
মানুষী (এ. জয়াভারতী)-র কবিতাগুচ্ছ
তামিল থেকে বাংলায় অনুবাদ : অভিষেক রথ
তামিল সাহিত্যের অধ্যাপক কবি এ. জয়াভারতীকে তাঁর পাঠকেরা মানুষী নামে একডাকে চেনেন। সাহিত্য অকাদেমি যুব পুরস্কার সহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত মানুষীর পাঁচটি কবিতার বই ছাড়াও রয়েছে ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং সমালোচনামূলক নানা লেখা।
১
স্বপ্নের আকাশ আমার
সেইখানে
ওড়াউড়ি কর তুমি
ঠিক যেন পরিযায়ী পাখি
যে ঝোপে বেঁধেছ বাসা
সে তোমায়
ডাকে
হাতছানি দেয়
নাম ধরে ডাকে
বলে, এসো –
কিলবিলে পোকা
আর খুদে খুদে পাখি
সাথে বনরাজি, হরিয়ালি
আর
সব কিছু ছাড়িয়ে
ওই দূরে
পাহাড়েরা
আজ
বন্ধু তোমার – প্রাণের
ওদেরই তো গান গাও তুমি
ওই জমিজঙ্গল
যাকে তুমি
ঘরবাড়ি করেছো,
তোমার স্মৃতিতে
তারা তো রয়েছে ডুবে, আকন্ঠ।
সেইখানে
শেকড়ের মতো
গেঁথে যেতে চাই আজ
ঘাসপাতা হয়ে।
২
টবের চারায় ফোটা
রঙের বাহার,
আর, সাগরের ‘পরে ঝুঁকে থাকা
কালো ভারী মেঘ।
ঝমঝমে রাতে বাজের ফলা
আর, উথলে ওঠা পুকুরে
ভেসে থাকা ডালের ছায়া।
বাড়তে বাড়তে
গাছ,
পাহাড়চূড়ায় একা
হেলে আছে
যেন একফালি নখ।
ঝোপের মাথায় নাচে
পতপতে ডানা
প্রজাপতি।
হঠাৎই পথ চিরে ছুটে যাওয়া
কাঠবিড়ালি।
আর,
বেড়ালছানার ক্ষিদেমাখা কাতরানি চোখে
ভেসে ওঠে
তোমার মুখ
ঝকঝকে।
ওরা কি … কেউ কি জানে
তুমি ছেড়ে গেছো
মোরে
গেছো চলে
কখনও ফিরবেনা বলে।
আমার মাঝেতে
তবু থাকে জেগে
শুধু স্মৃতি
তোমার
মায়া, বড় মায়া
৩
প্রেমে কি পড়েছো তুমি?
হ্যাঁ, আছি মজে তাতে।
একা থাকো তুমি?
একা – একেবারে একা।
বিয়েও করো নি?
কক্ষনো নয়।
খুশি আছো?
একদম।
কষ্টে কি আছো বড়?
হ্যাঁ, খুবই।
ভগবান মানো?
রীতিমতো।
বিশ্বাস আছে?
অবিশ্বাসী আমি।
নারীবাদী?
হ্যাঁ।
মানুষকে ভালোবাসো?
বাসি।
বেড়ানোয় ঝোঁক আছে?
খুবই।
জীবন কেমন লাগে?
স্রোতের মতো।
আর কিছু?
আর কিছু জানবার আছে?
বসে আছি,
বলে ফেলো।
উত্তর রেডি
সবটার।
তবে আছে
একখান কথা, গোপনে।
যা তুমি জানবেনা
কোনোকালে।
বন্ধুরা,
তোমাদের
নাগালের ওপারে
জমিয়ে রেখেছি তারে, লুকিয়ে।
৪
ওই ফটোগুলোর দিকে
চেয়ে থাকি
প্রায়ই।
বাবার তর্জনী
আঁকড়ে থাকা
কচি হাত।
মায়া
বুঝি
ওই সুকুমার আঙুলগুলো
এ বিশাল পৃথিবীর ‘পরে
কী বিপুল ভরসার দায়
রেখে গেছে।
ওদের মাঝেতে
যত কথা চালাচালি
চলে
সব আসে কানে।
বাবার আঙ্গুলগুলো
সেই কালে
ছিলনাকো
কড়া শাসনের
ছিলনা কঠোর, অসাড়
সে আঙুলে নাই ছিল খুঁত
মড়মড়ি পড়েনি তো তাতে।
বসন্তের ভোরে
গাছে
গজানো ফ্যাকড়ার সজীবতা
আর,
সাঁঝবাতি জ্বলার আগেই
মেলে ধরা
পাঁপড়ির সুগন্ধ
মিশে আছে তাতে।
ফিনফিনে ঋজু সে আঙুলের
দিকে
অবিরাম চেয়ে থাকি আমি
পড়ে না চোখের পাতা।
অমনি আরেক হাতের
অপেক্ষায়
বসে আছি।
সে ছোঁয়ার (ভরসার)
অনুভূতি ফেরেনি তো আর।
তবে,
তা আর ভাবায় না।
খানিক উঠেছি যে বেড়ে।
হই নি কি বড় ?
আজ আমি এ হাতের তর্জনী
চেপে ধরি
অন্য হাতে
আমারই…
আর
পড়ি
ঘুমিয়ে।
৫
চোখে জল, ফোঁপানোর মাঝে
যদি
এসে পড় তুমি
জলে ভাসা মুখ যাবে
গুটিয়ে
শামুকের মতো।
দেখবে
হাসিমুখে বলা।
অণু পরমাণুতে
ভেঙে খানখান
হৃদয় যখন
তখন
দেখা হলে
পরিপূর্ণ হৃদয়ে
দেখা দিতে পারি।
শত কষ্ট সয়ে
নত ভারে পড়ে আছি যবে,
সেই কালে
দেখা হলে
তখনও পেতে পার চা
স্বহস্তে তুলে দেব হাতে।
বলবো
‘ চিয়ার্স’।
উল্লাসে ভরা প্রাণ
এই ছবি মোর
চিরকাল রেখে দিও মনে।
এইটুকু চাই শুধু
বন্ধু।
তবে
তার মানে
এই নয় — সব পেয়ে গেছি।
তামিল থেকে বাংলায় অনুবাদ- অভিষেক রথ


