অরিন চক্রবর্তীর কবিতা
এই কবির কবিতা আমরা আগে খুব একটা পড়িনি। নতুন একজন কবিই বলা যায়। অরিন চক্রবর্তীর গুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হল।
রক্ত-মাংস
জেব্রা ক্রসিং হয়ে উঠছি সাধারণত
হাড়গুলো চিবিয়ে
সাদা কালো দাগ কাটা হয়
আমার উপর দিয়ে পিষে যায় কত মানুষ
শুয়ে আছি মৃতপ্রায় মাছের কানকোর মতো
আলো আসবে বলে ভোর আমার
রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে ওঠে…
মানুষ
সময় ঋণাত্মক খোলস হয়ে উঠলে
মানুষ পেশাদার হয়ে ওঠে—
ওয়েবসাইট ভরে উঠলে জাঙ্ক ফাইলে
আমরা ইতিহাস মুছে ফেলি—
ফায়ারপ্লেস, জ্বলন্ত হুইস্কির পেগ
ওয়েবসাইট ভরে ওঠে জাঙ্ক ফাইলে…
পোষা চারাগাছ বড় হয়ে ওঠে
শিকড় বাড়ে আমাদের নবজাতক শিরার মত—
মানুষ হয়েও
মাটি থেকে শিকড় ছিঁড়ে
আকাশ হয়ে যাই…
সাপ
উভচর অথবা মানুষ
অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে
কামড়ের লোভ—
এইসব ক্লান্ত, ভরবিহীন হেঁটে চলা
ভিখারির থালায় দেখি
মেরুদণ্ডহীন শূন্যতা…
কর্পোরেট লাভা গিলতে গিলতে
আমি সরীসৃপ হয়ে যাই—
হাঁড়িকাঠ
রাত নামলে বিকৃত শ্মশান হয়ে ওঠে ঘর
ছাদ থেকে নেমে আসে শোকার্ত চিল
ঠোঁটে তাদের মৃত পশুর গন্ধ
আমি জেগে আছি রক্তাক্ত হাতে
শব্দকে কুপিয়ে
ফিরে এসেছি বিষণ্ণ চাদরে
ঢেকে দাও আমায়
আকাশ ডাকছে—
মিথ্যে
একটা মিথ্যের কাঁটা-মুকুট মাথায় জন্ম হয়েছিল আমার—
যত রক্ত গড়িয়ে পড়েছে সেখানে পিছলে পড়েছে
সমস্ত দর্শনার্থী…
ওরা আমার মুখোশকে বিশ্বাস করে গেছে আজীবনকাল
এবার ক্লকওয়াইজ ঘুরে আসুন আপনারা
দেখুন, আমার সামনে-পিছনে কেউ নেই।
আমি স্টেডিয়ামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দেখে গেছি
আমাকে ঘিরে নগ্ননৃত্য
আমি বিশ্বাসঘাতকের মতো খেলে গেছি লেলিহান শিখায়
মৃত্যু ছাড়া ঝরাপাতায় আর কোনো গন্ধ নেই।
ঘুম
এইসব থতমত দিনে
ভাবলেশহীন বেঁচে থাকা
রাত নামলে
আমরা প্রাচীন লাশ হয়ে উঠি—
জেগে থাকা একটি বিষণ্ণ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট
রঙিন আঁচড় নিঃশব্দে ঘুমিয়ে পড়ে
জীবন ও সমাধির
মুক্তমঞ্চে—
নেক্রপলিস
শিরার গ্রাফ উঠলে
আত্মকথা মৃত হয়ে যায়
সভ্যতার এক কোণে পড়ে থাকে
অসম্ভব ঠাণ্ডা ধমনী…
অন্ধকার সবুজ মাঠ
দায়সারাভাবে কৃষকের লাশে
জেগে থাকে
বরফের মৃত নদী…
সাইকেল
বাবার সাইকেল পড়ে আছে ঘরের একপাশে,
প্যাডেল থেকে বাবার শিরা বেরিয়ে আসছে।
বাবা শুধু চলমান চালক।
আরোহী হয়ে উড়ে গেছি কাঁধ থেকে—
লিকলিকে সাইকেলের টায়ার,
শুষে নিচ্ছে বাবার ফুসফুসের হাওয়া।
মা শুধু বলতো, কতবার সারাই হবে?
বাবা জানতো,
ধ্বসে যাবে যতবার স্বপ্নচক্র—
ঐশ্বরীয় ঘুম
তপ্ত সাধকের পিণ্ড থেকে
পুরোনো শকুন খুঁটে নিচ্ছে ঐশ্বরিক চর
যে জলে ধুয়ে যায় সমস্ত চিতাকাঠ
সেখানে আমার পুঞ্জীভূত নাভিকুন্ড…
দীর্ঘশ্বাস পোড়েনি কখনো
দীর্ঘায়িত রাত্রির মতো নিরাকার অবচেতন
এই জঙ্গুলে বেঁচে থাকা
এই পাতার শরীরে আমার পোকাজন্ম…
এবার জ্বলন্ত উদাহরণে শুয়ে থাকবো
মহাকাল এসে শোকে হাঁটুর মধ্যে
মাথা গুঁজে থাকবো
আমি এই জন্মের দড়ি ছিঁড়ে চলে যাবো ঘুমের ভিতর…
খুব ভালো লাগলো। শুভ কামনা কবি ভাইকে
ভালোবাসা দাদা। ❤️
অরিন চক্রবর্তীর প্রত্যেকটা লেখাই চমৎকার লাগল।
অরিন চক্রবর্তীর লেখাগুলো চমৎকার লাগল।
খুব খুশি হলাম। ভালো থাকবেন।
ভালো লাগলো, ভাই।
ধন্যবাদ 😊🍁