অজিত সিং বনাম অজিত সিং সপ্তম পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং সপ্তম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের সপ্তম পর্ব।

আগের পর্বগুলি পড়তে ক্লিক করুন — (১), (২), (৩), (৪), (৫), (৬)

15417632 – abstract white masks on wooden background

,

অজিত সিং ক্যামেরার সামনে বেশ নম্রভাবে বলছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকানো নিশ্চয় ঠিক না, কিন্তু এখানকার ছেলেমেয়েগুলো অধঃপাতে গেছে। বাংলার সবচেয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বাবা মা কি চাইবেন তারা এরকম ড্রাগ গাঁজা খাক, রাজ্যপালকে অসম্মান করা শিখুক। এরপর অজিত পচা আলুর উপমা দিল। একটা ঝুড়িতে যদি ভালো আলুর গাদায় একটা পচা আলু থাকে তবে পুরো আলুতেই পচন লাগে। বলতে গিয়ে একটু থমকাল অজিত। এটা কি আলু না আপেল হবে? আলু তো আমজনতার খাদ্য। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা তো মহার্ঘ্য আপেলের মতো। আপেল বলাটাই বেশি ভালো হত। মাঝে মাঝে অজিত একটু সংশয়ে পড়ে। সেই ভাষা কই, যা মানুষের একেবারে কলজেয় গিয়ে ঘা মারে? এর থেকে খাল্লাশ করা অনেক সহজ কাজ। সে তো চোখের পাতা না কাঁপিয়ে গুলি করতে পারে।অনেকদিন করেনি অবশ্য। নেতা হতে গেলে এসব কাজ আর নিজে করলে চলে না, নিজের একটা টিম তৈরি করতে হয়। সেই টিমকে দিয়ে কাজ করাতে হয়। সেটা না করাতে পারলে কীসের নেতা? এখনও যদি বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে মশার কামড় খেয়ে টার্গেটকে নজর করতে হয়, ছোঃ। তবু কেন জানি অজিত ওই দিনগুলো খুব মিস করে। কি থ্রিল ছিল! সেসব দিন ফিরবে না আর। পিংকির মতো। মোটাসোটা সুখী সুখী তেলতেলে মুখের পিংকি কেন চলে গেল, সেটা ভেবে এখনও কূলকিনারা করতে পারে না অজিত। পিংকি চলে যাবার পর থেকে আর বিয়ে করেনি সে। এখন তো ভাড়া বাড়িতে থাকে না , কত ফ্ল্যাট এ শহরে তার। বাইপাসে মোহরমালার ফ্ল্যাটের একটা চাবিও তার কাছে থাকে। মোহরমালা থেকে গ্রুপ ডি স্টাফ পারুল- সে ডাকলে কেউ না করব না। পারুল সাহা ডিপার্টমেন্টে বারোটায় ঢোকে আর তিনটেয় বেরোয়। যেটুকু সময় থাকে, সেটুকু মন দিয়ে টিফিন খায় আর ঘুমোয়। স্যার ম্যাডামদের টেবিল মোছা, গ্লাসের জল পালটে নতুন জল ভরে দেওয়া- এসব তার কাজ। কিন্তু সেসব করতে কেউ তাকে দেখেনি কখনো।অন্য স্টাফেরা আড়ালে ফিসফিস করে, স্যারেরা বিরক্ত, কিন্তু কেউ আজ অব্দি তার নামে রেজিস্ট্রার বা ভিসির কাছে চিঠি লিখতে পেরেছে? সবাই জানে পারুল সাহা নামটার ওজন আছে। অনেক কাজ পারুলকে ধরলেও হয়ে যায়, পারুল ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবে খবর। পারুল সাহা থেকে উঠতি টিভি তারকা রেশমী বিশ্বাস। জয় মা তারা সিরিয়ালে দু বছর কচি বউয়ের রোল করার পরই টলিউড থেকে ডাক এসেছে।তার আগে অবশ্য প্রডিউসারের সঙ্গে পাটায়া যেতে হবে। প্রডিউসারেরও আগে অজিত, কারণ এই যাদবপুর থেকে টালিগঞ্জ জুড়ে তার এলাকা। চারদিকে এত মেয়ে, তবু মেয়েগুলো যখন জামাকাপড় খুলে দাঁড়ায়, মৃত্যুর গন্ধ পায় অজিত। তখন সে কিছুই পারে না, কিচ্ছু না। মেয়েগুলো আবার জামা পরে নেয়। সেটাও সহ্য হয় না অজিতের। সে ওদের জামা খুলে টেনে হিঁচড়ে, আঁচড়ে, কামড়ে নেয়, মারে, তারপর কাঁদে দুহাতে মুখ ঢেকে। তখন এই মেয়েগুলোর বেশিরভাগই কাঁচা খিস্তি করে। সে খেঁদি, পেঁচি থেকে নুরজাহান –একই রকম খিস্তি করে। কিন্তু মোহরমালা একটু অন্য ধাতুতে গড়া। সে সহজে ধৈর্য হারায় না। সে জানেও অনেক। কীভাবে শান্ত হয়ে পুরুষকে বশ করতে হয়, তা তার নখদর্পণে। অজিতের অপারগতা দেখলে সে প্রথমে মা কিংবা দিদির মতো বোঝায়, এতে অজিতের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। তারপর তারা দুজনেই দুজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, অমন আনন্দ তাকে আজকাল কেউ দিতে পারে না, অমন আনন্দ আদায় করে নিতেও পারে না কেউ। কিন্তু মোহরকে পাওয়া মুশকিল।আর একটা ব্যাপার আছে। মোহরের বর। সে তো জ্যোতিষী। এ নগরের বড় বড় মাথা তার পায়ে পড়ে থাকে। অজিতের কোষ্ঠীও সে বানিয়েছে। মোহরের সঙ্গে রমণে মেতে ওঠার সময়, তার মনে হয়, মালটা যেন ঘরের কোণ থেকে তীব্র দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনে দুটো চোখ কোনদিন ভুলতে পারবে না সে। এক পিংকির চোখ, দুই আঙ্গুরবালা সর্দারের চোখ। আজকাল ভবানী চক্রবর্তীর চোখ দুটোও বড্ড জ্বালাচ্ছে তাকে। একবারই দেখেছে অবশ্য। তাতেই যেন ভেতর পর্যন্ত পড়ে নিল মালটা। কী যে দরকার ছিল ওর কাছে ছক করতে দেবার? মাঝে মাঝে এত কাঁচা কাজ করে ফেলে সে। কথায় বলে মেয়েছেলের বুদ্ধিতে চলতে নেই। নানাজী বলত, এমনি ঘরেলু মেয়ে তাও মন্দের ভালো, কিন্তু এই বাইরে চরে খাওয়া, বিচিওয়ালা মেয়েমানুষ, এগুলোর বুদ্ধিতে চলেছ কি সত্যনাশ করে ছেড়ে দেবে।এক শনিবার মোহরের ফ্ল্যাটে, যখন সে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন মোহর তার শিথিল লিঙ্গটি নিয়ে খেলতে খেলতে মায়াময় স্বরে বলে উঠেছিল ‘কেন যে বারবার এমন হচ্ছে? দাঁড়াও, ওকে দিয়ে তোমার একটা ঠিকুজি করিয়ে দেব।’ ঠিকুজি মানে জন্মের ছক, সেটা জানে অজিত। তার জন্মের সময় গ্রহ নক্ষত্র কোথায় কী ভাবে থেকে তার জীবন ঠিক করে ফেলছিল, একেবারে ট্রামলাইনের মতো সেই ধরেই তাকে যেতে হবে বরাবর, এমনি কিছু ভাসাভাসা মনে হয় তার। এর বেশি জানার আগ্রহ কোনকালে হয়নি। কিন্তু সব বড় বড় ঘরেই থাকে এরকম। জন্মপত্র বলে। তার মনে হল সেও তো কেউকেটা একজন। তার কেন থাকবে না জন্মপত্র? ঠিকুজির কথায় তার লিঙ্গ উত্তুংগ হয়েছিল, সে মোহরমালার ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলেছিল ‘আমাকেও বানিয়ে দাও, মোহর’ তার মনে হচ্ছিল, তার জন্মটা যেন কিছুই নয়, একটা স্রোতে ভেসে যাওয়া পাতার মতো চলেছে সে, কোথাও কূলকিনারা নেই, রাজা, মহারাজা, মন্ত্রীর ঘরে জন্মায়নি সে, দাদাজী ছিল এখানকার দারোয়ান, সে বাপ মার সঙ্গে বাদরিয়া গ্রামে থাকত, ধুলোপড়া জায়গা, গাঁ আর শহরের মাঝামাঝি।মা একেবারে অনপড়, কিন্তু মানুষটা সাদা, বাপ ঠিক তার উল্টো, মাতাল, মেয়েবাজ, পটনা শহরে যেত রংরলিয়া মানাতে মাঝে মাঝেই, টাকায় টান পড়তে মায়ের গয়না বিক্রি ধরেছিল, তাতে বাধা দিতেই মারধোর। চোরের মার খেতে দেখেছে মাকে অজিত। সে তো তেমন কিছু গায়ে হাত তোলেনি পিংকির। ভদ্র ঘরের আওরতদের মতো রাখার কসুর করেনি। তবু কেন চলে গেল সে? কেনই বা তার বাবা পার্টির পোষা গুন্ডা হয়ে গেল? পুলিশ তুলে নিয়ে গেল একদিন, হাজতে পিটিয়ে মেরে ফেলল, কোন বিচার হল না। দাদাজী ছিল ভাগ্যিস। তাই তো একটা জীবন … তার মনে হয় প্রথম থেকে জন্মপত্র বানানো থাকলে এমন হত না কখনো।

চ্যানেল বিপুল বাংলার জার্নালিস্ট মেয়েটা একটু বেশি ডেঁপো। এইরকম বুক আর পাছা নিয়ে এত কষ্ট করছে যে কেন? মেয়েটা খালি খালি জানতে চাইছে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকানোটা কার সিদ্ধান্ত, অজিত উত্তরটাকে কাটাতে কাটাতে হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেল। তার বংশে পচা আলুটা কে? বাবা? জার্নালিস্ট মেয়েটি, মনে মনে তার নাম দিল ছিপলি, নানান প্রশ্ন করছে আনসান, তার মধ্যে, অজিত নিজের বুকের ভেতর ডুব দিয়ে দিল, সে দেখতে পাচ্ছে তার গ্রাম বাদরিয়া, বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডান হাতে গেলে একটা তলাব, তলাবের একপাশে আমবন, অন্যপাশে অম্বা দেবীর মন্দির, সাদা পাথরের এই দেবী মূর্তি বাঙ্গালিদের দুর্গার তুলনায় একটু রাফ টাফ। এই মন্দিরটিই এ গ্রামের একমাত্র পাকা বাড়ি, এর বহু পরে স্কুলবাড়ি হবে দ্বিতীয় পাকা বাড়ি। সারাদিনে কত বার যে সে এই মন্দিরের কাছে ছুটে ছুটে আসত। বিশেষ করে গরমের দুপুরে, মন্দিরের পাথরের ঠান্ডা মেঝেতে শুয়ে শুয়ে সে নিজের মনে শূন্যে হাত উঁচিয়ে কত যে গুলি চালাত। এই মন্দিরের তলাবেই তার মা একবার ডুবে মরতে গেছিল, আগের রাতে বাবা যে শুধু খুব পিটিয়েছিল তাই নয়, তাদের লাথি মেরে বাড়ি থেকে বার করেও দিয়েছিল। সেই অন্ধকারে চোখ জ্বেলে জ্বেলে তারা দুজন এই মন্দিরেই এসে উঠেছিল। দেবীমূর্তির সামনের পাথরের রোয়াকে শুয়ে ছিল দুজনে। মা জাদুকরীর মতো আঁচল থেকে শুখনো রুটি বার করে খেতে দিয়েছিল, দুটো মোটে রুটি, কিন্তু সে একা খেতে চায়নি, মার সঙ্গে ভাগ করে খেয়েছিল, তারপর চবুতরার টেপা কল থেকে জল খেয়ে তারা ভরা আকাশের নিচে দাঁড়িয়েছিল। বাড়ি থেকে আসতে যত ভয় করছিল, এখানে এই সময় সে ভয় কোথায় হারিয়ে গেছিল। মনে হচ্ছিল, ওই আকাশ থেকে কেউ একজন তাদের খেয়াল রাখছেন, মন্দিরের মধ্যে থেকে অম্বা মাইয়া তাদের খেয়াল রাখছেন। তাদের কোন ভয় নেই। কেউ কিছু করতে পারবে না। জল খেয়ে এসে সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছিল, কোন দিক থেকে আর কোন বিপদের আশংকা করেনি। কিন্তু সে জানত না, বিপদ সবসময় বাইরে থেকে আসে না, ভেতর থেকেও আসে। রাত তখন কত হবে জানে না, পাশে হাত বাড়িয়ে মায়ের স্পর্শ নিতে গিয়ে মাকে পেল না। হাত যেন শূন্যতায় হাঁতড়ে ফিরে এল। দুতিনবার হাঁতড়ে না পেয়ে সে তড়াক করে উঠে বসে। যেসব বাচ্চারা কম বয়স থেকে অনেক কিছু দেখে ফেলে, যা তাদের দেখার কথা নয়, তাদের বিপদঘন্টিটা অনেক দ্রুত বাজে। পাপ্পু বুঝতে পারছিল, কিছু একটা খারাপ হতে যাচ্ছে। নাকি হয়েই গেছে? তার প্রথমেই ওই তলাবটার কথা মনে পড়ল। কী গহন জল। তার মনে ছলছল করে উঠল ভয়। সে লাফ দিয়ে দালান থেকে উঠোনে পড়ে, তারপর যেন গন্ধ পেয়ে ছুটে যায় তলাবের দিকে। সেখানে আধো অন্ধকারে সে দেখে মা ধীরে ধীরে জলে নামছে। মা তহরনা জানে না। এভাবে জলে নামার অর্থ একটাই- আত্মবিনাশ। যে জীবনটা মা কাটাচ্ছে, পশুরা এর থেকে ভালোভাবে বেঁচে থাকে। পাপ্পু মাকে এর থেকে ভালো কিছু দিতে পারবে কি? তবু সে চেঁচিয়ে উঠল ‘মা, নেহি নেহি মা’ তার মা, বিমলা দেবী ঘুরে দাঁড়াল, ওই একটি মাত্র কথায়, কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। পাপ্পু ততক্ষণে জলে নেমে গেছে, সে তো এই বয়সেই মাছের মতো তহরনা জানে। সে মাকে ধরে ধরে তুলে আনে ওপরে। আর সেই বয়সেই সে বুঝতে পারে, আত্মহত্যা করার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ অপেক্ষা করে পেছন থেকে একটা ডাকের ‘নেহি, নেহি’। পিংকিকে সেই ডাকটা কেন যে সে দিতে পারেনি? ব্যথাটা যেন খুব কাঁচা, বুক চিনচিন করছিল তার, হঠাৎ দেখল অমল কর দৌড়ে দৌড়ে আসছে, অমনি মাথায় বিপদঘন্টি বেজে উঠল। অমল ছেলেটা নড়াচড়াই করতে চায় না, সে দৌড়চ্ছে কেন? অমল হাঁফাতে হাঁফাতে এসে ওর কানে কানে এসে বলে ‘ ৪ নম্বর গেটে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। ওরা অনেকজন।

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes