নারী দিবস আসলে কাদের জন্য? কিছু কথা, কিছু গল্প <br /> রূপশ্রী ঘোষ

নারী দিবস আসলে কাদের জন্য? কিছু কথা, কিছু গল্প
রূপশ্রী ঘোষ

নারী দিবস। কীসের নারী দিবস? কারা পালন করে? কেন করে? গুচ্ছের প্রশ্ন। কিন্তু কোনো উত্তর আসে না।
কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবার। তথাকথিত। বাড়ির সবাই লেখাপড়া জানা, চাকরি বাকরিও করেন। ইংরেজিতেও তুখোড়। পরবর্তী জেনারেশনের সবাইকেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়েছে। সেই বাড়িতে যখন নাতনি জন্ম নিল তখন তো বাড়ির বৌয়ের অবস্থা খুব খারাপ। বউমা কিন্তু সরকারি চাকরি করেন ছেলে কর্পোরেট অফিসে। নাতনির জন্ম দেওয়ার অপরাধে বউমার লাঞ্ছনার শেষ নেই। পরে একটা ছেলেরও জন্ম দিতে হল। ছেলে হবে কী মেয়ে হবে আমাদের দেশে জানা না থাকলেও ছেলের আশায় সেই রিস্ক নিতেই হয়। যাহোক নাতি আলালের ঘরের দুলাল হয়ে বড়ো হতে লাগল, মা মায়ের চেষ্টায় যতটা পারা যায় মেয়েকে মেয়ে হওয়ার অপরাধ থেকে আড়াল করতে লাগলেন। এবং বাচ্চা মেয়েটাও ভাইয়ের কদরের ভূমিকাটার বিভেদ শিখতে শিখতে বড়ো হল।
সময়টা আটের দশকের শেষ বা নয়ের দশক। একবিংশ শতাব্দীর কথায় এখন আসছি না। এটাও এমন একটা সময় যে সময় রামমোহন, বিদ্যাসাগর নারীদের জন্য প্রগতিমূলক যাকিছু করা সম্ভব করে দিয়ে, সমাজের চোখের ঠুলি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মরে ভূত হয়ে গেছেন। তাঁদের এসব জানার কথাও না। আটের দশকের শুরু থেকে নয়ের শেষ।

একজন স্কুল টিচার। তাঁদের এক ছেলে এক মেয়ে। স্ত্রী আগে চাকরি করতেন, পরে চাকরি ছেড়ে সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছেন। সেই দম্পতির মেয়ের ধারণা মা দাদাকেই বেশি ভালোবাসে। দাদার কোনো দোষ দেখতে পায় না। দাদা যত দোষই করুক না কেন সাতখুন মাপ। মায়ের প্রতি মেয়ের অভিযোগ। মা’ও একজন নারী। মেয়ে দেখতে শুনতে, গান, আঁকা, লেখাপড়া সবেতেই কিন্তু দাদার থেকে ভালো এবং বাধ্য। তবুও…।
এগুলো কলকাতা শহরের কথা।
গ্রামের দিকে একটু তাকানো যাক।
একজন মেয়ে বড়ো হতে শুরু করল, সবে কৈশোরের দরজায় পা দিয়েছে। তখন থেকেই সে বাড়ির বড়োদের কানাঘুষোয় বুঝে যায়, ‘এ পাপ যত তাড়াতাড়ি বিদেয় করা যায় ততই ভাল’। অর্থাৎ মেয়ের যত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করা যায় তত নিশ্চিন্ত। মেয়ে বড়ো হতে শুরু করল বলে নয়, মেয়ে জন্মালেই তাকে ‘পাপ’ বলতে শোনা যায়। পাপ মানে কী? পাপটা কে করল? পাপটাই বা কেন বলা হয়? তাহলে মেয়েটা ‘পাপ’ তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, পাপের জন্ম দিল কে? কেনই বা দিল? যে দেশে ছেলে না মেয়ের ভ্রূন জানার অধিকার নেই সে দেশে যৌন সম্পর্কে লাগাম টানা হয় না কেন? বা হলেও সে দায় মেয়েদের উপর বর্তায় কেন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদেরকেই কেন কন্ট্রাসেপটিক পিল খেতে হয় বা কপার টি পরতে হয়?

একজন মেয়ে বড়ো হতে শুরু করল, সবে কৈশোরের দরজায় পা দিয়েছে। তখন থেকেই সে বাড়ির বড়োদের কানাঘুষোয় বুঝে যায়, ‘এ পাপ যত তাড়াতাড়ি বিদেয় করা যায় ততই ভাল’। অর্থাৎ মেয়ের যত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করা যায় তত নিশ্চিন্ত। মেয়ে বড়ো হতে শুরু করল বলে নয়, মেয়ে জন্মালেই তাকে ‘পাপ’ বলতে শোনা যায়। পাপ মানে কী? পাপটা কে করল? পাপটাই বা কেন বলা হয়? তাহলে মেয়েটা ‘পাপ’ তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, পাপের জন্ম দিল কে? কেনই বা দিল? যে দেশে ছেলে না মেয়ের ভ্রূণ জানার অধিকার নেই সে দেশে যৌন সম্পর্কে লাগাম টানা হয় না কেন? বা হলেও সে দায় মেয়েদের উপর বর্তায় কেন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদেরকেই কেন কন্ট্রাসেপটিক পিল খেতে হয় বা কপার টি পরতে হয়?

একজন মেয়ের যখন থেকে পিরিয়ড শুরু হয় তখন তাকে বলে দেওয়া হয় ছেলেদের সঙ্গে মেশা যাবে না। ছেলেদের সঙ্গে না মেশার অর্থ স্পষ্ট করা হয় না। পিরিয়ডের পর একজন কিশোর কিশোরী প্রোটেকশন ছাড়া যৌন সম্পর্ক করলে যে গর্ভবতী হয়ে যেতে পারে সে ধারণা তার কাছে খুলে বলা হয় না। সেও একটা অর্থ না বোঝা অস্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড়ো হতে থাকে। আর সম্পর্ক যদি করেও ফেলে কেউ, কোনোভাবে অবৈধ সন্তান জন্মে গেলে তো কেলেঙ্কারির শেষ নেই। সেই মেয়ের এবং মেয়ের পরিবার নিয়ে তো সমাজে ছিছিক্কার পড়ে যাবে। কোথাও মুখ দেখানোও যাবে না। আজকাল অবশ্য কলকাতা শহরে কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে অ্যাবর্‌শন কতটা বেড়েছে তার পরিসংখ্যানও দৈনিক পত্রিকা মাঝে মধ্যেই ছাপে।
অবৈধ সন্তান ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কেন সেই ‘পাপ’কে তো আগেই হত্যা করা হবে। এমন অবৈধ ‘পাপ’কে আবার বিক্রি করে টাকা উপার্জন করতেও শোনা যায়। তাহলে কী দেখা যাচ্ছে, বৈধ সন্তান মেয়ে হলে সে ‘পাপ’ বলে স্বীকৃত, বিবাহ বহির্ভূত সন্তান তো এমনিই ‘পাপ’, ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কেন। এরপর তা নিয়ে কথা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে না। অবশ্য এখন মেয়েরা অনেক সাহসী পদক্ষেপও নিচ্ছেন সিঙ্গেল মাদার হয়ে।
আর একটা গল্প। না না গল্প নয় অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। বউ কলেজের অধ্যাপক। বর অভিনেতা। খুবই শিক্ষিত। তাদের এক পুত্র সন্তান হয়েছে। বয়েস পাঁচ হবে। ছেলে জন্মানোর কয়েকদিন পরেই বর তার বাড়ি থেকে বউকে বাচ্চাসহ বের করে করে দেয় মাঝ রাতে। বউ বাচ্চা নিয়ে বাপেরবাড়ি চলে যায়। তারপর প্রায় সাত আটমাস বাচ্চার বাবা বাচ্চার কোনো খবরই নেয়নি। ছেলেকে দেখতে পর্যন্ত যায়নি। ছেলের কী ভ্যাকসিন হয়েছে না হয়েছে কীই বা বাকি কিছুই জানত না। এই বাবা ডাক্তার হলেও অবাক হতাম না। যাকগে তারপর আবার কী মনে হয়েছে বউ-বাচ্চাকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছে। বউয়ের উপর অত্যাচার আগে থেকেই চলত। তাকে গলা টিপে মারার চেষ্টা হত, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়াটা নাকি নিত্য ঘটনা।

আর এক পরিচিত দম্পতি। দুজনেই খুব শিক্ষিতে। সায়েন্সের একটা সাবজেক্ট নিয়ে পিএইচডি, পোস্টডক সবই হয়েছে বিদেশ থেকে। ভালো চাকরিও করেন এখন। কিন্তু বরের থেকে বউয়ের বুদ্ধি এবং রেজাল্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও বউকে বরের কাছে রীতিমতো অত্যাচারিত হতে হয়। বরের বাড়ির লোক দ্যাহেজ (হ্যাঁ হিন্দি শব্দেই) নিয়ে খোঁটা দেন। বাংলা পণ না হয়ে হিন্দি দ্যাহেজ হয়ে তাঁদের মনের সংকীর্ণতা দূর করতে পেরেছে বলে তো মনে হয় না। শাশুড়িমা এবং শ্বশুরমশাই দুজনেই শিক্ষকতা করতেন। যাকগে সেই দাদা দিদির আবার মেয়েই হয়েছে। মেয়ে পড়াশুনোয় অত্যন্ত ভালো।

এত গল্প পড়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। সব নারীর অবস্থাই এমন তা কিন্তু নয়। অনেক স্বাধীনচেতা নারীও আছেন। যাঁরা বর বা শ্বশুরবাড়ির কিংবা বাপেরবাড়ির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমতো জীবন কাটান। কিন্তু সেই সংখ্যাটা কত?
এমন অনেক কাকিমাও আছেন যাঁরা স্বাধীনভাবে মেয়েকে বড়ো করেছেন, নিজের যন্ত্রণা মেয়েকে পেতে দেননি। এই সংখ্যাটাই বা কত? গ্রামেও যে কাকিমারা মেয়েদের ‘পাপ’ ভেবে তড়িঘড়ি বিয়ে দিলেন, তারপর মেয়ে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে আত্মহত্যা করল বা করতে বাধ্য হল কিংবা মেয়েকে মেরে দেওয়া হল, সেই কাকিমাদের অবস্থা এখন কেমন? তাঁরা মুড়ি ভাজতে বসে কিংবা অন্য কোনো কাজের অবসরে মেয়ের জন্য সুর করে কাঁদেন শুনেছি। তাহলে কি অবসরে এই কান্নাকে বেছে নিতেই মেয়ের তড়িঘড়ি বিয়ে দেওয়া? কারণ কাঁদতেও তো একটা অবসর লাগে। উপলব্ধিতে পৌঁছতেও কি অনেক অবসর দরকার? উত্তর আসে না।
তাহলে নারী দিবসটা কারা করে? বা কারা চায়? নারীরা না পুরুষরা?

এতটা পড়ার পর পুরুষরা তো রে রে করে আসবেন। তাহলে সমাজে কি কেবল নারী নির্যাতনই চলছে? কোনো পুরুষের উপর অত্যাচার চলছে না? নিশ্চয়ই চলছে। তবে পিতৃতান্ত্রিক দেশে তার সংখ্যাটা খুব বেশি বলে মনে হয় না। আর তাছাড়া পুরুষ দিবস বলে আলাদা কোনো দিবসও তো নেই যে, তাদের কথা লেখা হবে। ওদের জন্যে একটা দিন নির্ধারিতই বা হয়নি কেন? যেভাবে তাদের জন্য রাখী, ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠী আছে।

এত তো গল্প শুনলাম। যদিও বাস্তব। তবে আক্ষরিক অর্থে বাস্তবটা কী দেখা যাক। এই নারী দিবস আসলে কাদের জন্য? গ্রামে, গঞ্জে, প্রান্তিক অঞ্চলে বা শহর কলকাতায় যে সমস্ত মেয়েরা ভোরের ভিড় ট্রেনে আসে তাদের জন্যে? নাকি যাদের বাড়িতে মুশকিল আসান করতে আসে সেই মহিলাদের জন্যে? মাঠে, ঘাটে, খেতে বা একশো দিনের কাজের মহিলা শ্রমিকদের জন্যে? যে মহিলারা ভোরে উঠে ঘর সংসাসের কিছু নিয়মমাফিক কাজ সেরে ডাক্তারি বা মাস্টারি করতে যায় তাদের জন্য? নাকি তথাকথিত এলিট ক্লাস বা কলকাতার উচ্চ বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির গৃহবধূ বা সেই বাড়ির মেয়েদের জন্যে? ফেয়ারনেস ক্রিম থেকে শুরু করে নানান ব্র্যান্ডের মাতামাতি, এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপন সবকিছু কাদের জন্যে? নারী দিবস কী আসলে পণ্য?

মাঠে, ঘাটে, খেতে বা একশো দিনের কাজের মহিলা শ্রমিকদের জন্যে? যে মহিলারা ভোরে উঠে ঘর সংসাসের কিছু নিয়মমাফিক কাজ সেরে ডাক্তারি বা মাস্টারি করতে যায় তাদের জন্য? নাকি তথাকথিত এলিট ক্লাস বা কলকাতার উচ্চ বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির গৃহবধূ বা সেই বাড়ির মেয়েদের জন্যে? ফেয়ারনেস ক্রিম থেকে শুরু করে নানান ব্র্যান্ডের মাতামাতি, এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপন সবকিছু কাদের জন্যে? নারী দিবস কি আসলে পণ্য?

অনেক স্কুল কলেজও আছে ঘটা করে নারী দিবস পালন করবে। আবার সেই সমস্ত স্কুল কলেজের পুরুষ টিচাররা মহিলা কলিগদের ঘটা করে অপমানও করে। নারীর জন্য অর্ধেক আকাশ পুরুষের অর্ধেক এসব বলা হয়ই বা কেন? কোনো প্রশ্নের উত্তর আসে না। জনবহুল দেশের জনবহুল মহিলা যারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে পাঁচশো টাকা পেয়েই খুশি তাদের জন্য? নাকি গতকাল আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়ারির যে মহিলাদের জন্য পাঁচশো ও সাড়ে সাতশো টাকা বাড়ানো হল তাদের জন্য? যে দেশের মহিলারা অপুষ্টিতে ভোগে, বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় তাদের জন্য? নাকি শহরের যে সমস্ত মহিলারা এসি ঘরে বসে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে তাদের জন্য? নাকি কেবল এসি হলে বা সেমিনার রুমে বসে কিছু মানুষের সেরিব্রাল চর্চা মাত্র?

এই দিবস আসলে কাদের জন্য?

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes