
অনুপ সেনগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
বাড়ি
যে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি
তা আমাকে ছেড়ে বেরোতে পারেনি
ফলত আমি নই, বাড়িটিই এখন
আমার মধ্যে বাস করে
আর নিজের মর্জিমাফিক পাল্টে যায়
কখনও একঘেয়েমি কাটাতে
ঘরগুলো একে অন্যের সঙ্গে জায়গা বদল করে
কখনও নিজের একাকিত্বে একটি ঘরই হয়ে ওঠে অসীম
গ্রহনক্ষত্র থেকে মানুষ এমনকি ঈশ্বরও
এঁটে যায় সেখানে
কখনো-বা গোটা বাড়ি
দু-পঙ্ক্তির দোতলা স্তবক
প্রতিটা ঘর তখন শব্দ
হয়তো পাশাপাশি তুমি ও আকাশ
তাহলে এক ঘর থেকে একমুঠো গোধূলি নিয়ে
অন্য ঘরে রাঙানো যায় তোমার কনেমুখ
কিংবা একঘর থেকে অন্যঘরে উড়ে যায় মেঘ
আর শ্রাবণায়িত হয়ে ওঠে তোমার অঘ্রান
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ:
এই বাড়িতে কেউ ঢুকলে
দুজন হয়ে বেরিয়ে আসে
সম্পর্ক
কেউ পুনরায় পরিবর্তিত হয় তুমিতে
তখন একটা সত্যিকে কেটে দু-ভাগ করি
তোমার অর্ধেক আমার অর্ধেক
একটা মিথ্যে কেটেও দু-ভাগ করি
এবারও দুজনের অর্ধেক-অর্ধেক
নিজের নিজের অর্ধেক সত্যি অর্ধেক মিথ্যে
আমরা জুড়ে নিই
তারপর থেকেই নিজের মধ্যে
চুপ করে বসে থাকি
আর আমার ছায়া বহুদূরে
ছায়াপথে ঘুরে বেড়ায়
শুধু মাঝে মাঝে
তুমি আরও সত্যি আরও মিথ্যে চাইলে
শরীর টপকে তোমার মধ্যে
লুকিয়ে পড়ি
সাক্ষর
পিঁপড়ের মতো তার তর্জনীতে
উঠে আসছে একের পর এক অক্ষর
একটি বাক্যে সে রচনা করতে চায় স্বপ্ন
কিন্তু এক ব্যঞ্জনা পিছলে যায়
আর-এক ব্যঞ্জনায়
ফলত ভবিষ্যৎ পেরিয়ে
কোনও স্থির নদীতে দৃষ্টি ভিজিয়ে
সে দেখতে পায়
ঈশ্বর বসে আছেন একখালা অন্ন নিয়ে
কিংবা অন্ন বসে আছে একথালা ঈশ্বর নিয়ে
উত্তরদক্ষিণ
একটি বৃত্তের পরিধিতে
আগুন লাগলে টের পায় কেন্দ্র
হয়তো গোলাপের শিরশ্ছেদে
রক্তবন্যা গোটা বাগান জুড়ে
হয়তো কুয়াশা কাউকে দু-হাত বাড়িয়ে
জড়িয়ে ধরলে সে রৌদ্র হয়ে ওঠে
কিংবা বর্ষা নামটিতেই ভিজে যেতে পারে কেউ
হয়তো এসব কথা
উত্তরে সত্যি আর দক্ষিণে মিথ্যে