
সায়ন রায়-এর কবিতা
উৎসব
১.
উষ্ণ হাতটির কথা মনে পড়ে।
পুজো ঘিরে আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসব
একক নৃত্যের পর তুমি বললে, ‘দেখো
কী অবস্থা!’ আমি নাটকের কুশীলব
মেক-আপ নিয়ে বসে আছি গ্রিনরুমে
হাত ছুঁয়ে ওলটপালট হয়ে গেল সব সংলাপ।
২.
জীবনে জীবন জুড়ে কেটে যায় দিন
আমাদের উৎসব শিল্পের ধুনি জ্বেলে রাখে
তোমাকে ছুঁয়েছি আমি কথা-কবিতায়
আর বাক্যহারা হয়ে যাই মরসুম জুড়ে
শেফালি ফুলের মালা পরে মেঘের ভেলায় চেপে
তুমি দূর হতে হাত নাড়ো, আর আমি
একটা ধবধবে সাদা হাঁসের স্বপ্ন দেখে যাই।
৩.
বিশাখাপত্তনম থেকে অটোয় চলেছি সিংহচলম
শরতের আকাশ সংগীতময়
‘এই স্টপ স্টপ’, ঝটকায় থেমে যায় অটো
একটা মামুলি প্যান্ডেল, আমাদের কাছে অতি লঘু
সাদামাঠা একচালা প্রতিমায় দুর্গা; হাসির উদ্রেক
কলকাতার দর্শকের মনে কিছু শ্লেষ ঝরে পড়ে
চমকে উঠি ভিতরে প্রবেশ করে
পুরোহিত পুজো সারছেন, মন্ত্রোচ্চারণে ভরে উঠেছে পরিবেশ
আর সকল মন্ত্র পদ্মের পাপড়ির মতো ফুটে উঠছে তেলুগুতে।
৪.
‘সিগারেট প্যাকেটের কিছু রাংতা এনে দিবি?’
সেবছর ধুনুচি নৃত্যে প্রথম হওয়া আমার বাবা
হাতের মুঠো থেকে ফুলের মতো ঝরে ঝরে পড়ছে রাংতা-কুচি
অনেক পরে মুগ্ধ হয়েছি উদয়শংকরের ‘কল্পনা’-য়
বিজয়াদশমীর সেই রাতে এক কিশোরের সামনে
তীব্র এক ঘোরের নধ্যে নেচে চলেছেন মধ্যবয়সী নটরাজ
৫.
হে দেবী! হে আমার ঈশ্বরী! তুমি জাগো
তুমি জেগে ওঠো আমার এই পদ্যপত্র জুড়ে
আমার আয়ু আজ নৈবেদ্য দিলাম
শরতের মেঘ করে আমাকে ভাসাও
শেফালির মালা করে আমাকে গেঁথে তোলো
আমার সকল চিন্তা সুগন্ধ বিলোক
উৎসব প্রাঙ্গণে এক মিষ্টি মধুর হাওয়া
আমার সর্বশেষ স্বাক্ষর।