খুলে দাও <br /> সাদাত হাসান মান্টো <br /> অনুবাদ – অভিজিৎ লাহিড়ী

খুলে দাও
সাদাত হাসান মান্টো
অনুবাদ – অভিজিৎ লাহিড়ী

[“… আমার জীবনে সবচেয়ে বড়ো ঘটনা আমার জন্ম নেওয়া। পাঞ্জাবের এক অজ্ঞাত গ্রাম ‘সামরালা’-য় আমার জন্ম। আমার জন্ম-তারিখ নিয়ে যদি কারও আগ্রহ থাকার কথা তিনি আমার মা, দুর্ভাগ্যবসত আজ তিনি বেঁচে নাই। দ্বিতীয় বড়ো ঘটনাটি ঘটে ১৯৩১ সালে, যেবছর আমি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় পরপর তিন বছর ফেল করার পর উত্তীর্ণ হই। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৯৩৯-এ যখন আমি বিয়ে করি; তবে এটিকে আমি দুর্ঘটনা সেদিনও ভাবিনি, আজও মনে করি না। আরও অনেক ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটেছে যা আমাকে কষ্ট দেয়নি, বরং অন্যরা কষ্ট পেয়েছেন।উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমার কলম তুলে নেওয়া একটি বড়ো ঘটনা, যা “শিষ্ট’ লেখক ও ‘শিষ্ট’ পাঠক উভয়কেই দুখী করেছে।… “ সাদাত হাসান মান্টো-র জীবনে চতুর্থ যে বড়ো ঘটনাটির কথা না করলে তাঁর জীবন ও কর্ম অসম্পূর্ণ থেকে যাবে তা হলো দেশভাগ। মান্টোকে দেশভাগ ও দাঙ্গার শ্রেষ্ঠ কথাকার বলা হয়। সালমান রুশদি তাঁকে Undisputed master of modern Indian story বলেছেন। মান্টো স্বরচিত এপিটাফে কৌতূক করে লিখেছেন কবরে মাটির স্তূপের নীচে শুয়ে তিনি ভাবেন, কে বড়ো গল্পকার--- ভগবান না তিনি স্বয়ং ! তবে মান্টো তাঁর জীবদ্দশায় প্রাপ্য সম্মান কখনওই পাননি। বদনাম,অপমান, দেশত্যাগ,অশ্লীলতার অভিযোগ, অভাব-অনটন আমৃত্যু তাঁকে তাড়া করেছে। তবে কোনো কিছুই তাকে টলাতে পারেনি, বরং প্রতিটি অভিঘাত যেন আরও তীব্রভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁর লেখায়। একজন লেখক তখনই কলম ধরেন যখন তাঁর সংবেদনশীলতা বা অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মান্টোর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। দেশভাগ তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। দেশভাগের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল মানুষের হাহাকার, দাঙ্গার বীভৎসতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প তাঁর গল্পে ঘুরেফিরে এসেছে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে মান্টো এখনও ততটাই প্রাসঙ্গিক যতটা ছিলেন দেশভাগের পরবর্তী দিনগুলোতে। সাদাত হাসান মান্টোর জন্ম অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের সামব্রালায় ১৯১২ সালে, এক কাশ্মীরি পরিবারে। বাবা ছিলেন অমৃতসর কোর্টের আইনজীবী। স্কুলশিক্ষা অমৃতসরে। তৃতীয়বারের চেষ্টায় স্কুলের গন্ডি পার হন এবং মজার ব্যপার, আগের দুবারই তিনি উর্দুতে অকৃতকার্য হন, পরবর্তীকালে যে-ভাষায় লিখে তিনি জগৎজোড়া খ্যাতি পাবেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল না, বেশিদূর অগ্রসরও হতে পারেননি। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ১৯৩৬-এ চলে আসেন বম্বেতে। সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু, জড়িয়ে পড়েন বলিউডে চিত্রনাট্য লেখার কাজে। মাঝে অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র চাকরি নিয়ে আসেন দিল্লিতে, কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তার সঙ্গে বনিবনা না-হওয়ায়, এক বছরের মাথায় আবার ফিরে আসেন বম্বেতে। দুই দফায় (১৯৩৬-৪১ এবং ১৯৪২-৪৮) এগারো বছর বম্বেতে ছিলেন এবং এটাই ছিল তাঁর জীবনের সেরা সময়। ‘মহম্মদ ভাই’, ‘বাবু গোপীনাথ’, ‘বু’, ‘১০০ ক্যান্ডেল পাওয়ার কা বাল্ব’ এবং ‘মোজেল’-এর মতো গল্পগুলো এই সময়ের ফসল। পার্টিশনের পর ১৯৪৮-এ চলে যান পাকিস্তানে, থিতু হন লাহোরে এবং জীবনের শেষ সাতটি বছর সেখানেই কাটে। পাকিস্তানে তাঁর জীবন সুখের হয়নি; স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা,হতাশা, চরম দারিদ্র্য ও বঞ্চনা ছিল তাঁর শেষ কয়েক বছরের সঙ্গী। তাঁকে অভিযোগ করতে শোনা যায়, পাকিস্তানে তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাননি। প্রিয় শহর বম্বে ছাড়ার দুঃখ আমৃত্যু তাঁর পিছু তাড়া করে ফিরেছে। তিনি নিজেকে বলতেন ‘বম্বের চলমান ভাষ্যকার’। নতুন পরিবেশের সঙ্গে তিনি মানিয়ে নিতে পারেননি। মৃত্যুর আগে তিনি আবার ভারতে, প্রিয় শহর বম্বেতে, ফিরে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জীবনের অনেক ইচ্ছার মতো এটিও অপূর্ণ থেকে যায়। তবে পাকিস্তানে জীবনের সাত বছরে তিনি ‘টোবা টেক সিং’, ‘ঠান্ডা গোস্ত’, খোল দো’ ও ‘কালি সালওয়ার’-র মতো বিখ্যাত গল্পগুলো লিখে যান। ১৯৫৫ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে সিরোসিস অফ লিভারে তিনি মারা যান। তেতাল্লিশ বছরের স্বল্প জীবনে বাইশটি গল্পগ্রন্থ, একটি উপন্যাস, পাঁচটি(মতান্তরে সাতটি) বেতারনাটকের সংকলন, দুটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ, তিনটি প্রবন্ধ সংকলন ও সিনেমার জন্য বেশ কিছু চিত্রনাট্য লিখে যান। ]

অমৃতসর থেকে দুপুর দুটোয় ছেড়ে ট্রেনটি আট ঘণ্টা পর মুঘলপুরা পৌঁছল। পথে ট্রেন থামিয়ে অনেককে হত্যা করা হলো। জখম হলো বহু, হদিশ মিলল না আরও অনেকের।

সকাল দশটায় জ্ঞান ফিরলে সিরাজুদ্দীন নিজেকে আবিষ্কার করল ক্যাম্পের ঠান্ডা মেঝেতে শায়িত অবস্থায়। চারদিকে স্ত্রী-পুরুষ আর বাচ্চাকাচ্চাদের চিৎকার-চ্যাঁচামেচি,ধাক্কাধাক্কি। সে চিন্তাশক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলল, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ধূসর আকাশের দিকে। ক্যাম্পের হট্টগোলের মাঝে বুড়ো সিরাজুদ্দীনের কানে যেন তালা লেগে গিয়েছিল। সে কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না। তাকে দেখলে হয়তো কেউ ভাববে সে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। আসলে তার সমস্ত চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছিল। তার আস্তিত্ব যেন ঝুলে রইল শূন্যতায়।

শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার চোখ পড়ল সূর্যের ওপর। প্রখর সূর্যের আলো যেন তার অস্তিত্বের প্রতিটি শিরা-উপশিরাকে উজ্জীবিত করে তুলল, সে সংবিৎ ফিরে পেল। বেশ কিছু ছবি ভেসে উঠল তার মনে – লুটপাট…অগ্নিসংযোগ…দৌড়দৌড়ি…স্টেশন…গোলাগুলি…রাত আর শাকিনা… সিরাজুদ্দীন হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো তার চারপাশের জনসমুদ্রে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল।

তিন ঘণ্টা ধরে ক্যাম্পের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত “শকিনা…শাকিনা”চিৎকার করে চষে ফেলল কিন্তু তার একমাত্র যুবতি মেয়ের সন্ধান কোথাও পেল না। চারদিকে চরম বিশৃঙ্খলা,কেউ নিজের বাচ্চাকে খুঁজছে, কেউ-বা তার স্ত্রী,মা অথবা মেয়েকে খুঁজে চলেছে হন্যে হয়ে। সিরাজুদ্দীন হতাশ হয়ে এক কোণে ধপ করে বসে পড়ল আর ভাবতে চেষ্টা করল শাকিনার সঙ্গে ঠিক কবে আর কোথায় তার ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। কিন্তু তার সমস্ত চিন্তা বারবার আটকে যাচ্ছিল একটি দৃশ্যে– শাকিনার মায়ের লাশ…পেট থেকে সব নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছে। সে আর কিছু চিন্তা করতে পারছিল না।

শাকিনার মা আর বেঁচে নেই। সিরাজুদ্দীনের চোখের সামনেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু শাকিনা কোথায় ছিল যখন মরতে মরতে তার মা বলেছিল,”আমাকে ছেড়ে দাও, শাকিনাকে নিয়ে এখান থেকে পালাও তাড়াতাড়ি।“

শাকিনা তার সঙ্গেই ছিল, দুজনই পালাচ্ছিল। তাদের কারো পায়েই চটি বা জুতো কিছুই ছিল না। শাকিনার গা থেকে হঠাৎ ওড়নাটা পড়ে যায়। সিরাজুদ্দীন দাঁড়িয়ে সেটা তুলতে যায়, শাকিনা চেঁচিয়ে ওঠে,”আব্বু, ছেড়ে দাও!” কিন্তু সে ওড়নাটা তুলে নেয় মাটি থেকে। এই সব ভাবতে ভাবতে তার নজর পড়ল তার ফুলে থাকা কোটের পকেটের দিকে। পকেটে হাত দিতেই বেরিয়ে এল একটি কাপড়ের ফালি— শাকিনার ওড়না। কিন্তু শাকিনা কোথায়?

সিরাজুদ্দীনের ক্লান্ত মাথা আর কাজ করছিল না, তবু সে ভাবতে চেষ্টা করল। সে কি শাকিনাকে সঙ্গে নিয়ে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল? সে কি তাকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে চড়তে পেরেছিল? পথে দাঙ্গাবাজরা যখন ট্রেন থামিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছিল তখন কি সে জ্ঞান হারিয়েছিল? তার বেহুঁশ অবস্থার সুযোগ নিয়ে ওরা কি শাকিনাকে নিয়ে চম্পট দেয়?

সিরাজুদ্দীনের মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিন্তু কোনো উত্তর জানা ছিল না। একটু সহানুভূতি পেলে হয়তো ভালো হতো!চারপাশে কাতারে কাতারে মানুষ, সবারই একই দুরবস্থা, কে কাকে সহানুভূতি জানায়! সিরাজুদ্দীন কাঁদতে চাইল, কিন্তু চোখ থেকে এক ফোঁটা জলও বের হলো না। চোখের জল কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে!

ছয় দিনের মাথায় কিছুটা সামলে ওঠার পর সিরাজুদ্দীন কয়েকজন যুবকের দেখা পায় যারা তাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিল। আট জন যুবক ছিল ওই দলে। ওদের একটি লরি ছিল, বন্দুকও ছিল ওদের সঙ্গে। সিরাজুদ্দীন ওদের মঙ্গলকামনা করল আর শাকিনার চেহারার বর্ণনা দিল। “গায়ের রং ফর্সা আর খুব সুন্দরী…আমার মতো নয়, মায়ের রূপ পেয়েছে… সতেরো বছর বয়স…বড়ো বড়ো চোখ, ঘন কালো চুল…ডান গালে একটা বড়ো তিল…আমার একমাত্র মেয়ে। ওকে খুঁজে এনে দাও, খোদা তোমাদের ভালো করবেন।“

স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা সিরাজুদ্দীনকে আশ্বস্ত করল এই বলে যে শাকিনা বেঁচে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে খুঁজে এনে দেবে।

ছেলেগুলো চেষ্টা করল। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তারা অমৃতসরে গেল। বেশ কিছু মহিলা ও শিশুকে উদ্ধার করে তারা সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দিল। দশ দিন পার হয়ে গেল, কিন্তু শাকিনার হদিশ মিলল না।

একদিন হারিয়ে যাওয়া লোকেদের খোঁজে লরি নিয়ে অমৃতসর যাচ্ছিল তারা। ছেহারতা-র কাছে রাস্তায় একটি মেয়েকে দেখতে পেল। তাদের দেখে মেয়েটি ভয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করে। ছেলেগুলো গাড়ি থামিয়ে মেয়েটির পেছনে ধাওয়া করল।একটি খেতের মধ্যে তারা ধরে ফেলল মেয়েটিকে। মেয়েটি বেশ সুন্দরী এবং ডান গালে একটি বড়ো মাপের তিল আছে। একটি ছেলে বলে ঊঠল,”ভয় পেয়ো না…তোমার নাম কি শাকিনা?”

ভয়ে মেয়েটির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল, সে কোনো উত্তর দেয় না। ছেলেগুলো তাকে অনেক বুঝিয়ে কিছুটা আশ্বস্ত করে। মেয়েটির ভয় ভাঙলে সে জানাল যে সে-ই সিরাজুদ্দীনের মেয়ে শাকিনা।

আটটি ছেলে শাকিনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে থাকে। তাকে খেতে দেয়, দুধ এনে দেয়, তাকে লরিতে এনে বসায়। ওড়না না থাকায় তার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল, বারবার হাত দিয়ে তার বুক ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছিল। একটি ছেলে তার পরনের কোটটা খুলে দেয় তাকে।

এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়, সিরাজুদ্দীন শাকিনার কোনো খবর পায় না। মেয়ের খোঁজে বিভিন্ন ক্যাম্পে আর দপ্তরে চরকি কাটে, কিন্তু কোথাও সন্ধান মেলে না। রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে প্রার্থনা করে ছেলেগুলো যাতে তার মেয়েকে খুঁজে পায়। তারা তো তাকে ভরসা দিয়েছিল যে শাকিনা বেঁচে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে তাকে খুঁজে বের করবে।

একদিন সিরাজুদ্দীন ক্যাম্পে ছেলেগুলোকে দেখতে পায়। ওরা লরিতে বসেছিল। দৌড়তে দৌড়তে সে পৌঁছে যায় তাদের কাছে। লরিটি চলতে শুরু কারার মুখে সে জানতে চায়,”বাছা, তোমরা কি আমার শাকিনার কোনো খোঁজ পেলে?” ছেলেগুলো সমস্বরে বলে উঠল,”খবর পাবে, খবর পাবে।“ এই বলে তারা দ্রুত লরির বেগ বাড়িয়ে ওখান থেকে সরে পড়ল । বুড়ো সিরাজুদ্দীন আরও একবার ওদের সাফল্য কামনা করে দোয়া করল এবং নিজেও একটু হাল্কা বোধ করল।

সেদিন সন্ধ্যায় সিরাজুদ্দীন চুপচাপ বসেছিল, হঠাৎ ক্যাম্পে একটা গুঞ্জন শুরু হলো। চারজন লোক কিছু একটা বয়ে নিয়ে আসছিল। খোঁজ নিয়ে সে জানতে পারল, রেললাইনের কাছে একটি মেয়েকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। লোকগুলো তাকেই উঠিয়ে এনেছে। সে-ও তাদের পিছু নিল।

লোকগুলো মেয়েটিকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে ফিরে গেল।

কিছুক্ষণ সে হাসপাতালের বাইরে কাঠের খুঁটিতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ল হাসপাতালের ভেতরে। ঘরের ভেতরে কেউ ছিল না, একটা স্ট্রেচারে একটা লাশ শোয়ান ছিল। গুটিগুটি পায়ে সে এগিয়ে গেল লাশটির দিকে। হঠাৎ ঘরে আলো জ্বলে উঠল। লাশটির ফ্যাকাশে মুখে একটি বড়ো কালো তিল নজরে পড়ল তার, সে চিৎকার করে উঠল,”শাকিনা!”

যে ডাক্তার ঘরে আলো জ্বেলেছিলেন, জানতে চাইলেন,“কী হলো?”সিরাজুদ্দীন কাঁপাকাঁপা গলায় শুধু বলতে পারল,”আমি….আমি….আমিই ওর বাবা!”

ডাক্তার স্ট্রেচারে পড়ে থাকা লাশটির নাড়ি টিপে দেখলেন, তারপর জানলার দিকে ইশারা করে বললেন,”খুলে দাও”।

শাকিনার লাশ যেন হঠাৎ নড়ে উঠল ….

বেজান হাতটা সালোয়ারের দড়িটা খুলে ফেলল আর সালোয়ারটা টেনে নীচে নামিয়ে দিল। বুড়ো সিরাজুদ্দীন আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল,”বেঁচে আছে…..আমার মেয়ে বেঁচে আছে!”

ডাক্তার দরদর করে ঘামতে লাগলেন।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)