অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br /> পর্ব ৫৫ <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
পর্ব ৫৫
তৃষ্ণা বসাক

৫৫
শরীরে এত রাগ আর কান্না মিলে মিশে আছে, যে একটা
থেকে আরেকটাকে আলাদা করতে পারছে না অজিত।
ভাগ্যিস ও চট করে বেরিয়ে এসেছিল, অন্ধ রাগের বশে
দুমদুম করে বেরিয়ে এসেছিল টিচার্স কোয়ার্টার থেকে,
নইলে ওর হাতে সেদিন খুন হয়ে যেত পি কে বি। ডক্টর
প্রফেসর প্রদীপ্ত কুমার বারিক। না না মালটা ডক্টরেটও না,
প্রফেসরও না, কিছুই ছিঁড়তে পারেনি, শালা বউয়ের জন্য
ক্ষুদিরাম হয়েছে ভাব দেখিয়েছে এতদিন। আর এখন
রামচন্দ্রের মতো হা সীতা, হা সীতা করছে। মনে হচ্ছিল
মালটাকে একেবারে খাল্লাস করে দেয়। আজকাল সবসময়
সঙ্গে অস্তর থাকে না তার, ওসব কাজ বহুদিন করতে
হয় না, কিন্তু তার হাত দুটোই কাফি। শোলে সিনেমাটা
কতবার দেখেছে সে। এ হাত হাত নেহি, ফাঁসি কা ফান্দা
হ্যাঁয়। সেই দুটো হাত দিয়েই পিকেবির গলা টিপে শেষ
করে দিতে পারত। গান্ডু শালা, মাদারচোদ। এতবার
ঘ্যানঘ্যান করেছে, আমার বউয়ের চাকরি দেয়নি এরা
সিংজী, ইনজাস্টিস ইনজাস্টিস, একবার শুধু যদি বলত
‘সিংজী, আমার বৌ কিন্তু কোন মামুলি অউরত না,
বেস্ট রেজাল্ট থ্রু আউট। এ হচ্ছে ডঃ বক্সীর মেয়ে,
আগে এখানেই স্টাফ কোয়ার্টারে থাকত’ তাহলে, তাহলে
কি এইভাবে হারিয়ে যেত তার বুকের ছোট্ট পাখিটা? কত
কত যুগ আগে মা চলে গেছে, তারপর বাবা, দাদাজী,
পিংকিও, নিজের বলতে শুধু তো এই পাখিটাই ছিল তার,
বুকের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিল তাকে, গোলাপী, নীল
ফুলফুল ছাপ ফ্রক পরা, বুকের কাছে আবার একটা পিলি
তিতলি। ওকে তো মনে মনে তিতলি নামেই ডাকত সে,
বড় চঞ্চল, বড় নাজুক তিতলি, তার বাগানে একবার
বসেছিল শুধু, তারপর আবার উড়ে কোথায় চলে গেছিল।

কিন্তু তবু তো ভরসা ছিল সে আছে। চোখ বুজলেই
তাকে দেখতে পেত সে, আর তার চোখে বঙ্গালী অউরত
যে কোনদিন নামেনি, যারা শরীর বিক্রি করতে আসত,
একরাত শুয়ে কোন কাজ হাসিল করতে চাইত তাকে
দিয়ে, তাদেরও মন থেকে কোনদিন ঘেন্না করতে পারেনি
অজিত, ওই যে দাদাজী বলেছিল, বঙ্গালী অউরতদের
দেখবি বড়ে বড়ে আঁখে, ওই যে তসবির দেখেছিলি না,
প্রফেসর সাবের দেওয়ালে? বহোত বড়ে বড়ে আঁখে, যেন
তোর সবটা পড়ে নিচ্ছে। আর কারো কারো দেখবি
কপালেও একটা আঁখ থাকে।
-তিসরি আঁখ?
পাপ্পু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল
-হাঁ তিসরি আঁখ। সবার থাকে না। আর দিনদিন কমেও
আসছে এমন মেয়ের সংখ্যা। তবে জানবি, কম হলেও
এরকম দু চারটে অউরত যদি থাকে, তবে এই জাতটা
বেঁচে থাকবে। বঙ্গালি মানে শুধু অকল না রে, শুধু
পড়ালিখা না রে, বহোত তাগদ, ভেতরের তাগদ, নিজের
সব আরাম আয়েস ছেড়ে, নোকরি রুপাইয়া সব ছেড়ে
বড় কিছুর জন্য জান বাজি রাখার তাগদ। তোকে আমি
নেতাজীর ইস্ট্যাচু দেখিয়েছিলাম না?
তখন ভালো বোঝেনি পাপ্পু দাদাজীর কথা। পরেও না।
আর দাদাজী যেমন সব বাঙ্গালির কথা বলেছিল, যারা
নিজের আদর্শের জন্য জান বাজি রাখতে পারে, তেমন
বাঙ্গালি ওর নজরেই আসেনি। ও ছোটবেলায় একটা কিস্যা

শুনেছিল, একটা জাতের মধ্যে বহোত উচা উচা আদমি
জন্মাত, কী একটা অসুখ এসে তারা সব বেঁটে বেঁটে হতে
থাকল। লম্বা আদমি শুধু তসবিরেই টাঙানো থাকল
দেওয়ালে, পার্কে ইস্টযাচু হল, বছর বছর তাতে মালা
চড়ানো হবে, বেঁটে মানুষরা গিয়ে লম্বা লম্বা লেকচার
দেবে, বাকিরা হাততালি দেবে, অকল না, পড়ালিখা না,
ইমান, সেই ইমানদার লম্বা বাঙালি দেখেছে কি কোথাও
অজিত? তাহলে কি পেছনের কয়েক দশক ধরে, হয়তো
আজাদির পর থেকেই মড়ক লেগে উঁচু মানুষরা হারিয়ে
গেছে, পড়ে আছে শুধু বেঁটে ফোঁপরা মানুষ? যারা আর
নতুন কিছু তৈরি করে না, শুধু ইমারত বানায়, শুধু
পুকুর বোজায়, শুধু তোলা তুলে খায়, তবু তার মধ্যে
তার তিতলি ছিল। সে যদি একবার জানতে পারত এই
দোলনচাঁপা বারিকই তার তিতলি, তবে কবেই তাকে
সবসে উচা পোস্টে বসিয়ে দিত। সে জেনেও কিছু
করেনি- এই অভিমানেই কি হারিয়ে গেল তিতলি?বহোত
বেইনসাফি করল ভগবান তার সঙ্গে। মা চলে গেল,
পিংকি চলে গেল, মোহরমালা তাকে ইগনোর মারছে, আর
যে বাইরে না থেকেও ছিল, সেও চলে গেল। হঠাৎ
একটা কথা মাথায় আসতে থমকে যায় অজিত। এই
পিকেবি-ই বউকে খুন করে এইসব নৌটংকিপনা করছে না
তো? এরকম তো কত কাজের সুপারি পায় তারা।
বউকে মারতে হবে, দেখাতে হবে একটা অ্যাক্সিডেন্ট! না

না, সে ঠিক খুঁজে বার করবে, পাতাল থেকে স্বরগ
তন্নতন্ন করে খুঁজে বার করবেই তিতলিকে।
চলতে চলতে অজিত সিং ইজ কিং, রাফ অ্যান্ড টাফ
অজিত, তার দু চোখ দিয়ে জলের ধারা গড়ায়। অজিত,
অজিত কাঁদছে। নিজের কাছেই নিজের বিশ্বাস হতে চায়
না। সে কাঁদছে। তাও আবার জীবনে একবার কয়েক
সেকেন্ডের জন্যে দেখা একটি মেয়ের জন্যে, সে মেয়েও
কোন মত্তযৌবনা চিনি চামেলি নয়, এক অপাপবিদ্ধ
বালিকা, তার অন্য কোন রূপ তার কল্পনায় কখনো
আসেনি। সেই বালিকা যে সারাজীবনের জন্যে তার চোখে
মায়াকাজল পরিয়ে গেছে তা আজ প্রথম বুঝতে পারল
অজিত।এই প্রথম তার মনে হল, এইরকম একটা ছোট্ট
সুখ বুকের মধ্যে ধরে রাখার তৃপ্তি, কোন রাজনৈতিক
ক্ষমতা, কোন দলদাস হওয়া, বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, নারী
শরীর- কিছুই দিতে পারে না। এত বছর ধরে এইসব
ছাইপাঁশ জমিয়ে চলেছে সে, যার কোন মূল্যই নেই। কত,
কত শরীর ঘেঁটেছে, কিছু করতে না পারলেও ছাড়েনি,
মনে হয়েছে এই দখল করাতেই তার রাজত্ব কায়েম
থাকবে। সে শুধু ভয় ধরাতে চেয়েছে, নতিস্বীকার
চেয়েছে। আজ তার মনে হল শরীর কী করে সুখ দেবে,
তাতে যদি এক ফোটা মন না ফেলে দেয় কেউ? তার
মনে হল সেদিন যদি প্রফেসর বক্সীর বৌ তাকে বিহারী
দারয়ানের নাতি হিসেবে ওরকম ঠান্ডা ব্যবহার না করে
একটু হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে তার নাম জিজ্ঞেস

করতেন, প্রফেসর বক্সীর কাছে ফাইল নিয়ে সে যদি যেতে
পারত, যদি তিনি তার পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ খবর
নিতেন, যদি দাদাজীকে ডেকে বলতেন, পাপ্পু এবার থেকে
রোজ বিকেলে যেন তাঁর মেয়ের সঙ্গে খেলতে আসে, তবে
জিন্দেগী অলগ সা হয়ে যেত তার। সে পড়ালিখা শিখে
ডক্টর প্রফসর অফসর না হলেও একজন সত্যিকারের
মানুষ হত, যার বুকে একটা সুগন্ধের মতো লেগে থাকত
তিতলির অস্তিত্ব। যে জীবন তার হতে পারত, কিন্তু হল
না, কতকগুলো ‘যদি’-র অভাবে, তার জন্য আজ
যন্ত্রণায় সারা শরীর মুচড়ে উঠল। মা চলে যেতে, পিংকি
চলে যেতে সে কোনদিন সবার সামনে কাঁদতে পারেনি।
কারণ কাঁদে তো অউরত আর অউরতের মতো দুর্বল
পুরুষরা। আজ সেসব ভুলে সে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে
বসে পড়ল, তার মনেই হল না এভাবে তাকে কাঁদতে
দেখলে তার ইজ্জতের কী হতে পারে। সে জানতেও পারল
না, যেখানে সে মাটিতে বসে কাঁদছে, এখানে এক বসন্তের
সকালে দোলন এসে দাঁড়িয়েছিল সাঁকোর ওপর।মাটিতে রং
পড়েছিল, যেন রক্ত পড়ে আছে। আজ সেখানে বসে
অজিতের মনে হল চারদিকে রক্ত পড়ে আছে। দোলনকে
খুন করা হয়েছে, ওকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
এই রাস্তা দিয়ে। নাকি দোলন খুন করেছে? পিকেবি
বলছিল চারজন, চারজনের নাম, যারা দোলনকে ঢুকতে
দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দোলন নাকি একদিন বেরিয়ে
গেছিল এই চারজনকে খুন করবে বলে । হায় রে নানহি

চিরাইয়া, কিতনি ভোলি তু, এইভাবে কাউকে খুন করা
যায়? মাথার ওপর পতাকা না থাকলে, ছাতা না থাকলে
কাউকে খুন করা যায় না। এই দেশে তোমাকে চাকরি
পেতে গেলে কিংবা খুন করতে গেলেও পার্টি ধরতে হবে।
সেখানে ইতনি মাসুম সি, ভোলি সি একটা নানহি
চিরাইয়া, আহা আহহা, যদি সময়ে জানতে পারত অজিত।
ধীরে ধীরে শান্ত হয় অজিত, নিজে নিজেই।এখন কাঁদলে
চলবে না। যে করেই হোক তিতলিকে খুঁজে বার করতে
হবে। দোলনের ছবি কয়েকজনকে ফরোয়ার্ড করে অজিত।
সে কিছুতেই চায় না পুলিশ খুঁজুক দোলনকে। এই ছোট্ট
মেয়েটার কী যে হাল করবে পুলিশ, তার থেকে ভালো
কে জানে? অজিতের মনেই রইল না যাকে সে ছোট্ট
মেয়ে ভাবছে, সে প্রায় তারই বয়সী হবে।
এরপর সে মার্কেজকে ধরল। বড় বাঙালি সে দেখেনি
ঠিকই, কিন্তু এই একজন, যাকে দেখলে তার ঠিক
নিজেদের মাপে মনে হয় না।
মার্কেজ, চারজনের নাম পাঠাচ্ছি। এদের খাল্লাস করবে।
মার্কেজ চুপচাপ শোনে। তারপর গলা ফাটিয়ে হেসে ওঠে।
মরা লোককে মারব কি? এদের তো মেরে ফেলেছে।
কে? কোন গ্যাং?
টাইম গ্যাং
অজিত খেপতে গিয়েও খেপল না। এটা মার্কেজের একটা
বাঁধা ডায়লগ। কাউকে মারতে হলেই বলে ও লোকটা

আগেই মরে গেছে। তারপর অবিশ্যি একদম মাখনের
মতো মেরে দেবে।
হাসি থামিয়ে মার্কেজ বলল ‘আপনি যাদের নাম বললেন
এদের প্রত্যেকে মিসিং। বাড়ি থেকে থানায় ডায়েরি
করেছে’
মুখের শিকার কেড়ে নিলে বাঘের যেমন আক্রোশ হয়,
সেইরকম ভয়ানক রাগে অজিত চিৎকার করে ওঠে
‘আনসান বাত মত করো। কিউ কোয়ি উঠানা চাহেগা
এই সব ফালতু মালদের?’
অজিত যে শুধু রাগের মাথায় এ কথা বলল, তা কিন্তু
না।এই চারজন শুধু না, অনেকের সম্পর্কেই ওর এই
ধারণা। সমাজের আবর্জনা। গন্ধেগি। তার মনে পড়ছিল
পিকেবি একবার তাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল তার এই
রিলেটিভের নাম্বার সবার ওপরে। যতবার ইন্টারভিউ
দিয়েছে, ততবারই ওর ছিল সবার সেরা রেজাল্ট।
সেইসময় কথাটাকে পাত্তাই দেয় নি। আজ যেন সে চমকে
দেখল তাই তো? তার হাত দিয়েই কত খাজা গজা ঢুকে
গেল! আর সে নিজের তিতলিকেই কিছু দিতে পারল না।
সিং ইজ কিং না। একটা চুহা। দোলনচাঁপা বক্সী, পরে
দোলনচাঁপা বারিক- যদি প্রথম থেকেই তার জীবনের
কাছাকাছি থাকতে পারত সে, তবু সে কি তার হত?
অসম্ভব। দুস্তর ফারাক তাদের। কিন্তু এটা তো ঠিক,
দুজনের জীবনই অনেক সুন্দর হত, গোছানো হত।অজিত
কিছুতেই তার তিতলিকে এইভাবে হারিয়ে যেতে দিত না।

ওর হঠাৎ মনে হল দোলন ডিপ্রেশনের ওষুধ খেত, ওর
মাথা কাজ করত না ঠিক করে, একটা ঘুম ঘুম ভাব
ঘিরে থাকত তাকে।সেই মানুষের রাস্তা দিয়ে হাঁটাটাই তো
রিস্কি। গাড়ি চাপা দিয়ে চলে গেছে হয়তো। হাসপাতাল
মর্গ- উহহহ সে আর ভাবতে পারছে না। কিন্তু না, এটা
হতেই পারে না, তার সঙ্গে দেখা না করে কিছুতেই মরতে
দেবে না সে তিতলিকে। অজিত তাকে বলবেই পাপ্পুর
কথা। ও দেখতে পেল একটা ধানখেতের আল ধরে হাঁটছে
দোলন। ওর বুকটা ছাঁত করে উঠল। সেই যে বাপির
আন্ডারে যে ছেলেগুলো কাজ করে, তারা একবার খারাপ
কাজ করে ফেলেছিল। অ্যাকশন সেরে ফেরার পথে
ধানক্ষেতে একটা চিকনি চামেলিকে দেখে আর লোভ
সামলাতে পারেনি। না না, তা কিছুতেই হবে না, সে তো
স্বর্গের পারিজাত ফুল। পৃথিবীর নোংরা হাত তার গায়ে
যেন না লাগে।
যদি দোলন যেখানে চলে গেছে, সেখানে অজিতও চলে
যেতে পারত! এই কালা ধান্দার দুনিয়া থেকে অনেক
দূরে। একটা ছোট্ট বাড়ি থাকত। দোলন বসে বই পড়ত,
আর সে সব কাজ করে দিত।
এখনো নটা বাজেনি। তাছাড়া আজ কিসের জন্যে ছুটি
যেন। মনে পড়ল না। তাই ক্যাম্পাস একেবারে নির্জন।
ক্যাম্পাসের এরকম রূপ কোনদিন দেখেনি সে। বুকের
মধ্যে চাপ লাগে। একটা ট্যাক্সি ধরে বাড়ি চলে আসে সে।
সারাদিন শুয়ে ছটফট করে আর ভাবে। সন্ধে হয়।

সবসময় তার পাশে তিন চারজন ঘিরে থাকে। লোকে
বলে সিংজী চামচা নিয়ে ঘুরছে। আর এইসব রাস্তা দিয়ে
মোটেই হাঁটে না সে। প্রশাসনিক ভবনের এই অলিন্দ থেকে
ওই অলিন্দ- এক এক পা ফেললেই লোক ছুটে আসে
‘সিংজী, একটু যদি সময় দেন’
‘অজিত স্যার আপনাকে ফোনে পাচ্ছি না’
‘অজিতজী, ডিন স্যার আপনাকে খুঁজছেন অনেকক্ষণ’
এইসব কথা প্রতি মুহূর্তে যে শোনে, সে ধীরে ধীরে নিজের
মনে নিজের একটা অতিকায় মূর্তি তৈরি করতে থাকে।
সেই মূর্তিটা আস্তে আস্তে তার সমগ্র জীবন অধিকার করে
নেয়। সে বিশ্বাস করতে শুরু করে এই অতিকায় মূর্তিটাই
সে। অথচ এই নির্জন সকালে, কোন স্তাবক, পারিষদ
চামচা বিহীন, মাটিতে ঘাসের ওপর বসে, অজিতের মনে
হল তার এই মূর্তিটা খড়ের তৈরি, সে আসলে একটা
পুতুল, তার কোন ক্ষমতাই নেই। চিরকাল যারা ওপরে
থাকার, তারাই থেকে গেছ। এই যে মোহর তার কাছে
এল, আবার দূরে সরে গেল, এসব আগে থেকেই ঠিক
করে রাখা ছিল। এর পেছনে শধু পার্টি না, ওই
বোকাচোদা লোকটা, ভবানী শাস্ত্রী, জরুর ওই লোকটা
আছে। মোহরের কথায় নেচে ওর কাছে জন্মপত্র করানোটা
তার জীবনের বড় ভুল। তাদের মতো মানুষের জন্মপত্র।
হাঃ । যারা জন্মেই একটা কালা কুয়ায়, তাদের
আবার জন্মপত্র। কিছু মানুষ অন্যদের দুর্বলতাকে মূলধন
করে ব্যবসা ফাঁদে। তারা অজিতদের থেকেও খারাপ।

অজিত অন্তত মানুষদের মিথ্যের পেছনে ছোটায় না।
অজিত এখন নিশ্চিত যে তার আর মোহরের মধ্যে ভাঙন
ধরাবার পেছনে ভবানী শাস্ত্রীর হাত আছে অতি
অবশ্যই।নইলে মোহর তাকে যেভাবে ভালবেসেছে, যেভাবে
মায়ের মতো আগলে রেখেছে, সে কী করে এতদূরে চলে
গেল। মনে আছে মোহর একদিন একটা অদ্ভুত পোস্টারের
কথা বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধবংসের দিন আসন্ন।
যোগাযোগ করুন ভবানী শাস্ত্রীর সঙ্গে। সেদিন থেকেই
মনে একটা কাঁটা বিঁধে আছে অজিতের। মনে হয়েছিল,
যে জীবনটা সে পেয়েছে অনেক কষ্টে, ভেবেছে তার
এতদিনে একটা ঘর হল, হলই বা মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার।
শনিবার বিকেল থেকে রবিবার বিকেল, ঘণ্টা মিনিট
সেকেন্ড মাপলে আরও কম, কিন্তু কী আনন্দ, কী তীব্র
আনন্দ ওইটুকু ঘরকন্নার। রান্নাঘর থেকে মাছ ভাজার
গন্ধ, কফির গন্ধ, ব্যালকনিতে ভিজে নাইটি ঝুলছে, রোদ
আর হাওয়া সেই ভিজে নাইটির জলকণা শুষে নিয়ে ঘরে
ঢুকে পড়ছে, আর বিছানায় অলস শুয়ে শুয়ে দেখছে
অজিত। ফোন একেবারে বন্ধ করে দেবার সাহস হয় না,
কিন্তু ওই ফ্ল্যাটে ঢুকল তো সাইলেন্ট করে দিল। তারপর
দেখে দেখে একসময় করল। এমনিতেই তার ফেসবুক,
ইন্টাগ্রাম এইসব চুলকুনি নেই। ওসব কাঁচা ছেলেগুলোর
রোগ, অ্যাকশন সেরে এসে, বিরিয়ানি খেতে খেতে সেলফি
তুলছে, তখন পুলিশ সামলাতে তাদের জান কয়লা হয়ে

যায়। সেই সুখটুকু কেড়ে নিল ভবানী। ও আবার ধাঁ
করে মার্কেজ কে ফোন লাগায়।
‘ নেক্সট টার্গেট ভবানী শাস্ত্রী। এখন জাস্ট অবজার্ভে
রাখো’
বলেই তার মনে পড়ে ভবানীর ওপর নজর রাখার কথা
সে আগেও বলেছে। রাখা হয়েওছে নজরে। তবে তার পর
সে আবার ভুলে গেছে।
ভেবেছিল মার্কেজ এবারও বলে উঠবে ‘ও মালটা তো
আগেই মরে গেছে।’
ওকে চুপ থাকতে দেখে অজিত চেঁচিয়ে বলে ‘আরে শালা
চুপ করে আছিস কেন? বলবি নাকি মরে গেছে? নাকি
এও মিসিং?’
মার্কেজ কেটে কেটে বলে ‘আপনি খবর পাননি এখনো?’
‘কী খবর?’
‘শাস্ত্রীজী ৯০% বার্ন নিয়ে ভর্তি নার্সিং হোমে। বাঁচার
আশা নেই’

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    Anindita Mandal 2 years

    দুর্দান্ত! অজিত সিংয়ের কত কত দিক, কত মুখ! একটা একটা করে খুলছে। খুন অপরাধ সব ছাপিয়ে একটা শিউলিফোটা মিষ্টি কিশোরবেলা উঁকি দিচ্ছে। মার্কেজকে নিয়ে আমারও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কি হয় কি হয়।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes