
আর গানস্যালুট হয়ে ছড়িয়ে পড়লো গান
সুবীর সরকার
১.
সন্দীপ দত্ত।১৯৫১-২১২৩ আয়ুষ্কাল তার।
সন্দীপ দত্ত নিজেই আজ একটা প্রতিষ্ঠান।
ব্যক্তি সন্দীপ দত্ত প্রয়াত হয়েছেন।তিনি আর কথা বলবেন না।লিটিল ম্যাগাজিন মেলায়,কলেজ স্ট্রিট, টেমার লেন জুড়ে আর আমরা তাকে হেঁটে বেড়াতে দেখবো না।
এটা সত্যি।কিন্তু পাশাপাশি এটাও চূড়ান্ত সত্যি যে যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে,বাংলা সাহিত্য চর্চার আতুরঘর লিটিল ম্যাগাজিন থাকবে ততদিন সন্দীপ দত্ত বেঁচে থাকবেন।
২.
সন্দীপ দত্তের সঙ্গে আমার চিঠিতে পরিচয় ১৯৯৪ সালে।জলপাইগুড়িতে কবি অতনু বন্দোপাধ্যায় আমাকে প্রথম সন্দীপ দত্তের কথা বলে।আমি তখন অতনু শুভ্র দেবাশিস দের সঙ্গে “এরকা” পত্রিকা করছি।দিনের পর দিন জলপাইগুঁড়িতে জেঠুর বাসায় কাটাচ্ছি।প্রবল কবিতার ঘোর ঘিরে ফেলছে আমাকে।স্নেহ সান্নিধ্য পরামর্শ পাচ্ছি প্রবীর রায়,শ্যামল সিংহ,সমর রায় চৌধুরী,বিজয় দে,গৌতম গুহ রায়দের।পুষ্ট হচ্ছি।নিজেকে চিনতে শিখছি।সারা বাংলা ভাষার পরিসরে কত কত লিটিল ম্যাগাজিনে লিখতে শুরু করেছি তখন।
গ্রাম গঞ্জ মফস্বলে তৈরি হচ্ছে নিজস্ব বন্ধুবৃত্ত।
একদিন প্রবীর রায়ের কাছে সন্দীপ দত্তের ঠিকানা চাইলাম।
চিঠি লিখলাম সন্দীপ দত্তকে।কিছুদিন বাদে আমার কুচবিহারের দেবীবাড়ির বাড়িতে ডাকপিয়ন অনেকগুলি চিঠি দিয়ে গেলেন।আমি প্রচুর চিঠি লিখতাম।প্রচুর চিঠি পেতাম।
দেখি একটা ইনল্যান্ড লেটার।প্রেরক সন্দীপ দত্ত।
সন্দীপ দত্ত জানালেন_”আমি কৌরব,দ্বিতীয় চিন্তা,কবিতা পাক্ষিক পত্রিকায় তোমার কবিতা পড়েছি।তুমি লিখবে ভাই।
কলকাতা এলে আমার লাইব্রেরীতে দেখা করবে”।
আমি তীব্র আনন্দ নিয়ে উড়তে শুরু করলাম।
আরো বেশি কবিতা আর লিটিল ম্যাগাজিনের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম।
এরপর সন্দীপ দত্ত আমার দাদা হয়ে উঠলেন।
বিভিন্ন বিষয়ে তার কাছ থেকে সবসময় সুপরামর্শ পেয়ে এসেছি।
৩.
আমার মাথাভাঙার বাসায় একটা গোটা দিন সন্দীপ দা ছিলেন।পম্পার কাছে মুসুরির ডাল,বেগুন ভাজা,ঢেঁকি শাক খেতে চেয়েছিলেন।আমি সেই মেনুতে গুঁজে দিয়েছিলাম উত্তরের বোরলী মাছ।
নিজের লাইব্রেরী গড়ে তোলা, নানান প্রতিবন্ধকতার,নিজস্ব লড়াইয়ের গল্পগুলি একটানা বলে যাচ্ছিলেন তিনি সমস্ত দুপুর জুড়ে।
টাকা বাঁচাবার জন্য সিগারেট ছেড়ে দেবার কথাও।
শেষ দেখা সেপ্টেম্বর মাসে।
কিছুটা সময় সেদিন কাটিয়েছিলাম সন্দীপ দার সঙ্গে।সঙ্গী ছিল কবি শৌভিক বণিক।
সন্দীপ দা বলেছিলেন সেদিনও অনেক শূন্যতার কথা।
৪.
সন্দীপ দত্তকে নিয়ে কিছুতেই এই ৫০০/৬০০ শব্দের পরিধিতে লেখা সম্ভব নয়।যে লড়াই যে যুদ্ধ অনন্ত জীবন জুড়ে তিনি করে গেলেন আগামীর ইতিহাসে সেই সব লেখা হবে।
নিমতলা মহাশ্মশানে সন্দীপ দাকে এগিয়ে দিলেন বাংলার লিটিল ম্যাগাজিনের সৈনিকেরা।
আর গানস্যালুট হয়ে ছড়িয়ে পড়লো গান।
সন্দীপ দত্তদের মৃত্যু নেই।
শ্রদ্ধা
সন্দীপ দত্তের প্রয়ানে পশ্চিমবঙ্গের লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন বড়সড় ধাক্কা খেলো।। আশা করি, আমরা এই উদ্ভুত সমস্যা থেকে আলোর পথে এগিয়ে যেতে পারবো।। সন্দীপদা তেমনই চাইতেন সবসময়।।