
অর্ণব চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ
সহস্র কথার জাল
কথক
কথকের ভঙ্গি শুধু জন্ম দেয় নানা অভিমত
সকলেই দুটি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে
আকাশের দিকে তুলে ধরে
তাদের জগৎ
সাবেকি তন্ত্রের মতো ভেসে ওঠে প্রবল উল্লাস
রঙের বাহুল্য থেকে
তোমার শরীর জুড়ে
অসুখে গজিয়ে ওঠে ঘাস
কথকের ভঙ্গি তুমি ছুঁয়েছিলে নাকি
মুষ্টিবদ্ধ করা হাত!
দূরে সরে যায় কোন জলজ আঘাত…
খেলা
অদূরে গলির বাঁকে নেমে এলো গোধূলি বিকেল
কে কার ছায়ায় বসে
ছেলেখেলা করে আর, মেখে নেয়
এই রেশ
কেন যে ঘটনাগুলি বদলে যায় রোজ
সত্য কি অভাব দূর করে! নাকি অন্যকোনো
বিরোধী-মহিমা তার!
ভাবি আমি এইসব সারাদিন;
ছেলেখেলা ছেলেখেলা করে
কেটে যায় রাক্ষুসে যৌবন
অদূরে গলির বাঁকে সন্ধ্যা নামতে থাকে
কে কার ছায়ার মধ্যে
শুয়ে পড়ে, জানে নাকি কেউ!
ডাক
ডুবে যাচ্ছি অথৈ নীল জল
ডুবে যাচ্ছি সুরঙ্গ নিশ্চল
ভয় ভয়ে খসে পড়ছে চাঁদ
ভয় এক অনিবার্য ফাঁদ
মায়াহীন ভাসালো দুচোখ
হাঁটুমুড়ে বসে থাকা লোক
দেখতে পায় আভূমি অসাড়
শূন্য হাত, ছিন্ন সারাৎসার
সার অর্থ ডুবে যাচ্ছে ঘুমে
যেতে যেতে ডেকেছে নিঝুমে
সীমানা
তুমি আছ ওই সীমাহীনতায় ব্যস্ত
আমি কেন এই খুনিদের কালে ধস্ত
খণ্ড ভাঙছে যেমন কালো ও ধূসরে
বুকের তারারা ভাঙছে বুকের ভিতরে
রহস্যহীন ঐকান্তিক ঝাপটায়
দিন কেটে যায় স্বপ্নের ছবি হাতড়াই
মুহূর্তকেও মনে হয় অবিনশ্বর
তুমি চলে যাও সীমাহীনতার বন্দর
কর্তৃত্ব
একটি রঙের সীমানায় যারা বন্দী
রোদে-মেঘে-ঝড়ে গোপনীয়তার সন্ধি
তারা পিছু নেয় স্বপ্নের গানে নির্ভুল
কিছু নয়, জেনো পৃথিবীর সব দিক ভুল
আমরা চাটছি তাদেরই সাজানো রাংতা
বর্তুল হাওয়া অধিকারহীন, বার্তা
পাঠালো যখন শিকল বেঁধেছে দুইহাত
শত্রু বন্ধু শুষে খায় তার সম্পাত
আত্মসমালোচনা
এতোদিন তুমি যাকে বিশ্বাস করেছ
সহসা আজকে জাগছে না আর সম্ভ্রম
কেননা আমরা বিস্মরণের প্রজন্ম
স্মৃতিহীনতায় ভাসে নাকি এই দেশকাল
বিস্মৃতি যেন মানুষের হাতে বালিয়াড়ি, খুব নোনতা
খসে যেতে যেতে উড়ে আসে ফের দুচোখেই
কেউ বসে আছে রক্তপাতের ঝর্ণায়
কেউ ভুলে যায় কী ছিলাম আমি, জন্তু!
তবু স্বপ্ন
শান্ত, মন্দ্র, বেকাবু হাওয়ায়
চাষ করা যতো ভাণ্ড
খণ্ডে খণ্ডে মাঠেঘাটে ঘোরা
তরঙ্গে ভাসা ধন্দ
ব্যর্থ ব্যর্থ ব্যর্থ যখন
ফুলকির লাল আগুনে
ভস্মবিহীন ঝলসে উঠছি
ছাই হয়ে যাওয়া ফাগুনে
জাগুন জাগুন বলছে এখনো
কোমড় জড়ানো মাদুলি
শরীর যখন ছিঁড়ছে বরাত
খিদে পেলে খাও আধুলি
পা-দুটি তোমার বেঁধে রাখা খুঁটি
হাত দুটি উন্মুক্ত
আঙুলে আঙুল ঘষে ঘষে দেখ
ঝরে পড়ে কতো মুক্ত
শান্তশিষ্ট ছাই হয়ে যাওয়া
বিপরীতগামী সন্ধে
খণ্ড খণ্ড মেঘের কিনারে
আলো জ্বলে ওঠে ধন্দে
খুব ভালো লাগলো