চিন্তার চিহ্নমালা ৭  <br /> সন্মাত্রানন্দ

চিন্তার চিহ্নমালা ৭
সন্মাত্রানন্দ

"খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিচার করে দেখেছি এই অনাসক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ার আদর্শটা গত সোয়া শ বছরে আমাদের জীবন থেকে চলে যেতে বসেছে। কে যেন আমাদের বলেছে, একই ঠিকানায় পচে মরতে হবে। সাধুকেও বলেছে, গেরস্থকেও বলেছে। আমরা এখন কলকাতার, মুর্শিদাবাদের, মেদিনীপুরের, ত্রিপুরার, বাংলাদেশের, বরাক উপত্যকার। এই কূপমণ্ডুকতা আমাদের বৃহত্তর পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভার্চুপৃথিবীতে নির্বাসন দিয়েছে। এর থেকেই স্বার্থপরতা, গোষ্ঠীসর্বস্বতা, পণ্ডিতম্মন্যতার জন্ম হয়েছে। অথচ চৈত্র পবন আজও সব এলোমেলো করে দিয়ে যায়, ধরিত্রীর ধূসর বুকের উপর বর্ষা-বসন্ত-নিদাঘ-শীত এসে এলোথেলো করে দিয়ে যায় আমাদের সাজানো সংসার, মরুভূমির বালিয়াড়ি পেরিয়ে পেরিয়ে চলে যায় নিঃসঙ্গতার ক্যারাভান, সমুদ্র চুম্বন করে যায় বেলাভূমির কঠিন রিক্ততাকে, অরণ্যের ঘোমটায় মুখ ঢেকে থাকে প্রান্তিক মানুষের জীবন, মেঘকুয়াশার কুহকমায়ার উপরে মাথা তুলে থাকে অভ্রংলিহ হিমালয়... " চিন্তার চিহ্নমালার সপ্তম পর্ব লিখলেন সন্মাত্রানন্দ।

আগের পর্বগুলি পড়তে ক্লিক করুন —–> (১), (২), (৩), (৪), (৫), (৬)

বেরিয়ে পড়া

চৈত্রের অপরাহ্ণে ছন্নবাতাস এ-জানালা দিয়ে ঢুকে ঘরদুয়ার বিছানাটেবিল এলোথেলো করে ও-জানালা গলে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে এলোমেলো করে দিয়ে যায় আমার মনকেও। করোনা, লকডাউন, নির্বাচনের গরম হাওয়া, অস্পষ্ট রাজনৈতিক সব অবস্থান—এইসব টালমাটাল পরিস্থিতি আগে থেকেই মনকে আলগা করে রেখেছিল, এখন চৈত্রপবনের স্পর্শ পেয়ে আরও বেশি বিবাগী দশা ধরে। তবু মনে হয়, যতটা উদ্দেশ্যহীন ভাবি আমি বাতাসকে, সে হয়তো নয় তত উদ্দেশ্যরহিত। ‘যেদিকে দুচোখ যায়, সেইদিকে যাব’—একথা বলতে সে হয়তো আসেনি। কোনদিকে যাবে এই বাতাস, কী করতে যাবে, সেকথা বলা যায় বৈকি অনেকটাই অঙ্ক কষে।

বোহেমিয়ানের আদর্শকে কখনই সম্মান করা হয়নি এখানে। বোহেমিয়ানের বিপরীতে এদেশে প্রথম থেকেই পরিব্রাজক-এর আদর্শ বিঘোষিত, পরিকীর্তিত ও অনুশীলিত হয়েছে। বোহেমিয়ানও চলনশীল, পরিব্রাজকও খানিকটা তাই। কিন্তু স্থির উদ্দেশ্যে উপনীত হওয়ার যে কঠিন আদর্শ ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি পরিব্রাজকের রয়েছে, বোহেমিয়ান তার থেকে বঞ্চিত। বোহেমিয়ান লক্ষ্যহীন, আদর্শের তার কোনো বালাই নেই। শ্রদ্ধা নেই, সংহতি নেই। বোহেমিয়ানের প্রতিভার ক্ষণিক স্ফুরৎ চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে বটে, কিন্তু পরমুহূর্তেই সেই আগুন নিভে গিয়ে বোহেমিয়ান শুধু রেখে যায় অপকৃষ্ট অঙ্গার। আর কিছু নয়।

‘পরিব্রাজক’ শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে সন্ন্যাসের আদর্শ। বৌদ্ধ ঐতিহ্যে যেমন বলা হয়, ‘তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছেন।’ কথাটা স্পষ্টতই এখানে সন্ন্যাস গ্রহণকে ইঙ্গিত করছে। কিন্তু মূল শব্দটির দিকে তাকালে মনে হয়, আদিতে এর অর্থ এমন ছিল না। শব্দটির মধ্যে ‘ব্রজ্‌’-ধাতু আছে। পরি-ব্রজ্‌+ণ্বুল্‌=পরিব্রাজক। এখন ‘ব্রজ্‌’ ধাতু গমনার্থক। এই গমন বা যাওয়ার ওপরেই জোরটা রয়েছে এই শব্দে। তাই যদি আমি খুব ভুল না করি, তাহলে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে চলে যায় যে, ঘুরে বেড়ায় যে—এই অর্থই শব্দটির আদিতম অভিপ্রায় বলে সাব্যস্ত হচ্ছে। সন্ন্যাসের সঙ্গে ‘পরিব্রাজক’ শব্দের বিবাহ হয়েছে পরে।

আমার বক্তব্যের সমর্থন পাচ্ছি খুবই অভাবিত উৎস থেকে। মনু আমাকে সমর্থন করছেন। মনুস্মৃতিতে পাচ্ছি:‘বাসাংসি মৃতচৈলানি ভিন্নভাণ্ডেষু ভোজনম্‌। কার্ষ্ণায়সমলঙ্কারঃ পরিব্রজ্যা চ নিত্যশঃ।।’ (১০।৫২) মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত বসনই তাদের বস্ত্র, ভাঙা পাত্রে তাদের ভোজন, লোহার নির্মিত তাদের অলংকার এবং তারা সবসময়ই স্থানে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়ায়।

ব্যাপারটাকে আরও পরিষ্কার করেছেন মনুস্মৃতির ভাষ্যকার মেধাতিথি। মেধাতিথিও লিখেছেন এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে—তারা সব সময়ই ঘুরে বেড়ায়, কোনো স্থানে আবদ্ধ থাকে না।

ওপরের এই ব্যাখ্যায় সন্ন্যাস অনুল্লিখিত।

কিন্তু সন্ন্যাস এই শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে পরে। শব্দকল্পদ্রুম-এ শব্দটির ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এইভাবে—পরিত্যজ্য সর্বং বিষয়ভোগং গৃহস্থাশ্রমাদ্‌ ব্রজতি গচ্ছতি ইতি। সবরকমের বিষয়ভোগ পরিত্যাগ করে গার্হস্থ্যাশ্রম ছেড়ে যিনি চলে যান, তিনি পরিব্রাজক বা পরিব্রাজিকা।

এই ব্যাখ্যা অনেকটা পরের কালের।

এখন সন্ন্যাসী মাত্রেই কি পরিব্রাজক বা পরিব্রাজিকা? তা যে নয়, তা তো আমরা জানি। বিদ্যারণ্য মুনির ‘জীবন্মুক্তিবিবেক’-এ আছে, সন্ন্যাসী দুই প্রকার। কুটিচক আর বহূদক। এক জায়গায় কুটির বেঁধে যে সন্ন্যাসী তপশ্চর্যাদি করেন, তিনি কুটিচক। আর তীর্থে তীর্থে বহু জায়গার উদক বা জল খেয়ে যিনি ঘুরে বেড়ান তপস্যার জন্য, তিনি বহূদক।

তাহলে ‘পরিব্রাজক’ শব্দের ষোলো আনা অর্থই ‘সন্ন্যাসী’ করলে এই গোল হয় যে, তার দ্বারা কেবল বহূদক সন্ন্যাসীই বিবক্ষিত হয়। কুটিচক সন্ন্যাসী বাদ পড়ে যায়। ন্যায়শাস্ত্রের ভাষায় সংজ্ঞানিরূপণের এই দোষকে ‘অব্যাপ্তিদোষ’ বলে।

আর শব্দটির মূল ধরে টান মারলে যে ‘wanderer’ বেরিয়ে আসে, তা তো আগেই দেখিয়েছি। গৃহস্থ ব্যক্তিও সময়ে সময়ে পরিব্রাজকের জীবন বেছে নিতেন, ইতিহাসই তার প্রমাণ দেবে। কিন্তু প্রব্রজ্যার সেই জীবন লক্ষ্যহীন বোহেমিয়ানের জীবন ছিল না। তার সুনিরূপিত উদ্দেশ্য ছিল। কী সেই উদ্দেশ্য?

প্রথমত, জ্ঞানার্জন। সুদূর সমতটের জগদ্দল বিহার থেকে শুধু জ্ঞানের পিপাসায় মানুষ চলে যেত পশ্চিমের তক্ষশিলা বিহারে। কিংবা দক্ষিণের কেরলদেশ হতে উত্তরে কাশ্মী্রের বিদ্যাসত্রে বিদ্যার্থীদের ছিল যাতায়াত। আজকের মতো যোগাযোগব্যবস্থা তখন স্বপ্নেরও অতীত। আশ্রয় নেই, সম্বল নেই, পথঘাট দস্যুদের দ্বারা উপদ্রুত, সময়সাপেক্ষ সশ্রম সেই যাত্রাপথ আনন্দগানে ভরিয়ে বিদ্যার্থী পান্থরা চলেছেন নির্ভয়ে। একবার ভাবুন! একটু চিন্তা করুন! শুধু ভারতের মধ্যেই নয়, ভারতেতর দেশেও তাঁদের অবারিত ছিল সেই জ্ঞানের অভিযাত্রা। এদিকে সুমাত্রা, বোর্নিও, জাভা, শ্যামদ্বীপ… পূর্ব এশিয়ার দ্বীপময় দেশগুলিতে… আবার উত্তরে তিব্বত, সিল্করুট ধরে চীন কিংবা পারস্য, তুরস্ক… এমনকি ভূমধ্যসাগরের তীরে উতরোল রাতের বাতাসে তাঁরা দলে দলে নেমেছিলেন, বিদ্যাবীথি স্থাপন করেছিলেন, স্থবিরপুত্র বা থেরাপুত্র সম্প্রদায়ের বিদ্যার্থীরা সমৃদ্ধ করেছিলেন অশ্বিনী বা আসিনি সম্প্রদায়কে, যে সম্প্রদায়ের অনুসারী য়াহুদী জন দ্য ব্যাপটিস্ট, যাঁর ছাত্র যোশুয়া বা যীশাস, যে ইহুদি যুবক নতুন আন্দোলনের সূচনা করবেন, কালে কালে যা জগৎজোড়া খ্রিস্টান ভাবান্দোলনের রূপ নেবে। এসব তো সেই জ্ঞানান্বেষক পরিব্রাজকদের শতাব্দীর পর শতাব্দীজোড়া অক্লান্ত পরিশ্রমেরই ফল।

দ্বিতীয়ত, তীর্থভ্রমণ। বৈদিক বলুন, বৌদ্ধ বলুন, এদেশের মানুষের এই এক আদিতম অভীপ্সা—তীর্থে যাব, তীর্থরেণু গায়ে মেখে পবিত্র হব। তার জন্য সব কষ্ট স্বীকার করতে রাজি। এই মৌলিক আবেগগুলোকে তো চিনতে হবে। তা না করে ‘ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ’ করে চেঁচালে হবে ঘোড়ার ডিম! বাপু হে, ‘ভারত, ভারত’ করছ, ভারতকে চেনো কি? শুধু দুটি পয়সাকে চারটি পয়সাতে রূপান্তরিত করায় ভারতের আগ্রহ ছিল কবে? তার সমাজের ভালো-মন্দ, সুখাসুখ সত্ত্বেও ভারত চিরকাল প্রাত্যহিকতার তাগিদের বাইরে কতগুলি উচ্চ আদর্শকে মাথায় রেখে জীবন কাটিয়েছে। এই তীর্থগমন তেমনই একটি আদর্শ ছিল। তীর্থীকুর্বন্তি তীর্থানি—মহাপুরুষের পাদস্পর্শে তীর্থ তীর্থ হয়ে ওঠে। একথার মানে কী? মানে হল এই, তীর্থ এদেশে দুরকম। স্থাবর তীর্থ আর জঙ্গম তীর্থ। স্থাবর তীর্থ স্থানবিশেষ—কাশী, প্রয়াগ, রামেশ্বরম্‌, অযোধ্যা, বৃন্দাবন, দ্বারকা, গয়া ইত্যাদি। আর জঙ্গম তীর্থ হলেন উন্নত মনুষ্যবিশেষ—বুদ্ধ, শঙ্কর, চৈতন্য, নানক, কবীর, তুকা, মীরাবাই, অন্ডাল, অক্‌কা মহাদেবী। এই সচল তীর্থরূপী মানুষের স্পর্শে অচল তীর্থ সমূহ তীর্থমর্যাদা পায়। আর প্রথমটির অভাবে তীর্থ আর তীর্থ থাকে না, ব্যবসা-বাণিজ্য আর ভণ্ডদের আবাসে পরিণত হয়।

ভারতবর্ষে দেবভাব ও মানবভাবের চিরন্তন চলাচল। দেবতা এখানে মানুষ হয়ে আসেন, আবার মানুষ দেবতা হয়ে ওঠেন তাঁর চরিত্রের দীপ্তিতে। ‘দিব্‌’ ধাতু থেকে ‘দেবতা’ হয়েছে। দিব্‌ দ্যোতনে। প্রাত্যহিকতার ঊর্ধ্বে এই দিব্য দ্যোতনাই ভারতের লক্ষ্য। ওইজন্যেই তীর্থসমূহ উপাস্য দেবতার উপস্থিতিতে যতটা মহিমময়, দ্যুতিময় মানুষের উপস্থিতিতে তা ততটাই মহিমান্বিত। কাশী বিশ্বনাথের স্থান যতটা, সচল বিশ্বনাথ ত্রৈলঙ্গস্বামী, শংকরাচার্য, তুলসীদাস, হরিশচন্দ্রের জীবনের অনুভায় ততটাই আভায়িত। শ্রীক্ষেত্র পুরী যতটা জগন্নাথকৃপাধন্য, ততটাই চৈতন্যপ্রেমে বিভোর। গয়ার পাশেই এখানে বোধগয়া। বিষ্ণুর পাশেই বুদ্ধ। পুরাণের পাশেই এখানে ইতিহাস। শুধু এইসব আলোকিত মনুষ্যের কথাই হচ্ছে না, এসব তীর্থ অগণ্য সাধারণ মানুষের জনস্রোতের তীর্থবারিতে পূত। তাই ভারতীয়দের তীর্থযাত্রাকেন্দ্রিক পরিব্রজ্যার পেছনে আছে আসলে বৃহত্তর ভারতবর্ষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার তাগিদ।

পরিব্রজ্যার তৃতীয় উদ্দেশ্য জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ। ঘর ছেড়ে মানুষ বেরিয়ে পড়ে পথে। গ্রাম ছেড়ে অজ্ঞাত সব পন্থায় চলে যায় দূর দেশে। সেই পথের প্রকৃতি কী? রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়, পথের দুধারে আছে মোর দেবালয়’। পথের দুধারের সেই দেবালয় মানুষ, বিচিত্র সব মানুষ। তাদের সঙ্গে ভাববিনিময়ের মধ্য দিয়ে ভূমণ্ডলের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভ হয়। সুখ-দুঃখ, আঘাত-সংঘাত, সম্পদ-বিপদ—সব ভাবেই অভিজ্ঞতার মণিমঞ্জুষা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ যদি নাই হল, তবে বেঁচে থাকার অর্থ কী? বিস্তারই জীবন, সংকোচই মৃত্যু।

সুতরাং পরিব্রাজক জীবন বা বাউলের জীবন শুধু সন্ন্যাসীর জন্য নয়, তা গৃহস্থেরও অবশ্যপালনীয়। মোট কথা, শিকড় গেড়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সংসার করার কথা ভারত কাউকে শেখায়নি। না সন্ন্যাসীকে, না গৃহীকে। আর এই বেরিয়ে পড়া, এই আদিতম অর্থের প্রব্রজ্যা মোটেও আমাদের আজকের ফ্যামিলিশুদ্ধু বেড়াতে যাওয়া নয়। কারণ তাতে নিজ গৃহবেষ্টনী ছেড়ে বেরোনোর কোনও ব্যাপারই নেই। গিন্নিকাচ্চাবাচ্চাসমেত সকালের কফি ডিমসেদ্ধ থেকে শুরু করে সারাদিনের যা যা অভ্যাস সব বয়ে নিয়ে কেদারবদ্রীতে উঠলে সেটা আর প্রব্রজ্যা থাকে না, বলাই বাহুল্য। এখানে যে কলকল করত, হৃষীকেশে গিয়েও সে কলকল করে। তখন হৃষীকেশ আর থাকে না, রোটিকেস হয়ে যায়।

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিচার করে দেখেছি এই অনাসক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ার আদর্শটা গত সোয়া শ বছরে আমাদের জীবন থেকে চলে যেতে বসেছে। কে যেন আমাদের বলেছে, একই ঠিকানায় পচে মরতে হবে। সাধুকেও বলেছে, গেরস্থকেও বলেছে। আমরা এখন কলকাতার, মুর্শিদাবাদের, মেদিনীপুরের, ত্রিপুরার, বাংলাদেশের, বরাক উপত্যকার। এই কূপমণ্ডুকতা আমাদের বৃহত্তর পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভার্চুপৃথিবীতে নির্বাসন দিয়েছে। এর থেকেই স্বার্থপরতা, গোষ্ঠীসর্বস্বতা, পণ্ডিতম্মন্যতার জন্ম হয়েছে।

অথচ চৈত্র পবন আজও সব এলোমেলো করে দিয়ে যায়, ধরিত্রীর ধূসর বুকের উপর বর্ষা-বসন্ত-নিদাঘ-শীত এসে এলোথেলো করে দিয়ে যায় আমাদের সাজানো সংসার, মরুভূমির বালিয়াড়ি পেরিয়ে পেরিয়ে চলে যায় নিঃসঙ্গতার ক্যারাভান, সমুদ্র চুম্বন করে যায় বেলাভূমির কঠিন রিক্ততাকে, অরণ্যের ঘোমটায় মুখ ঢেকে থাকে প্রান্তিক মানুষের জীবন, মেঘকুয়াশার কুহকমায়ার উপরে মাথা তুলে থাকে অভ্রংলিহ হিমালয়…

বেরিয়ে না পড়লে আর চলছে না। নগরকেন্দ্রিক বা অঞ্চলসর্বস্ব শিকড়তৃপ্ত জীবনের যে ভ্রান্ত ভাবনা গত ষাট-সত্তর বছর ধরে আমাদের ক্রমাগত গ্রাস করে চলেছে, তাকে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদেয় করতে না পারলে, শত ইন্টারনেট-আন্দোলনেও, শত শত বার কৃত্রিম লিবারাল এবং আরোপিত জাতীয়তাবাদের শ্লোগান তুলেও জাতি হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমাদের অচিরেই মৃত্যু ঘটে যাবে।

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes