজানু হই
ভাবতেই পারি না এমন শরীরও খারাপ হয়!
জানি, ফেমিনিস্টরা বলবেন—এভাবেই তো
মেয়েদের এক্সপ্লয়েট করা হয়েছে বারবার—
কী-জানি, অন্যদের কথা কী করে বলব
তার চে আমার নিজের কথা বলি—
মনে পড়ে, দুপুরবেলা
যে তুলসীবেদীতে দেখেছি বিষপিঁপড়ের আনাগোনা
সন্ধ্যাবেলায় সেখানেই সন্ধ্যাপ্রদীপের আলোয় ভেসে যাচ্ছে
মায়ের মুখ
শোকযাত্রা
একটি মৃত পিঁপড়ের দেহ
কীভাবে অন্য পিঁপড়েরা বহন করে, দেখি—
দেখি আর ভাবি, এও সম্ভব!
অতঃপর আমি মানুষের দিকে তাকাই
অংক
মন্দিরতলা থেকে আমাদের বাড়ি বড়জোর ১০ মিনিট। সেদিন মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ডে অরূপের সঙ্গে দেখা, ও বলল এখান থেকে এখন তোমরা যেখানে থাকো, বনমালীপুর, অটোতে বড়জোর ১৪/১৫ মিনিট। আমি সেই থেকে ভাবছি, কেন অংকটা সরল পাটিগণিত হল না? কেন পনেরো বিয়োগ দশ সমান সমান পাঁচ হল না! বা কেন পনেরো আর দশ যোগ করে পঁচিশও হল না!
কেন তোমাদের বাড়ি থেকে আমার দূরত্ব এত অমানবিক, এত লক্ষ কোটি কিলোমিটার?!
সমাজ
লোকটার বয়স হয়েছে, চুলে পাক ধরেছে
তাই ইচ্ছে করলেও মিষ্টি দেখতে অল্পবয়সী মেয়েটার দিকে
লোকটা তাকাবে না
জাজমেন্টাল
কেউ বলেনি, অথচ দেখামাত্র
নিজস্ব কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি অপরকে
কত কত দিন, চান্দ্রমাস, সৌরবছর চলে গেল
বেরোতে পারিনি এই এজলাস থেকে
প্রতিবিম্ব
একটাই মন—
তোমাকে ভালোবেসে তাই
নিজেকে ভালোবাসতে পারিনি কখনো
শুধু ভেঙে গেছি বারবার
যেভাবে এখনো তোমাকে পাবার কথা ভাবি
সেদিন একটা আর্টিকেলে পড়লাম পৃথিবীর কিছু কিছু ধূলিকণা বায়ুমণ্ডলে উৎক্ষিপ্ত হবার পর একসময় বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে মহাশূন্যের দিকে ধাবিত হয়। এই ছিটকে যাওয়া ধূলিকণাগুলির আবার খুব সামান্য একটা অংশ উদ্দেশ্যহীন চলতে চলতে, একসময় গিয়ে চাঁদের গায়েও নিক্ষিপ্ত হয়। অতীব ক্ষুদ্র একটি অংশ এভাবেই ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪ শ কিমি পাড়ি দেয়, চাঁদের হাটে গিয়ে ঘর বসায়! কিন্তু এখন যদি আমরা শুধু একটি ধূলিকণার যাত্রাপথের দিকে তাকাই, তা কী অদ্ভুত রোমাঞ্চকর মনে হবে, নয় কী! আসলে তো একটি ধূলিকণারও ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া স্বাভাবিক নয়, অলৌকিক!
কিন্তু তবু কেউ কেউ পৌঁছে যায়, হাতে চাঁদ পায়!
দুপুরে
তোমাকে আঁকাবাঁকা এক বনপথ মনে হয়–
মনে হয় রহস্য আরও দূরে গেছে
কাকচক্ষু সরোবর, পোড়ো শিবমন্দির, বনতুলসী
বেদিতে এখনো কাচা দুধ লেগে আছে
ঠাকুরনগর
১.
আমি ভোর ভোর চলে গেছি
প্রার্থনার দুর্বল নিকট আত্মীয় এই যাওয়া,
আজ মঙ্গলবার—
কোথাও পৌঁছবার কথা ছিল না।
শুধু— শুধু দিয়ে বাক্য শুরু করবার পর তা কেটে দিই
ব্যথার চঞ্চলতা থেকে দুঃখের স্থিরতায় যাব
মাঝখানে তালবন, জোড়াহাঁস পুকুর
শান্ত একখানা নিঃসঙ্গ আকাশ
তারপরে
উপুড় হয়ে পড়ে থাকে সারাদিন
২.
নিজেকে দাখিল করি চিহ্নগুলির পায়ে।
দেখি ২০০১ সাল তোমার চারপাশ পুরো আলো হয়ে আছে…
আর একটি দোয়েল পাখির গান
ধর্মপুত্র হয়ে জেগে উঠছে আমার ভিতরে
প্রতিটি কবিতাই ভারী সুন্দর ! ভারী মন স্পর্শ করা |
অনেক অনেক ধন্যবাদ তপনজ্যোতি বাবু।
তোমার কবিতা পড়ে লেজেগোবর অবস্থা হয় প্রায়শই!অন্ধকারে সাপের লেজ ধরার মতো। আমি যা বুঝি আর তুমি কি বুঝাতে চেয়েছো তা নিয়েই গোলমাল পাকিয়ে ফেলি।
যা ই হোক তোমার সাফল্য কামনা করি।
ভালোবাসা ভাই
মণিশংকর বিশ্বাসের প্রতিটি কবিতাই অসামান্য মনে হয়েছে আমার কাছে। ভীষণ ভালো লেখা। একটা তিরতিরে ঢেউ যেন হৃদয়ের কিনারা ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে গেল।👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼
আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন 🙏🌿🌻🤍
ভাল লাগল।
অনেক ধন্যবাদ ব্রতীদা 🙏
অনবদ্য কবিতাগুচ্ছ৷ মুগ্ধতা জানাই।
আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন 🌻🌿🙏🤍
প্রতিটাই ভালো লাগলো মণিদা।
অনেক ভালোবাসা ভাই