
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
শুভদৃষ্টি
দুইটি উড়ন্ত চাকতি শূন্য থেকে অধিবৃত্ত পথে
এসেছিল কাছাকাছি। পরস্পর নাভিবিন্দু হতে
দূরত্ব যখন প্রায় সুনিশ্চিত শূন্য অভিমুখে
সহসা নীলাভ এক…কী যে হল বিদ্যুৎ ঝিলিকে!
অতঃপর অপসারী – যেরকম হয়ে থাকে…ক্রমে
দু’জন দু’মুখে আর মহাকর্ষ বলের নিয়মে
কোটি আলোবর্ষ পারে দেশ ও কালের অন্য দিকে
আরেক উড়ন্ত চাকতির সাথে দেখা চকিত ঝিলিকে।
পাক
মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফিরি পাড়ায় পাড়ায়।
কোথাও বিধুর
ময়রার দোকান। পিঁড়ি।
বেঞ্চি পাতা,
মাছি মন্ডা খায়…
ধুলোয় ঈশ্বর কোটি গুটিসুটি বাদামী কুকুর।
লোভের লালায় মজি সারাদিন।
লীলা হয় কী সঘন রসে-
মোদক একাকী ভাবে ভিয়েনের পড়ন্ত বয়সে।
কানাড়া
তালবৃক্ষে হাঁড়ি বান্ধা। রাত দু’পহর।
মধুমাস। সুবাতাস। পটোর পটোর
পাতা দোলে। খড়োঘর। আঙিনায় কারা
জোছনায় গান গান গায় চাঁদিনী কানাড়া-
পা-নাই গা-নাই ঊর্ধ্বে ধামার আকার
মেঘজাম কাঁড়ি কাঁড়ি রাঢ়ী কানাড়ার
নিঝুম বীরভূমবৃত্ত ঘুমের ভিতর
ফেলে শ্বাস। ভাদ্র মাস পটোর পটোর
পাতা নড়ে, তাল পড়ে সমে ঘুরে ঘুরে
আলোড়িত অন্ধকার অতল পুকুরে
ঢেউয়ের রহস্য…তার তালে তালে কারা
বরষার গান গায়…হাঁড়িয়া কানাড়া
বাদিত্র সর্পের শিস- রস-শ্রেষ্ট ইহা
দেহ নাশে শিঙ্গা বিধি, সানাইয়েতে বিহা।
রস
জ্যৈষ্ঠ গেল। বরষায় কাঁঠালের পিঁড়ি
আম্ররস আচ্ছাদিত। চারিধার ঘিরি
আসিল আষাঢ় মেঘ। মৃদুমন্দ ম’ ম’
বাতাসে আমের গন্ধ। নমো বঙ্গ নমো!
কত বর্ষ মজি নাই আহা বঙ্গ নাম
মজিনি কীর্তন ঢপে!…শোভাবিষ্ট গ্রাম
উঠোনে রসালো আমসত্ত্ব, রজো, তমো-
ত্রৈগুণ্যাবিষয়া অঙ্গ…নমো বঙ্গ নমো।
আষাঢ়, শ্রাবণ… ক্রমে ভাদ্রমাস গতে
লেপন করিয়া নিত্য পরতে পরতে
পুতের বাৎসল্য আর পতির শৃঙ্গার
সর্ব রসে রসনার স্বর্ণবর্ণ সার!
অন্ততত্ত্ব, বিশ্ব কয়, নাহি যার সম
বধূর মধুর রস, বঙ্গ নারী নমো।
সান্ধ্যগীতি
রাধিকাপ্রসাদ গীত বিস্মৃত সে সুর
ঝিঁঝিট-খাম্বাজ নাম, গ্রাম বিষ্ণুপুর।
আষাঢ়ে বরষা শুরু গুরু গুরু ধ্বনি
শ্রাবণে মৃদঙ্গ মেঘে মধুর শাওনি-
কল্যাণে মুখর শুনি মনে বনে কোণে
কে বাজায় মত্তবাঈ সান্ধ্য গ্রামোফোনে!
ভাদর তালের মাস পুষ্করিণী পাড়ে
আড়ে এক তাল কান্ড ঈষেৎ কুঁয়াড়ে
যখন পড়েছে সমে উথাল পাতাল
চক্রদায় ঢেউগুলি দেখি ক্ষণকাল
বৃত্তাকারে আসে যায়…কালক্রমে স্থির
পুকুর। উপরিতলে তখনো স্থবির
বাঁকানো তালের ছায়া, বাঙালার সাঁঝ
খঞ্জনী বাজিয়ে ধরে ঝিঁঝিট খাম্বাজ।
ভীষণ ভালো লাগলো। অপূর্ব।
খুব ভালো লাগল।অন্য রকমের ভাব ও ভাষার কবিতা।