শিবভুজঙ্গপ্রয়াতস্তোত্রের অনুসৃজনপ্রয়াস
শুভম চক্রবর্তী
১
গণেশ এমন যাঁর গণ্ডদেশ থেকে
নিরন্তর মদগন্ধী সুপবিত্র জল
প্রবাহে ভ্রমর হয় তুরীয় ব্যাকুল
গণেশ এমন যাঁর শুণ্ড সঞ্চালনে
মত্ত ভ্রমরের দল হয় যে চঞ্চল
গণেশ এমনই তাঁর অপার মহিমা
জগতের ত্রাণকার্যে তিনি নিরন্তর
অধিষ্ঠানকারী এক সাক্ষাৎ ঈশ্বর
গণেশের দাঁত যেন বাণের মতন
সেই মহাশক্তিধর দেব গণপতি
মহাদেব তাঁর প্রতি, পরমপ্রেমের
মহৎ আশ্রয় হয়ে করেন বিরাজ
বক্রতুণ্ড গজানন দেব গণপতি
তাঁরই ভজনা করা একমাত্র কাজ
২
আদি নেই অন্ত নেই অদ্বিতীয় জন
অথচ সবার আদি পরম কারণ
পরিমাপহীন তিনি তুরীয়, চিন্ময়
ব্রহ্মা আর নারায়ণ তাঁর অন্বেষণ
অনাদি সময় থেকে করে চলেছেন
সেই ব্রহ্মসনাতন বাক্যমনাতীত
শিবের ভজনা করি হয়ে একমন
৩
অনন্ত চিন্ময় শিব সমূহ তীর্থেই
সিংহাসনে বিরাজিত সুন্দর প্রকাশ
অঙ্গ তাঁর মনোহর মণিরত্নময়
জটার সর্পিল বাঁক আর নাগরাজ
চাঁদ, অগ্নি, গঙ্গা আদি নানান সম্পদ
তাঁর অঙ্গে নিরন্তর করে শোভা দান
মূলাপ্রকৃতির সেই দিব্যসহচর
পঞ্চবক্র মহাদেবে জানাই প্রণাম
৪
ঈশান, অঘোর, শিব, বামদেব আদি
পঞ্চব্রহ্মমন্ত্র আর ষড়ঙ্গ মন্ত্রের
নিরুপম মহিমায় ষটত্রিংশত
তোমার অনন্ত তত্ত্ব প্রকাশিত হয়
তত্ত্বের অতীত তুমি সনাতনজন
তোমাকে কেমন করে বলো জানা যায়
কে-ই বা জানতে পারে বিস্তৃত নিখিলে
৫
শিবের অর্ধেক দেহ নতুন পাতার
মতন রক্তাভ আর বাকি যতটুকু
ইন্দ্রের উজ্জ্বল মণি সম সমুজ্জ্বল
সেই একদেহধারী পরমতত্ত্বের
নিবিড় চিন্তন করি আমার অন্তরে
৬
হে শিব তোমার সেবা উপলক্ষ্য করে
সুরশ্রেষ্ঠ আর যত শ্রেষ্ঠ অসুরের
মুকুটে বিরাজ করা মান্দারের ফুল
গড়িয়ে গড়িয়ে যায় তোমার সেবায়
হে শিব কাণ্ডারী তুমি ভবসমুদ্রের
ভবানীর বিভাবনে তুমি অধিষ্ঠিত
তোমার চরণপদ্মে বিনত মস্তকে
তোমাকে প্রণাম করি সনাতন শিব
৭
হে শিব জগতপতি পার্বতীর নাথ
আমার আশ্রয় তুমি, শরণার্থীদের
কৃপা করো জানি তুমি, তুমি দয়াময়
তোমারই স্পর্শে সব বিপন্নজনের
বিপদের হেতু সব মূলে নষ্ট হয়
অখিলবান্ধব তুমি জ্যোতির্ময়জন
নিখিল ভুবনে গূঢ় পরম কারণ
বারবার তোমাকেই করি নমস্কার
হে শিব পরমব্রহ্ম জগতের সার
৮
হে শিব দেবেশ তুমি তুমি দেবতার
পরম আরাধ্যজন তুমি মৃত্যুঞ্জয়
তুমি হর সমূহের পরম কারণ
এইরূপে ভক্তিনত চিত্তে তোমাকেই
স্মরণ করব প্রভু ভোলা মহেশ্বর
প্রসীদ আমার প্রতি জগদীশ্বর
৯
তুমি বিরুপাক্ষ আর তুমি বিশ্বনাথ
বিদ্যাদি কলার তুমি মগ্ন অধীশ্বর
বেদের সমূহ সার ত্রিনেত্র তোমার
প্রসীদ আমার প্রতি হে জগদীশ্বর
পরিত্রাণ করো প্রভু কৃপাদৃষ্টি দাও
আমাকে রক্ষা করো, করো হে পোষণ
অপরাধ ক্ষমা করো দেব মহাদেব
আমার মধ্যে তুমি উদ্ভাসিত হও
মহাদেব তোমাকেই মনে করে করে
আমার অনেক নিশা যেন কেটে যায়
১০
হে শিব তোমায় ছাড়া প্রসন্নজনের
অন্য কোনো শরণের হেতুমাত্র নেই
তুমিই প্রসন্ন হও আমার ওপর
তোমাকে স্মরণ করি জানি তুমি ঠিক
ভক্তের দীনতাস্তূপে ধরাবে ভাঙন
দয়াময় যদি তুমি দয়াহীন হও
তোমার ভক্তের প্রতি তবে মহাদেব
তোমার বাৎসল্য যত ভক্তজনের
করুনাচিন্তন করে তা তো হানী হয়
অতএব দয়াময় তুমি মহাদেব
আমাকে প্রসন্ন হয়ে দাও হে আশ্রয়
১১
হে প্রভু জগৎনাথ মহাদানী তুমি
অন্য কারও কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না
তাই প্রভু দয়াময় এখন আমায়
শ্রদ্ধাভক্তি দান করো, তোমার চরণে
আমার অচল ভক্তি প্রতিষ্ঠিত হোক
তাতেই ধন্য হব এ-স্থির বিশ্বাস
১২
হে শিব জগৎপতি যদি পশু হই
তবু তো তোমার কাছে পরিত্যাজ্য নই
কারণ তারই পিঠে তুমি অধিষ্ঠিত
কলঙ্কিত বলে যদি দূরে ঠেলে দাও
তাহলে অন্যায় হবে কারণ হে শিব
কলঙ্ক মস্তকে তুমি দিয়েছ যে ঠাঁই
হে শিব আমাকে যদি কূট বিষধর
মনে করে থাকো তবে সে-ও তো তোমার
পবিত্র নীলাভ কণ্ঠে পেয়েছে আশ্রয়
সবার আশ্রয় যদি হও দয়াময়
আমাকে আশ্রয় দাও, আমি ধন্য হই
১৩
হে শিব অন্যের প্রতি দ্রোহ মনে স্থান
দিইনি কখনো তাই তুমি দয়াময়
দয়া করো আমাকেও কারণ হে শিব
শুনেছি স্ত্রীপুত্রদ্রোহী, পিতৃদোহীজন
পেয়েছে তোমার পুণ্য রাতুল চরণ
প্রসীদ আমার প্রতি জগৎকারণ
১৪
মহাদেব প্রভু আমি স্তুতি, ধ্যান, জপ
অর্চনার অনুষ্ঠান কিছুই জানি না
অনভিজ্ঞ ভক্ত আমি তুমি দয়াময়
ভীত মার্কণ্ডেয়র হয়েছ আশ্রয়
তাই আমি আশা নিয়ে তোমার চরণ
আশ্রয় করেছি তাই আর নাই ভয়
১৫
কণ্ঠে নীলাভা নেই অঙ্গে সর্পশোভা
দু-চোখে আগুন নেই হাতে নরমাথা
মস্তকে চাঁদই নেই বামে নেই জায়া
এমন ব্যক্তিকে আমি ইষ্টদেব বলে
কদাচিৎ কখনোই স্বীকার করি না
ছবি : রাজা রবি বর্মা।