' আমার কবিতা আর কিছু নয়। ঝিঁ ঝি পোকার ডাক'
অসমীয়া সাহিত্যের শিরোমণি শ্রী নীলমণি ফুকনের সঙ্গে কিছুক্ষণ
সাক্ষাৎকারে শমীক ঘোষ


‘তুমি তো বেশ সুদর্শন।’
জানতাম, চোখে ভালো দেখেন না। তাই অবাক হইনি একদম। বরং মুচকি হেসে, চোখে চোখ রেখেই উত্তর দিয়েছিলাম । ‘সুদর্শন তো আপনি।’
প্রথমে মোটেও এত সহজ ছিল না কথা বলা।
নীলমণি ফুকন। অসমীয়া সাহিত্যের এক স্তম্ভ। প্রদ্মশ্রী। সাহিত্যে ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ সরকারি সম্মান – সাহিত্য অকাদেমির ফেলো। সেও প্রায় ১৬ বছর হয়ে গেল। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন, আমার জন্মেরও দু’বছর আগে।
অসমের যে কোনও বড় সাহিত্য পত্রিকা খুললেই অন্তত একটা কবিতা চোখে পড়ে যা ওঁকে উৎসর্গ করা।
বয়স ৮৫। অসম্ভব গুটিয়ে রাখেন নিজেকে। অসমের সাহিত্য জগতের কাউকে ওঁর সঙ্গে দেখা করার কথা বললেই, শুনতে হয় খুব অসুস্থ। সময় দেবেন কিনা জানি না।
ওঁর সঙ্গেই দেখা করব। সেই কথা বলেছিলাম অঙ্কুরদাকে। অঙ্কুর ডেকা। অসমের প্রথম সারির সাহিত্য পত্রিকা ‘গড়ীয়সী’র সহকারী সম্পাদক। আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছেন লেখক অরিন্দম বসু। অঙ্কুরদার গলার স্বর শুনেই বুঝেছিলাম, কাজটা কঠিন।
প্রথমেই আমাকে দেখে, অঙ্কুরদার দিয়ে তাকিয়ে অহমীয়াতে বললেন, বাংলাতো ভালো জানিনা। কথা বলব কী ভাবে?
আমি ইংরাজিতে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘ইউ ক্যান স্পিক ইন এনি ল্যাঙ্গুয়েজ ইউ ফিল কমফর্টেবল।’
কামাখ্যা পাহাড়ের উলটো দিকে, পাহাড়েরই কোল ঘেষে ওঁর বাড়ি। গাছ, গাছ আর গাছ। তার মধ্যেই সবুজ-সাদা একটা বাংলো।
অঙ্কুরদা আগের দিনই জানিয়েছিলেন, সকাল দশটায় সময় দিয়েছেন। চিরকাল দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা আমি, পৌঁছে গিয়েছিলাম ঠিক এক ঘণ্টা আগে।
গাছে ঢাকা একটা লন। সেখান থেকে সামান্য উঠলেই পাহাড়ের অন্য ধাপে আরেকটা লন। সেইখানে প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে রোদ পোহাচ্ছেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। সামনে চায়ের কাপ।
আমি যেতেই বৃদ্ধা উঠে এগিয়ে এলেন। আমি প্রণাম করলাম। একটা পা স্পর্শ করা মাত্র সাদা শাড়ির মধ্যে লুকিয়ে ফেললেন আরেকটা পা। কিছুতেই আর খুঁজে পাইনা। ‘আরে পা’টা না খুঁজে পেলে প্রণাম করব কী করে?’ বহু কষ্টে আরেকটা পা খুঁজে পাওয়া গেল। তারপর নীলমণি ফুকনের সামনে।
সারাজীবন ধরে তাঁর কবিতায় ধরা পড়েছে প্রকৃতি। অথচ সেই তিনিই অশান্ত অসমে পালটে ফেলেছিলেন নিজের স্বর। প্রকৃতির কথা না লিখে লিখেছিলেন, দীর্ঘ দিন ধরে তিনি শুধুই বাতাসে পোড়া টায়ারের গন্ধ পান।
‘ইউ কমপেয়ার্ড ইয়োর পোয়েট্রি টু দ্য সাউন্ড অফ ক্রিকেটস।’ বলেছিলেন, ওঁর কবিতা আসলে আর কিছু নয়। ঝিঁ ঝি পোকার ডাক।
স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে কথা শুরু করলেন এইবার। ‘দেখো আমার মনে হয় পৃথিবীতে দুটোই জিনিস আছে। একটা কবিতা। আরেকটা মিউজিক। এত বয়স হয়ে গেল আমার। অক্ষর দেখতে পাই না আজকাল। এই বয়সে এসে মনে হয়, এত দিনে অন্তত দুটো তিনটে কবিতা লেখা উচিত ছিল। সেটাও হয়নি। পারিনি কিছুই।’
লনের ভেতরেই আরেকটা চেয়ারে বসে আছি। ওঁর দিকে প্রায় ঝুঁকে পড়েই। কথাটা শুনে মনে হল, এর সামনে চেয়ারে বসার যোগ্যতা আমার হয়নি। নীচের ঘাসের দিকে তাকালাম। একটা নাম বেরিয়ে আসছিল। ‘রিলকে।’ গিলে ফেললাম।
‘প্রকৃতি? আপনার লেখায় অসম্ভব প্রকৃতি আসে।’
‘অনেকে ভাবে আমি প্রকৃতি নিয়েই লিখি। তা তো নয়, প্রকৃতি আসলে মেটাফর। আসলে আমি তো প্রকৃতির মধ্যেই বড় হয়েছি। প্রকৃতির মধ্যেই থাকি।’ আশপাশের গাছগুলোর দিকে দেখান। থমকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।
‘ফ্রেঞ্চ সিম্বলিজম?’
থমকে যান বৃদ্ধ। তাকান অঙ্কুরদার দিকে। আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।
‘ফ্রেঞ্চ সিম্বলিজম – ক্রিটিকরা বলে। ফ্রেঞ্চ সিম্বলিজম নেই আমার লেখায়।’
‘আমি তখন কটন কলেজের ছাত্র। দেশ পত্রিকা পেলাম হাতে। ফরাসী কবিতা নিয়ে লেখা। সেখানেই আমি ফ্রেঞ্চ সিম্বলিজম বিষয়ে সামান্য জানতে পারি। ব্যাস। তারপর মালার্মের ওপর বই পড়লাম। বেশি না। আমার যে টুকু জানার জানা হয়ে গিয়েছিল। আর আমি ফিরে তাকাইনি। তারপর ক্রিটিকরা বলেছে।’
‘অরুণ মিত্র।’ এবার কথাটা আর গিলতে পারি না আমি।
‘কী লোক! কী লোক! কী সব কাজ করেছে। অসামান্য লোক। সব কিছু পাওয়ার পরে, সবার শেষে লোকটা কিনা সাহিত্য অকাদেমি পেল!’
আলোচনা বাঁক নেয় হঠাতই। ততক্ষণে প্রায় আমাকে চমকে দিয়ে প্রতি কথার ফাঁকে ফাঁকে রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি।
রবীন্দ্রনাথ থেকে কখন যেন পৌঁছে গিয়েছেন জীবনানন্দে।
‘জীবনানন্দের বরিশাল আর আমার ছোটবেলা যেন একই রকম। আসলে বরিশাল উনি যেমন দেখেছিলেন, আমিও প্রায় সেই একই প্রকৃতিতে বড় হয়েছি। প্রথমবার পড়েছিলাম, পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে। পাখির নীড়। শব্দগুলোতে আটকে গিয়েছিলাম। ধানসিড়ি নদী দেখেছি আমি। অহমে আমরা বলি ধনসিড়ি। তোমরা বাংলায় বলো ধানসিড়ি। ওই নদীর ধারেই তো আমার শৈশব। শুনেছি জীবনানন্দ নাকি এসেছিলেন ওই নদী দেখতে। উনি যেদিন মারা গেলেন, আমি কলেজে পড়ি। খবরটা পেয়ে সারাদিন কেঁদেছিলাম।’
বাংলো বাড়ির বৈঠকখানায় সদ্যযুবা কয়েকজন অহমীয়া তরুণ এসেছেন।
‘স্যার…’
অসমীয়াতে সপাট উত্তর, ‘এখন ওঁর সঙ্গে কথা বলছি। ভেতরে গিয়ে বোসো।’
কখন যেন পোঁছে গেলেন ওঁর বাঙালি বন্ধুদের গল্পে। শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
‘শক্তিকে আমি খুব কম পেয়েছি। খুব কম। কী পাওয়ারফুল কবি। শঙ্খ ঘোষ, বড্ড বড় কবি। খুব বড়। আর ভালো মানুষ। ভালো মানুষ হওয়াও খুব কঠিন। খুবই কঠিন।’
দীর্ঘ সময় জুড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর শঙ্খ ঘোষের কথা বলে গেলেন। শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে জরুরী বই খুঁজতে। সেই সময় সেখানকার লাইব্রেরিয়ান ছিলেন বিমল মিত্র। লেখক বিমল মিত্র নন। তাঁর সাহায্যের কথাও বলে গেলেন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে। হঠাৎ সেখান থেকে চলে গেলেন আলালের ঘরে দুলাল প্রসঙ্গে। সেখান থেকে লাফিয়ে শিবনারায়ণ রায়। আমাকে বেশ কয়েকটা বই পড়ার কথা বললেন। সবই বাংলা বই। আমি পড়িনি। পাবলিশার্সের নামও বলে দিলেন।
‘ফিজিক্সটা ব্যবহার করো লেখায়।’
বাইরের ঘর থেকে উৎসুক যুবকেরা আমার দিকে কেমন যেন ঈর্ষা নিয়ে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে। আমি তাদের ঠকাচ্ছি এমন লজ্জা লজ্জা ভাব করছি মাঝে মাঝে।
‘তুমি এসে খুব ভালো করেছ। আজকে আমার দিনটা খুব ভাল যাবে। খুব ভালো। কত কথা যে মনে পড়ছে।’
চা টা সাহস করে খেয়ে ফেলেছি ততক্ষণে। প্লেটে রাখা খাবরগুলো স্পর্শও করিনি। ‘খেলে না কেন?’
‘কত বয়স থেকে লেখা শুরু করেছ?’
১৩-১৪ বছর বয়সে কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম প্রথম। সে কথা চেপে গেলাম বেমালুম। প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল, ১৯-২০ বছর বয়সে।
‘ঠিক বয়স। খুব ভালো বয়সে শুরু করেছ।‘

ছবি তুলব। পাশে গিয়ে নীচ হয়ে দাঁড়িয়েছি।
‘নীচু কেন?’
অঙ্কুরদা উত্তর দিলেন, ‘নীচু না হলে ছবির ফ্রেমে আটকাবে না।’
‘আমি দাঁড়াচ্ছি তাহলে।‘ অসময়ীয়া বহুক্ষণ পর।
‘না, না।’ আটকানো হল তাকে।
ফিরে আসছি। দরজায় দাঁড়িয়ে ঋজুদেহের সুঠাম মানুষটা হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘তুমি একদিন বড় লেখক হবে।’
‘স্যার দিস ওয়াজ ওয়ান অব দ্য মোস্ট মেমোরেবল এক্সপেরিয়েন্সেস অব মাই লাইফ।’
#
কলকাতায় ফিরে অঙ্কুরদাকে ফোন করলাম। ‘এসে গেছি।’
‘আমি নীলমণি স্যারের বাড়িতে, দাঁড়াও।’
ফোনে আবার সেই চেনা গলাটা!’ হ্যাপি নিউ ইয়ার!’
‘শোনও, আমি যে কী সব বললাম সেদিন! কোনও মাথামুণ্ডু নেই। লজ্জাই লাগছে। আমার স্ত্রীকে বললাম, আর বাইরে থেকে কেউ এলে আমি দেখা করব না।’
‘এমা আমি যে ভাবলাম আবার গুয়াহাটি গেলে আপনার সঙ্গে দেখা করব।’
কাটাকাটা স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণ, ‘তোমার জন্য আমার বাড়ির দরজা সব সময় খোলা।’

হঠাৎ একটা বাজি ফেটে উঠল কোথাও। কালো আকাশটা আলো আলো। কলকাতার রাতের আকাশে যেন হঠাৎ একটুকরো ব্রহ্মপুত্রের রোদ!

CATEGORIES
TAGS
Share This
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes