
স্বপ্ননীল রুদ্রর কবিতা
কর্ষিত খেতের হরকরা
সারের গাড়ির চালক
কার গোয়াল বিবিক্ত করে পিঠে গোবর চাপিয়ে
ট্রাক্টর ঢুকিয়ে দিল টেরিকাটা ছোকরা ড্রাইভার?
চকরাবকরা জামা ঢুকে যাওয়া পেটে গিঁট দিয়ে
নতুন হিন্দি গানের শিস বেজে উঠল ঠোঁটে তার
‘দিলু শেখের ব্যাটা গো চাচা, বাপডা মাটি নিতেই
কর্জ্জ করে লেছে টেকটর, গোবরের কারবারি—’
এখন রোপণ কাল, গোবর সারের সন্ধানেই
পাড়া মহল্লায় ঘোরে ছোকরা, গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি
ঢুকে পড়ে মাঠে মাঠে কর্ষিত খেতের ডাক নিয়ে,
যেন পরম হরকরা, ঢেলেছে ঝোলা উপুড় করে—
ফিরে যাচ্ছে বিলি অন্তে, পিছনে ধুলোর মেঘ দিয়ে
তার শূন্য ঝোলা রিফু করে সময় ছুটছে জোরে।
আলুখেত
এলানো লাঙল আলে, মুখ খোলা সারের বস্তাটি
ধুলোমাখা চটির জটলা আধা-জলের বোতল
বেগুন গাছের গোড়া জুড়ে উঁচু করা ঢিপি মাটি
ছায়ার ভেতর সন্তর্পণে ঘোরে ডাহুকের দল
মাঠে দগদগে রোদ ফেলে রোগা কদমের তলে
মুখের খিল খুলে দিয়েছে রুদ্ধ কামিনের দল
পোড়া শরীরে অপরিসর ছায়ার প্রলেপ-বলে
খোলতাই হয় মজুরেরা, এবার জমিতে চল
সুষম বন্টন সার, মাঝে মাঝে কেটে রাখা নালা
গঞ্জের মহাজন পাঠাবে উন্নত আলুর বীজ
গৃহিণীর গয়না বন্ধক, যেন হবে ফয়সালা
স্বপ্নের যুদ্ধান্তে হয়ে যাবে সমস্ত ঋণ খারিজ
খেতের ধারে খাগবন
কাঁচা হাতের বিনুনি, ময়ূরকণ্ঠী নীল ফিতাটি
কোমর পর্যন্ত ঝুলে বালিকার সঙ্গে হেঁটে যায়
টিফিনবাক্স দুলিয়ে, ঘাস হামা দেওয়া পথ, মাটি
ছোট ছোট ফুলঝোপ ডাকে, ঘাস ফড়িঙ তাকায়
কচুরিপানার ফুল নির্জল জলায় তাবু গেড়ে
সাজিয়ে বসেছে তার নীলাভ সম্ভার, বিকিকিনি
ফিতাটি মুখ বাড়িয়ে ঝুঁকে পড়েছে বিনুনি ছেড়ে
কোন নীল নয়নাভিরাম, কার কাছে কে বা ঋণী
পাম্পে হাতমুখ ধুয়ে কৃষক পিতাটি আসে ফিরে
পেঁয়াজের ফালি ভাত ডাল সাজায় বালিকা, পাশে
শুকনো খাগের বন থেকে ঠোঁটে কুটো ছিঁড়ে ছিঁড়ে
পাখিদের নীড় নির্মিতির উড়াল চলেছে ভেসে…।
পাম্পসেট
আচমকাই ফুরলো ডিজেল আর কী অপার শান্তি
প্রজাপতি-অভীপ্সার মতো এসে বসল পাম্পসেটে;
ফুরনো জ্বালানির মেশিন— শাপে বর, দিব্যকান্তি
লাভ করেছে এখন ক্ষেতে সেই ভোর থেকে খেটে
খেটে খেটে গলা তুলে রক্ত, মাটিতে লাঙল ফাল
ফালে নেচে দু’পাশে গড়ায় স্বপ্নধারক মৃত্তিকা
আজন্ম তৃষ্ণার্ত মাটি ছুঁতে দূর থেকে বেসামাল
আল থেকে আল ফুটো করে ভাসছে জলের টিকা
এসেছে ক্ষান্তি শুভলগন, আহা প্রশান্তি পরম;
মেশিনে হাত বুলিয়ে বৃদ্ধ বসেছে ছায়ায় ঘেরা
থেমে থাকে বিড়ি ধরা হাত, দুচোখে দৃশ্য নরম
তেল আনতে গেছে ছেলে— দূরের বাজার দেরি ফেরা।
নলপথ ভ্রমণ
পলিথিন পাইপের গুচ্ছ ভাঁজ করে দড়ি বাঁধা
বাঁধন খুলে দিতেই আড়মোড়া ভেঙে কুণ্ঠাহীন,
খেতের আলের দূর্বাঘাসে গতকল্য ধুলোকাদা
গা মুখ ঘষে মুছে নিয়েছে, এবার সরস দিন
পাইপে পাইপ ঢুকে যাচ্ছে, দীর্ঘ হচ্ছে আয়তন
যেমন সাঁকো নির্মাণ— পৌঁছনো, সংযোগ, উপস্থিতি;
ভূগর্ভ থেকে রওনা হয়ে পাইপে চেপে ভ্রমণ
জল ভালোবাসে নল-পথ, খেতে খেতে বীজ-প্রীতি
কপিখেতের সামনে গর্তে সবেগে আছড়ে পড়ে,
টলমল টলমল করে রোদ-পড়া কাচের শরীর—
আল কাটো নিতাই মণ্ডল, ঘুরিয়ে তোমার ঘরে
নাও— তারপর পাঠাও সর্ষেখেত ঘেঁষে পুবে ধীর