
রূপশ্রী ঘোষের কবিতা
পিতৃপক্ষ
আতপ চাল আর কলায় তর্পণ তোমাদের হবেই
বাড়িতে আসবে পুরোহিত কাকু, কুশের আংটি কলার মান্দাস
প্রথমে বড়ো দুয়ারে বসে
কিছুটা পুজো সেরে নিয়েই
তারপর পুকুরঘাট, আমাদের গঙ্গা নেই।
গঙ্গা থেকে নিয়ে যাওয়া জলেই তোমরা সন্তুষ্ট
কী কম চাহিদা তোমাদের,
নাভিটা কিন্তু গঙ্গাতেই আছে
দাদু, বাবা, জেঠুদের দলে আজ দাদাও ঢুকে গেছে
তোমাদের জন্য আছে কোশা-কুশি গঙ্গাজল
ঠাকুমাও তোমাদের দলে
কিন্তু তার জন্য কোনো তর্পণ নেই
যদি পারো কখনো নাভি কুড়িয়ে
আবার এসো
যে ধর্ষক আজ পূর্বপুরুষ, গঙ্গায় কিংবা পুকুরঘাটে
সেও তর্পণ পাবে।
পুজোসংখ্যা
উঁচু বাড়ির জানলা থেকেও দূর কলকাতাকে মনে হয় পাহাড়
ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ
পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমে নিশ্চিন্ত
দিগন্ত ঢেকে যায় দূর আকাশের নিচে
ধোঁয়া মেঘের কোলে
গাছেরাও ভাবে দিগন্ত ছোঁয়ার কথা,
পাতা খসে যায় শীত
শরতের হালকা কুয়াশা ঝাপসা করে দেয় মন
তারই মাঝে মাথা তুলে আছে কিছু
নীল ছবি পুজোর হোর্ডিং
মেহেন্দি রঙের হেমন্ত গোধূলি এসে গেল বুঝি
ধানে সোনালি রং ধরেছে শালিক।
চক্ষুদান
কোনো শান্ত স্নিগ্ধ হাত ছুঁয়ে ভালোবাসা হয় না
ভালোবাসা মানে উত্তেজনা,
যত পারো তত দাও
এক নারী থেকে আর এক নারী জুড়ে বোসো পুরুষ
এক পুরুষ থেকে আর এক পুরুষ
জুড়ে নারীরাও আজ
নিস্তেজ শরীর কেইবা চায় কোনোদিন লালসা
তবুও অন্ধকার রাতে এক মৃত নারী চৌষট্টি যোগিনী
তাইতো আজ রাতের পর রাত
হয়ে চলেছে দখল
শূন্য রাজপথ, দিনের আলোও
দখল কোরো অর্ধনারীশ্বর
ভিক্ষে চাইতে নয়, দেবীপক্ষ চাও রোজ।
ত্রিনয়নী
শিশিরভেজা শরৎ তো নয়
বৃষ্টিভেজা ভোর
ঝাপসা কাচ, ঠিক যেন বা
তুমি জটিল মন
দূরে কোথাও ঢাক বেজেছে
হালকা কাঠির ঘা
দেবী এলেন বুঝি এবার, কাশফুলেরা
ভিজে যে একসা
তবুও হয় প্রভাত ফেরি,
দুধে আলতা শাড়ি
অসুর বধে এগিয়ে এসো ত্রিশূল হাতে নারী।
*****