স্রোত পর্ব -১৪ <br /> যশোধরা রায়চৌধুরী

স্রোত পর্ব -১৪
যশোধরা রায়চৌধুরী

সম্মান ও লজ্জা

“মহিলাদের ক্ষেত্রে “সম্মান” ও “লজ্জা” এই দুটি শব্দই একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সভ্যতার ইতিহাসে বহুযুগ ধরেই নারীর শরীর, ব্যবহার অথবা তার চিন্তাকে লজ্জা ও সম্মানের গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। নারিদের চলাফেরা, জীবনযাপনের স্বাধীনতা, ভাবপ্রকাশ এবং যৌনতার উপর এই সমাজ কাঠামো বিভিন্নভাবে তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়। যারা এই প্রথাগত ধযান ধারণার বাইরে গিয়ে ভাবতে চায় তাদের উপর নেমে আসে খোলাখুলি বিভিন্নরকম পুরুষতান্ত্রিক আক্রমণ।
একদিকে যখন বিজেপি সরকারের “স্বচ্ছভারত” অভিযান চলছে, তখন গ্রামীণ ভারতে ৭৫% মহিলা তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য এবং ঋতুচক্রকালীন প্রয়োজনীয় শারীরিক যত্ন সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন। ২৩% গ্রামীণ মেয়ে বিদ্যালয়গুলিতে যথাযথ বাথরুমের অব্যবস্থার জন্য তাদের ঋতুচক্র শুরু হবার পর বিদ্যালয়ে পড়াশুনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হওয়া সমাজের চাপে বাড়ির চাপে একটি মেয়ের কাছে দুঃস্বপ্নের মত হয়ে দাঁড়ায়। লজ্জা ঢাকতে তাকে কালো প্যাকেটে মুড়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়। আবার এই পুরুষতান্ত্রিক নিয়মই ঠিক করে দেয় কোথায় একজন মহিলার ‘সম্মান’ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। একজন মহিলা যখনই দাবী করেন যে তিনি যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে তার কন্ঠস্বর দাবড়ে দিয়ে বিপরীত দিক থেকে তাঁর দিকে উঠে আসে অনেকগুলি বিরুদ্ধতার আঙুল – “মেয়েটি কি ঠিকঠাক জামাকাপড় পরেছিল?” “মেয়েটি কি মদ্যপ ছিল?” “মেয়েটি কি কোন পুরুষের সঙ্গে ছিল?’ “মেয়েটির কি কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল?”
এই ধরণের প্রশ্ন নিয়ে আমরা নিজদের পরিচিত মহলে সালিশি সভা করতে বসে যাই। আমরা ভুলে যাই আমাদের এই ধরণের অমানবিক এবং পুরুষতান্ত্রিক মন্তব্য নিগৃহীতার উপর কতটা মানসিক চাপ সৃশটি করে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতিকে তার জন্য আরো প্রতিকূল করে তোলে। ঠিক একইভাবে ক্যাম্পাসে নীতিপুলিশই ঠিক করে দেয়, যে ক্যাম্পাসের ছাত্রীদের ব্যবহার ঠিক কেমন হবে। নিগৃহীতাকে এই ভাবে বারে বারে দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা আমরা ক্যাম্পাসে, পরিবারে, সংগঠনে বহুসময় দেখি, অবশ্যই এটি একধরণের “ ভিক্টিম ব্লেমিং”। সত্য ঘটনা যাচাই করা আমাদের কাজ নয়। বরং চলুন, এই সম্মানের সংস্কৃতি, লজ্জার সংস্কৃতি এবং ধর্ষণ-এর সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একজোট হই। এই ক্যাম্পাসটিকে লিঙ্গবৈষম্যহীন করে তোলার দিকে আরো এক পদক্ষেপ নিই।
এই লেখাটা অলক্তিকারা সবাই মিলে ড্রাফট করে একটা সাদা কাগজে ছেপে ফেলেছে। ছেপে লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এদিক সেদিক। এটা স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্যাম্পেনের কয়েকদিন পরের ঘটনা।
তার আগে পিছে আরো অনেক কিছু ঘটেছে। লিফলেটগুলো বিলি করতে করতে ওরা নানারকম মানুষের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। মন্দ অনেক, ভালোও অনেক। কাগজে কাগজে পোস্ট এডিট লেখা হয়েছে অনেক এই বিষয়টা নিয়ে।
এমনকি ঘটনাটাকে ল্যাম্পুন করে, ফেসবুকে একটা কবিতা লেখা হয়েছে, বার বার শেয়ার হয়েছে যাঃ

.কেন এত ঢাক-ঢাক গুড়-গুড়, যৌনতার মত
প্রাকৃতিক বিষয়ে?—বলে, যাদবপুর! কী বলব তাকে?
—দেব ধিক্‌? …লাভ নেই!–অর্ধশতাধিক বছর,
কাটিয়ে, ত দিলেম! –দেখলাম, বাড়েই, ধিক্‌-ধিক্‌
আঁচটি—ধিক্কারে—‘শেম্‌ শেম্‌’! –কমে না।–
-যেমন, আলোচনা যত হয়, নিয়ে যে-বিষয়
— বাড়ে সেটা!—ধর্ষণ, দেখছ না, ক্রমবর্ধমান!
—সুনিশ্চয় জেন, এ ধর্ষণবিষয়ক আলোচনা-সমালোচনারই সুফল!
—চাইছ কি, আরও হোক্‌, মর্দন, মলেস্টেশন্‌, নারী?
…তবে আরও স্যানিটারী ন্যাপ্‌কিন্‌ টাঙাও, নিশান!
—রক্তমাখা! খ্যাপাও, ষণ্ডকে!
—রাত-দিন! ডাক’ মাছিদলে!
—সব ঢাকা আজাড়িয়ে!–গোপন পাত্রের!
–অন্ধকারে সঞ্চিত মধুর! –মাথা খাও, তরুণ ছাত্রের!
…কোথা মধু?—হায়!—ভেলি-গুড়!..

এই লেখাটা লিখেছেন অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র।
চার পাঁচদিন পর, ‘দিশা’ নামে যে বাজারি পত্রিকাটা নিয়মিত মেয়েদের স্তন সুন্দর করে তোলার টোটকাটা, ফর্মুলাটা, এটা,সেটা, ছাপে, তাদের একটা পুরস্কার সভা ছিল, কলকাতার সবচেয়ে দামি হোটেলের বলরুমে।
বলরুমে সাজসজ্জা, আলো, সব থমথম করছিল সেই মহতী সভায়। বাংলা সংস্কৃতির প্রবলতম শক্তির দাপটে নীরব হয়ে গেছিল এসি-র গুনগুনও।
অসংখ্য উপস্থিত অতিথি সকলেই বাংলার ক্রিম অফ সোসাইটি। মহার্ঘ শাড়ির খসখস , ভাল খদ্দরপাঞ্জাবির রঙ আর ধবধবে ধুতি ও পাজামার ঝলক। সব নিয়ে, জমজমাট।
সাংস্কৃতিক জগতের মানুষরা সেদিন স্থির শান্ত ও নীরব হয়ে শুনছিলেন বক্তৃতা। সেই বক্তাও এক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিত মানুশ। এই বৃহৎ কর্পোরেট কাগজের অনুষ্ঠানে ডাক পেয়ে অত্যন্ত সম্মানিত।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে বক্তা তৈরি করে এনেও, ভুলেই গেলেন পুরস্কৃত বইটি নিয়ে কথা বলতে।
বইটি সত্যি অর্থে অনন্য। এই প্রথম বাংলায় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেক্সুয়ালিটিকে দেখার ইতিবৃত্ত লেখা হল। সেদিনের পুরস্কার সভায় যিনি সভাপতি তিনি কিন্তু বইটির কথা বলতে ভুলেই গেলেন। তিনি খুব বিচলিত ছিলেন নিশ্চয়ই।
কী নিয়ে বিচলিত ছিলেন তিনি?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্যাম্পেন নিয়ে।
তাই তাঁর বক্তৃতায় নিন্দা উঠে এল। বললেন, আজকের প্রজন্ম কেন যেন মেতে উঠেছে এমন এক প্রতিবাদের ভঙ্গি নিয়ে, যা সে যুগের ইয়াং বেঙ্গলের গোমাংস আর গো –অস্থি ছোঁড়াছুঁড়ির চেয়েও বেশি তাজ্জব করে দেবার মত। আসলে লোকের চোখে পড়ার দৌড়ে, এই যুগের বিপথগামী তরুণ তরুণী, স্যানিটারি ন্যাপকিনের মত গোপন বিষয়কেও সর্বসমক্ষে তুলে এনেছে। কী প্রমাণ হয় এ দিয়ে? কিচ্ছু না। কিচ্ছু প্রমাণ হয়না এ দিয়ে। যে দেশের অগণিত সাধারণ মানুষ অন্ন সংস্থান করতে পারেনা, তাদের স্ত্রীদের হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দেবে কী করে?
এই অগণিত মানুষের কথা না বলে, কিছু ধনীপুত্রকন্যা মহার্ঘ স্যানিটারি ন্যাপকিনের আদ্যশ্রাদ্ধ করছে।
আমি শুধু বলি, ছিঃ।
নেমে গেলেন বক্তা। ভুলে গেলেন পুরস্কৃত বইটির কথা বলতে।
ঘরশুদ্ধু লোক নীরবে দীর্ঘশ্বাস মোচন করল। কেননা এখানে শব্দ করা, হাসা, হাই তোলা বা বায়ুনিঃসরণ করা অসাংস্কৃতিক হবার লক্ষণ।
কেউই লক্ষ্য করল না যে এমন এক স্যানিটাইজড , নির্বীজীকৃত পরিমন্ডলে, সম্মানিত সভাপতি নিজেই নিন্দা করতে গিয়ে “স্যানিটারি ন্যাপকিন”এর মত এক নিষিদ্ধ শব্দ উচ্চারণ করে ফেললেন।
তারো দিন কুড়ি পরে, আর এক বিখ্যাত কবি মলয় রায়চৌধুরী একটি কবিতা লিখলেন , এবং ফেসবুকে এটিও পোস্ট করলেনঃ
“স্যানিটারি ন্যাপকিন”
ভালোবাসা ওই মেয়েটির মতো যার
স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল ; মাসে
সাড়ে তিন দিন কাপড়ে শুকনো ঘাস
বেঁধে, পরে থাকতে হোতো ; বর্ষায়
ঘাস তো সবুজ, তখন কাপড়ে ছাই
মুড়ে, রক্ত শুষে রাখবার তরকিবে
চুপচাপ বইহীন একা বসে থাকা ।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty