অম্লানকুসুম চক্রবর্তী-র গল্প ‘ ফ্যামিলি অ্যালবাম’
ফ্যামিলি অ্যালবাম
মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে যখন আমাদের প্রাইম মিনিস্টার ২১ দিনের লকডাউনের কথা টিভিতে বলল, তখন আমার বাবা চিৎকার করে বলে উঠেছিল, ইয়ে। বাবা যেই না ইয়ে বলল, আমার মাও চিৎকার করেছিল। কোল্ড ড্রিংকের ক্যান খোলার মতো গলায় মিশেছিল আনন্দ। বলল, ইয়ে। এটা বলে দুজন দুজনকেই জড়িয়ে ধরল। আমিও তখন টিভির সামনে ছিলাম। আমি সন্ধেবেলা ডব্লুডব্লুএফ দেখি। রিংয়ের মধ্যে ফাইটিং দেখতে আমার হেব্বি লাগে। সেদিন জোর করে খবরের চ্যানেল খুলে রেখেছিল ওরা। বাবা আমার মাকে জড়িয়ে ধরল যখন, বলল, বুকুন, তুমি চোখ বন্ধ করো। মা বলল, ইয়েস, শাট ইওর আইজ। আমি চোখ বন্ধ করলাম। জোর করে চোখ বন্ধ করা যায়। কিন্তু কান তো বন্ধ করার উপায় নেই। যদি করতে পারতাম তাহলে বেশ হত। মুয়াহ মুয়াহ করে কয়েকবার আওয়াজ শুনতে পেলাম। পনেরো কুড়ি সেকেন্ড পরে বাবা বলল, ওকে বুকুন। এবারে চোখ খুলতে পারো। চোখ খুলে দেখি বাবার গালে লাল লাল ছোপ।
গত এগারো বছরে যা হয়নি, সেদিন রাতে হল। মা বিছানা করে মশারি খাটিয়ে দেওয়ার পর আমি ওটা তোশকে গুঁজে দিচ্ছি। এটা আমি করি গত দু তিন বছর ধরে। হঠাৎ বাবা বলল, বুকুন, তুই তো বড় হয়ে গেছিস। আজকে পাশের ঘরে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়্। ক্লাস সিক্সে পড়িস। ক’জন আর এই বয়সে মা বাবার সঙ্গে শোয়? বি ইনডিপেন্ডেন্ট। আমি চুপ করে ছিলাম। মা আমার চিবুক নাড়িয়ে বলল, ভয় করছে নাকি, মাই প্রিন্স? এবারে আস্তে আস্তে বড় হতে হবে না? ডিনার করার পরেই মা আমার বিছানা করে দিল। পাশের ঘরের বিছানার জন্য একটা মশারি তো কিনে রাখাই ছিল ডিভানে। ওটা আমাদের গেস্ট রুম। কালেভদ্রে যখন কাকু কিংবা মাসীরা আসে, ওই বিছানায় শোয়। মা খুব তাড়াতাড়ি বিছানা করে দিল আমার। সাড়ে এগারোটার আগে কোনওদিনও শুই না। আমার বিছানা করে দিয়ে, এগারোটার সময়ই আমার ঘরের টিউবলাইটটা নিভিয়ে দিয়ে মা বলল, গুড নাইট বুকুন। বাবা বলল, সুইট ড্রিমস।
আমি তো সব বুঝি। বাবার গালে লাল রংটার মানেও বুঝি। তাড়াতাড়ি আমার বিছানা করে শুইয়ে দেওয়ার মিনিংটাও আঁচ করেছিলাম। প্রাইম মিনিস্টারের ভাষণ শুনতে শুনতেই বাবা বলে উঠেছিল, তানিয়া, ফ্রিডম, এবারে ভরপুর ফ্রিডম। ওয়ার্ক ফ্রম হোম। মানে আমি বাড়িতে। তুমিও। মা বলেছিল, উফফ, কতদিন পরে এতদিনের একটা ব্রেক নীলাদ্রি। বাবা বলল, সেলিব্রেশন। সুইগি করে অর্ডার দেওয়ার চল্লিশ মিনিটের মধ্যে কলিংবেল বাজিয়ে কমলা টিশার্ট পরা একটা ছেলে এসে একটা বিরাট বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে গেল হাতে। চিকেন বিরিয়ানি, মটন স্টিউ আর ফিরনি। ও হ্যাঁ, কোল্ড ড্রিংকও ছিল। আমাকে ক্যানটা দিয়ে বাবা বাকি দুটো ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিল। মাকে বলল, ডিনারের পরে বের করব। বুকুন ঘুমোক। আর একটু চিল্ড হোক। স্টকে আছে তো? মা ঘাড় নাড়াল। বাবার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ ব্লিঙ্ক করল কি?
এতটা পড়ে যাঁরা ভাবছেন সইফ আলি খান আর ক্যাটরিনার মতো আনন্দের ফাউন্টেনমাখা একটি ফ্যামিলি আমাদের, তাঁদের জন্য আমি একটা স্মাইলি পাঠালাম। স্মাইলি দিয়ে অনেক কথা বলা যায়। অনেক কিছু নাও বলা যায়। বাকিটা আপনারা বুঝে নিন। আমার ক্লাস সিক্স। আমি তো সবই বুঝি। আপনারা আমার থেকে অনেক বড়। আরও বেশি বোঝেন আই অ্যাম শিওর। যাঁরা ভাবছেন আমি তৈমুরের মতো ভাগ্যবান, তাঁদের জন্য আরও একটা স্মাইলি। আমার বাবা একটা ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ডিরেক্টর। বেডরুমে একটা বোর্ড আছে। বোর্ডের বাঁদিকে বড় বড় করে লিখে রাখে টিজিটি। তার মানে হল টার্গেট। মাসের ১ তারিখে সেখানে একটা লম্বা চওড়া নম্বর বসায়। ডানদিকে লেখে সি আর। এর মানে হল ক্রোর। আর প্রতিদিন সাড়ে নটা দশটা নাগাদ অফিস থেকে ফেরার পরে ডানদিকে এসিভি, মানে অ্যাচিভমেন্ট লেখাটার তলায় একটা নম্বর মুছে নতুন নম্বর লেখে। কোনওদিন কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শোনে। কোনওদিন ওই নম্বরটা লেখার পর কপালের ঘাম মোছে। আবার কোনওদিন ল্যাপটপ খুলে বিভিন্ন কোম্পানির পোর্টফোলিও দেখে। আমায় জিজ্ঞেস করে, টিউটর এসেছিল তো? অল ওকে? আমি মাথা নাড়াই। বাবা একটা স্মাইল দিয়ে কানে আরও ভালভাবে ইয়ারফোনের প্লাগগুলো সেট করে দেয়। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখি না কারণ মা তখন ল্যাপটপে অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর বলে একটা সফটওয়্যার খুলে, কোনও ছবি খুব জুম করে, মাউস নিয়ে এটা ওটা করে। অফিস থেকে সাতটা নাগাদ ফিরে মা আবার কম্পিউটার খুলে বসে। ও বলা হয়নি, আমার মাও একটা মাল্টিমিডিয়া হাউসের ডিরেক্টর। বাবা অফিস থেকে ফেরার পরে মা বাড়ির ওয়ার্কস্টেশন থেকেই একটা স্মাইলি দেয়। মায়ের কানেও বেশিরভাগ সময় ইয়ারফোন গোঁজা থাকে কারণ অফিসের লোকদের সঙ্গে কনফারেন্স কল করতে হয়। বাবা অফিস থেকে ফিরে আগে মাঝেমধ্যে বলত, স্ন্যাক্স আছে কিছু? মা প্রথমে ফ্রিজের দিকে একবার, তারপর মাইক্রোআভেনের দিকে আরও একবার পয়েন্ট করে দিত। এর মানে ফ্রিজ থেকে নিয়ে মাইক্রোআভেনে গরম করে খেয়ে নাও। বাবাকে এখন আর বলতে শুনিনা। দুজন দুজনকে স্মাইলি দিয়ে যে যার যার প্রাইভেট স্পেসে ঢুকে যায়। এই প্রাইভেট স্পেস কথাটাও মা-বাবার থেকেই শেখা। ডিনার টেবিলে যখন টুকটাক কথা হয়, কথার পিঠে কথা হয়, রিমোটে ভলিউম বাড়ানোর সুইচের ওপরে একটা ইঁট চেপে রেখে দিলে টিভির আওয়াজটা যেমন ক্রমশ বাড়তেই থাকে যতক্ষণ সেই আওয়াজ ফেটে না যায়, সেভাবে মা বাবার কথা এগোয় যখন, খেতে খেতে আমার বমি পায় যখন, তখন এই প্রাইভেট স্পেস কথাটা শুনি।
আরও ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে মামাবাড়ি গেলে, আমার দিদা, ফটো হয়ে যাওয়া দিদা বলত, অত গায়ে মাখিস না মা। পাশাপাশি দুটো বাসন থাকলে একটু আধটু ঠোকাঠুকি তো লাগবেই। মিলেমিশে থাকার চেষ্টা কর। মা নাকটা বেঁকিয়ে, মুখটা বেঁকিয়ে হুঁঃ করে একটা আওয়াজ করত। হঠাৎ করে কেন মনে পড়ল জানি না। আমি তো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ি। মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা স্কুল ফি, আমি জানি। একজন ম্যাডাম আছে। খুব স্টাইলিশ। ওয়েলবিইং বলে আমাদের একটা ক্লাস হয়। সপ্তাহে একটা। ম্যাডাম মাঝেমধ্যেই বলে, বাবা-মার পাল্স বোঝার চেষ্টা করবে। মনে রাখবে ওরা সবাই নিজেদের লাইফ নিয়ে ব্যস্ত। ওদের শুধু শুধু বিরক্ত করবে না। যে টাকা তোমাদের উপরে ওরা ইনভেস্ট করছেন, তার রিটার্ন দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর ও আই। মানে রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট। যাক গে। আমিও কোনও কারণ ছাড়া ওদের বিরক্ত করি না। সবাই নিজের মতো থাকি।
সেদিন ঠিক কি হয়েছিল জানি না। দুটো সোনা দিয়ে তৈরি, কিন্তু খাঁচায় বন্দি হয়ে থাকা টিয়াপাখি, না না টিয়া না, ম্যাকাও, হঠাৎ খাঁচার দরজাটা খোলা দেখতে পেয়েছিল কি? যাদেরকে প্রাইভেট স্পেস নিয়ে কামড়াকামড়ি করতে দেখে এসেছি এতদিন, হঠাৎ করে এতটা সময় পাওয়ায় জন্য কি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল সবকিছু? মাকে তো কোনওদিন বাবার দিকে এভাবে ছুটে যেতে দেখিনি। টিভিতে হট প্যান্ট ব্রেসিয়ার দেখলেই আমার যে মা চ্যানেল ঘুরিয়ে দিত পলকের মধ্যে, সেই মা তো আমাকে শাট ইওর আইজ বলেনি কোনওদিন। যাক গে। সব কিছু বুঝতে নেই। সব কথা বলতে নেই।
প্রাইম মিনিস্টারের কথাতে আমাদের স্কুলও বন্ধ। পরের দিন সকালবেলা সাড়ে আটটায় যখন পাশের ঘরের দরজাটা খুলে আমার মা-বাবা বেরোল, ততক্ষণে আমি ব্রাশ টাশ করে রেডি। অ্যালার্ম না দিলেও আমার ঠিক সিক্স ফর্টি ফাইভে ঘুম ভেঙে যায়। দেখলাম, ওদের দুজনেরই মুখ গোমরা। ঘর থেকে বেরিয়েই মা বাবাকে বলল, শোনো, আলমারির উপরে মাকড়সা হয়েছে কয়েকটা। ক্লিন করে রেখো তো যখন সময় পাবে। কাজের মাসি কাম রান্নার লোক কাল রাতে জানিয়ে দিয়েছিল ট্রেন বন্ধ হওয়ায় বারাসাত থেকে আর আসতে পারবে না এখন। মা বলেছিল, পয়সা কাটা হলে তখন কিছু বলতে এসো না আবার। মা বাবাকে বলল, শিটটা নিয়ে এসো। সেগ্রিগ্রেশন তো করাই আছে। তোমার নামের পাশে যেগুলো টিক মারা আছে, সেগুলো একটা একটা করে শুরু করে দাও প্লিজ। আমি একটা টিম মিটিংয়ে ঢুকে যাব আর দশ মিনিটের মধ্যে। বাবা বলল, আর আমার মিটিংগুলো কে করবে? আমার অফিস নেই? মা ঠোঁট উল্টোল। কাঁধটা যেভাবে ওঠাল তাকে শ্রাগ করা বলে।
ফ্ল্যাটের ব্যালকনির এক কোণায় ধুলো পড়ে যাওয়া যে ম্যাজিক মপটা শীতঘুমে ছিল বহুদিন, বাবা সেটাকে নিয়ে এসে বাথরুমে ধুতে লাগল। জল ভরল। ফিনাইল নিল। দুম করে একটা বাজে কথা বলল। স্ল্যাং। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল। মায়ের কানে হেডফোন গুঁজে রাখা ছিল বলে হয়তো মা সেটা শুনতে পারেনি। এর পর বাবা ফ্রিজ থেকে অনেকগুলো সব্জি বের করে পিলার দিয়ে সেগুলোর খোসা ছাড়াতে শুরু করল। সেটা করার সময় মাকে আবার একটা স্ল্যাং দিল। এর পর বাবা কানে হেডফোন লাগিয়ে ল্যাপটপ খুলে অফিসের কাজে বসে গেল। মা একটা ব্রেক নিয়ে রান্নাঘরে যাওয়ার সময় বাবাকে বলল, বুলশিট। বলল, মুড স্পয়লার। বাবা শুনতে পায়নি কারণ বাবা কনফারেন্স কলে অফিসের একটা লোককে বলছিল, আই গিভ ইট এ ড্যাম। টার্গেট না হলে আই উইল কিক ইউ আউট। রান্নাটা করে মা আবার কাজে বসে গেল। বাবাকে টোকা মেরে ওই শিটটা দেখিয়ে বলল, প্লিজ। অনেকগুলো পেন্ডিং আছে।
যে লোকদুটো ফ্রিডম বলে চিৎকার করে উঠেছিল কাল রাতে, তারা দরজা বন্ধ করার পরে এক্সেল শিট বানিয়েছিল। ঘরের কাজের চেকলিস্ট। আমি বুঝেছি। অনলাইন ক্লাসে ম্যামের লেকচারকে ছাপিয়ে আমার কানে গারবেজ ব্যাগে ময়লা ফেলার মতো এরকম কথা উড়ে আসতে শুরু করল ক্রমশ।
-আমি কি তোমার চাকর নাকি?
-অত জোরে চেঁচিও না। তোমার সিটিসির সঙ্গে এটা যায় না।
-আমার মাসে নব্বই হাজার না এলে তোমার ফুটানি বেরিয়ে যেত।
-দেড় লাখ পকেটে এলে তোমার ওই নব্বইয়ের উপরে আমি থুতু ফেলি।
-তিন বছর পর তোমার ডবল কামাবো। ওয়ার্দলেস।
-আগে কামিয়ে দেখাও। বিচ।
স্ক্রিনের মধ্যে থাকা ম্যাম বলে উঠতেন, কার ফোন থেকে এমন ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়াজ আসছে? মিউট, ইমিডিয়েটলি মিউট। আমারই দোষ। আমি কথা বলার পরে প্রায়ই মাইক্রোফোনটা মিউট করে দিতে ভুলে যেতাম। একই রকমের ঝগড়ার আওয়াজ পেতাম তানিয়া, দেবাদিত্য, শাক্যর বাড়ি থেকেও। প্রায়ই আসত। তিনশ টাকা কেজির ওয়াশিংটন আপেল দুভাগ করার পরেও যেমন দশ মিনিটে কালো হয়ে যায় আপেলের দুধ সাদা গা, ঠিক তেমন কালো হয়ে যাচ্ছিল সব কিছু। দুম করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাওয়া আমি পাশের ঘর থেকে প্রতি রাতে শুনতাম কর্কশ চিৎকার। ফুলদানি ভাঙার শব্দ পেতাম। মাথা ঠোকার শব্দও। যে মা আমাকে মাই প্রিন্স বলেছিল জাস্ট কদিন আগে, যে বাবা আমাকে মাই চ্যাম্পিয়ন বলে চুলে বিলি কেটে দিয়েছিল এই সেদিন, তাদের ঝগড়ার আওয়াজে আমার হুড়হুড় করে বমি পেত। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে আমি কাঁপতাম। কিন্তু কথাগুলো কানের মধ্যে ড্রিল করার মেশিনের মতো ঢুকে যেত।
-কে থাকবে তোমার সঙ্গে? জাস্ট বুকুনের জন্য আটকে রয়েছি।
-ন্যাকা। ওকে আনতে কে বলেছিল তোমায়?
-ওটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল। ড্যাম ইট। আই ওয়ান্ট মাই লাইফ।
-আমার লাইফ নেই? আমি কি বাচ্চা দেখার জন্য পয়দা হয়েছি নাকি?
-গেট লস্ট।
-ইউ টু।
মাঝরাতে কোনওদিন মা আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ত। কোনওদিন বাবা। ওদের হাতে হাত রাখতে আমার ভয় করত। সেদিন শাক্যকে ফোনে বললাম, আই হেট মাই মম্। শাক্য বলল, আই হেট বোথ।
বাবা আর মায়ের জুম মিটিংগুলো শুরু হয়ে আর শেষ হতে চাইত না। ওরা ঠিক করল, এ বার থেকে হোম ডেলিভারি। প্রথম দিন মা পে করবে তো পরের দিন বাবা। ঘর ঝাড় দেওয়া আর মোছাটাও বন্ধ হয়ে গেল কারণ মা বলত, এ সব ট্রিভিয়াল কাজ করার জন্য ভগবান আমাকে ডিরেক্টর করেনি। তুমি দুদিন মুছে বন্ধ করে দিলে কেন? হাউ ডেয়ার ইউ? বাবা বলত, ফুটো কোম্পানির ডিরেক্টর। তোমার ডবল কামাই। এসব ঘর মোছা-টোছার জন্য আমিও আসিনি দুনিয়ায়। প্রচুর ডিজপোজেবল থালা আর বাটি চলে এল অনলাইনে কারণ বাসন মেজে কারও কেরিয়ার গ্রোথ হয় না।
এতটা পড়ার পরে যারা ভাবছেন আমরা খুব দুঃখে আছি, তাদের জন্য আমি আবার একটা স্মাইলি পাঠালাম। ঘরে ধুলো পুরু হতে শুরু করল যখন, মা-বাবা একদিন হেসে উঠল। অনেক দিন পর। শ্যাওলা পড়ে যাওয়া বাথরুম থেকে মা-বাবা বেরনোর পরে ভিজে পায়ে মার্বেল মেঝের উপরে হেঁটে যেত যখন, দেখতাম, ওদের সঙ্গেই হেঁটে চলেছে সাদা পাথরে কালো পায়ের ছাপ। কাদা। আদিম মানুষের মতো। মা-বাবার ডাঁই করে রাখা, ছেড়ে রাখা জামাকাপড়গুলো ঘরের এক কোণায় জমতে জমতে পাহাড় হল যেদিন, ওগুলো থেকে আরশোলা আর কেন্নো বেরোতে শুরু করল যেদিন, আলমারির লকারটা খুলতেই যেদিন অনেক ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, নোটের বান্ডিল আর জুয়েলারির বাক্স থেকে ইঁদুর পচা একটা ডিওডোরেন্টের তীব্র ফ্রাগরান্স বেরোতে লাগল, সেদিন হঠাৎ বাবা আমার মাকে জড়িয়ে বলল, বুকুন, তুমি চোখ বন্ধ করো। মা বলল, ইয়েস, শাট ইওর আইজ।
ফাটিয়ে দিয়েছ হে। অভিনন্দন।
খুব ভাল। সময় পোড়ার গন্ধ পেলাম।