জয়ন্ত মহাপাত্র-র কবিতা    অনুবাদ ও ভূমিকা- বেবী সাউ

জয়ন্ত মহাপাত্র-র কবিতা অনুবাদ ও ভূমিকা- বেবী সাউ

"আমি ভারত ছাড়া অন্য কোথাও বাস করার কথা যেমন কল্পনা করতে  পারি না তেমনি অন্য কোথাও বসে কবিতা লেখার কথাও ভাবতে পারি না।" — কবি জয়ন্ত মহাপাত্র (১৯২৮-২০২৩)  যিনি দেশের চেয়েও বিদেশে বেশি সম্মান পেয়েছেন। এমনকি তাঁর চারটি কবিতা সংকলন বিদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। জয়ন্ত মহাপাত্র পাঁচ দশক ধরে লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ভারতীয় ইংরেজি কাব্য জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন কবি।  ভারত, ভারতের মানুষ, ভারতের বিভীষিকাময় সামাজিক দৃশ্যপট এবং ভারতের প্রতিটি অঞ্চলে বিরাজমান অসাম্যের ভয়ঙ্কর চিত্র তাঁর  কবিতার মুখ্য বিষয়বস্তু ছিল। তাঁর কবিতায় আমার পাই ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং সেগুলি থেকে উদ্ভূত সামাজিক নিষ্ঠুরতার মর্মস্পর্শী বিবরণ। তিনি ১৯৮১ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। শিকাগোর পোয়েট্রি ম্যাগাজিন দ্বারা প্রদত্ত জ্যাকব গ্ল্যাটস্টেইন স্মারক পুরস্কার,  সার্ক সাহিত্য পুরস্কার তাছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কারে পুরস্কৃত এবং সম্মানিত হন এবং ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন। কবি জয়ন্ত মহাপাত্রের কবিতায়, দেখা যায়, ভারতের প্রকৃত রূপকে। ফলে বলা যায় তিনি এবং তাঁর কবিতা বিশ্বের কাছে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাঁর প্রায় সাতাশটি কবিতার বই।  ওড়িয়া ভাষায় তাঁর সাতটি কবিতার বই। তিনি প্রথমে ওড়িয়া ভাষায় লেখা শুরু করলেও পরে ইংরেজিতে লিখতে আরম্ভ করেন। তিনি তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে ভারতের প্রকৃত চিত্রকে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। বিশেষ করে, ক্ষুধা, অশিক্ষা, কুসংস্কারময় প্রথা এবং নারীদের ওপর সমাজের অত্যাচার এবং নির্যাতনের চিত্র। গতবছর, ২০২৩ সালে কবি জয়ন্ত মহাপাত্র পরলোক গমন করেন।  মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “যখন আপনার বয়স প্রায় পঞ্চাশ, আপনি মৃত্যুকে ভয় পাবেন,  কারণ আপনি আপনার অনেক ঘনিষ্ঠ মানুষকে মারা যেতে দেখেছেন।  কিন্তু আপনি যখন আমার বয়সে আসবেন, অর্থাৎ আশির ওপরে,  তখন আর মৃত্যুর ভয় থাকে না।  যেহেতু আমি আজকাল বিচ্ছিন্ন নির্জন অবস্থায় থাকি, আমার মাঝে মাঝে মৃত্যুর তীব্র আকাঙ্ক্ষা হয়। কিন্তু পরের মুহূর্তে বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রবলভাবে ফিরেও আসে।” জয়ন্ত মহাপাত্র এখন শারীরিক রূপে আমাদের মাঝে নেই।  তার সঙ্গে  ক্ষুধার্ত, অশিক্ষিত, পতিতাদের যে কণ্ঠ সেই দিকটি তুলে ধরার যে কণ্ঠস্বর, সেটাও আর নেই। এই অনুপস্থিতিতে যা অবশিষ্ট আছে তা হল তাঁর কবিতা এবং লেখা, যা এই উন্নয়নশীল দেশের নগ্নতার চিত্রকে তুলে ধরে।

তার হাত

ছোট মেয়েটির হাত অন্ধকারে ভরা
কীভাবে ধরবো আমি?

রাস্তার আলোগুলো ঝুলছে কাটা মুণ্ডুর মতো
রক্ত খুলে দিচ্ছে ভয়ানক দরজা আমাদের ভেতর

দেশের বিশাল মুখ ভরে যাচ্ছে বেদনায়
যখন সে শরীর কাঁপছে নখের বিছানায়

এই ছোট মেয়ে তার ধর্ষিত শরীর নিয়ে পড়ে আছে
যাতে আমি তার কাছে পৌঁছাই

আমার অপরাধের ক্লান্ত ভার
পারে না প্রতিরোধ কাটিয়ে তাকে আলিঙ্গন করতে

পুরীর ভোর

অন্তহীন কাকের ডাক
পবিত্র সৈকতে একটি খুলি
কাত হয়ে দেখছে শূন্য একটি দেশ
যা ক্রমশ ক্ষুধার্ত হয়ে চলেছে

সাদা পোশাকের বিধবা নারী
অতীত জীবনের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করছে পবিত্র মন্দিরের দরজায়

তাদের নিরাভরণ মরা চোখ, তাকিয়ে আছে
যেন জালে আটকে যাওয়া,
ঝুলে আছে ভোরের আলোয়
বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে

ব্যর্থ প্রথম আলোটি ধরতে
বিধ্বস্ত, কুষ্ঠের খোলস ছাড়ার মতো
একে অপরের বিরুদ্ধে
নামগোত্রহীন কুঁচকানো মুখের একটা দল

এবং হঠাৎই ভেঙে গেল আমার আড়াল
বিষণ্ণ নির্জন চিতার ধোঁয়ার আগুনে
আমার বৃদ্ধা মা’কে পূর্ণ করে

তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল এখানে দাহ করা হবে
আলোর অনিশ্চিত ধারায়
উড়তে থাকা বালির ওপর

.

গ্রীষ্মের কবিতা

বিষণ্ণ হাওয়ার দিন শেষ
আগের চেয়েও উচ্চস্বরে পুজো করে পুরোহিত
খুলে যায় ভারতের মুখ

কুমিরগুলো ঢুকে যায় জলের আরও গভীরে

উত্তপ্ত সকালগুলো চাপা পড়ে আছে
সূর্য পোড়া ছাইয়ের স্তূপে।

সতীসাধ্বী স্ত্রী
শুয়ে আছে আমার বিছানায়
দীর্ঘ অপরাহ্ন জুড়ে;
স্বপ্ন দেখছে
গম্ভীর গর্জনে ক্লান্ত
অন্তেষ্টিক্রিয়ার চিতা

বৃষ্টির মৃত্যু

কখনো সখনো বৃষ্টি আসে
আকাশ ছাপিয়ে, বাঁকে
ধূসর মেঘের ভেতর, আলো ভেঙে
লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে।

বৃষ্টিকে চিনেছি আমি এবং জীবনের কেনাবেচায়
নিক্ষেপ করেছি শ্যাওলার মতো সমুদ্র সৈকতে
আমি পারি না তাকাতে বিবেকের দংশনে
সন্ন্যাসিনীর ক্ষতিকর দৃষ্টিতে

কে সেই শেষ ব্যক্তি এই পৃথিবীর
যার মুখে শান্ত মেঘ এনে দিয়েছিল রক্ত?
বোবার মতো আমি আমাদের পাহাড়ের চূড়ায় আরোহন করি
যেখানে আমার আত্মা কেঁপে উঠছে
উত্তরের অপেক্ষায়

এখনো কোন, বাসি বাতাস বসে আছে দেবদূতের ডানায়?
কে আমার বৃষ্টিকে ধরে রাখে, তাই তাকে ছাপিয়ে যাওয়া কঠিন?

খিদে

এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে আমার পিঠে মাংস বেশি।
জেলেমাঝি বললো: অযত্নে তুমি তাকে পাবে,
পেছনে তার জাল এবং তার স্নায়ু, তার শব্দগুলো
যেন তাকে পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
আমি দেখলাম তাঁর সাদা হাড় শাসন করছে তার চোখকে।

বিস্তীর্ণ বালির ওপর দিয়ে আমি অনুসরণ করি তাকে।
আমার মন ঘোরাঘুরি করছে মাংসের চাকতির ওপর।
আশা ছিল, যে বাড়িতে থাকতাম তাকে পুড়িয়ে ফেলার।
নীরবতা আমার জামার হাতা আঁকড়ে ধরে, তার শরীরে নখের আঁচড়
শুধু তার পুরনো জাল উঠে আসছিল সমুদ্র থেকে।

ঝিকিমিকি অন্ধকারে খুলে গেল তার বাড়ি ক্ষতের মতো।
বাতাস ছিলাম আমি, দিন এবং রাতগুলোর আগে
করতলে আঁচড়ে যাচ্ছিল আমার চামড়া। খোলের ভেতর
একটি তেলের বাতি ঘন্টার পর ঘন্টা বেজে যাচ্ছিল দেওয়ালে।
বার বার সেই চ্যাটচ্যাটে কালো ঝুল পেরিয়ে যাচ্ছিল আমার মাথার ফাঁকা জায়গা।

আমি তাকে বলতে শুনছি: আমার মেয়ে, সে এই পনেরো পেরোল
ভাবুন। আমি তাড়াতাড়ি ফিরব, আপনার বাস তো ন’টায়।
আমার ওপর আকাশ ভেঙে পড়লো এবং একজন বাবার ক্লান্ত ছলনা।
লম্বা এবং ভর দিয়ে থাকা, মেয়েটির দিনগুলি ঠান্ডা রাবারের মতো।
সে খুলে দিল তার প্রশস্ত কীটদষ্ট পা। আমি অনুভব করলাম ক্ষুধা সেখানে,
অন্যদিকে মাছটি এঁকেবেঁকে যাচ্ছে, ভেতরে ঘুরছে।

 

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes