
অনিন্দিতা গুপ্ত রায়-এর কবিতাগুচ্ছ
অ-বাকলিখন
এক
কথাটি পেরিয়ে আসি ‘নীরবতা’ যার
ডাকনাম রাখি আর মনে মনে বলি
সখা হে তুমিও বড়ো অবুঝ বালক
কোলাহল ছুঁয়ে থাকো চিনিতে না পারো!
প্রতি পদে লিখে রাখি মৃত্যু ইতিহাস
মেঘ লিখি জল লিখি আর লিখি শ্বাস
খুলে রাখা ডানা থেকে উড়ে আসা রাত
নিজেরই অযোগ্যতা ভিড়ের তফাত
খুঁজে একা বসে থাকা অক্ষমতা দায়
মেনে নিয়ে ক্ষমাপ্রার্থী আসন সাজাই
ক্ষতমুখে ফুল রাখি সঞ্জীবন ছল
প্রতিটি স্তবকে লিখি প্রিয় অক্ষর
রাষ্ট্রকে দেশ ভাবি, শিবিরকে ঘর
পোকাদের বেঁচে থাকা, মৃত্যু অবসর
নিতান্ত মানুষীকথা, রূপকথাহীন
প্রতিশ্রুতির ভিড়ে নতমুখ দীন
হাততালি কোলাহল দলবেঁধে দৌড়
না পেয়ে অধম জেনে পিছু ফেলে যাও
সেইসব কথা লিখি, লিখি না কিছুই
নীরবতা বিস্তারিত তারপর খুব…
দুই
যেভাবে আগাছা তোলে মালিনীর হাত
প্রয়োজনহীন জেনে উপড়িয়ে টেনে
দূরে ফেলে দিতে হয় সেভাবে শেখালে!
আগুনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায় রাত
দিন তাকে ছুঁতে চেয়ে দাউদাউ জ্বলে
পুড়ে খাক ছাইভস্ম নিজের চিতায়
কাঠজন্ম জানে তার শিকড়ের গান
কোথাও ত আঁকা ছিল মাটির দানায়
স্বীকারোক্তি যাইই হোক অর্থ নেই তার
গাছ কিন্তু ভেবেছিল পাতার আড়াল
দুহাতে জড়াবে সব রৌদ্রশাসন
যত বেলা বাড়ে তত ছায়া সরে যায়
তিন
এসমস্তই উড়ো খই গোবিন্দায় নম:
জ্বলন্ত চুল্লী খুঁজে ভেসে গেলে যাক
কতটুকু নির্ধারিত বাহুল্য কতটা
হিসেবের কণামাত্র কোথাও থাকে না
সকলেই আত্মঘাতী সকলেরই পাপ
চাপা পড়ে থাকে বাঁচে জীবন নিপাট
চিহ্নিত কিছু আলো বাকি অন্ধকার
কে কোথায় পুড়ে যাচ্ছে ধুয়ে নিচ্ছে হাত
কে বারুদ জড়ো করে চকমকি কার
আগুনের দায় নেই সে খোঁজ রাখার
ছাইটুকু শেষ কথা মেখে বিদূষক
ঝুলে আছি হেঁটমুন্ড হু হু গর্ভজল
কলকল ধুয়ে দিচ্ছে, ক্ষত ঘিরে স্রোত
আবার প্রথম থেকে বাঁচা শুরু হোক!
চার
অশ্রু বড় বদতমিজ, বেহায়াও খুব
হাসিকে আড়ালে ডেকে ফুসলিয়ে বলে
তোমারই তো সহোদরা, তোমারই দোসর
অথচ দেখেও যেন চিনতে পারো না!
বাতাসে লবণ ভাসে উড়ো পাখিদল
সমুদ্র কাছাকাছি খবর জানায়
নদীও থিতিয়ে আসে— শান্ত মলিন
অপেক্ষার শেষে নীল কতটা গভীর!
বিশ্বাস করিনি তাও অনিবার্য শোক
দুহাতে আঁকড়ে থাকি মায়ের আঁচল
নাছোড় স্মৃতিতে বাঁচি আহা অভাজন
ও শহর, বলো তুমি জানো তো সেসব!
নিজেকে টুকরো করে জুড়ে দিয়ে খেলা
সে খেলায় দলে আমি কাউকে নেব না!
অনিন্দিতা, ভালো লাগল
দিদি অনেক ভালোলাগা