“পিয়া বিছরল যদি কি আর জীবনে” <br /> সোনালী ঘোষ

“পিয়া বিছরল যদি কি আর জীবনে”
সোনালী ঘোষ

“অঙ্কুর তপন- তাপে যদি জারব
কি করব বারিদ মেহে |
এ নব যৌবন বিরহে গোঙায়ব
কি করব সো পিয়া-লেহে ||”

এই কী ইন্দ্রিয়বিলাস? চতুর্দশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দাঁড়িয়ে যে মানুষটি একথা বলতে পারেন তিনি কী অত‍্যাধুনিক নন। সময় কখনই একটি মানুষের মানদন্ড হতে পারে না।বয়ঃসন্ধিকালে দাঁড়িয়ে এক তরুণীর আর্তবেদনার রূপ দিতে একজন রাজসভা কবির বিন্দুমাত্র কলমে কৃত্রিমতার কালি চোঁয়ান নি বরং ‘সৈসব যৌবন দুহু মিলি গেলো”।

মানব মনের প্রবাহিত সূক্ষ্মভাবে অনুভূতি মন্ত্রমুগ্ধ হরিণের মতো দেখেছেন।কী সহজ কী সরল স্বাভাবিক ভাবের তুলি নিয়ে এঁকেছেন, হ‍্যাঁ আমি এঁকেছেন শব্দটি প্রয়োগ করতে চাই।শিল্পী যেমন রঙ তুলি দিয়ে নারীর দেহের প্রতি ভাঁজ রূপ ফুটিয়ে তোলেন তেমনই, তাঁর ভাব ভাষা ভঙ্গি সেই রূপকে বহমান ধারায় বইয়েছে। তাই তো সদ‍্য স্নানের পর রাধাকে দেখে কৃষ্ণের মনে হয় “মেহ ব‍রিখে জনু মোতিম হার”। যৌবনধন‍্য বিদ‍্যাপতি আদিরস উপাসকদের সামনে রাধাকৃষ্ণের জবানীতে এক নাগরিকের প্রেমবিলাসকে এডিট করে সাজিয়ে তুলেছেন।

কৃষ্ণ এবং রাধিকার যে ক্রমবিকাশ বিদ‍্যাপতি তার প্রতি পর্যায়কে উন্মোচন করতে কোথাও ভাবের আতিশয‍্যে ভেসে যান নি।বরং সিদ্ধ হস্তে তাকে পরিবেশন করেছেন। সাধারণ ভাবে বহু বৈষ্ণব কর্তারা প্রেমকে দেখাতে গিয়ে কোথাও আড়ষ্ট বা আধ‍্যাত্মবাদের সাহায্য নিয়েছেন। তবে বিদ‍্যাপতি সহজ সরল ভাবে কৈশোর উত্তীর্ণ ও সদ‍্য যৌবন প্রাপ্ত মানব মানবীর মন ব‍্যক্ত করেছেন। দৈহিক বর্ণনা যেভাবে পরিবেশিত করেছেন তা বোধহয় বর্তমান কবিরা এত সাবলীলভাবে ব‍্যক্ত করতে পারবেন না।

রাধা সদ‍্য যৌবন উত্তীর্ণ তার মনের ভেতর শরীরের ভেতর যে পরিবর্তন তার ইঙ্গিতে কবি জানান “সৈসব যৌবন দুহু মিলিয়া গেল”। পূর্ববর্তী কবি জয়দেবের রাধিকা পূর্ণযুবতী সেখানে কেবল নারীর মনস্তত্ত্ব, আর চন্ডীদাসের রাধা বড়ো বালিকা। সেখানে অনুভবী বিদ‍্যাপতি রাধার মনবিকাশ একটু একটু করে উন্মোচন করেন। পূর্ণ মানবী হওয়ার অনুকূল পরিবেশ তাকে দিয়েছেন । কৃষ্ণের চোখে সে বিলাস লক্ষনীয় “লখএ না পারিঅ জেড কনেঠ”।

সে যুগে দাঁড়িয়ে অতৃপ্ত কৃষ্ণ যখন বলে “সজনী ভল ক এ পেখল ন ভেল /মেঘ মাল সঁয় তড়িত লতা জানি/হিরদেয় মেল দেই গেল” এই যে রূপ তা সম্পূর্ণ দেহ নির্ভর। সত‍্যিই বিদ‍্যাপতি যৌবন ধন‍্য কবি। রাধার স্তনের সম্পর্কেও অকপট “কাম কম্ভুভরি কনক শম্ভু পরি/ ঢারত সুরধনি ধারা” এতে শিব বিগ্ৰহ উপস্থিত হলেও তাতে দেবত্বভাব বিন্দুমাত্র আগ্ৰহ নেই।

রাধার মনস্তত্ত্বে যে বিবর্তন তা যে কতখানি সাবলীল তা পূর্বরাগে প্রকাশিত।যত্রতত্র কৃষ্ণেকে দেখা যেখানে অতিরঞ্জিকতা নেই। দেহবাদ নিয়েও কিন্তু তার ছুঁতমার্গ নেই।

ধীরে ধীরে রাধার স্বাভাবিক ক্রমবিকাশ ও চাতুর্যতায় পটিয়সী হওয়া মানব জীবনের সরল পথকেই নির্দেশ করে। যেমন সকলের সামনে প্রেমিকে দেখার তীব্র ইচ্ছা এবং সেখানে দাঁড়িয়ে উপস্থিতবুদ্ধি প্রয়োগ করে, নিজের মোতিহার ছিঁড়ে দেয় সে তখন সবাই সেই মোতি তুলতে ব‍্যস্ত হলে কৃষ্ণকে দু’চোখ ভরে দেখে । এ নায়িকা যেন ধীরগতিতে শহুরে লাস‍্যময়ী, কৃষ্ণকে সে তার পরিব‌ত্তে টেনে আনছে তার সৌন্দর্য দিয়ে-

“হাথক দরপণ মাথক ফুল |
নয়নক অঞ্জন মুখক তাম্বুল ||
হৃদয়ক মৃগমদ গীমক হার |
দেহক সরবস গেহক সার ||”

লক্ষণীয় বিদ‍্যাপতি কোথাও দেহ অস্বীকার ক‍রে নি।আর পাঠকবর্গ সেই রূপজ আগুনে পতঙ্গের মতো ঝাঁপ দিয়েছেন।
প্রকৃতিকে গভীরভাবে লক্ষ্য করেছেন কবি তাই রূপের বর্ণনায় এসেছে নিঁখুতভাব।রাধার ভ্রু কন্দর্পের ধনু,ললাট অর্ধচন্দ্র, নাক গড়ুরের ঠোঁটের মত, স্তন বেল ড়া তাল বা কলসজয়ী, বাহু মৃণালের মত, কটি দেশ ডমরুজয়ী, নাভি সরোবরের পদ্ম, নিতম্ভ হস্তীকুম্ভ, আর মুখ তো বর্ণনাতীত। মন চোখ খোলা রাখলেই বুঝি এভাবে লেখা যায়।

এই যে একটি সৌন্দর্যের স্ফুলিঙ্গ তিনি জ্বালালেন তা পরবর্তীতে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে কবিদের মনে, যা আধুনিককালেও সমানধারায় বর্তমান আর ছাড়খাড় করে দিয়েছে প্রেমের ভূবন।

রাধা হয়ে উঠছে অকুতোভয়, যা প্রেমের বিকাশ আর ঘনঘোর বর্ষায় ‘নিসি নিহিঅর ভম ভীম ভুজঙ্গম” তবু তাকে ঠেকানো অসম্ভব। তাই সখীরা জানিয়েছে “মাধব করিঅ সুমুখি সাবধানে”
বর্ষার জলে মদ আছে তাতে প্রেমিক প্রেমিকা মাতাল হয় একথা ভোলেননি বিদ‍্যাপতি। যেভাবেই হোক সে প্রিয়া মিলনে উদগ্ৰীব তাই “সাওন সয়ঁ হাম করব পিরীত।/যত অভিমত অভিসারক রীত।।’
রাধা কিন্তু আত্মবিস্তৃত নয়।সচেতন নায়িকা তাই কৃষ্ণ সান্নিধ্য পেয়ে জানায় “হের ইতে ওমুখ বিসুরল সব দুখ এ নেহ কাহু জানি লাগি” এরাধা বাকপটু নাগরিক নায়িকা। বিরহ যাতনার সুতীব্রতায় কোনো কল্পনা নেই–
“এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর ||”
আধুনিক নারীদের সর্বলক্ষণ সে ধারণ করেছে। প্রকৃত প্রেমের পরিণতি যে বিচ্ছেদ তা কবি জানেন, তার চরমাবস্থা দ‍র্শাতে তিনি নিজেও ভেঙে পড়েছেন।

বার্ধক্যে আমরা অন‍্য বিদ‍্যাপতি পাই।নিজের অসমর্থে ধিক্কার জানান। অনুতপ্ত হয়ে শিবের শরণ নেন আবার মাধবকেও ভুলতে পারেন না

“মাধব বহুত মিনতি করি তোয়।
দেই তুলসী তিল দেহ সমর্পিলুঁ
দয়া জনি ছোড়বি মোয়।।”

একজন কবির প্রথম শর্ত তাকে দার্শনিক হতে হবে।সকল ঘটনায় নিজেকে জারিত করতে হবে, সর্বপরি মনস্তাত্ত্বিক হতে হবে আবেগঘন নয় তবেই লেখা স্বাভাবিক হবে, কৃত্রিম নয়।রাজসভার কবি হয়ে তিনি কখনো লেখায় কম্প্রোমাইজ করেন নি।আমল দেন নি সমাজ সংসার কী ভাববে, সমালোচনাকেও আমল দেন নি। কিন্তু বর্তমানে অনেক কবিরা যে এসব নিয়ে ভাবেন তা বলা বাহুল‍্য।
তবে কী আধুনিক সাহিত‍্য স্বাভাবিক ছন্দ মাধুর্যতা হারিয়ে ফেলে কৃত্রিম হয়ে যাচ্ছে?তাই বারে বারে গোপনে “শূন‍্য মন্দির”বিদ‍্যাপতিকেই লালন ক‍রছি ।

লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes