অজিত সিং বনাম অজিত সিং পর্ব ৪৯ <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং পর্ব ৪৯
তৃষ্ণা বসাক

৪৯

কাল রাত থেকেই শরীরটা কেমন যেন লাগছিল। ঘুমের মধ্যেও বুঝতে পারছিলেন গলা শুকিয়ে কাঠ, গা হাত পায়ে বিষ ব্যথা, সকালে উঠে দেখলেন জ্বর এসেছে। একটু অবাকই লাগল। বহু বছর এইসব অসুখ বিসুখ হয় না তো। জ্বর কত বছর পরে হল মনেই পড়ে না। উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু জ্বরের জন্যেই আজ খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে, এখন পারুলের আসতে দেরি আছে, তাই চা করার জন্যে উঠতেই হল। ওষুধ খাবেন। বিস্কুট খেয়েও ওষুধ খাওয়া যায়, কিন্তু সকালে চা না খেয়ে শুধু বিস্কুট খাওয়া যায় নাকি?
বিছানা থেকে নামতে যেতেই শরীরটা কেমন টলে গেল, খাটের বাজু ধরে সামলে নিলেন। কিঞ্জল অকাতরে ঘুমোচ্ছে। ও আজকাল অনেক রাত অব্দি জেগে কাজ করে, আগে নিজের ঘরেই করত, এখন এ ঘরেই টেবিলে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কাজ করে, তারপর অনেক রাতে শুতে আসে। ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারেন কিঞ্জল তাঁকে আঁকড়ে ধরে আছে কী জোরে। মার ওপর ওর নির্ভরতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, এতে খুশিই হওয়ার কথা মোহরের। আজকালকার ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকেই তো বাবা মার ধারে কাছেই ঘেঁষে না, আর কিঞ্জল পি এইচ ডি করে ফেলল, তবু মা মা করে। কিন্তু এতে খুশি না হয়ে বরং চিন্তিতই হয়ে পড়েছেন মোহর। বিশেষ করে গত মাস দুয়েক ও তাঁকে এইভাবে আঁকড়ে ধরেছে। আগের থেকেও। এখন শনিবার শনিবার ওকে ফেলে যেতে ইচ্ছে করে না একদম। আগে ওর এক উচ্ছল জীবন ছিল, বন্ধুরা ঘিরে থাকত ওকে, বাড়িতে পাওয়াই দুষ্কর ছিল। এখন কাজের বাইরে সে বাড়ি থেকে বেরোতেই চায় না। কেন? মোহর খুব গুরুত্ব দেননি ব্যাপারটিকে। হয়তো বয়ফ্রেন্ড ছিল, ব্রেক আপ হয়ে গেছে। এই বয়সের নর্মাল ব্যাপার। কিন্তু সেটা মানতেও মন সায় দ্যায় না তাঁর। বয়ফ্রেন্ড থাকলে কি তিনি জানতে পারতেন না? কে কবে প্রোপোজ করেছে, কোন স্যার কেবল ঝাড়ি মারে, কে কফি ডেটে নিয়ে যেতে চায়, তাঁর কাছে তো কোনদিন গোপন করেনি মেয়ে। কারো সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে গেলে ঠিক বলে দিত তাঁকে, এমনকি দেখাও করাত।
চা করে বিছানায় এসে বসেন মোহর, আরাম করে চা খান, যদিও মুখ বিস্বাদ হয়ে আছে। ওষুধটা খেয়ে নেন। আরেকটু ঘুমিয়ে নেওয়া যায়। ঘুমোলেই শরীর সুস্থ হয়ে যাবে। প্রচুর কাজ আজ অফিসে। আর তখনই তাঁর খেয়াল হয় আজ শনিবার। আজ তাঁর বাইপাসের ফ্ল্যাটে যাবার দিন। আর মনে হতেই উত্তেজনা নয়, একরাশ ক্লান্তি তাঁকে গ্রাস করে, কেন কেন যাবেন তিনি? রাস্তার একটা ছেলে, অশিক্ষিত গাঁওয়ার, তার সঙ্গে এভাবে দিনের পর দিন, মেয়েকে ফেলে…
নাহ আজ শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে। অফিস যেতেই পারবেন না। বেশ শীত শীত করছে, অফিসে বসে থাকতে পারবেন না এক মিনিটও। আজ প্রথম বুঝতে পারলেন, সত্যি কতটা ক্লান্ত তিনি। কত বছর ধরে টানা কাজ করে চলেছেন। এক হাতে সংসার, মেয়ে, অন্যহাতে চাকরি। না তাই শুধু নয়, তাঁর চাকরি তো দশটা পাঁচটায় নেই বহুকাল। জেলার কলেজ থেকে, কলকাতার কলেজ, সেখান থেকে ইউনিভার্সিটিতে, অ্যাকাডেমিক পদে সরে আসা- একজন মফস্বলের মেয়ের পক্ষে জার্নিটা আদৌ সহজ ছিল না। কত, কত মূল্য চোকাতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু যাই করে থাকুন, মেয়েকে অবহেলা করে কিছুই করেননি তিনি। মেয়ের জন্যে অনেক টাকা রেখে যাবেন, এমন ভাবাটাই আজকালকার দিনে বোকামি। তাঁর মাইনে ভালো, কিন্তু তা বাঁধা। ভবানীর উপার্জনের কোন আদি অন্ত নেই। তাই টাকা যথেষ্টই থাকবে মেয়ের জন্য। কিন্তু শুধু টাকা দিয়ে কারো ভবিষ্যত গড়ে দেওয়া যায় না।টাকার জন্যে তিনি আর চাকরি করেন না। টাকার প্রয়োজন আর বেশি মনে হয় না তাঁর।এই চাকরিটা করেন ক্ষমতার জন্যে। ভবানী একবার তাঁর কুষ্ঠী বিচার করেছিলেন। তাতে লেখা ছিল জাতিকা প্রতাপশালিনী হইবে।সেটা তো সত্যি হয়েইছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন, পার্টির ক্ষমতার অলিন্দের সব খবর তাঁর কাছে চলে আসে গরম গরম। আজকাল অনেক চাকরিপ্রার্থী তাঁর কাছে এসে দরবার করে। তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বেশ শ্লাঘা অনুভব করেন তিনি। মানে কাল অব্দি তো তাই করতেন।
আজ জ্বরতপ্ত মাথায় তাঁর মনে হল কী অর্থহীন এসব! কী ক্লান্তিকর। দিনের শেষে একটা পরিষ্কার বিছানা, স্বাদু খাবার আর কাছের একজন দুজন মানুষ- এর থেকে মানুষের বেশি কী–ই বা দরকার লাগে? তিনি কি সত্যিই কিঞ্জলের জন্যে ক্ষমতা চান? নাকি নিজের জন্যেই?
মাথার মধ্যে এসব চিন্তা দপদপ করতে করতে একসময় থেমে গেল। তিনি ঘুমিয়েই পড়লেন। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখলেন তাঁর বাইপাসের ব্যালকনিতে বসে তিনি কফি খাচ্ছেন।অজিত এসে পেছন থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরল। ওর কর্কশ শরীর অভ্যেস হয়ে গেছে তাঁর। বরং ওকে জাগিয়ে তোলার মধ্যে একটা উত্তেজনা, একটা কিক পান তিনি, যা এখন কোন পুরুষ দিতে পারে না তাঁকে।অজিত ওঁর কটি বেষ্টন করে বিছানায় নিয়ে যাচ্ছে, ওর পায়ের পাতায় চুমু খাচ্ছে পাগলের মতো, বিড়বিড় করে বলছে ‘তুম নে জিন্দিগি দি হ্যাঁয় মুঝে’ হঠাৎ কারা যেন দরজা ঠেলে ঢুকে আসে ঘরে, এসেই ঠাঠা ঠা করে গুলি করে, অজিতের রক্তমাখা শরীর উপুড় হয়ে পড়ে তাঁর শরীরে। রক্ত রক্ত, রক্তের গন্ধে বমি আসে তাঁর, আর তখনই তাঁর বুকের ওপর নেমে আসে সেই পা দুটো। গোলাপী ওড়না গলায় ফাঁস দিয়ে একটা শ্যামলা ভারি চেহারার মেয়ে ঝুলছে সিলিং থেকে, তার পা দুটি চেপে বসে তাঁর বুকে। দম বন্ধ হয়ে আসে তাঁর। তিনি চিৎকার করেন ‘না, না না’
‘কী হয়েছে মা? কী হল? এ কি! কটা বাজে! তুমি অফিস যাওনি আজ! একটা বেজে গেছে তো’
মুখের ওপর সেই পা দুটো তো না, কিঞ্জল, তাঁর আদরের কিঞ্জলের মুখ ঝুঁকে আছে। কিঞ্জলের কথায় তিনি ঘড়ি দেখেন, একটা কুড়ি। মা আর মেয়ে দুজনেই ঘুমিয়ে আছেন। পারুল এসে রান্না করে চলে গেছে, ভবানী কি বলে দিয়েছেন কী হবে রান্না?কিন্তু ভবানী তো কাল রাত থেকেই মন্দিরে।
যাক একটা বেজে গেছে। অফিস যেতে হবে না আর। বাইপাসের ফ্ল্যাটেও না। ফোন হাতে দেখলেন অনেক মিসড কল, মেসেজ জমা। কিন্তু অজিতের কোন কল নেই। খুব অদ্ভুত। কিঞ্জল ইতিমধ্যে কফি আর কুকিজ নিয়ে এসেছে দুজনের জন্যে। তার বানানো কফিতে জিভে স্বাদ ফেরে যেন। বালিশে হেলান দিয়ে কফি খেতে খেতে তিনি ভাবেন , কারা মারতে এসেছিল অজিতকে?
কিঞ্জল ওর টেম্পারেচার চেক করে ‘নাইন্টি নাইন। তুমি এত লোড নাও কেন মা? একদম রেস্ট করো’
তারপর ওর কফি নিয়ে জমিয়ে বসে বলে ‘একটু পরে সুপ বানিয়ে দেব তোমাকে।‘ তারপর হঠাৎ বুকের কাছে ঘেঁষে আসে।

-মা আমার কাছে এসে বোসো, আমার ভয় লাগছে।
-ভয় কেন সোনা, আমি তো তোমার কাছেই এসে বসেছি।
-তুমি আর কোথাও যাবে না বলো
-কোথায় যাব সোনা? আমি ছুটি নিয়েছি আজ।
-একটা কথা বলি? এই ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দাও, চলো আমরা দুজনে তোমার বাইপাসের ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকি।
বাইপাসের ফ্ল্যাটে! এ কথায় চমকে ওঠে মোহরমালা। তাঁর মাথার ওপর দুটো পা দুলে ওঠে, প্রতিটি আঙুলে কি চকচকে সবুজ রঙের নেলপালিশ ছিল? না নীল? এগুলোকে ফ্রস্টেড কালার বলে?
মোহর অস্ফুটে বলে ওঠে ‘ওগুলো কি ফ্রস্টেড কালার ছিল?’
‘কী বলছ মা? কীসের ফ্রস্টেড? তুমি তো নেলপালিশই পরো না।’
‘আমি পরি না সোনা। একজন পরে, পরত। সে ওই বাড়িটায় ঘুরে বেড়ায়। তাছাড়া অনেক পুকুর আর জলাজমি, অনেকের বাস্তুভিটে সব বুজিয়ে ওই ফ্ল্যাট। আমি ঘুমের মধ্যে টের পাই মাটি কেঁপে উঠছে।’
‘কী সব উল্টোপাল্টা বলছ মা? আমার কথা শোনো। এই বাড়িটা ছেড়ে দাও, এটা পচা।’
‘এমন কেন বলছিস সোনা? কোনদিন বলিসনি তো?’
‘তুমি কি শুনতে চেয়েছ? তোমার সময় ছিল শোনার?’
বলেই লজ্জিত হল কিঞ্জল।এমন কখনো হয়নি যে তার জন্য সময় ছিল না মার। বরং যা কিছু করেছে, এক হাতে সবসময় তাকে জড়িয়ে থেকেছে। কিন্তু ওই যে বলে না, সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ সব সময় হাতে থাকে না মানুষের। এটাকেই কি নিয়তি বলে? না, ওইভাবে ভাববে না কিঞ্জল, কিছুতেই না, সে কিছুতেই ওই লোকটার হাতের পুতুল হবে না। সে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে, ওই লোকটা মাকে হাতের পুতুল করে রেখেছে। একদম হিপনোসিস। মা বিশ্বাস করে এখান থেকে গেলে মার উন্নতি হবে না।
‘সরি মা, তুমি আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছ। আমিই বলতে পারিনি। আমার মনে হয়েছে তুমি বিশ্বাস করবে না সে কথা।’
‘কী কথা?’
চুপ করে থাকে কিঞ্জল। তখন একটা ফোন বাজে। ভবানী ফোন করছেন। কাল উনি মন্দিরেই ছিলেন, আজও থাকবেন।
কোন জানার আগ্রহ নেই, তবু মোহর বলেন ‘কেন? কোন বিশেষ কাজ?’
‘হ্যাঁ মারণ উচাটন যজ্ঞ করতে হবে, অনেক সময় লাগবে’
‘মারণ উচাটন!’ উচ্চারণ করতে গিয়েই কেমন কেঁপে যান মোহর।তাঁর মাথায় হঠাৎ আর একটা শব্দ ঝলসে ওঠে ‘অরিষ্টনেমি যজ্ঞ কেউ করতে ডাকেনি? বিশ্ব বিদ্যালয়ের ধবংসের দিন আসন্ন যে’
কিঞ্জল নাক মুখ কুঁচকে এতক্ষণ শুনছিল ওদের কথা। এবার সে শব্দ করে হেসে উঠল।
ফোনের ওপারে ভবানী শাস্ত্রী স্পষ্ট শুনতে পেলেন ওর হাসি। তিনি কর্কশ গলায় বললেন ‘তোমার মেয়েকে সাবধান করো মোহর। ও বারবার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, শুধু তোমার জন্যে এতকাল ওকে ক্ষমা করে এসেছি। কিন্তু এখন আর করব না। কারণ যে মাটি থেকে উঠেছ, সেই মাটিকেই তুমি অস্বীকার করছ। আজ আমি না থাকলে কোথায় থাকত তোমার এত বিবিগিরি, মফস্বলের কলেজে ঘষে যেতে আজ অব্দি।’
ভবানীর সব কথাই পাশে বসে শুনতে পাচ্ছে কিঞ্জল, মোহর কোন উত্তর দেবার আগেই সে ফোন কেড়ে নেয়, চিৎকার করে বলে ‘সীমা ছাড়ানো, ক্রসিং ওয়ান’স লিমিট, সেটা কার কাছে শিখেছি সেটাও বলুন মিস্টার ভবানী শাস্ত্রীজী, লোকের মারণ উচাটন করার আগে, নিজেরটাও করে ফেলতে হবে তাহলে’
মোহর চাপা গলায় বলেন ‘এসব কী বলছিস তুই? আফটার অল’
‘বায়লজিকাল ফাদার তো? আচ্ছা বলো তো মা, কোন বায়োলজিকাল ফাদার যখন একটা বাচ্চা মেয়ের মা না থাকার সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন স্ট্রিপ অফ করে তাকে, তার শরীর ভবিষ্যতের ভৈরবী হবার কতটা উপযুক্ত জানতে, তখন, তুমি, তুমি কী ভাবে কথা বলবে তার সঙ্গে? কোন টোনে? মা, তুমি, তুমি একটা সুস্থ পরিবেশ পেয়েছ বেড়ে ওঠার জন্যে, দুজন সুন্দর স্বাভাবিক মানুষকে বাবা মা হিসেবে পেয়েছ, যাদের কাছে মেয়ের সুখ, মেয়ের ভালো থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। আর আমি, আমি কী পেয়েছি? দুজন চরম লোভী, চরম উচ্চাকাংক্ষী মানুষ, যারা শুধু পরস্পরকে ইউজ করার জন্যে এক ছাদের তলায় থেকে গেছে, তারা আনফরচুনেটলি আমাকে পৃথিবীতে এনেছে। আমার কতবার মরে যেতে ইচ্ছে করেছে জানো তুমি? জানো, মা, ও মা?’
কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদে কিঞ্জল। মোহর ওকে বলতে পারেন না, ‘তুই, তুই আমাকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করালি সোনা? আমি কেরিয়ার করেছি ঠিকই, কিন্তু একদিনের জন্যেও তোকে চোখের আড়াল করিনি। তাহলে কখন এই স্কাউন্ড্রেল …’ শুধু তো যেবার মালদা শহরে তুমুল ঝড়ের পর ইলেকট্রিক পোস্ট উপড়ে টানা লোডশেডিং, ছোট্ট কিঞ্জল থাকতে পারছিল না, ওকে রেখে গেছিলেন, পিসিঠাকুমা ছিল তখন, অবস্থা ঠিক হতে নিয়ে গেছিলেন আবার, সে কত দিন? পনেরো দিন বড়জোর? তার মধ্যেই? আপাদমস্তক কেঁপে ওঠেন তিনি। মা হয়েও কোনদিন বুঝতে পারেননি তিনি! মনে হয়েছে বটে ভবানীকে দেখে কেমন সিঁটিয়ে যায় মেয়ে, বাবার কাছে যেতেই চায় না। তার কারণ হিসেবে তিনি ভেবেছেন, ভবানীর মধ্যে একটুও বাৎসল্য নেই, তিনি কখনো কাছে টেনে নেন নি মেয়েকে, আসলে ওঁর ইচ্ছে ছিল একটা ছেলের। দুএকবার বলেছে ‘একটা টাকা টাকাই নয়। একটি কন্যাসন্তান থাকলে সেই নারীকে কাকবন্ধ্যা বলা হয়। পুত্র সন্তান না হলে তুমি নারী হিসেবে সম্পূর্ণ নও মোহর। তাছাড়া আমাদের পিতৃপুরুষ জল পাবে না’
মোহর পাত্তা দেননি সেসব কথা। তার প্রতিশোধ এইভাবে নিয়েছে দ্যাট স্কাউন্ড্রেল?
তিনি বলেন ‘আমি তোকে জেলে দেব শয়তান! বল তুই কী করেছিস আমার মেয়ের সঙ্গে? বল? পুলিশ প্রশাসন আমার আমার হাতের মুঠোয়। বল তুই’
ওপাশে নৈঃশব্দ্য। শয়তানটা ফোন ছেড়ে দিয়েছে।
মোহর পাগলের মতো কিঞ্জলকে ঝাঁকান ‘বল, বল তোকে ঠিক কী করেছিল ওই কুত্তীর বাচ্চাটা। ডিড হি রেপ ইউ?’
‘রেপ করার দরকার কি মা? ও তো সারাজীবনের মতো পুরুষ সম্পর্কে ভীতি ধরিয়ে দিয়ে গেছে। ওর উদ্দেশ্য ছিল আমার মনোবল ভেঙে দেওয়া। প্রতিদিন ঘর বন্ধ করে আমাকে নগ্ন করে তন তন্ন করে দেখত উল্টেপাল্টে। কীসব লক্ষণ খুজত। আমি ভয়ে বলতে পারতাম না। আমি বমি করতাম খাবার দেখলে। পিসিঠাকুমা সন্দেহ করেছিল। বলেছিল ‘তোকে চিনি ভবানী। দুধের শিশুর কোন সর্বনাশ করছিস নাকি? ওর মা বিশ্বাস করে রেখে গেছে।’ তাই পিসিঠাকুমাকে প্রায় তাড়িয়েই দেয়। কিন্তু সেদিনই তুমি চলে আসো আমাকে নিতে। তাই হয়তো রেপটা করতে পারেনি।নইলে করত। আর মজা কী জানো? বিঘ্নেশের ফ্ল্যাটেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমি ভাবছিলাম কি আশ্চর্য মিল। সেদিন বিঘ্নেশ স্বীকার করেছে ওই লোকটাই ওকে করতে বলেছে এটা। বলেছে, আমার মতো সুলক্ষণা নগ্নিকাকে দেখলে ওর উন্নতির রাস্তা খুলে যাবে, ওর সিদ্ধিলাভ হবে।’
মোহরমালা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেন না, ‘মানে, বিঘ্নেশের ফ্ল্যাটে থাকার সময়?’ বলতে বলতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন তিনি।
‘তোকে হাজার বার বলেছিলাম, অচেনা কোথাও রাত কাটাস না। তুই বলতিস ও আমার ব্রো। হল তো?’
কিঞ্জল মার দিকে তাকিয়ে কেটে কেটে বলে ‘আমি শনিবারগুলো বাড়িতে থাকতাম কীভাবে বলো? ওই লোকটা তো এক এক শনিবার বাড়ি ফিরে আসত, আমি থাকতে একবার ফিরে এসেওছিল। আমি সারারাত দরজা বন্ধ করে ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম। আমার মামা মাসী কাকা পিসি কেউ নেই। বন্ধুরাই আমাকে দেখে এসেছে এত বছর। বিঘ্নেশের এত সাহস হবে না আমি শিওর ছিলাম। এত সাহস হয়ওনি দেখো তুমি। মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতা নিজের ভবিষ্যৎ জানা আর সেই টোপ ফেলে তাকে দিয়ে সব কিছু করানো যায়। বিঘ্নেশকে লোকটা এইভাবে ট্যাপ করেছিল। বলেছিল আমাকে যে নগ্ন করা হয়েছে, এটা যেন আমি জানতে পারি। এতে দুটো জিনিস হবে।
এক তো আমি, আমি, যার মনে শৈশবের ওই দিনগুলো গোপন ঘায়ের মতো লুকোনো আছে, আমি ভেবে নেব এটাই আমার নিয়তি। জন্মদাতা থেকে নিছক বন্ধু, সব পুরুষ আমাকে নগ্ন করবে, সংগমের জন্যে নয়, নিছক কৌতূহলে বা মজায়। যেটা আরও মারাত্মক। আমার আত্মবিশ্বাস একেবারে চুরমার হয়ে যাবে, আমি আর কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। লোকটার হাতের পুতুল হয়ে থাকব, তোমার মতো।
দুই, আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারব না, বাধ্য হব বাড়িতে রাত কাটাতে, শনিবার শনিবার তুমি বাইরে থাকলে, ও খুব সহজেই আমাকে ভোগ করবে। অনেক সূক্ষ্ণ ক্যালকুলেশন লোকটার। কোন একটা সময়, যাকে সে শুভ মনে করে, তার জন্য ও অপেক্ষা করছে। কোন তাড়া নেই যেন’
‘কীসের জন্য অপেক্ষা করছে ও?’
রুদ্ধশ্বাসে বলেন মোহরমালা।
‘এখনো তুমি বুঝতে পারছ না মা? আমার জন্মের পর থেকেই ও অপেক্ষা করে চলেছে, কুমারী ভজনা। একজন ভার্জিনকে ও ভোগ করবে, সেটাও তিথি নক্ষত্র মেনে, যার ফলে ও হবে অমর অজেয়।‘
আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে মোহরের। তিনি দুহাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে থরথর করে কাঁপতে থাকেন। তাঁর এতদিনের অর্জন, এত প্রভাব প্রতিপত্তি, ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশের নেশা- সব এক মুহূর্তে শূকরী বিষ্ঠার মতো মনে হয়। তাঁর মনে হয় যদি সময়টাকে রিওয়াইন্ড করে পেছনে নিয়ে যাওয়া যেত। তাহলে ওই লোকটার সঙ্গে ট্রেনে দেখা হওয়া, তার ত্রিকালজ্ঞ মূর্তির মোহে পড়া-এসব তিনি মুছে দিতে পারতেন। অন্তত মালদা থেকে মেয়েকে এখানে রেখে যাওয়াটা করতেন না কিছুতেই। কিন্তু বিঘ্নেশের বিষয়টা? সেটা তো হতে পারল শনিবার শনিবার অজিতের সঙ্গে কাটানোর জন্য? এটা তো ইচ্ছে করলেই তিনি ঠেকাতে পারতেন। ভবানী শাস্ত্রী খুব ভালো করে জানতেন সব, তিনি কোথায়, কার সঙ্গে রাত কাটান। একদিনের জন্যেও বাধা দেননি। কারণ তাঁর লক্ষ্য তো অনেক বড় ছিল। শুধু যে কুমারী সংসর্গ করে অমর অজেয় হওয়া নিশ্চিত করা তাই না, তিনি তো আসলে চেয়েছিলেন মোহরকে জব্দ করতে, মোহরকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে।
কিঞ্জলকে বুকে চেপে পাগলের মতো মাথা নাড়েন মোহর।
‘না না আমি তা হতে দেব না, কিছুতেই না’
‘কী বলছ কি পাগলের মতো?’
‘শোন, তুই আমাকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবি কি না, সে প্রশ্ন পরে, কিন্তু আমাদের আপাতত এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। তুই বলতিস হি ক্যান প্লে ইভিল। আমি বিশ্বাস করিনি। ভেবেছি, লোকটা আমাদের ওয়েভ লেংথের না হলেও স্ত্রী কন্যার প্রতি দায়বদ্ধ, আমাদের কোন ক্ষতি করবে না। কিন্তু আমার সে বিশ্বাস চুরমার হয়ে গেল’
এই বিশ্বাস কেন ছিল তাঁর? তাঁর মতো এত উচ্চশিক্ষিত নারী, সমাজের উচ্চকোটির পুরুষরা যার একটু কৃপাদৃষ্টির জন্যে পাগল, তিনি অন্ধের মতো একটা ঠগকে বিশ্বাস করে এলেন! না, অজিতের সঙ্গে শোয়া না, তাঁর জীবনের আসল পাপ হচ্ছে ভবানীকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করা। অজিত, অজিত সে তো যা নয়, তা হবার কোন ভান করেনি কোনদিন। আঁকড়ে ধরেছিল তাঁকে। আজ মেয়ের মুখ চেয়ে তাকে ছাড়তে হলেও তাকে ঘৃণা করতে পারবেন না কিছুতেই।
আর এখান থেকে চলে যেতে হবে তাঁদের। তাতেও তো ওদের হেল্প লাগবে।
তিনি গা ঝেড়ে ওঠেন ‘শোন কিঞ্জল, গুছিয়ে নে। আমরা চলে যাব লোকটা আসার আগেই। লোকটা হয়তো কাল আসবে। কিন্তু অতক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না, দাঁড়া অজিতকে একটা ফোন করি।’
অজিতের ফোন বেজে যায়। সে ধরে না। রিং ব্যাকও করে না। এমনটা তো হয় না কখনো।
কিঞ্জল বলে ‘জানো মা, একদিন সাউথ সিটি মলে অজিত আঙ্কলকে ডেকেছিলাম, বিঘ্নেশদের ভয় দেখানোর জন্যে, আঙ্কল অত ব্যস্ত ছিল, তাও কিন্তু ছুটে এসেছিল চন্দন আঙ্কল কে নিয়ে’
অন্যমস্ক ভাবে মোহর বলেন ‘তাই? এসেছিল?’
‘এসেছিল। কিন্তু আমি কিছু বলতে পারিনি। আমি কিছুতেই বলতে পারিনি আমি, এক ছেলেবন্ধু, যে একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে, বাবা মা কেউ থাকে না, সেখানে গিয়ে নাইট স্টে করি। আমার মনে হল, এটা ওরা, বিশেষ করে চন্দন হজম করতে পারবে না। ওই মালটাকে আমার একটা স্লাই ফক্স মনে হয়। ও ভীষণ স্ক্যান্ডালাইজ করবে সব কিছু। আঙ্কল ওরকম নয়, তাই না। বাঙালি মেয়েদের সম্পর্কে ওর একটা রেসপেক্ট আছে’
মোহর এবারও অন্যমনস্ক ভাবে হুঁ হাঁ করেন। তাঁর মন অন্য কোথাও ঘুরছে। এতক্ষণ তাঁর মনে হচ্ছিল এই বাড়ি থেকে চলে যাবার জন্য অজিতের হেল্প লাগবে। তিনি ভাবছিলেন বাইপাসে ফ্ল্যাটটা সেল আউট করে নতুন একটা ফ্ল্যাট কেনাবেন ওকে দিয়ে। এখন মনে হচ্ছে, এরকম তো হতে পারে, তাঁর বিশ্বস্ত ম্যান ফ্রাইডে অজিত, তারই হেল্প লাগবে। সেই বিপদে পড়েছে-এরকম একটা সঙ্কেত পাচ্ছিলেন অ্যান্টেনায়। তিনি তো জানেন অজিতের যা কাজকর্ম, তা বারুদের ওপরেই বসে থাকা।কিন্তু অজিত সেভাবেই কাজ করত, যাতে ওর গায়ে আঁচ না লাগে। আসলে তা না, এটা তো দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটা, ততক্ষণই তা সম্ভব, যতক্ষণ ওপর থেকে অদৃশ্য দড়ি টেনে রাখে কেউ, সবাই ভাবে যে হাঁটছে তার ক্রেডিট বুঝি, আসলে তা না, যতক্ষণ মাথার ওপর শাসকের ছায়া থাকবে, ততক্ষণই অজিতরা নিরাপদ, সরে গেলেই কেউ বাঁচাতে পারবে না। কিন্তু ছাতা সরে যাবার মতো কিছু তো ঘটেনি, অজিত এখনো অপরিহার্য, ওকে সরিয়ে দেওয়া, ছেঁটে ফেলার সময় আসতে অনেক দেরি আছে, কী যেন বলেছিল ভবানী, জাতকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, যদি না সে নিজে আত্মঘাত করে…ওহ ভবানী ভবানী! ভবানীর কথাকে বেদবাক্য মনে করে নিজের আর মেয়ের দুটো জীবন শেষ করে ফেলেছেন, এখান থেকে বেরিয়ে যেতেই হবে তাঁকে। অনেকটাই মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে, গেসওয়ার্ক করে মানুষের দুর্বলতাকে মূলধন করে, প্রভাবশালী লোকদের পৃষ্ঠপোষকতাকে মূলধন করে যে বিরাট রাজ্যপাট ফেঁদে বসেছে ভবানী তাকে চরম আঘাত হানবার জন্যে ছটফট করেন মোহরমালা। তাঁকে এতটাই তুচ্ছ ভাবে লোকটা, যে তার মেয়েকে ভোগ করার জন্যে বছরের পর বছর ধরে জাল গুটিয়ে আনছে আস্তে আস্তে!
নাহ, এ কিছুতেই হতে পারে না, কিছুতেই না। কিন্তু কীভাবে প্রতিশোধ নেবেন তিনি? এমন একটা লোক, যে সমাজের সব জায়গায় জাল বিছিয়ে রেখেছে, অথচ নিজে খুব এলেবেলেভাবে জীবন যাপন করে, তাকে ধরা যে বড় শক্ত। ধর্মীয় মৌলবাদ রাজনীতির পরতে পরতে মিশে আছে, যেন চিনির মধ্যে বালি। কীভাবে আলাদা করা যাবে? কীভাবে আলাদা করা যাবে যখন গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে লুকিয়ে থাকে উগ্রপন্থীরা? যারা সারাদিন খায় দায় উকুন বাছে, ধানের বীজতলি তৈরি করে, ঝগড়া কোন্দল করে। মোহর এত বছরের মধ্যে এই প্রথম অনেক দূর থেকে দেখলেন ভবানীকে। দেখলেন খুব, খুব সাধারণ চেহারা ভবানীর, ভিড়ের মধ্যে মিশে যাবার মতো, এই লোক যে কারো কোন ক্ষতি করতে পারে কেউ ভাবতেই পারবে না। আর কারাই বা ভাববে? তার কাছে যারা আসে, সবাই তো নেশাগ্রস্ত মানুষ। ভবিষ্যৎ জানার নেশায় আতুর লোক ভবানীকে কোন দিনই খেয়াল করে না। আর এই ডিসেপ্টিভ লুকের তলায় ভবানী এই নষ্টামি করে যায়।
মোহর অনেক ভেবেও মনে করতে পারলেন না এমন কাউকে কি তিনি চেনেন যিনি ভবানীর ঘনিষ্ঠ? নাহ কেউ নেই। ভবানীর ঘনিষ্ঠ কেউ নেই। কোন বন্ধু, কোন সঙ্গী কেউ নেই তার। একটা পাগলাটে ছেলে, সে শুধু ফাইফরমাশ খাটে ভবানীর। তার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন ভবানী, একবার দুবার মন্দিরে গিয়ে দেখেছেন তিনি।মোবাইল ফোন থাকলেও সেটা ব্যবহার করে না সে। সমস্ত যোগাযোগ মন্দিরের মাধ্যমে হয়। ওখানে সেই পাগল ছাগল ছেলেটা বসে থাকে, সেই ফোন ধরে। আচ্ছা ওই পাগল ছাগল ছেলেটা , আদৌ পাগল না সাজানো পাগল? হয়তো ভবানীর আরেকটা চাল?
নাহ এত ভাবার সময় নেই। সন্ধের মধ্যে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। কিছু করার নেই, বাইপাসের ফ্ল্যাটেই যেতে হবে।
ঠিক তখনই ফোনটা এল।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes