দলিত নারীর কবিতাঃ পূর্ণ ঘটে বিপদসংকেত <br />  তৃষ্ণা বসাক

দলিত নারীর কবিতাঃ পূর্ণ ঘটে বিপদসংকেত
তৃষ্ণা বসাক

‘At the top of the pole
Planted in my vagina
The flag of our freedom shall fly
Planted in the colour of blood’

এই স্বর তামিল দলিত ফেমিনিস্ট কবি সুকীর্থা রানির। তাঁর ঝুলিতে ৮টির বেশি কবিতার বই, বহু পুরস্কার, তাঁর অনেক কবিতা পড়ানো হয় তামিলনাড়ুর কলেজে। ইংরেজি, মালয়ালম,কন্নড়, হিন্দি, জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে অনেক কবিতা। অত্যন্ত প্রশংশিত শর্ট ফিল্ম ‘ কন্নড়ি মিন’ তাঁর কবিতার ওপর আধারিত। ‘শি রাইটস’ নামে একটি ডকুমেন্টারিতে তাঁকে দেখা গেছে অন্যান্য বিশিষ্ট তামিল কবিদের সঙ্গে। জার্মানি তাঁকে ফেলোশিপও দিয়েছে। এত প্রাপ্তি, তবু ছোটবেলার একটি স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। সুকীর্থা তখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী। এক সহপাঠিনী একবার তাকে চকোলেট খাওয়ালে ছোট্ট সুকীর্থারও ইচ্ছে হল তাকে কিছু খাওয়াতে। সে একদিন তার জন্যে নিয়ে গেল নারকেলের ক্যান্ডি, সেটা নিল না তার বন্ধু। তার বাড়িতে বারণ আছে দলিতদের দেওয়া খাবার খেতে। সুকীর্থা বুঝতে পারল সে আলাদা। এই ফিলিং অব আদারনেস তার জীবনটাকেই বদলে দিল যেন। তার যন্ত্রণা, একাকীত্ব, সামাজিক বৈষম্য সব সে ঢেলে দিল কবিতায়। বাবা মা স্কুলের গণ্ডি পেরোননি, কিন্তু মেয়ের কবিতা ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর নানান ভাষায়। তার রক্তে তো শিল্পের বীজ ছিলই। দাদু ওস্তাদ বাজিয়ে ছিলেন, দলিতদের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র ‘পারাই’ বাজানোয় খুব নামডাক ছিল তাঁর। পারাই থেকে এদের জাতের নাম হয়ে গেল পারিয়া। সেই পারিয়া মেয়ে সুকীর্থার কবিতায় প্রেম নয়, থাকে গর্জন সামাজিক সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাঁর কবিতার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে বডি পলিটিক্স। ২০০৬ সালে একটি দলিত মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নগ্ন করে ঘোরানোর পর হত্যা করা হয়। সুকীর্থার কবিতায় লেগে থাকে প্রিয়াঙ্কার গোঙ্গানি।
সুকীর্থা বলেন ‘রোহিত ভেমুলা মরলেও উঠে আসবে কানহাইয়া কুমার বা জিগ্নেস মেভানি। এই আশা জাগায় আমার কবিতা’

‘You may frame me, like a picture
And hang me on your wall
I will pour down
Away past you
Like a river in sudden flood.
I myself will become
Earth
Fire
Sky
Wind
Water
The more you confine me, the
More I will spill over
Nature’s fountainhead’

এক বিখ্যাত দলিত কবি রাম দোতন্ডে একটি কবিতায় লিখেছেন
‘ হিন্দু সংস্কৃতির
বীর্য থেকে
জাতিভেদ
উপ্ত হল
এবং
তার থেকেই
জন্ম নিলাম
আমি….’
যাদের জন্ম থেকেই আলাদা করে রাখা হয়, জল-অচল, অস্পৃশ্য, এমনকি কখনো কপালে দেগে দেওয়া হয় চোর জাতির অপবাদ, তারা যখন কলম ধরেন তখন ভলকে ভলকে রক্তবমির মতো ক্ষোভ উঠে আসাই স্বাভাবিক, যা দলিত কবিতাকে একটা আলাদা জঁনারে রাখতে বাধ্য করেছে। আর কলম যখন দলিত নারীর হাতে, তখন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নারীর নিজস্ব প্রান্তিকতা তার সঙ্গে মিশে তাকে আরও অনন্য করে তোলে। সবার ওপরে থাকে দলিত হবার রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা। ছোটবেলায় সুকীর্থার হাত থেকে খাবার নিতে অস্বীকার করেছিল উচ্চবর্ণের একটি মেয়ে। এখন দিনকাল পাল্টেছে। সুকীর্থারা তো স্কুল কলেজ অফিসে উচ্চবর্ণের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উল্টোদিকের মানসিকতায় কি বদল এল সত্যি সত্যি? তার একটি মর্মন্তুদ ছবি মারাঠি দলিত কবি হীরা বন্সডের কবিতায়।

সই
আজ এই প্রথম তুই আমার বাড়িতে খেতে এলি,
যেমন তেমন নয় এই আসা
জাত ধ র্ম সব ভুলে।
মেয়েরা বড় একটা তাদের ঐতিহ্য ভোলে না
কিন্তু তুই তো ঠিক এলি আকাশের মতো খলা মনে।
আমার এই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে তোর আসা
যেন মনে হল জাতপাতের গলা মুচড়ে
মানুষকে খণ্ডিত করার উপত্যকাকে জুড়তে জুড়তে।

বিশ্বাস কর সই
আজ আমি বড়ই খুশি।
শবরীর রামের জন্য যে নিবিষ্ট প্রেম
সেই প্রেমে মমতায় আমি সাজিয়েছি তোর খাবারের থালা,
নিজেকে ধন্য মনে করে।
কিন্তু… থালার দিকে তাকিয়ে তোর চেহারা যেন অন্যরকম,
ঠাট্টার হাসি তোর মুখে,
ইস! চাটনি, স্যালাড এভাবে দেয় নাকি?
এখনো থালায় খাবার সাজাতে শিখলি না?
তোদের জাতের উন্নতি হওয়া অসম্ভব!

লজ্জায় গুটিয়ে গেলাম আমি…
একটু আগেই আকাশকে ছুঁয়েছিল আমার হাত
সে হাত যেন কেউ কেটে নিল
নিশ্চুপ আমি।
খাওয়া যখন প্রায় শেষ
আবার তোর প্রশ্ন
‘এ কি রে? শেষপাতে দই মিষ্টি কিছু নেই?
এই যে মেয়ে এ সব ছাড়া আমাদের খাওয়া শেষ হয় না….
আমার মনে যতটুকু সাহস অবশিষ্ট ছিল, তাও গেল উড়ে
খসে পড়া তারার মতন
নিদারুণ বেদনায়, সবই যেন শূন্য মনে হয়।
পর ক্ষণেই ছল্কায় মন
পাথর ফেললে নদীর তলদেশ থেকে
যেমন উঠে আসে মাটি,
তেমনই ঠেলতে ঠেলতে বেরিয়ে এল পূর্বস্মৃতি,
সই, আমাকে তুই দই মিস্টির কথা জিজ্ঞেস কর ছিস?
… তকে কেমন করে বোঝাই?
ওরে ছোটবেলায় আমাদের চায়ের জন্য দুধও জুটত না,
দই মিস্টির প্রশ্ন সেখানে কোথায়?
কাঠের গুদাম থেকে ঝুড়ি ভর্তি ভুসি এনে জ্বালিয়ে
মা আমার দুহাতে ধোঁয়া সরাতে সরাতে রান্না করত,
মকাইয়ের শুকনো রুটিতে ক্বচিৎ কখন রসুনের চাটনি,
নয়তো জলের মতো পাতলা
চুনো মাছের ঝোলে রুটি ডুবিয়ে খাওয়া,
সই, ‘শ্রীখণ্ড’ শব্দটা আমাদের অভিধানেই ছিল না,
মাখন থেকে তৈরি ঘিয়ের সুগন্ধ
আমার নাকে কখন আসেইনি
হালুয়া, ক্ষীর চোখেও দেখিনি কখন,
তোর ট্র্যাডিশন কিন্তু তুই ছাড়তে পারিসনি, সই
বরং তা মূল থেকে উঠে ডালপালা ছড়িয়েছে তোর মনে।
তিন সত্যির মতো এই-ই শেষ সত্যি

বন্ধু রে, শেষ পাতে আমাদের দই নেই
সেজন্য রাগ করিস না ভাই
তোর থালায় আজ পদের বড় গণ্ডগোল হল
এতে আমার দোষ কোথায় বলবি কি?
বলবি কি? কোথায় আমার দোষ?’

(শ্রীখণ্ড- মহারাষ্ট্রের এই মিস্টি বাংলার ভাপা দইয়ের মতো।)
এই মুহুর্তে মিডিয়ায় ছয়লাপ রাজনীতিকদের দলিত গৃহে পাত পেড়ে খাওয়ার ছবি। খবরের আড়ালে থাকা সত্যের হিরণ্ময় মুখ দেখাতে পারেন কেবল কবিরাই। হীরার কবিতাটি আর একবার সে কথা প্রমাণ করল।

হীরার আরেকটি কবিতা ‘আয়না’
‘সারাটা জীবন ধরে যারা
নিজেদের চেহারাই কোনদিন দেখল না
তাদের হাতে কখখনো আয়না দিও না
তাদের পাথরচাপা মনে
ফুলের হৃদয় কখনো শিকড় গাড়বে না
ফুলের হৃদয় কখনো শিকড় গাড়বে না’

আর এক কবি মল্লিকা অমর শেখ, যিনি কবিতার পাশাপাশি নাচ গান অভিনয়েও পারদর্শী, তাঁর আর এক পরিচয় তিনি বিখ্যাত দলিত কবি নামদেও ধাসালের স্ত্রী, তাঁর কবিতায় নৈরাশ্য জমাট বেঁধে জন্ম নেয় প্রতিজ্ঞা।
‘…
আমার স্বপ্নের বাসা সযত্নে রাখার জন্য
একটি গাছও আর বেঁচে নেই।
কেটে গেল কত বছর
যৌবনের রেশমি কাপড়
ঠোঁটে নিয়ে প্রেমিক আমার কবেই গেছে উড়ে
তবু আমি আজও শরীর সেলাই করতে বসি
কথা বলি নিজের সঙ্গে
নৈরাশ্যই মৃত্যুর প্রথম ধাপ
এবং আমি তা চাই না।’

আর এক কবি মীনা গজভিয়ে আবার অসম্মানের বেঁচে থাকার থেকে শ্রেয় মনে করেন মৃত্যুকে।

বহু শত বছরের বহতা ক্ষত

বহু শত বছরের বহতা ক্ষতকে
সেলাই করার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছিলাম
মাড়াঠয়াড়ার জন্য
সেলাই এখন ছিঁড়ে গেছে
এরপর আমি আর এসবে জন্য কাঁদব না
বেঁচে ওঠার জন্য
এরপর কেবল মরবার জন্যই বেঁচে থাকব
সমস্ত গ্রাম শ্মশান হয়ে যাক
আমারই সঙ্গে,
কিন্তু অস্তিত্বহীন এই গ্রামে
আমি কুকুরের মতো বাঁচব না’

দলিত কবি দয়া পাওয়ারের মেয়ে প্রজ্ঞা লোখন্ডে পাওয়ারের কবিতায় প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন-
‘…
এখন লেখা হবে এক নতুন ইতিহাস
আমাদের স্তরীভূত মুখের
ঘামে ভেজা কালো রঙের
বাঁচার লড়াইয়ের টগবগে রক্তের’
প্রজ্ঞার প্রায় পরে পরেই দলিত সাহিত্যের অঙ্গনে উদয় প্রতিভা রাজানন্দের। তাঁর স্বর আরও আত্মবিশ্বাসী। জয় ছিনিয়ে আনবেন তাঁরা, এ প্রত্যয় তাঁর কবিতায়-

এবার এগিয়ে আসছে আমাদের চোখ
সূর্যের দরজা আমাদের জন্য খুলে রাখার নিয়ম
কখনই আমাদের দেশে ছিল না
বংশ পরম্পরায় মাখানো হয়েছিল
অন্ধকারের কাজল
আমাদের চোখে
প্রতিটি আঁখি পল্লবে বেঁচে থাকার আহত স্বপ্ন বেদনায় উচ্চারিত
এবং পাখির পায়ে শিকল না পরানোর নিয়ম
কখনই আমাদের দেশে ছিল না
আজ চোখ থেকে বেরিয়া এসেছে ঘন কালো স্রোত
কানায় কানায় পূর্ণ ঘটে বিপদসংকেত
দরজার চৌকাঠও হয়তো যাবে ভেসে
বিশাল অট্টালিকার দেওয়াল পড়বে ভেঙে
দেরি হয়েছে ঠিকই-
কিন্তু আমাদের চোখ এবার এগিয়ে আসছে….’

দেরি হয়েছে সত্যি, কিন্তু প্রতিবিপ্লবের ঘোষণা সোচ্চার দলিত নারীর কবিতায়।

তথ্যসূত্র – ছন্দের অলিন্দে বিদ্রোহ, স্বপ্না বন্দ্যপাধ্যায়-গুহ

দলিত নারীর কবিতাঃ পূর্ণ ঘটে বিপদসংকেত
তৃষ্ণা বসাক

‘At the top of the pole
Planted in my vagina
The flag of our freedom shall fly
Planted in the colour of blood’

এই স্বর তামিল দলিত ফেমিনিস্ট কবি সুকীর্থা রানির। তাঁর ঝুলিতে ৮টির বেশি কবিতার বই, বহু পুরস্কার, তাঁর অনেক কবিতা পড়ানো হয় তামিলনাড়ুর কলেজে। ইংরেজি, মালয়ালম,কন্নড়, হিন্দি, জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে অনেক কবিতা। অত্যন্ত প্রশংশিত শর্ট ফিল্ম ‘ কন্নড়ি মিন’ তাঁর কবিতার ওপর আধারিত। ‘শি রাইটস’ নামে একটি ডকুমেন্টারিতে তাঁকে দেখা গেছে অন্যান্য বিশিষ্ট তামিল কবিদের সঙ্গে। জার্মানি তাঁকে ফেলোশিপও দিয়েছে। এত প্রাপ্তি, তবু ছোটবেলার একটি স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। সুকীর্থা তখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী। এক সহপাঠিনী একবার তাকে চকোলেট খাওয়ালে ছোট্ট সুকীর্থারও ইচ্ছে হল তাকে কিছু খাওয়াতে। সে একদিন তার জন্যে নিয়ে গেল নারকেলের ক্যান্ডি, সেটা নিল না তার বন্ধু। তার বাড়িতে বারণ আছে দলিতদের দেওয়া খাবার খেতে। সুকীর্থা বুঝতে পারল সে আলাদা। এই ফিলিং অব আদারনেস তার জীবনটাকেই বদলে দিল যেন। তার যন্ত্রণা, একাকীত্ব, সামাজিক বৈষম্য সব সে ঢেলে দিল কবিতায়। বাবা মা স্কুলের গণ্ডি পেরোননি, কিন্তু মেয়ের কবিতা ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর নানান ভাষায়। তার রক্তে তো শিল্পের বীজ ছিলই। দাদু ওস্তাদ বাজিয়ে ছিলেন, দলিতদের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র ‘পারাই’ বাজানোয় খুব নামডাক ছিল তাঁর। পারাই থেকে এদের জাতের নাম হয়ে গেল পারিয়া। সেই পারিয়া মেয়ে সুকীর্থার কবিতায় প্রেম নয়, থাকে গর্জন সামাজিক সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাঁর কবিতার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে বডি পলিটিক্স। ২০০৬ সালে একটি দলিত মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নগ্ন করে ঘোরানোর পর হত্যা করা হয়। সুকীর্থার কবিতায় লেগে থাকে প্রিয়াঙ্কার গোঙ্গানি।
সুকীর্থা বলেন ‘রোহিত ভেমুলা মরলেও উঠে আসবে কানহাইয়া কুমার বা জিগ্নেস মেভানি। এই আশা জাগায় আমার কবিতা’

‘You may frame me, like a picture
And hang me on your wall
I will pour down
Away past you
Like a river in sudden flood.
I myself will become
Earth
Fire
Sky
Wind
Water
The more you confine me, the
More I will spill over
Nature’s fountainhead’

এক বিখ্যাত দলিত কবি রাম দোতন্ডে একটি কবিতায় লিখেছেন
‘ হিন্দু সংস্কৃতির
বীর্য থেকে
জাতিভেদ
উপ্ত হল
এবং
তার থেকেই
জন্ম নিলাম
আমি….’
যাদের জন্ম থেকেই আলাদা করে রাখা হয়, জল-অচল, অস্পৃশ্য, এমনকি কখনো কপালে দেগে দেওয়া হয় চোর জাতির অপবাদ, তারা যখন কলম ধরেন তখন ভলকে ভলকে রক্তবমির মতো ক্ষোভ উঠে আসাই স্বাভাবিক, যা দলিত কবিতাকে একটা আলাদা জঁনারে রাখতে বাধ্য করেছে। আর কলম যখন দলিত নারীর হাতে, তখন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নারীর নিজস্ব প্রান্তিকতা তার সঙ্গে মিশে তাকে আরও অনন্য করে তোলে। সবার ওপরে থাকে দলিত হবার রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা। ছোটবেলায় সুকীর্থার হাত থেকে খাবার নিতে অস্বীকার করেছিল উচ্চবর্ণের একটি মেয়ে। এখন দিনকাল পাল্টেছে। সুকীর্থারা তো স্কুল কলেজ অফিসে উচ্চবর্ণের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উল্টোদিকের মানসিকতায় কি বদল এল সত্যি সত্যি? তার একটি মর্মন্তুদ ছবি মারাঠি দলিত কবি হীরা বন্সডের কবিতায়।

সই
আজ এই প্রথম তুই আমার বাড়িতে খেতে এলি,
যেমন তেমন নয় এই আসা
জাত ধ র্ম সব ভুলে।
মেয়েরা বড় একটা তাদের ঐতিহ্য ভোলে না
কিন্তু তুই তো ঠিক এলি আকাশের মতো খলা মনে।
আমার এই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে তোর আসা
যেন মনে হল জাতপাতের গলা মুচড়ে
মানুষকে খণ্ডিত করার উপত্যকাকে জুড়তে জুড়তে।

বিশ্বাস কর সই
আজ আমি বড়ই খুশি।
শবরীর রামের জন্য যে নিবিষ্ট প্রেম
সেই প্রেমে মমতায় আমি সাজিয়েছি তোর খাবারের থালা,
নিজেকে ধন্য মনে করে।
কিন্তু… থালার দিকে তাকিয়ে তোর চেহারা যেন অন্যরকম,
ঠাট্টার হাসি তোর মুখে,
ইস! চাটনি, স্যালাড এভাবে দেয় নাকি?
এখনো থালায় খাবার সাজাতে শিখলি না?
তোদের জাতের উন্নতি হওয়া অসম্ভব!

লজ্জায় গুটিয়ে গেলাম আমি…
একটু আগেই আকাশকে ছুঁয়েছিল আমার হাত
সে হাত যেন কেউ কেটে নিল
নিশ্চুপ আমি।
খাওয়া যখন প্রায় শেষ
আবার তোর প্রশ্ন
‘এ কি রে? শেষপাতে দই মিষ্টি কিছু নেই?
এই যে মেয়ে এ সব ছাড়া আমাদের খাওয়া শেষ হয় না….
আমার মনে যতটুকু সাহস অবশিষ্ট ছিল, তাও গেল উড়ে
খসে পড়া তারার মতন
নিদারুণ বেদনায়, সবই যেন শূন্য মনে হয়।
পর ক্ষণেই ছল্কায় মন
পাথর ফেললে নদীর তলদেশ থেকে
যেমন উঠে আসে মাটি,
তেমনই ঠেলতে ঠেলতে বেরিয়ে এল পূর্বস্মৃতি,
সই, আমাকে তুই দই মিস্টির কথা জিজ্ঞেস কর ছিস?
… তকে কেমন করে বোঝাই?
ওরে ছোটবেলায় আমাদের চায়ের জন্য দুধও জুটত না,
দই মিস্টির প্রশ্ন সেখানে কোথায়?
কাঠের গুদাম থেকে ঝুড়ি ভর্তি ভুসি এনে জ্বালিয়ে
মা আমার দুহাতে ধোঁয়া সরাতে সরাতে রান্না করত,
মকাইয়ের শুকনো রুটিতে ক্বচিৎ কখন রসুনের চাটনি,
নয়তো জলের মতো পাতলা
চুনো মাছের ঝোলে রুটি ডুবিয়ে খাওয়া,
সই, ‘শ্রীখণ্ড’ শব্দটা আমাদের অভিধানেই ছিল না,
মাখন থেকে তৈরি ঘিয়ের সুগন্ধ
আমার নাকে কখন আসেইনি
হালুয়া, ক্ষীর চোখেও দেখিনি কখন,
তোর ট্র্যাডিশন কিন্তু তুই ছাড়তে পারিসনি, সই
বরং তা মূল থেকে উঠে ডালপালা ছড়িয়েছে তোর মনে।
তিন সত্যির মতো এই-ই শেষ সত্যি

বন্ধু রে, শেষ পাতে আমাদের দই নেই
সেজন্য রাগ করিস না ভাই
তোর থালায় আজ পদের বড় গণ্ডগোল হল
এতে আমার দোষ কোথায় বলবি কি?
বলবি কি? কোথায় আমার দোষ?’

(শ্রীখণ্ড- মহারাষ্ট্রের এই মিস্টি বাংলার ভাপা দইয়ের মতো।)
এই মুহুর্তে মিডিয়ায় ছয়লাপ রাজনীতিকদের দলিত গৃহে পাত পেড়ে খাওয়ার ছবি। খবরের আড়ালে থাকা সত্যের হিরণ্ময় মুখ দেখাতে পারেন কেবল কবিরাই। হীরার কবিতাটি আর একবার সে কথা প্রমাণ করল।

হীরার আরেকটি কবিতা ‘আয়না’
‘সারাটা জীবন ধরে যারা
নিজেদের চেহারাই কোনদিন দেখল না
তাদের হাতে কখখনো আয়না দিও না
তাদের পাথরচাপা মনে
ফুলের হৃদয় কখনো শিকড় গাড়বে না
ফুলের হৃদয় কখনো শিকড় গাড়বে না’

আর এক কবি মল্লিকা অমর শেখ, যিনি কবিতার পাশাপাশি নাচ গান অভিনয়েও পারদর্শী, তাঁর আর এক পরিচয় তিনি বিখ্যাত দলিত কবি নামদেও ধাসালের স্ত্রী, তাঁর কবিতায় নৈরাশ্য জমাট বেঁধে জন্ম নেয় প্রতিজ্ঞা।
‘…
আমার স্বপ্নের বাসা সযত্নে রাখার জন্য
একটি গাছও আর বেঁচে নেই।
কেটে গেল কত বছর
যৌবনের রেশমি কাপড়
ঠোঁটে নিয়ে প্রেমিক আমার কবেই গেছে উড়ে
তবু আমি আজও শরীর সেলাই করতে বসি
কথা বলি নিজের সঙ্গে
নৈরাশ্যই মৃত্যুর প্রথম ধাপ
এবং আমি তা চাই না।’

আর এক কবি মীনা গজভিয়ে আবার অসম্মানের বেঁচে থাকার থেকে শ্রেয় মনে করেন মৃত্যুকে।

বহু শত বছরের বহতা ক্ষত

বহু শত বছরের বহতা ক্ষতকে
সেলাই করার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছিলাম
মাড়াঠয়াড়ার জন্য
সেলাই এখন ছিঁড়ে গেছে
এরপর আমি আর এসবে জন্য কাঁদব না
বেঁচে ওঠার জন্য
এরপর কেবল মরবার জন্যই বেঁচে থাকব
সমস্ত গ্রাম শ্মশান হয়ে যাক
আমারই সঙ্গে,
কিন্তু অস্তিত্বহীন এই গ্রামে
আমি কুকুরের মতো বাঁচব না’

দলিত কবি দয়া পাওয়ারের মেয়ে প্রজ্ঞা লোখন্ডে পাওয়ারের কবিতায় প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন-
‘…
এখন লেখা হবে এক নতুন ইতিহাস
আমাদের স্তরীভূত মুখের
ঘামে ভেজা কালো রঙের
বাঁচার লড়াইয়ের টগবগে রক্তের’
প্রজ্ঞার প্রায় পরে পরেই দলিত সাহিত্যের অঙ্গনে উদয় প্রতিভা রাজানন্দের। তাঁর স্বর আরও আত্মবিশ্বাসী। জয় ছিনিয়ে আনবেন তাঁরা, এ প্রত্যয় তাঁর কবিতায়-

এবার এগিয়ে আসছে আমাদের চোখ
সূর্যের দরজা আমাদের জন্য খুলে রাখার নিয়ম
কখনই আমাদের দেশে ছিল না
বংশ পরম্পরায় মাখানো হয়েছিল
অন্ধকারের কাজল
আমাদের চোখে
প্রতিটি আঁখি পল্লবে বেঁচে থাকার আহত স্বপ্ন বেদনায় উচ্চারিত
এবং পাখির পায়ে শিকল না পরানোর নিয়ম
কখনই আমাদের দেশে ছিল না
আজ চোখ থেকে বেরিয়া এসেছে ঘন কালো স্রোত
কানায় কানায় পূর্ণ ঘটে বিপদসংকেত
দরজার চৌকাঠও হয়তো যাবে ভেসে
বিশাল অট্টালিকার দেওয়াল পড়বে ভেঙে
দেরি হয়েছে ঠিকই-
কিন্তু আমাদের চোখ এবার এগিয়ে আসছে….’

দেরি হয়েছে সত্যি, কিন্তু প্রতিবিপ্লবের ঘোষণা সোচ্চার দলিত নারীর কবিতায়।

তথ্যসূত্র – ছন্দের অলিন্দে বিদ্রোহ, স্বপ্না বন্দ্যপাধ্যায়-গুহ

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes