
নীলোৎপল গুপ্তর গুচ্ছ কবিতা
মুহূর্ত পাথেয় শুধু
নিছক নিঃশ্বাসমাত্র এই ক্ষীণ স্পর্শ অনুপল
দু’দন্ড বিনিময় আঁখিপটে উদ্ভাসিত আলো
ফেরানো লুপ্ত স্মৃতি ভাসমান হৃদয়প্রদেশে
অতঃপর নদীবক্ষে দ্রুতগামী তরণী প্রবল।
আনত পত্রে লেখা অস্পষ্ট লিপি অনূদিত
জলাঞ্জলি টীকাভাষ্য ভঙ্গুর ব্যাকারণবিধি
আমরাই বর্ণমালা আমরাই জ্যামিতি প্রাচীণ
আগুনরেখায় আঁকি বৃত্তের জ্যা ও পরিধি।
এসো হে আলিঙ্গন, জলতলে শোয়া নিচু হাওয়া
ঘর্ষণে করো ক্ষয় অবিভাজ্য ঠোঁটের পাথর
ক্রমান্বয়ে ডুবে যাও ছিন্ন-মন অবিকল্প ঘুমে
মুহূর্ত পাথেয় শুধু মুঠিমধ্যে এইটুকু পাওয়া।
আদিগন্ত খোলা বই
আদিগন্ত খোলা বই, সূচীপত্রে নথিভুক্ত আলো
লিপিগুলি উড়ন্ত, যেন শূন্যে পক্ষী ভাসমান
আমরা বালকদল শ্লোক লিখি সে-পক্ষী ডানায়
আর তারা রোদ্দুরে সুবর্ণ মুদ্রার মতো জ্বলে।
ওই দেখো বর্ষা এল , মেঘমালা সংকেতপ্রবণ
অতিদূর শৈলশ্রেণী ছায়া ফেলছে বিধিবদ্ধ জলে
এরই মধ্যে সন্ধ্যা হল অযাচিত সতর্কতাহীন
আর তুমি কিনা এ-সময়ে
বায়ুচক্রে ভাসালে ভ্রুকূটি !
কোথায় দর্পণ ওগো, কোথা ধরি হেন প্রতিচ্ছবি
কে জানে অর্থ এর, কে বুঝেছে কটাক্ষের হেতু
আমরা অবোধ ছাত্র দ্ব্যর্থকতা কিছুটি জানিনা
শুধু বসি দিনান্তে অক্ষরের কাছে নতজানু।
প্রান্তরে উন্মুক্ত খাতা দিগ্বিদিক গূঢ় অন্ধকার
এমন মুখশ্রী ধরি হেন আলো আকাশে কোথায়!
নিতান্ত নাচার আমি নিদ্রার ভিতরে ডুবে দেখি
একটি মোমের শিখা জ্বলে আছে স্মৃতিপ্রান্তে ক্ষীণ।
পোস্টঅফিস
কোথাও কোনো ডাকপিওন নেই
তবু চিঠি আসে।
বাতাস-প্রেরিত—জল-প্রেরিত
অথবা আলো, মাটি, হাওয়া
সবাই নিরন্তর চিরকূট পাঠায়।
কোনোটিই নিখাদ সৌজন্যমূলক নয়
আসলে প্রতিটি চিঠিই এক একটি
স্বতন্ত্র প্রস্তাবনা।
অর্থাৎ কোনদিকে কখন কি ঘটে যেতে পারে
তার একটা অস্পষ্ট আভাস।
অস্পষ্ট এই কারনেই যে এসব কথার
কোনো জোর নেই।
ঘটনা ঘটার ও না-ঘটার সম্ভাবনা দু’দিকেই সমান।
তবু চিঠি পড়ি, আর ভুলে যাই।
অজস্র ছেঁড়া-চিঠির মধ্যে বসে বসে দেখি
গাছ থেকে পাতা ঝরছে
কেন ? — সে-প্রশ্ন আর করি না।
হঠাৎ একটা হাওয়া উঠল
ঝরাপাতার সঙ্গে দু’একটা চিঠিও ছড়িয়ে গেল
এদিকে-ওদিকে।
আলো-সম্প্রসারণের দিকে যাই
আলো-সম্প্রসারণের দিকে যাই
পথে কিছু শালুক আর বনটিয়া দেখি
মুহূর্মুহু হাওয়া আসে
স্পর্শমাত্র কেঁপে যায় হাত।
পথের বাঁকেই নিঃশব্দ অর্জুনগাছ
ওকি আমার জন্মছায়া চেনে ?
শিলাখন্ডের পাশে জল
সেখানেই কথা হয়েছিল
তোমার মনে নেই।
সমস্ত প্ররোচনা আকাশেই লিপিবদ্ধ
আমিও কি তবে বর্ণমালা ভুলে গেছি!
তবুও উল্লাসের অন্ধকার সরিয়ে সরিয়ে
প্রতিদিন প্রক্ষিপ্ত আলোর দিকে এগোই
নিঃশঙ্ক জলতল থেকে শালুকেরা সম্মতি জানায়
হাওয়ার এ-প্রান্ত থেকে দেখি
ওপারে বনটিয়ার দল উড়ে যাচ্ছে
আকাশের অপঠিত লিপিচিত্রের দিকে।
এইসব গোপনতা তুমি সব জানো
এইসব গোপনতা তুমি সব জানো
কার হাত বৃষ্টির ভেতরে এসে কেঁপে কেঁপে ওঠে
কেই বা চুপিচুপি নিঃশ্বাসের পাখিটিকে
আকাশে ওড়ায়
গাছ ও জলের মধ্যে কে জাগায় অবিভাজ্য সেতু
আর বাতাসকে আড়ালে বলে
অদৃশ্য হবার কৌশল !!
এমত গুহ্যকথা একমাত্র লিপিবদ্ধ তোমারই পুথিতে
ইশারা-সংকেতগুলি ইতস্তত খসে পড়ে
তোমারই মুদ্রায়
যে-পথ ঘুমের মধ্যে আকস্মিক বেঁকে গেছে
সপ্তসিন্ধুপারে
হতবাক আমাদের তুমি তার প্রান্ত থেকে ডাকো
আমরা অঙ্গুলিস্পর্শে সাড়া দিই
দেহটিও ভেসে ওঠে নৌকোর প্রতিচ্ছবি হয়ে।
এইসব চতুরতা তুমি সব জানো
তবু কেন পথিমধ্যে বিস্ময় ছড়াও
মঞ্চে প্রস্থান করো
হঠাৎ, মধ্য-সংলাপে ?!
এতকিছু কৃৎকৌশল আয়ত্ব করেছো
আর আমি বুঝি মন্ত্রপাঠ কিছুই জানি না !!
ভালো লাগলো