
অনুপ সেনগুপ্তর কবিতাগুচ্ছ
মুণ্ডু
বিজয় মস্তানকে খুন করে
তার ধড় ও মুণ্ডু দুটি নক্ষত্রে
পুঁতে রেখেছিল সজল মস্তানের দল
আমার মফস্সলীয় ছেলেবেলায়
পুকুরে ডুব দিয়ে একদিন
গতরাতের আকাশের ভাঙা প্রতিবিম্ব
তুলে নিয়ে আসি
সেই টুকরো নিয়ে খেলতে খেলতেই
বিজয়ের মুন্ডুটা দেখি
বহুযুগ পর
নিজের নৈঃশব্দ্যে আগুন লাগিয়ে
তুমি আমার নৈঃশব্দ্যে ঢুকে পড়ো
আর জ্যান্ত করে দাও এই মুণ্ডু
প্রাণ পেয়েই মুণ্ডুটা চিৎকার করে কাউকে ডাকলে
হাজির হয় অন্য মুণ্ডু
সেই মুণ্ডুর চিৎকারে
আর-এক মুণ্ডু দেখা দেয়
এইভাবে অসংখ্য মুণ্ডু আর চিৎকারে
আমার নৈঃশব্দ্য ভরে ওঠে
তোমার মতো আমিও নিজের নৈঃশব্দ্যে
আগুন লাগালে মুণ্ডুরা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেয়
তুমি তখন গান গেয়ে ওদের ঘুম পাড়াও
ঘুমোলে ওরা অক্ষরে পরিণত হয়
এবার এক অনন্তকাল ধরে
একের পর এক অক্ষর রাবার দিয়ে মুছে ফেলি
এখন শুধুই তুমি আর আমি
কিন্তু কিছু অক্ষরের রক্তের দাগ
মোছা যায়নি
আকাশ
১
একফালি আকাশ ছিঁড়ে
তুমি বাঁধো চুল
তোমার আঙুলে লেগে থাকে
রোদ্দুর
কখনও জ্যোৎস্না
২
আকাশই যখন হয়ে ওঠে পাখি
এক পাখি আর-এক পাখির ভিতর
দিগন্ত জুড়ে পাক খায়
যেভাবে তুমি নও
অন্য কেউ সাঁতার কাটে
তোমার
মগ্নতায়
ম্যারাথন
সে নিজেরই মধ্যে পিছলে পড়ে
উঠে দাঁড়ায়, আবার হাঁটে
কিংবা পথ ভুলে
বিস্মৃতির অলিগলিতে ঘুরপাক খেয়ে
পরের দিন ফেরে
এভাবেই সে রোজ
নিজের কাছে হারে
পাষাণ হৃদয়
যতটা কথা বলা যায়
যতটা চুপ করে থাকা যায়
এই দুই সীমার মাঝে
দুটি পাষাণ হৃদয়
শুয়ে থাকে পাশাপাশি
সারারাত ধরে দুজনে স্বপ্ন দ্যাখে
প্রত্যেকের স্বপ্নে
অন্যজন শুধুই পাষাণ
আর নিজে শুধুই হৃদয় হয়ে ওঠে
সেই পাষাণ ও হৃদয়
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে গিয়ে
হোঁচট খায়, ফের দৌড়োয়
কিন্তু কেউ কাউকে ছুঁতে পারে না
কয়েকটা তারা খসে পড়ে
ওদের তেপান্তরে
কখনও আধখানা বা সিকি চাঁদ
খেলতে খেলতে ওরা হাঁপিয়ে উঠলে
সেই দিনেরই জাগরণ থেকে
বাটখারা সমেত দাঁড়িপাল্লা
স্বপ্নের মধ্যে টেনে নেয়
তারপর নিজেদের ওজন করে দ্যাখে:
পাষাণই ভারহীন
হৃদয়ের অনন্ত ভার