
জালালউদ্দিন রুমির কবিতা
ভূমিকা ও অনুবাদ – মোহনা মজুমদার
জালালউদ্দিন মুহাম্মাদ রুমি (১২০৭-১২৭৩) ছিলেন ত্রয়োদশ শতকের একজন ফার্সি কবি , আইনজ্ঞ , ইসলামি সুফিতাত্তিক , ধর্মতাত্ত্বিক এবং অতিন্দ্রিয়বাদী । ইসলামিক সুফিবাদ অধ্যয়নের জগতে জালালউদ্দিন রুমি নামটি অস্পষ্ট করা খুব কঠিন । তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে । রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” দের মধ্যে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করা হয় । তার কাব্যের প্রতিটি চরণে রয়েছে অধরা এক উপলব্ধির পৃথিবী । তার লেখায় ফুটে উঠেছে মনের বাইরে থেকে ভেতরে , ভেতর থেকে বাইরে এক অবিচ্ছেদ্য যাত্রা । যে রহস্যময় যাত্রায় সে ক্রমাগত নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে ও সংশোধন করতে করতে কবিতার পথ প্রসারিত করেছেন । তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে মাতনাওয়ে মানাউয়ি , মসনবি শরিফ , দেওয়ান-এ-শামস-এ-তাবরিজি , ফিহি মা ফিহি ইত্যাদি অন্যতম । রুমির কাব্যকে মূলত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয় – চতুষ্পদী শ্লোক এবং গজল । গদ্যসমুহকে ভাগ করা হয় প্রবন্ধ , পত্র এবং “সাতটি ধরমাপদেশ” এ । ১৭ই ডিসেম্বর ১২৭৩ সালে রুমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । তার সমাধিফলকে লেখা আছে – ‘ যখন আমি মৃত , পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে , আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও।‘ এ বছর ২০২৩সালে তার ৭৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার চারটি কবিতার বাংলা অনুবাদ রইল । কবিতা গুলি ফার্সি থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেন কোলেমান বার্কস ও জন ময়েন ।
আমার মুখ দিয়ে কে কথা বলে ?
WHO SAYS WORDS WITH MY MOUTH ?
সারাদিন আমি ভাবি এবং রাতে এটা বলি
কোথা থেকে আমি এসেছি , এবং আমায় কি করতে হবে ?
আমার কোনো ধারণা নেই ।
আমার আত্মা অন্য জায়গা থেকে এসেছে , আমি নিশ্চিত
এবং আমি সেখানেই শেষ করতে চাই ।
এই মাদকতা শুরু হয়েছিল অন্য কোন্নো সরাইখানায় ।
আমি যখন সেই জায়গায় ফিরে যাই , আমি সম্পূর্ণভাবে শান্ত হয়ে যাই ।
যেন আমি অন্য কোনো দেশের পাখির মতো এই পাখিরালয়ে বসে আছি ।
সেই দিন আসছে , যখন আমি উড়ে যাবো ।
কিন্তু আমার কানে এখন কে আছে , যে আমার কণ্ঠস্বর শোনে ?
আমার মুখ দিয়ে কে কথা বলে ? আমার চোখ দিয়ে কে তাকায় ?
আত্মা কি ? এই অন্বেষণ আমি থামাতে পারিনা ।
আমি যদি এর উত্তরের এক চুমুক স্বাদও নিতে পারি , আমি মাতাল হয়ে এই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পারি ।
আমি এখানে আমার নিজের ইচ্ছেয় আসিনি এবং তাই আমি ছেড়েও যেতে পারিনা ।
যে আমায় এখানে এনেছে , তাকেই আমাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ।
এই কবিতা , আমি কখনই জানিনা আমি কি বলতে চাইছি ।
আমি কোনো পরিকল্পনা করিনা ।
যখন আমি এটা বলার বাইরে থাকি , আমি খুব শান্ত থাকি এবং খুবই কম কথা বলি ।
বিশেষ প্লেট
SPACIAL PLATES
লক্ষ্য করো কীভাবে প্রতিটি কণা নড়াচড়া করে ।
লক্ষ্য করো কীভাবে সবাই যাত্রা থেকে এখানে এসেছে
লক্ষ্য করো কীভাবে প্রত্যেকে আলাদা আলাদা খাবার চায়
লক্ষ্য করো কীভাবে সূর্য ওঠার সাথে সাথে তারাগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়
এবং কীভাবে সমস্ত স্রোত সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়
শেফদের দ্যাখো , প্রত্যেকের জন্য তাদের কি প্রয়োজন , সেই অনুযায়ী
বিশেষ প্লেট প্রস্তুত করছে
এই কাপের দিকে তাকাও , যে সমুদ্রকে ধরে রাখতে পারে
তাদের দিকে তাকাও যারা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
শামস’এর চোখ দিয়ে জলের দিকে তাকাও , যা সম্পূর্ণ রত্ন ।
সামনে কিছুই নেই
THERE IS NOTHING AHEAD
প্রেমিক-প্রেমিকারা মনে করে তারা একে অপরকে খুঁজে চলেছে ,
কিন্তূ সেখানে শুধুমাত্র একটিই অন্বেষণ থাকে – তা হলো বিচরণ ।
তাদের জগতটা এমন যে , দুজনেই যেন পরিক্রমা করছে , একটা স্বচ্ছ আকাশের ভেতর ।
এখানে কোনো অনুশাসন এবং কোনো ধর্মদ্রোহিতা নেই ।
যীশুর অলৌকিক ঘটনা তিনি নিজেই , তিনি ভবিষ্যতের বিষয়ে যা বলেছেন বা করেছেন তা নয় ।
ভবিষ্যৎ ভুলে যাও ।
আমি এমন কাউকে উপাসনা করবো যে এটা করতে পারে ।
চলার পথে হয়তো তোমার পিছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করবে , কিংবা করবেনা ।
কিন্তু তুমি যদি বলতে পারো সামনে কিছুই নেই , সেখানে কিছুই থাকবে না ।
তোমার বাহু প্রসারিত করো এবং দুই হাত দিয়ে তোমার পোশাকের কাপড়টি ধরো ।
ব্যাথার নিরাময় হয় ব্যাথায় ।
ভালো মন্দ মিশে আছে । যদি তোমার উভয়ই না থাকে , তুমি আমাদের সাথে যুক্ত নও ।
আমাদের মধ্যে কেউ যখন হারিয়ে যায় , এখানে থাকে না , সে অবশ্যই আমাদের ভেতরে থাকে ।
পৃথিবীর কোথাও এমন জায়গা নেই ।
একটি নিভন্ত মোমবাতি
A JUST-FINISHING CANDLE
একটি মোমবাতি সম্পূর্ণরূপে যখন শিখায় পরিণত হয়
সেই ধ্বংসাত্মক মুহূর্তে তার কোনো ছায়া থাকেনা
এটা আলোর জিহ্বা ছাড়া আর কিছুই নয় ,
যেটি একটি আশ্রয়ের বর্ণনা দেয় ।
একটি নিভন্ত মোমবাতির অসম্পূর্ণ অংশের দিকে তাকাও
ঠিক যেমন ভাবে একজন মানুষ তার অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়ে
শেষ পর্যন্ত নিরাপদ থেকে যায় এবং উল্টোদিক থেকে দেখলে
গর্ব এবং লজ্জা উভয়ই আমরা তাদের কাছ থেকে দাবি করি ।
অনুবাদক মোহনা মজুমদার
সাবলীল, সতেজ ও ক্ষিপ্র। একটি বেপরোয়া অন্তর্ভেদ যেন সতত ক্রিয়াশীল নমুনা অনুবাদগুলো জুড়ে। আপনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
স্বল্প, মুদ্রণ ও বানান বিচ্যুতি, কিঞ্চিৎ পীড়া দেয়।