
অনিন্দ্য সরকার-এর কবিতাগুচ্ছ
বুদ্ধজন্মের প্রতি মোহ
(১)
যাওয়া আসার পথে যে চৌকাঠ
তার মাথায় চাঁদের মত
অনন্ত তোমার ছবি,
তা থেকে চোখ সরাতে পারি না
হোঁচট খাই আমি রোজ।
ওই ঠোঁটের হাসি, করুণাঘন দৃষ্টি
রোজ পিছু নেয় আমার,
ভুলে যাই পথ
চন্দ্রাহতের পথ
ফিরে আসি।
তোমার ছবি ঘিরে বোধিজ্যোৎস্নার আলো
আমার দুচোখের কোলে গাঢ় অন্ধকার
এই বুদ্ধআলোতেই
নিরুপায় পুনরায় বাঁধা পড়ে গেছি।
(২)
সারাদিন ক’টামাত্র শব্দ নিয়ে নাড়াচাড়া করা
অমিতাভ, অমিতাভ, অমিতাভ..
আমাকে ফেলে রেখে চলে গেছে যারা যাক
আমি পড়ে আছি তোমাতেই, শুধু তুমি
আর বিরহের ভার আমার
আমি তোমায় ফিরে পাবো।
তবুও তো কোথাও পাই না তোমায়
শুধু দেখি চলে গেছে যারা
তাদের ভরা সংসার।
সিদ্ধার্থ, আমার মন কেমন করে
আমি তোমার কাছে যাবো।
(৩)
‘যাও, চেয়ে নাও তোমার পিতৃঋণ’
মাতা যশোধরা ফিরে যান..
তাকিয়ে দেখি তার শ্রান্ত হাসির
আভায় ছেয়ে গেছে চারপাশ
আনন্দিত আনন্দিত প্রাণ।
তথাগত মুদ্রায় টেনে নেন আমায়
দাও পিতা, পিতৃঋণ করো দান।
এখন প্রবজ্যার বেলা
চারিদিকে হাজার
হাজার শ্রমণের ভিড়
শুধু আমি
একা রাহুল নই আর,
তাদেরই মতো বুদ্ধের সন্তান।
(৪)
এক চাঁদ থেকে আরেক চাঁদে আসা
চাঁদের আলোয় জন্ম
আলো ছুঁয়েই চলে যাওয়া
তাই বুঝি তুমি চন্দ্রাহত?
পায়ে ফেলে রেখে কামিনী কাঞ্চন
কে আসে
পথের ধূলায় রাজার প্রাসাদ ছেড়ে..
উন্মাদ উন্মাদ উন্মাদ
তুমি সত্যিই উন্মাদ
আমার ঈশ্বর তথাগত।
উথালপাথাল জোয়ার ভাঁটা মন
দীর্ঘ জীবন চান্দ্রমাস
তবুও তো নির্বাণ রাত হয়েছে গত
আমরা বলি বুদ্ধ পূর্ণিমা
এ আসলে চাঁদের আলোর ক্ষত।