
পর্ণশবরীর কথকতা ১৮ প্রাপ্তি চক্রবর্তী
উৎসবের কাল আকাশ থেকে মুছে যাচ্ছে। এই পড়ন্তবেলার আকাশে যা কিছু পড়ে থাকে তা দিয়ে আমার ঘর সাজানো হয়। বারান্দার সাদা দরজা খুলে দেখি বাড়ির সামনে থেকে খুলে নেওয়া হচ্ছে আলোকমালা। শীতঘুমে ডুব দেবে এবার আমার শহর। ধীর পায়ে ফিরবেন নৈঃশব্দ। বছরের এইসময়গুলো শুধু আমার জন্য তুলে রাখেন মহাকাল। এ অন্তরঙ্গ নিশ্চুপবেলা, ঘুঘু ডাকা দুপুর, উলঙ্গ মণ্ডপ, প্রদীপের বুকে ছাই হয়ে জমে থাকা শেষরাতের উৎসবের সলতে; – এসব কিছুর মধ্যে মাখানো থাকে আমার বিষাদবেলা।
বাক্সের থেকে গরমজামা, নীলবুননের শাল রোদ্দুরে মেলে ধরি। নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ পাই গত একবছরে জমে থাকা সমস্ত চুপকথার। অলস অলসদিন বেয়ে বেলা ছোট হয়ে নেমে আসে আমার লাল-রঙা ছাদের উপর। মেঝেতে মাদুরের পাশাপাশি বিছিয়ে দেই ঘন সবুজ শতরঞ্চি চাদর। ঘুঘুদের দাম্পত্য, রোদের মুখে গোল হয়ে থাকা একটা হলুদ বেড়ালের অলস ঘুম দেখতে দেখতে জাপানি কেতলির জলে ফেলে দেই চামেলি, নীল অপরাজিতা কিংবা ল্যাভেণ্ডারের শুকনো পাপড়ি। জল রঙিন আর বাতাস সুগন্ধি হয়ে ওঠে। হেমন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি উজ্জ্বল সন্ধ্যাতারা আমার দিকেই চেয়ে রয়েছে অপলক দৃষ্টি নিয়ে। শীতের গন্ধ মেখে গায়ে পশমের চাদরকে আরেকটু আঁকড়ে ধরে হালকা পায়ে ঘরে ফিরে জ্বেলে রাখি নীল আলো আর সুগন্ধী মোম। হাতের ওমে ঘিরে রাখা ফুলেল চায়ের সুগন্ধের সাথে নেমে আসে আমার বিষাদকাল; বছর ঘুরে ফিরে আসে বিষাদ উৎসব।

