
অ য় ন চৌ ধু রী-র কবিতা
মুহূর্ত-বিপ্লব
১.
সে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে বলেছিল কেউ মাথায় হাত রেখে ডেকেছে। তারপর পোড়া গন্ধ। বিষাক্ত ধোঁয়া, যেন রক্ত পুড়ে যাচ্ছে কোথাও, যেন খেতভর্তি শস্য ছাই হয়ে গেল। আগুনে আগুন লেগে ঝলসে উঠল মাঠ। তবু সে কাঁদেনি, তবু সে বুক দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছে এক একটি দানার ভিতরের নির্ঘুম ভয়টুকু।
রাস্তায় নেমে এসেছে শাসকের কামান। বুক দিয়ে রুখে দেয় গোলা-গুলি যারা, তারা আজ আর ক্ষুধার্ত নয়। তাদের বাঁ পায়ের গোড়ালির কাছে ক্ষত ও উপাসনা লেগে আছে। আমাদের বিশ্বাসের মতো আরও যা কিছু বিশ্বাসঘাতক…
একজন মানুষ হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে দুঃস্বপ্নের মতো এই যুদ্ধ দেখেছিল। তার ভিতর কাঁপছে। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে থাকা শিশুর মুখের মতো নিষ্কলঙ্ক এই অন্ধকার কেটে কেটে এগিয়ে আসছে আগুন। তার ঘর, তার যুবতী বউ ও এই সামান্য শিশুসহ সে এই অন্ধকারে পড়ে গেছে। একটা কয়েকশো ফুট নীচু টানেল যেন। গলা বাড়িয়ে চিৎকার করেলেও আগুনের শোঁ শোঁ শব্দ তার চিৎকারের উপর এসে আছড়ে পড়ছে৷ ফাটিয়ে দিচ্ছে তার দেহের বিকার। মুখ ভেঙে তুলে আনছে রক্ত…
২.
এসো হে চণ্ডাল, এসো হে ঘাতক হত্যা করো আমার ক্ষুধাকে, হত্যা করো আমার পিপাসাকে
জ্বালিয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও শেষ সম্বলটুকুও তবু এই মাটির গায়ে যে স্পর্শ নামিয়ে দিয়েছি, যে উষ্ণ অভ্যর্থনায় তাদের শরীর জুড়ে জাগিয়ে তুলেছি সোনালি যৌবন তুমি তাকে অস্বীকার করে দেখো
তোমার ভিতরে ছুটে এসে লাগবে দমকা হাওয়া, হাড় ও মাংসের সমস্ত কুঠুরিতে যে বিপুল আয়োজন তার ভিতর নড়ে উঠবে কীট। করোটির ভিতর থেকে দু’জোড়া চোখ জেগে উঠে দেখে নেবে এইসব ঘৃণা ও প্রবঞ্চনা
তোমাকে যে মায়ের আঁচল আগলে রেখেছিল নিজের চারপাশে, তাকে তুমি যদি ছিন্ন করে ফেলো তবু এ মাটি কেঁপে উঠবে না আর। সে তার সমস্ত ভালোবাসা জলের সমীপে নিমগ্ন ঋষির মতো নামিয়ে এসেছে। তার চোখ, ঊরু, নাভি ও যোনির কাছে সমস্ত ঘাস আজ মৃত কন্টক, ধারালো অস্ত্রের সূচাগ্র
এসো হাত রাখো, ক্ষতবিক্ষত হও, নিজেকে কুপিয়ে কুপিয়ে মারো
শেষ বিন্দু নিঃশ্বাসের আগে নিজেরই রক্তে নিজের প্রচ্ছায়ার সৎকার করে ফেলো
তবু এই নীরবতা আজ অন্তিম রহস্যের গণ্ডি পেরিয়ে আরও ঋজু হয়ে উঠবে
তবু কোমলতা আর দুর্বল হবে না এই মুহূর্ত-বিপ্লবে…