অনুপ সেনগুপ্ত-এর দশটি কবিতা

দশটি কবিতা

ওম ওমেগা

এক শব্দে কবিতা বহুজন মিলে লেখে

যদি ওম বা ওমেগা — এমন এক শব্দে দাঁড়াও,
দেখবে —
একইসঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম
সমুদ্রের প্রতিটা ঢেউ
মরুভূমির প্রতিটা বালিকণা
দাবার প্রতিটা চাল
নক্ষত্রের মতো আকাঙ্ক্ষার নীরব বিস্ফোরণ
কোনও গ্রন্থ থেকে সব স্বরবর্ণের উড়াল
সূর্যের কালো ঠোঁট
কালো মেয়ের নাভিতে চাঁদের বোনা জ্যোত্স্নাজাল
ঘুমের ভেতর থেকে উঠে আসা ঝড়
জ্বলন্ত জ্যামিতির মধ্যে দিয়ে বাঘের লাফ
সভ্যতার গায়ে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর উল্কি
অশরীরী জনতার ছায়ার মিছিল
হঠাৎ থমকে যাওয়া নদী
অকরুণ ছুরির বনানী
সময়ের আঁকাবাঁকা পথে অসংখ্য স্বপ্নস্তূপ
চিহ্নের বৃষ্টি
তত্ত্বের রামধনু
গানের ভেঙে পড়া দিগন্ত
ঘরের মধ্যে এক আকাশ নীলিমার আতঙ্ক
কয়েকটি স্মরণীয় চুম্বন
ভবিষ্যতের একটা গোলাপ
নিজের স্তব্ধ হৃৎপিন্ড …

এভাবেই একটি শব্দদর্পণে বাস্তবতা ক্রমশ বেড়ে চলে
একশব্দ কবিতা জীবনে প্রত্যেকেই লেখে

বিস্মৃতি

আমার বিস্মৃতির পশ্চিমদিকে
নিশ্চয়ই কিছু সূর্যাস্ত পড়ে আছে

পড়ে আছে কি এক আস্ত নদী
কিছু কলস্বর, প্রিয়জনের মুখ আর চুম্বন

একটি গোলাপের আঘ্রাণ কি
সেখানে আর্তনাদ হয়ে গেছে

বিস্মৃতির মধ্যে হয়তো
প্রত্যেকেই থাকে অন্য কেউ হয়ে

পাথর

নিজেরই ভিতর থেকে বহু খবর পাই

আমার হাতে যে অদৃশ্য পাথর
তা নাকি আসলে প্রাণভ্রমর — প্রস্তরীভূত

আমি প্রাণপণে সেই পাথর ধরে থাকি
মাঝে মাঝে শুধু দূরে বহুদূরে
উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে

দর্শন

একটি টেবিলের মধ্যে থেকে
বেরিয়ে আসে অন্য টেবিল
যেভাবে আমার মধ্যে থেকে
বেরিয়ে আসে অন্য কেউ

প্রেতের মতো রূপাতীতরা
রূপ ধরে ফের জেগে ওঠে
দৃষ্টি দিয়ে যখন স্পর্শ করো
তার হুবহু অবয়ব
কিংবা তার অনুপস্থিতিকে

হাইকু

খোলা জানলা
ঢুকে পড়ল ঘরে
পাগল চাঁদ

কালরাত্রি

একটি নামের অন্তিম নিঃশ্বাস
যেনবা ঝড় হবে তোমার বিস্মরণে
একটি বাড়ির অন্তিম নিঃশ্বাস
যেনবা অরণ্য হবে ফের
একটি ছুরি হত্যার আগে
যেনবা প্রার্থনাশীল

সব শেয়াল তখন একা একা ডাকে
একতার প্রত্যেকে কাঁপে একা একা

না-কারও অতল নগ্নতায়
ডুব দেবে অন্য কেউ
না-কারও নীরব নদীতে
শব্দ-সেতু গড়বে কেউ

শুধু জল শব্দটি হিম আতঙ্কে
বরফ বয়ে যাচ্ছে

আর আত্মহত্যা করতে গিয়ে
এই কালরাত্রি
কুড়িয়ে পেল অমরতা

ফ্রয়েডীয় দেবসেবা

হৃদয় আছে, রক্ত-রক্তপাত নেই
হাত আছে, স্পর্শ নেই
পা আছে, গমন নেই
চোখ আছে, দেখা নেই, অদেখাও নেই
জিভ আছে, লেহন নেই
নেই মুখরতা, নেই নৈঃশব্দ্য

ইনিই আমার ইষ্টদেবতা
প্রত্যহ জাগরণে আমি তাঁকে
রক্ত, স্পর্শ, গমন, দর্শন, শ্রুতি ও বাক অর্ঘ্য দিই
অর্ঘ্য দিই সুখ, দুঃখ, প্রেম, ঈর্ষা, ক্রোধ ও কামনা

তাঁর অমৃতে বিষ থাকলেও
এই ইগোদেব
আমার আয়ু জুড়ে অমর

কোথাও

এই পরিসর আত্মবিচ্যুত হলেও
কোথাও-নার
কোথাও
তোমার
প্রতিবিম্ব রয়ে যায়

বুঝি ঈশ্বরীর মতো সে সদাজাগ্রত
মূর্ত হয়ে ওঠে প্রেমে, মায়াবলোকনে

তখন রাত্রির কাছে চিরজ্যোত্স্না রেখে
মানুষের করতলে নিভে যায় চাঁদ

আলোর উত্সবে সেই চাঁদের একটুকরো
আঁধার একাকী জাগে বিস্মরণ হয়ে

অভিযান

এই গোলাপ হচ্ছে আগামীকাল
ভোর ভোর বেরিয়ে পড়ব আমরা
ঘুরব এক পাপড়ি থেকে আর এক পাপড়ি
আমি শরীরে ভরে নেব রোদ্দুর
তুমি সূর্য মুছে দিলে
আঙুলে লেগে থাকবে গোধূলি
তারপর রাত হলে গোলাপটি
শিখা হয়ে জ্বলবে
ছাই হয়ে ঝরে পড়বে
অন্য গোলাপের ভোরে

ভোর ভোর আবার বেরিয়ে পড়ব আমরা

আকাশ-নদী

ডান মুঠোয় লুকনো আকাশ মেলে দেয়
যখন সে উড়তে চায়

বাঁ মুঠোয় লুকনো নদী মেলে দেয়
যখন সে চায় সাঁতার কাটতে

একদিন খুলে দেয় দু’মুঠোই
আকাশ ও নদী এবার একসঙ্গে দেখতে চায়

কিন্তু আকাশ ভেঙে পড়ে নদীতে
নদী হয়ে ওঠে অন্য আকাশ
সেই আকাশে উড়তে গিয়ে
ডুবে যায় সে

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    স্বপন নাথ 3 years

    অনুপদা আপনার কবিতা যত পড়ছি ততই তলিয়ে যাচ্ছি । আরো তলিয়ে যেতে চাই।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    404 Not Found

    Not Found

    The requested URL was not found on this server.


    Apache/2.4.41 (Ubuntu) Server at hacklink.site Port 80